দু-মাস আগে বিয়ে হয় ওদের।দুজন দুজনকে চিনতো না তারা আগে থেকে।কিন্তু ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না ওদের মধ্যে।জানতাম বিয়ের মধ্যে দিয়েই নাকি শুরু হয় এক নব-দাম্পত্যি জীবন চলা।কিন্তু এ যেনো বহুকালের পরিচিত কোনো নব নয়, পুরোনো-দাম্পত্যি।
:এই উঠো তাড়াতাড়ি আজান হয়ে গেছে নামাজ পড়তে যাবা।(সামিহা)
:হু (রাহাত)
:হু মানে কি? উঠো না।
:হু
:ধ্যাত…আমি কিন্তু উঠতে বলছি তোমারে।উঠো নইলে কিন্তু আরো জোরে মাইর দিব। (পিঠে জোরে একটা চড় মেরে)
:উফ!! এত জোরে কেউ মারে!! ভালো করে বললেই তো উঠি।
:ইশ! ভালো করেই তো বলছিলাম।তখন তো শুধু হু হু করছিলা।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে ওজু করে মসজিদে যাবা।
:হুম।যাচ্ছি ম্যাম। (যাচ্ছি বলেই সামিহার গালে একটা পাপ্পি দিয়েই দৌড় দেয় রাহাত)
ফ্রেশ হয়ে ওজু করে মসজিদের দিকে যাচ্ছে রাহাত।আর মনে মনে নিজেকে অনেক সুখী মানুষ ভাবতে থাকে।এমন বউ কত জনের ভাগ্যে জুটে!?যে ফজরে নামাজের জন্য ডেকে দেয়!! অনেক বড় ভাগ্যবান আমি যে এমন স্ত্রী আল্লাহ আমার ভাগ্যে লিখে রাখছেন আলহামদুলিল্লাহ!।
নামাজ শেষে বাসায় এসে দেখে সামিহা কোরআন পড়ছে।রাহাতকে দেখেই সামিহা বললো..এই আসো তুমিও কোরআন পড়বা। রাহাত কোরআন পড়তে জানে না।তবে সামিহার থেকে একটু একটু শিখছে। কোরআন পড়া শেষে সামিহা বললো এই তুমি গোসল করে নাও আমি নাস্তা রেডি করছি। গোসল শেষে নাস্তা করে রাহাত বললো, এই আমার টাই টা বেঁধে দাও তো..।সামিহা এসে টাই বেঁধে দিচ্ছে আর রাহাত সামিহার দিকে তাকিয়ে আছে।গোসলের পর নাকি মেয়েদের দেখতে অন্য রকম সুন্দর লাগে! রাহাত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
:এই কি দেখছো? (সামিহা)
:আমার মহারাণীকে। (রাহাত)
:ইশ! হইছে আর দেখতে হবেনা।শেষ টাই বাঁধা।এই নাও তোমার ঘড়ি।এখন আপনি আসতে পারেন।
:এই আজ না অফিসে যেতে ইচ্ছে করছেনা।
:হিহি, তাই! তো অফিসে না গিয়ে কি করবেন আপনি?
:তোমাকে দেখব আর তোমার সাথে গল্প করবো।
:ইশ! সারারাত আছে গল্প করার জন্য।অফিস ফাঁকি দেওয়া চলবেনা।এই যাও না দেখো দেরি হয়ে যাচ্ছে তোমার।
:আচ্ছা বাবা যাচ্ছি।
এই বলে দরজার বাহিরে চলে গেলো রাহাত।সামিহার মন খারাপ হয়ে গেলো।কারণ রাহাত অফিসে যাওয়ার আগে প্রতিদিন সামিহার কাছে জিজ্ঞাসা করে, অফিস থেকে ফেরার সময় কি আনবে ওর জন্য এটা।কিন্তু আজ রাহাত জিজ্ঞাসা করলো না।রাহাত কীভাবে ভুলে যেতে পারে এটা সামিহা ভাবছে আর তার মনে দুঃখের ছায়া হাতছানি দিচ্ছে। সামিহা তখনও দরজা লাগায়নি, হঠাৎ করে রাহাত দৌড়ে আসে।সামিহা অবাক হয়ে বলে…
:এই তুমি যাওনি!!?
:কীভাবে যাবো একটা জিনিস তো রেখে গেছি।
:কি জিনিস??
:এই জিনিস, (সামিহার নাকে চিমটি দিয়ে) আমার মহারাণীর জন্য কি আনতে হবে আজ?
:তোমার মনে ছিলো এটা!?
:হুম ছিলো।
:তাহলে আগে কেনো জিজ্ঞেস করলে না??
:এমনিতেই।একটু মজা করলাম।দেখলাম আমার মহারাণীটার মন কেমন খারাপ হয়।
:তুমি একটা পাজি।তুমি কি চাও তোমার মহারাণীর মন খারাপ হোক??
:তা চাইবো কেনো! আচ্ছা বাবা আর মজা করবো না এমন।মাফ করে দেন এবারের মতো…।
:মাফ করতে পারি, আগে তুমি কান ধরো!!
:কান কেনো ধরতে হবে?
:না ধরলে মাফ করবো না।
:এ কেমন বউরে বাবা! এখন কি কান ধরে উঠবোস করতে হবে নাকি!! ছোটবেলায় স্কুলে একবার করেছিলাম দুষ্টামির জন্য।কিন্তু বড় হয়ে বিয়ের পরেও করতে হবে!!!আল্লাহ গো বাঁচাও আম্রে!!
