:-এই শীতের সময়ে পানির মধ্যে পা ভিজিয়ে রেখেছো তোমার ঠান্ডা লাগছেনা?
আমার কথা শুনে মেঘা আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর ওর হাতে থাকা বাদামের ঠোঙা থেকে বাদাম খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।আমি আর মেঘা একটা লেকের ধারে বসে আছি।মেঘা লেকের পানিতে পা ঢুবিয়ে রেখেছে।
আমি হুসাইন অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।মেঘা আমার ছাএী। ক্লাস টেনে পড়ে।আপনারা ভাবছেন শিক্ষক হয়ে ছাএীর সাথে ঘুরতে এসেছি কোন মতলবে?
তাহলে শুনুন বলছি।
আমি সেদিন প্রথম মেঘাকে পড়াতে যায়।একবড় ভাইয়ের দয়ায় টিউশনিটা পেয়েছি।তো প্রথমে গিয়ে ছাএীর মায়ের সাথে পরিচিত হলাম।ছাএীর মা আমাকে কিছু উপদেশ দিতে শুরু করলেন
:-আমার মেয়েটাকে একটু ভালো করে পড়াবে।সামনে ওর ফাইনাল পরীক্ষা।মেয়েটা কারো কথাই শুনেনা।তুমি একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে পড়াও।(ছাএীর মা)
:-জ্বি আন্টি পড়াবো।(আমি)
ছাএীর মায়ের কথাতেই বুঝেছি ছাএী কেমন।
আন্টি (ছাএীর মা)আমাকে ছাএীর রুমে নিয়ে আসলেন।ছাএী পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীর সবথেকে ভদ্র মেয়ে সে।আন্টি আমাকে পড়ার টেবিলে দিয়ে চলে গেলেন।
:-তোমার নাম কী?(আমি)
:-মেঘা।(ছোট্র করে উওর দিলো)
:-আমার নামটা আগেই শুনেছো নিশ্চয়।
:-জ্বি।
:-আজকে কোন সাবজেক্ট শুরু করবো?
:-আপনার যেটা ইচ্ছে।
:-তাহলে অংক দিয়ে শুরু করা যাক।
:-আপনার ইচ্ছে।
প্রথম দুদিন ভালোই পড়াশুনা করলো।তৃতীয় দিন থেকে শুরু হলো ওর ফাজলামি।আমি ওর ফাজলামির জ্বালা সহ্য করতে পারছিলাম না।এরপর আমার সামনে শর্ত জুরে দিলো আমি যদি সপ্তাহে একদিন ওকে ঘুরতে নিয়ে যায় তাহলে ঠিকমত পড়াশুনা করবে আর ও আমাকে তুমি করে বলবে।আমি আন্টির কাছে ব্যাপারটা বললাম(তুমি করে বলার ব্যাপারটা বাদে)।উনি মেয়ের ভালোর কথা ভেবে রাজি হলেন তবে ২ ঘন্টার বেশি বাইরে থাকা যাবেনা বলে দিলেন।সেই শর্ত অনুযায়ী মেঘাকে ঘুরতে নিয়ে আসতে হয়।আজ ৭ বারের মত নিয়ে এসেছি।
:-আমার শীত লাগছে।(আমি)
:-তাহলে মেসে চলে যাও।(মেঘা)
:-তুমি যাবেনা?
:-না।
:-কেনো?
:-আমার ইচ্ছে তাই।
আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম।জানি আর কিছু বললে আমার উপর দিয়ে বড় ধরনের ঝড় বয়ে যাবে তাই চুপ করে থাকাই ভালো।মেঘার বাদাম খাওয়া দেখে আমি মাঝে মাঝে অনেক অবাক হয়ে যায়।যখন বাদাম খাওয়া শুরু করবে তখন এক নাগারে খেয়েই যাবে।তারপর খাওয়া শেষ হলে বলবে আমার হাত ব্যথা করছে।
:-আমার হাত ব্যথা করছে।(মেঘা)
:-আরো কয়েকটা বাদাম খাও তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।(আমি)
:-তাহলে আর ১০ টাকার কিনে আনো।হি হিহি হি
:-কী?
