– এই যে তোমার আমার বাবা মা আমাদের বিয়ে ঠিক করেছেন, এতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো? (দিব্য)
– আমার আপত্তি নেই, তবে সব শোনার পর আপনার আপত্তি থাকতে পারে! (স্নেহা)
– সেটা কেমন?
– আমি অন্য একটা ছেলেকে স্বামী বলে গ্রহণ করেছি, তাই আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব না।
– আচ্ছা! আর কিছু……
– আমি কিন্তু ভার্জিন না, আপনার কাছে কেমন লাগবে যে যাকে বিয়ে করেছেন সে অন্য কারো সাথে আগেই শারীরিক সম্পর্কে জড়িত ছিলো?
– হাহাহা, তুমি তো খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড কথা বলো! তোমাকে দেখতে আসার আগে এটা জানতাম না।
– জানলে কি করতেন? না দেখেই বিয়ে ক্যান্সেল করে দিতেন?
– নাহ তা নয়, আসলে আমি শোনা কথায় কম বিশ্বাস করি, তাই তোমার সম্পর্কে যা শুনেছি তা আসলেও সত্য কি না এটা জানার জন্যই আসা।
– তা কি শুনেছেন আর কি দেখলেন?
– আগে বলো আমার নাম কি জানো? আমি কি করি?
– হুম! দিব্যেন্দু পাল, ইঞ্জিনিয়ার তবে কিসের ইঞ্জিনিয়ার সেটা জানিনা কারণ আগ্রহ নেই।
– সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সাইটে সাইটে কাজ করতে হয়। তোমার দিদি সিমা তোমার জন্য আমার সম্বন্ধ এনেছে….
– বুঝেছি…..
– শুনেছিলাম তুমি শ্যামলা হলেও মিষ্টি দেখতে, তোমার দিদি তেমনই বলেছিলো। তবে এখন……
– এখন কি দেখলেন, আমি তেঁতো দেখতে…..
– হাহাহা! তুমি তো সিরিয়াস মজাও পারো দেখছি। আসলে তা না, তুমি রুমে ঢোকার সময় আমি তোমাকে তেমন খেয়াল করি নি, সামনে এসে বসার পর তোমার চোখে চোখ পড়তে আমি চোখ ফেরাতে পারি নি।
– অমন তো সবাই বলে
– এবার তুমি কি বলবে জানি, বলবে সব ছেলেরাই এক
– সব না তবে ৮০%
– হতে পারে তবে তোমার এই সোজা সাপ্টা কথা বলা আমার পছন্দ হয়েছে
– কাজের কথায় আসুন
– কাজের কথা? হুম, এই তো কাল ইস্ট প্যালেস এরিয়ায় একটা বিল্ডিং ভিজিটের কাজ আছে। সামনে মাসে একটা নতুন প্রজেক্ট হাতে পাবো, আর…….
– এসব কে জিজ্ঞাসা করেছে?
– তুমিই না বললে কাজের কথা বলতে, আমার কাজের কথা এগুলোই….
– নাহ! এখন কাজের কথা হচ্ছে আপনার আর আমার বিয়ে
– হ্যাঁ তাইতো, তোমাকে আর আমাকে আলাদা ভাবে এজন্যই কথা বলতে পাঠাইছে
– জ্বি এটাই এখন কাজের কথা
– তার মানে হচ্ছে, তুমি ভার্জিন না আর অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে মানো এই কারণে তোমাকে আমার বিয়ে করা সম্ভব না, এই তো?
– হুম! আমার পক্ষে তো একদম সম্ভবই না
– তোমাকে যে দেখতে আসছি, এটা তোমার উনাকে জানাইছো?