:এই কি ভাবছো হুম??অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি করো।
:করতেছি মহারাণী।এই যে কান ধরলাম।হয়েছে এবার?
:না হয়নি।এবার সরি বলো। আর বলো, আর এমন মজা করবো না।
:হুম। সরি বউ, আর এমন মজা করতাম না।
:এইতো আমার সুইট বর, গুড বর।
:হুম, তাহলে আজ আমার মহারাণীর জন্য কি আনতে হবে?
:ফুচকা আর চকোলেট আনবা।
:ওকে মহারাণী।এখন তাহলে যাই??
:হুম আচ্ছা।আর শুনো ব্যাগে খাবার দিয়েছি ওটা দুপুরে খাবা।বাহিরের খাবার যেনো একদম খাবা না তুমি।
:জো হুকুম মহারাণী।
:হুম, সাবধানে গাড়ি চালাবা।আসলামু আলাইকুম।
:ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
সামিহার কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে অফিসের দিকে হাঁটা দেয় রাহাত।সামিহা দরজা লাগিয়েই দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়।এখান থেকে রাহাতের গাড়ি দেখা যায়।যতদূর রাহাতের গাড়ি দেখা যায় সামিহা দেখতে থাকে প্রতিদিন। আজকে অফিসে দুইটা মিটিং থাকায় অফিস থেকে বাহির হতে অন্যদিনের তুলনায় রাহাতের আজ অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।এদিকে রাহাতের মোবাইল বন্ধ ছিলো মিটিং এ থাকায়।রাহাতের মনে পড়াতে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বাহির করে অন করে।অন করেই দেখে ১০৬ টা মেসেজ আর সবগুলিই সামিহার।রাহাত মনে মনে বলে আজ কপালে কি আছে সেটা আল্লাহই জানে।রাহাত মেসেজ না দেখে কল দিতে যাবে তার আগেই সামিহার কল আসে।
:হ্যালো রাহাত!!?? (কান্না জড়িত কন্ঠে সামিহা)
:হ্যাঁ, মহারাণী আসলে আজ অফিসে…..
:কোথায় আছো তুমি??তুমি ঠিক আছো তো??কিছু হয়নিতো তোমার??
:আল্লাহ, ঠিক আছি আমি।একদম পারফেক্ট।অফিস থেকে বাহির হচ্ছি এখন।আসলে আজ অফিসে দুইটা মিটিং ছিলো এজন্য ফোন অফ করে রাখছিলাম।
:তুমি তো একটাবার আমাকে বলতে পারতা!!??
:সরি গো তোমাকে বলে অফ করা উচিত ছিলো।কিন্তু কাজের চাপে না একদম ই মনে ছিলোনা।
:আচ্ছা।বাসায় আসো সাবধানে।রাখছি।
যা বাবা! কান্না করতেছে আবার রেগে কথা বলছে।কেমন বউরে আমার!! গাড়িতে করে কিছুদূর যেতেই রাহাতের গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে যায়।গাড়ি একটি গ্যারেজে রেখে একটা রিকশা নিয়ে বাসার প্রায় কাছাকাছি চলে আসে রাহাত।আর তখনি রাহাতের মনে পড়ে মহারাণীর ফুচকা আর চকোলেট এর কথা।আল্লাহ!! একদম ভুলে গেছি যে।রাহাত রিকশা ওয়ালাকে বলে,
:এই মামা থামুন থামুন।
:কি হইছে বাই?
:আমাকে আবার একটু পেছনে নিয়ে যেতে হবে, একটা জিনিস কিনতে ভুলে গেছি।
:না ভাই।আমি আর ওদিকে যামু না।
:চলেন একটু, মাত্রই তো পাঁচ মিনিটের রাস্তা।আমি আপনাকে ডাবল টাকা দিব।চলেন…..
:না বাই।যামু না।
:ধ্যাত! আচ্ছা এই নেন আপনার ভাড়া, যান আপনি।
রিকশা থেকে নেমে আবার হাঁটতে হাঁটতে ফুচকা কেনে রাহাত।চকোলেট সকালেই কিনে রাখছিলো সে।ফুচকা নিয়ে কিছু দূর আসতেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় যায়। বাসায় কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণের মধ্যে সামিহা দরজা খুলে দেখে রাহাত একদম ভিজে গেছে ।
:হাচ্ছিহ্!! হাচ্ছিহ্!!
:এই তুমি ভিজে কেন গেছো?গাড়ি কই? (সামিহা) রাহাত সবকিছু খুলে বলে সামিহাকে।
:আল্লাহ!! কতগুলা ঠান্ডা লাগছে তোমার।তো আজ ফুচকা আনার কি দরকার ছিলো??
:আমার মহারাণী হাচ্ছিহ্!! বলছে আর হাচ্ছিহ্!! আমি আনবোনা সেটা হাচ্ছিহ্!! কি করে হয়?হাচ্ছিহ্!!
:তুমি এত পাগল কেন??
:পাগল হাচ্ছিহ্!! শুধু আমার মহারাণীর হাচ্ছিহ্!! জন্য।
সামিহা কোনো কথা না বলেই রাহাতকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। তবে এটা দুঃখের না, সুখের কান্না।
রাহাত বলে এই পাগলি কান্না করছো কেনো??আর তুমি তো ভিজে গেলে। সামিহা কোনো কথায় বলে না আরো জোরে রাহাতকে জড়িয়ে ধরে……