আমি চোখ গরম করে মেঘার দিকে তাকালাম।
:-আমি তোমাকে মোটেও ভয় পাইনা।(মেঘা)
:-প্রতিদিনইতো একই কথা বলো বাদাম খাওয়া শেষে।(আমি)
:-কী করবো বলো বাদাম দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।তারপর যখন বাদাম খাওয়া শেষ হয়ে যায় তখন হাত ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
শুনেছিলাম মেয়েরা আইসক্রীম,ফুসকা, ক্যাটবেরীতে পাগল হয় কিন্তু এই মেয়ে তার উল্টো।সে বাদাম পাগলী।
:-২ ঘন্টা হতে চললো এখন বাসায় চলো।(আমি)
:-আরেকটু থাকিনা?(মেঘা)
:-মোটেও না।এখন না গেলে আমাকে টিউশনি থেকে তাড়িয়ে দিবে।
:-দিলে ভালোই হবে।আপনার কাছে পড়তে আর ইচ্ছে করেনা।
:-কেনো ইচ্ছে করেনা?
:-যাকে ভালোবাসি তার কাছে পড়তে ভালো লাগে বলো?
:-কি বলছো এসব?
:-যা বলছি ঠিকই বলছি।
:-এটা তোমার শুধুমাএ আবেগ।আবেগ যখন কেটে যাবে তখন সবকিছু ভুলে যাবে।তাছাড়া তোমাদের আর আমাদের মাঝে অনেক তফাৎ।
:-আমি এত কিছু বুঝিনা।তোমাকে ভালোবাসি ব্যাস এটাই আমার শেষ কথা।
:-আমার পক্ষে সম্ভব না।
:-কেনো?
:-জানিনা।চলো তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।
:-আমার প্রশ্নের উওর না পাওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে নড়ছিনা।
:-আচ্ছা ভালোবাসবো যদি তুমি এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাও তবে।
:-আমি রাজি।
:-তাহলে এখন গিয়ে লক্ষী মেয়ের মত পড়তে বসবে।এরপর থেকে আর বাইরে ঘুরতে আসার জন্য বায়না করবেনা।
:-ঠিক আছে।তবে আপনার কথাটা আপনি মনে রাখবেন।
:-রাখবো।
মেঘা আর আমি লেকের ধার থেকে ওঠে রাস্তায় এলাম।একটা রিক্সা নিয়ে মেঘাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসলাম।
মেসে বসে বসে ভাবছি মেঘাকে মিথ্যা বলে কী আমি ঠিক করলাম?মেঘা যদি সত্যি সত্যি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে যায় তখন কী হবে?ও যেমন ছাএী গোল্ডেন এ প্লাসতো দুরের কথা টেনেটুনে কোনরকম পাস করবে।তাছাড়া যদি পেয়েও যায় তাহলে ততদিনে এসব আর ওর মনে থাকবেনা।মাথা থেকে এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পড়তে বসলাম।কাল আমার পরীক্ষা আছে।
রাত ১২টার দিকে আন্টির নম্বর থেকে ফোন আসলো।
:-আসসালামুআলাইকুম।(আমি)
:-ওলাইকুমআসসালাম।(আন্টি)
:-আন্টি এত রাতে ফোন দিলেন কোন সমস্যা হয়েছে?
:-না।মেঘাকে তুমি কী বলেছো?
:-কিছু বলিনিতো।(অনেকটা অবাক হলাম)
:-ও।মেঘা সেই সন্ধায় এসে পড়তে বসেছে এখনো পড়েই যাচ্ছে।আমি দুবার খাওয়ার জন্য ডেকেছি বললো পরে খাবে।এর আগে কোনদিন ও এমনভাবে পড়েনি।
:-আসলে আন্টি আমি আজ ওকে অনেক বুঝিয়েছি পড়ালেখা ভালো করে না করলে কোন দাম নেই।সেসব কথা হয়তো ও বুঝেছে।
:-অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
:-না না আন্টি ধন্যবাদের দরকার নেই।আমি ওর শিক্ষক এটা আমার দায়িত্ব।
:-আচ্ছা বাবা এখন রাখি কালকে এসো কথা হবে।
:-ওকে।
ফোন রেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম মেঘা কী আমার কথাগুলো সিরিয়াসলি নিলো?যদি তাই হয় তাহলে আমি শেষ।মেঘার আব্বু আম্মু যদি জানতে পারে তাহলে আমাকে জেলে পাঠাবে।
এরপর থেকে মেঘা প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করতে লাগলো।যত দিন যায় তত আমার টেনশন বাড়তে থাকে।
৪ মাস পর।
আজ মেঘার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে।আজ এই পৃথিবীর সবথেকে বেশি টেনশনে আছি আমি।আল্লাহর কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা করছি মেঘা যেনো গোল্ডেন এ প্লাস না পাই।কিন্তু ভাগ্য বিধাতা মনে হয় অনেক আগেই ফলাফল লিখে রেখেছিলো।মেঘা গোল্ডেন এ প্লাস পেলো।সাথে জেলার মধ্যে ফাষ্ট হলো।মেঘার বাবা মা অনেক খুশি হয়েছে।আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছে তারা।আমি আজ মেস থেকে বের হয়নি।মেঘার রেজাল্ট দেখার পর থেকে টেনশন তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।জানিনা আমার কপালে কী আছে।
মেঘার ফোন কলে সব চিন্তার অবসান হলো।কাপা কাপা হাতে ফোন রিচিভ করলাম
:-কোথায় তুমি?(মেঘা)
:-মেসে।(আমি)
:-আমার রেজাল্ট দেখেছো?
