ঠিক বিকেল ৪:৩০ মিনিটে বান্ধবীর কথা মত ওর জন্য চিকেন চাপ আর বার্গার কিনতে যাই। সেখানে যাওয়ার পর পার্সেল নিতে দাড়িয়ে থেকে দেখলাম কেউ একজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে। না একজন না বেশ ৩/৪ জন। উনারা আমার দিকে এগিয়ে আসছেন আর আমিও কৌতুহল বসত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। পার্সেল তৈরি হতে ই আমি টাকা দেব তখন ই একজন মহিলা আমার হাত ধরে টাকা দিতে মানা করলেন। বলতে লাগলেন,
— আরে ওর কাছ থেকে টাকা নিতে হবে না। আমি দিব।
এসব বলে আমাকে উনাদের সাথে ভিতরে নিয়ে গেলেন। আমি আবারো সবার দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছি। এ জন্মে তো কোনো দিন দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। আচ্ছা, আমার মায়ের মেলাতে হারিয়ে যাওয়া বোন বা ভাই নয় তো! বা বাবার.! অনেক দিন পর সন্ধান পেয়েছেন হয়ত আমাকে ১ম দেখে এমন রিয়েকশন।
প্রথমে ই আমাকে জিজ্ঞেস করা হল কি খাব। আমার প্রচন্ড ইচ্ছে করছিল বীফ বিরিয়ানি খাবো। কিন্তু বলতে পারলাম না। মা বলেছে আজকাল দিন ভালো না। আর উনাদের দেখতে ভদ্র মনে হলেও বলা যায় না খাবারে যদি ঔষুধ মিশিয়ে দেয়!! কিন্তু উনারা কারা সেটা ই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। দু জন মহিলার মধ্যে একজন বলে উঠলেন, বেশ ভালো লম্বা চুল তোমার। আজকাল এত লম্বা চুল দেখা ই যায় না।
কি শ্যাম্পু ব্যবহার কর মা?
আরে, এটা কেমন প্রশ্ন। হোস্টেলে রুমমেট রা মিলে মিশে ভাগ বাটোয়ারা করে কোনো সময় লুকিয়ে কে কখন কি দেই খেয়াল ই করিনি। চুরি করে লুকিয়ে শ্যাম্পু ভেবে কতদিন ফেইসওয়াশ দিয়ে চুল পরিষ্কার করেছি তা আমাদের মত হোস্টেলবাসীরা জানে। ( মনে মনে) আসলে আমার চুলে ফেইসওয়াস থেকে শুরু করে যে কোনো শ্যাম্পু দিলে ই চলে, না চলে না দৌড়ায়। ফেইসওয়াশ? বুঝলাম না। তা মা, শাড়ি পড়তে পারো? আজ্ঞে পারতাম। ঐ ছোটবেলায় গামছা দিয়ে শাড়ি পরতে। এখন পারিনা। ভুলে গেছি।
এসব কথাবার্তার মধ্যে হঠাৎ একজনের দিকে খেয়াল হল। বেশ লাজুক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। উনাদের ভাব ভঙ্গি দেখে বেশ সুবিধার মনে হল না। আমি কি রং নাম্বারে পৌছে গেছি নাকি উনারা রং নাম্বারে এসেছেন মাথায় ভন ভন করছিল আমার। ছেলেটা কিছুক্ষন পরপর হাসছে। যদিও ভালো লাগার মত তবে বিরক্তি লাগছে। কারণ এখানে এভাবে ফেঁসে গিয়ে এসব ভালো লাগার মত সময় নয়। আমাকে জোরপূর্বক কিছু খাইয়ে আমার নাম্বার নিলেন মহিলা। আমি ভাবছি বাড়িতে যদি বাবা মা এসব এভাবে জানতে পারে আমার কি হবে..!
আর উনারা ই বা কারা আমাকে চিনেন ই বা কি করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমার বাবা মায়ের নাম টা বলে দিয়েছেন। বাবার নাম বলার পর ই কেমন জানি আমার মেজো খালার উপর সন্দেহ হল। এই শহরে ই উনি থাকেন। আর বিয়ে নিয়ে আমার মায়ের থেকে উনার চিন্তা বেশি। হোস্টেলে থাকা অবস্থায় ৪ বার ডেকে পাঠিয়েছেন উনার বাসায় যাইনি। আগাম বার্তা বুঝতে পেরেছিলাম। এখন উনি এভাবে আক্রমণ করবে চিন্তা ই করিনি। ধারণার বাইরে। বিয়েতে কি রঙের শাড়ি পছন্দ??
এরকম হুট করে অদ্ভুত প্রশ্নে খেয়াল হল আমার আশেপাশে কেউ নেই ঐ ছেলেটা ছাড়া। বাকিরা একটু দূরের টেবিলে চলে গেছে । কি বলব না বলব ভেবে না পেয়ে টেবিল থেকে উঠে পরলাম। অনেক হয়েছে। একটা লিমিট থাকা দরকার এভাবে না জানিয়ে হুট করে এরকম কিছুর মানে হয়। টেবিল ছেড়ে উঠতে ই ওপর টেবিল থেকে আন্টি টাইপ মহিলা দৌড়ে এসে ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করলেন। আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন। আমি কি বলব এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। নাকি স্বপ্ন দেখছি। ভীষণ রাগ হচ্ছিল মেজো খালার উপর।
আসলে মা, এটা এমনি পড়িয়ে দিয়েছে। তোমাকে আমাদের খুব মনে ধরেছে। কিছু মনে করো না। তোমাদের বাড়িতে গেলে আবার সব নিয়ম মত হবে তোমার বাবা মা কে নিয়ে কেমন। আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। বার্গার কিনতে এসে নিজে ই বার্গারের মাঝে মাংসের পিস হয়ে গেলাম। কোনো রকম ছাড়িয়ে বের হলাম। যা হবে দেখা যাবে এখান থেকে বের হই। সামনে সেমিস্টার এক্সাম এসবে আটকালে হবে না। একরকম দৌড়ে ফাঁক দিয়ে বেড়িয়ে এলাম।
দৌড়ে অনেকটা জায়গা পার করে এসেছি। কোনো রকম রিকসা নিয়ে হোস্টেলে ঢুকলাম। ভয়ে আতঙ্কে হাপাচ্ছি আমি। রুমে বসতে ই ইতি আপু পানি দিল। পানি খেয়েও যেন মনে হচ্ছে আমি অন্য জগতে আছি। ইতি আপু আমার রুমমেট এক বছরের সিনিয়র। কি রে, কেমন লেগেছে বল? ( ইতি) মানে কি কেমন। বুঝলাম না! আসলে রাগ করিস না। কালকে আমার ছোট ফুপু হুট করে ফোন করে বলল একটা নাম্বারে আমার ছবি আর পরিচয় পাঠাতে।
আমি তোর ছবি আর বায়োডাটা দিয়ে দিছি। আর বলেছি আজ ৪:৩০ থাকবি। তাই আজ বড়বোন বা রুমমেট হিসেবে এটুকু তো করতে ই পারি বল। জানিস তো আমি রাজিব কে ভালোবাসি। আর তুই সিঙ্গেল আছিস আর কি লাগে।ভালো একজন পেয়ে গেলে ই হল। আহা, শখ কত!! নিজেরা পছন্দ করে ভালোবেসে বিয়ে করবে। আর আমাকে পাঠার বলি বানাবে! নাও তোমার বার্গার আর আবর্জনা। (আমি) আরে তোর রাজিব ভাই তোকে ট্রিট দিয়েছে। এখন রুমমেটদের উপরও ভরসা নেই। কে কারে বলি দেয় আজকাল!