– নাহ, সে জানার প্রয়োজন বোধ করে না অনেক আগে থেকেই
– মানে এক প্রকার ব্রেক আপ
– এসব নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নই
– আহা আমাকে তো জানতে হবে আমার হবু স্ত্রী কি কি কারণ দেখিয়ে বিয়ে করবে না
– এখনও বিয়ে পাকাপাকি হয় নি, হবু স্ত্রী বলছেন যে
– কারণ আমি ঠিক করে ফেলেছি তোমাকেই বিয়ে করবো।
– আমাকে বিয়ে করা আর পুতুল কিনে শো-কেসে সাজিয়ে রাখা একই হবে।
– একটু আলাদা, শো-কেসের পুতুল নড়বে না, তুমি নড়বে।
– আমি আপনাকে স্বামীর আসনে বসাতে পারবো না
– বন্ধু বানাতে তো পারবে?
– আমার থেকে স্বামীর অধিকার কি আপনি জোর করে নেবেন?
– তা কেন? কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে কিছু করার ইচ্ছা আমার নেই।
– আমাদের কোনোদিন সন্তান না হলে সবাই অন্য কিছু ভাববে। হয় আপনাকে না হয় আমাকে দোষ দিবে।
– এটা ব্যাপার না, সমাজে কত শিশু মা বাবার আদর পায় না, তাদের থেকে একজনকে দত্তক নিয়ে নিবো।
– তবুও আপনার আমাকেই বিয়ে করতে হবে? দেশে কি আর মেয়ে নাই?
– মেয়ে তো অনেক আছে, কিন্তু তুমি স্নেহা একজনই….
– আমার থেকে অনেক ভাল মেয়ের সম্বন্ধ আপনি পাবেন
– তা পাবো তবে মন তোমার মাঝেই আটকে থাকবে….
– তবে কি আপনার আমাকেই বিয়ে করতে হবে?
– হুম। সেটাই ঘটনা
– আসলে আপনি বুঝতে চাচ্ছেন না……
– বোঝাবোঝির সময় নাই…… তোমার সমস্যা আমি বুঝতে পারছি…..
– আপনি বউ পাবেন না, রোবট পাবেন
– কলের বউ? ভালই তো, ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য কলের বউ অনেক ভালো।
– আপনি এই বিয়েতে রাজি হবেন না, এটাই ফাইনাল কথা….
– ভেবে দেখবো……
– আপনি….
– এই তোমাদের কথা হলো (স্নেহার দিদি)
– হ্যাঁ বৌদি… আসছি….
(দিদি চলে গেলে, স্নেহা, দিব্যেন্দু কিছুক্ষণ পর রুমে চলে আসে। এতক্ষণ তারা বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো কিন্তু স্নেহা কিছুতেই দিব্যেন্দুকে বোঝাতে পারে না তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। আর দিব্যও তাকে বিয়ে করতে উদ্যত হচ্ছে এ এক জটিল সমস্যা তার সামনে স্নেহা অন্য একটা ছেলেকে ভালবাসে, ছেলেটাও তাকে অনেক ভালবাসতো, স্নেহার পরিবার আর সেই ছেলের পরিবারও জানতো।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন জানি ছেলেটা স্নেহাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে, এ নিয়ে স্নেহা অনেকবার প্রশ্ন করেও সদুত্তর পায় নি। এদিকে স্নেহার বাবা মা মেয়েকে বসিয়ে রাখতে চান না, মুখে না বললেও তাদের কাছে মেয়ে এখন গলগ্রহই। তাই স্নেহা পিসতুতো দিদি তার জন্য ভাল ছেলের সম্বন্ধ দেখে। সেই ছেলেটাই দিব্যেন্দু যাকে আজ সে নিয়ে এসেছে স্নেহাকে দেখাতে। আর এক পর্যায়ে তাই তাদের আলাদা কথা বলতে পাঠানো হয়। স্নেহা ভাবে সব শোনার পর দিব্যেন্দু বিয়েতে রাজি হবে না, কিন্তু এখন দ্বিধায় পড়ে গেছে সে। এখন সব স্রষ্ঠার হাতে.!)