:-হুম।
:-জানো আমাদের ক্লাসের সবথেকে স্মাটছেলেটা আমাকে আজ প্রপোজ করেছে।
:-তুমি কী বললে?
:-আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছি।ভালো করিনি?
:-খুব ভালো করেছো।
:-এখন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হবো পরে কথা হবে।বাই
:-বাই।
ফোন রেখে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।আপদটা মাথা থেকে গেছে।যেই ছেলেটা মেঘাকে প্রপোজ করেছে তাকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ জানালাম।তাছাড়া মেঘা আমার শর্তটা ভুলে গেছে এটার জন্য সবথেকে বেশি খুশি হলাম।
অনেকদিন হলো টিউশনির চাপে বাসায় যাওয়া হয়না।বাড়িতে যাওয়ার জন্য মনটা কেমন করছে তাই সন্ধায়ই রওনা হলাম বাসার পথে।বাসায় কাউকে না জানিয়ে যাবো।সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো।মেঘার আম্মু খুশি হয়ে টিউশনির টাকার সাথে ১হাজার টাকা বোনাস দিয়েছে।আম্মুর জন্য একটা শাড়ি, আব্বুর জন্য পান্জাবি আর ছোট দুইটা ভাইয়ের জন্য কেনাকাটা করলাম।কেনাকাটা শেষে বাসে ওঠে পড়লাম।মেস থেকে আমাদের বাসায় যেতে ২ঘন্টার মত লাগে।পরিবারের সবার জন্য কিছু কিনতে পেরে আজ অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।সবাই অনেক খুশি হবে সেটা আন্দাজ করতে পারছি।বাস ছুঁটে চলেছে তার আপন গতিতে।আমি বাসের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি।রাতের দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে।
বাসার দরজার সামনে এসে বেল চাপলাম।দুবার বেল বাজানোর পর ছোট ভাই দরজা খুলে দিলো।আমাকে দেখে চিৎকার করে বলে উঠলো।
:-আম্মু ভাইয়া এসেছে।
আমি দরজা আটকিয়ে ভিতরে গেলাম।আব্বু ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে।আম্মু সম্ভবত কিচেনে ছিলো।আমার আসার কথা শুনে বাইরে আসলো।
:-আব্বু কেমন আছেন?(আমি)
:-ভালো।আমাদের কথাতো ভুলেই গেছিস।(আব্বু)
:-কই ভুলে গেছি।তোমাদের কথা মনে হতেই বাসায় চলে আসলাম।
:-সেটাতো দেখতেই পাচ্ছি।৪ মাস পর যে বাসায় আসলো সে কিনা আমাদের মনে রেখেছে।এটা একটা পাগলেও বিশ্বাস করবেনা।
:-পাগলকে বিশ্বাস করতে হবেনা।তোমরা বিশ্বাস করলেই হবে।
:-কিরে মেসে কী খাওয়া দাওয়া করিস না?(আম্মু)
:-কে বলেছে খাওয়া দাওয়া করিনা?
:-খাওয়া দাওয়া করলে এমন শুকিয়ে গেছিস কেনো।
:-কই শুকিয়ে গেছি।বাসা থেকে যখন মেসে গিয়েছিলাম তখন ৪৫ কেজি ছিলাম আর এখন ৫০ কেজি।
:-হয়েছে আর ওজন মাপতে হবেনা।ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি।
:-পরে খাবো।তোমাদের সকলের জন্য সারপ্রাইজ আছে।
সারপ্রাইজের কথা শুনে সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।মনে হয় আমি পৃথিবীর সপ্তম আচার্যের কথা বলেছি।
আমি ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করলাম।প্রথমে আম্মুর হাতে শাড়ি দিলাম,তারপর আম্মুর হাতে লুঙ্গি আর পান্জাবি দিলাম,ছোট ভাইদের শার্ট প্যান্ট দিলাম।ছোট ভাইয়েরা ওদের পোশাক নিয়ে পড়ার জন্য নিজেদের রুমে চলে গেলো।।এতক্ষণ কেউ একটা কথাও বলেনি।শুধু আমার দেওয়া জিনিসগুলো হাতে নিয়েছে আর সবকিছু তাকিয়ে দেখেছে।
:-হুসাইনের মা দেখো তোমার ছেলে বড় হয়ে গেছে।আমাদের জন্য কেনাকাটা করছে।(আব্বু)
কথাটা বলে আব্বু আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে বুকে জরিয়ে নিলো।আম্মুও এসে আমাকে জরিয়ে নিলো।আমি এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ আশ্রয়ে আছি।অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে নিজেকে।আব্বু আর আম্মুর চোখে পানি। তবে এই পানি দুঃখের নয় সুখের।
:-পাগল ছেলে টাকা খরচ করে তোকে এতকিছু কে কিনতে বলেছে?তোরই কত টাকার দরকার হয়।অযথা এতগুলো টাকা নষ্ট করলি(আম্মু)
:-কই এতকিছু কিনেছি!সামান্য কয়েক টাকার জিনিস কিনেছি।তোমাদের জন্য কিনবো নাতো কার জন্য কিনবো।(আমি)
:-হয়েছে আর ডায়লগ দিতে হবেনা।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় সবাই একসাথে খেতে বসবো।(আব্বু)
নিজের রুমে চলে আসলাম আমি।পরিবারের সকলের জন্য কিছু কিনতে পেরে মনের মধ্যে এক ধরণের শান্তি অনুভব করছি যা হাজার টাকার বিনিময়েও পাওয়া যাবেনা।
ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে এলাম।সবাই আমার জন্য বসে আছে।খাওয়া দাওয়া শেষে সবার সাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।অনেকদিন পর বাড়িতে এসে ভালোই লাগছে।পরিবারের থেকে দুরে থাকা সবথেকে বেশি কষ্টকর।
রাত ১২টার দিকে ঘুমাতে গেলাম।কেনো জানি ঘুম আসছেনা।কেনো ঘুম আসছেনা সেটা বুঝতে পারছিনা।মনের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতম অনুভব করছি।মেঘা কি সবকিছুর মূলে?না না এটা কী করে হতে পারে!আমিতো মেঘাকে কখনো ভালোবাসার কথা ভাবিনি তবে ওর জন্য কেনো এমন শূন্যতা অনুভব করছি।মেঘাকে একটা ফোন দিই।না থাক এত রাতে ফোন দেওয়া ঠিক হবেনা।
৪দিন পর আজ মেসে ফিরছি।এই চারদিনে মেঘার সাথে আমার একবারও কথা হয়নি।তবে মেঘার জন্য আমার মনের মধ্যে এক ধরণের ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছে।কথায় আছেনা একজন মানুষ যখন আমাদের কাছে থাকে তখন তার প্রয়োজন অনুভব করিনা কিন্তু সেই মানুষটা যখন আমাদের থেকে দুরে চলে যায় তখনি বুঝতে পারি আমাদের হৃদয়ের কতটা জায়গা জুরে মানুষটার অবস্থান ছিলো।আমি আজ টের পাচ্ছি মেঘার অবস্থান।
মেসে এসে মেঘাকে ফোন দিলাম।দুবার রিং হবার পর রিচিভ হলো
:-কেমন আছো?(আমি)
:-ভালো।তুমি?(মেঘা)
:-ভালো।আমার সাথে আজ দেখা করতে পারবে?
:-আসলে বিকেলে হৃদয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা আছে।তোমার সাথে কাল দেখা করি?
:-হৃদয় কে?
:-তোমাকে সেদিন বলেছিলাম না একটা ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছিলো সেই হৃদয়।
:-ও।
:-কাল দেখা করলে তোমার কোন সমস্যা হবে?
:-না থাক দেখা করতে হবেনা।
মেঘার সাথে কেনো জানি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তাই ফোন রেখে দিলাম।মেঘাকে আমি নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি।তবে এই ভালোবাসার কোন নাম দেওয়া হলোনা।কারণ মেঘা অন্য কাউকে ভালোবাসে। ভুলটা আমারি।প্রথমেই যদি মেঘাকে ভালোবাসতে রাজি হতাম তাহলে এত কষ্ট পেতে হতোনা।ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথা বলার আগেই ছেঁকা খেলাম।
বিকেলবেলা ভালো লাগছিলোনা তাই বাইরে ঘুরতে বের হলাম।আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড ঘুরতে বের হয়ছি।মন খারাপ থাকলে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটলে নাকি মন ভালো হয়ে যায় তাই নদীর পাড়ে হাঁটতে এসেছি।কিছুদুর হাঁটার পর হঠাৎ মেঘাকে দেখলাম।মেঘাকে দেখে অনেক অবাক হলাম।অবাক হবার অবশ্য কারণ আছে।মেঘা বলেছিলো ও হৃদয়ের সাথে ঘুরতে যাবে কিন্তু ও ঘুরতে এসেছে ওর পরিবারের লোকজনের সাথে।আমি দুর থেকে মেঘাকে দেখে অন্যদিকে চলে এলাম।মেঘা আমাকে দেখেনি।দুরে এসে মেঘাকে ফোন দিলাম
:-কোথায় তুমি?(আমি)
:-হৃদয়ের সাথে ঘুরতে এসেছি।এখন বিজি আছি পরে কথা বলবো।(মেঘা)
:-মিথ্যা কথা না বললেও পারতে।
:-আমি কী মিথ্যা বলেছি?
:-তুমি তোমার বাবা মায়ের সাথে ঘুরতে এসেছো।
:-কে-কে বলেছে তোমাকে?
:-আমি দেখেছি তোমাকে।আমাকে মিথ্যা বললে কেনো?
:-নিশ্চুপ।
:-কীহলো বলো?
:-নিশ্চুপ।
:-আমি তোমার জন্য কলেজের পাশের পার্কে অপেক্ষা করছি।যদি ইচ্ছে হয় এসো।
ফোন রেখে দিলাম।মেঘা আমাকে কেনো মিথ্যা কথা বলেছিলো সেটা মাথায় ঢুকছেনা।আমার ফ্রেন্ডকে বললাম মেসে চলে যেতে আমি একটু পর আসছি।ও চলে গেলো।আমি পার্কে চলে এলাম।আমি আসার ২ মিনিট পরেই মেঘা আসলো।মেঘাকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম।মেঘার চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে।এই কয়দিনে অনেকটা শুকিয়েও গেছে।
:-কেমন আছো?(মেঘা)
:-ভালো।(আমি)
:-জিঙ্গেস করবেনা আমি কেমন আছি?
:-তোমরাতো ভালো থাকারই কথা।নতুন রিকেশন করেছো।তার সাথে অনেক জায়গায় ঘুরছো।
ঠাস করে দুটো শব্দ হলো।মেঘা আমাকে থাপ্পর মেরেছে।বিষয়টা বুঝে ওঠার আগেই মেঘা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।
:-আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা তুমি জানোনা?জানো তোমাকে পাবার জন্যই আমি রাতদিন এক করে পড়েছি।তুমি শর্ত দিয়েছিলে আমি যদি ভালো রেজাল্ট করি তবে তুমি আমাকে ভালোবাসবে।কিন্তু রেজাল্টের দিন অনেক সময় পার হবার পরেও তোমার ফোন আসেনি।তাই অভিমান করে তোমাকে কথাগুলো বলেছিলাম।তারপরেও তোমার ফোন জন্য কতসময় অপেক্ষা করেছি কিন্তু তুমি ফোন দাওনি।জানো কতটা কষ্ট পেয়েছি আমি।(মেঘা)
:-আশেপাশের মানুষ তাকিয়ে দেখছে।(আমি)
:-দেখুক তাতে আমার কি।
:-আমার লজ্জা করেনা বুঝি।
:-ওরে আমার লজ্জার মানুষরে।নিজেওতো আমাকে জরিয়ে রেখেছো।
তাইতো।আমিও হাত দিয়ে মেঘাকে ধরে রেখেছি।মেঘা আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
:-বাদাম কিনে আনো।(মেঘা)
:-এত বাদাম খাওয়া ভালোনা।(আমি)
:-বাদাম না আনলে ব্রেকআপ।(অভিমানি সুরে)
:-ঠিক আছে যাচ্ছি।
কী আর করার বাদাম পাগলীর আবদার মানতেই হবে।
…………………………………………..সমাপ্ত……………………………………..