আমার পাগলি বউ

আমার পাগলি বউ

রিয়াঃ এই উঠো

আমিঃ এই কে রে ?

রিয়াঃ কে মানে আমি তোর বউ

আমিঃ সে তো ভালো কথা তা আমাকে ডাকছো কেনো ?

রিয়াঃ এখন ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কলেজ যাবা । আমি গেলাম

আমিঃ আজ কলেজ যাবো না

রিয়াঃ কিইইইই

আমিঃ কই কি ?

রিয়াঃ কলেজ যাবি না তুই ?

আমিঃ হ্যা যাবো তো

রিয়াঃ তাহলে কেন বললি যাবি না ?

আমিঃ না আমি কখন বললাম ?

রিয়াঃ এই যে এখন

আমিঃ না তুমি ভুল শুনেছো

রিয়াঃ আচ্ছা তাড়াতাড়ি উঠো

আমিঃ আজ না গেলে হয় না ?

রিয়াঃ হ্যা হয়

আমিঃ তাহলে আমি যাবো না আজ

রিয়াঃ তাহলে আজ খাবার বন্ধ

আমিঃ না না আমি যাবো

রিয়াঃ এইতো ভালো ছেলে

আমিঃ হুম

ঘুম থেকে উঠে সোজা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । রিয়া হলো আমার একমাত্র বউ । এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে । আমার থেকে ১বছরের সিনিয়র.. আপনারা হয়ত ভাবছেন এত অল্প বয়সে বিয়ে কেনো ? তারপর বউ আমার বড় । এর একটা কারন আছে । আমি যখন ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে পড়ি তখন আমার মা মারা যায় । আমি আর বাবা একা হয়ে পড়ে । তখন বাবা নিজে আবার বিয়ের সিন্ধান্ত নেয়। কিন্তু তখন বাবাকে বাধা দেয় মায়ের কাছের এক বান্ধবী । মা মারা যাবার সময় তাকে আমাদের খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়ে যায় ।

তো তিনি বাবাকে পরামর্শ দিলেন যে,যদি বাবা বিয়ে করে তাহলে আমি একা হয়ে যাবো । তাই বাবা যেনো বিয়ে না করে । কিন্তু তখন বাবা বলল,আমাদের সংসার চালানোর জন্য কাউকে দরকার । তিনি বলল বাবার যদি অপত্তি না থাকে তাহলে আমার সাথে তার মেয়ে রিয়াকে বিয়ে দিবে । বাবাও সংসারের কথা ভেবে রাজি হয়ে যায় । আমাদের বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায় । প্রথমে রিয়া আমাকে মেনে নিতে না পারলেও এখন মেনে নিয়েছে । আর কিছু এখন বলতে পারবো না দেরি হয়ে যাচ্ছে নাস্তা করে কলেজ যেতে হবে । দেরি হলে বউ আমারে ঠ্যাংগান দিবে । নাস্তার জন্য টেবিলে গেলাম যেয়ে দেখি তিনি রেডি

রিয়াঃ এতো দেরি লাগে আসতে ?

আমিঃ হুম জান

রিয়াঃ তোমাকে না বলেছি জান বলবা না ?

আমিঃ আচ্ছা বলবো না। তা রেডি হয়ে কোথাও যাবা ?

রিয়াঃ হুম কলেজে

আমিঃওহ আচ্ছা

রিয়াঃ তাড়াতাড়ি শেষ করো না হলে দেরি হয়ে যাবে

আমিঃ আচ্ছা

নাস্তা শেষ করে রেডি হলাম কলেজ যাবো । এমন সময় এক সমস্যা । আমি যে বিয়ে করেছি তা বন্ধু মহলের কেউ জানে না ।

আমিঃবউ ও বউ

রিয়াঃ কি হয়েছে ?

আমিঃ আমি গেলাম

রিয়াঃ দাড়াও

আমিঃ কেনো ?

রিয়াঃ আমিও যাবো

আমিঃ কোথায় ?

রিয়াঃ কলেজে

আমিঃ তা যাও আমার কি ?

রিয়াঃ আমরা একসাথে যাবো

আমিঃ না আজ না অন্য একদিন

রিয়াঃ আচ্ছা যাও

আমিঃ লক্ষি বউয়ের কাছ থেকে ছাড়পত্র

নিয়ে কলেজে আসলাম। এসে আড্ডায় লেগে গেলাম।আমরা চারজন আড্ডা দিচ্ছিলাম। দুইটাছেলে দুইটা মেয়ে। ঠিক তখনি রিয়ার আগমন । আমাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো । বুঝতে পারলাম আজ বাড়ি গেলে খবর খারাপ।কারন রিয়া ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা যাবে না । আমি আর রিয়া একই কলেজে পড়ি।তবে আমাদের ক্যাম্পাস আলাদা । তারপর আড্ডা শেষ করে ক্লাসে গেলাম । সবগুলো ক্লাস করে বাসায় ফেরার জন্য হাটা শুরু করলাম । প্রতিদিন রিকশাতেই যাই কিন্তু আজ টেনশানে আছি তাই রিকশা ভাড়া দিয়ে বাদাম কিনে খেতে খেতে যাচ্ছি । যদি টেনশন একটু কমে । কিন্তু তা আর হলো না আমার পাশে এসে রিমি রিকশা থামাল ।

রিয়াঃ রিকশাতে উঠো

আমিঃ না থাক হেটেই যাবো

রিয়াঃ তোকে রিকশাতে উঠতে বলেছি

আমিঃ সামনে একটা কাজ আছে তুমি যাও

রিয়াঃ ওই তুই উঠবি ?

আমিঃ আমার কাছে ভাড়া নাই

রিয়াঃ আমি দিবো তুই উঠ কি করবো উঠতেই হলো । তুই বলার কারন হচ্ছে তিনি রেগে গেছেন । রাগলে তুই করেই বলে

আমিঃ বাদাম খাবা ?

রিয়াঃ না

আমিঃ রাগ করেছো ?

রিয়াঃ না চুপ করে থাকবি

আমিঃ আচ্ছা

রাগের কারন আমি আর আপনারা সবাই জানেন । দুজনে বাসায় আসলাম । এসে গোছল করলাম তারপর খাওয়া দাওয়া করলাম । তারপর সোজা ঘুমেরদেশে হারিয়ে গেলাম । দুপুরে ঘুমানো আমার পুরানো অভ্যাস । ঘুম থেকে উঠলাম এক ফ্রেন্ডের ফোনে

আমিঃ হ্যালো কে ?

অনিঃ দোস্ত আমি অনি

আমিঃ হ্যা কি হইছে বল ?

অনিঃ দোস্ত একটু আগে তুই কোথায় ছিলি ?

আমিঃ কেনো বাসায়

অনিঃ আমি তোকে ফোন দিছিলাম একটা মেয়ে ধরেছিলো

আমিঃ তারপর ?

অনিঃ তোর কথা শুনলাম।তো বললো তুই ঘুমাচ্ছিস পরে ফোন দিতে

আমিঃ ভালো তো

অনিঃ মেয়েটা কে ?

আমিঃ কেউ না

অনিঃ আচ্ছা একটু পরে চলে আয় আড্ডা দিতে

আমিঃ ওকে আড্ডা দিতে যেতে হবে । বউয়ের পারমিশন ছাড়া যাওয়া যাবে না।তো ভাবছি ডাকতে হবে । কিন্তু ডাকার আগেই হাজির । আমার আবার বউয়ের পারমিশন ছাড়া কিছু করা নিষেধ । বাবার অর্ডার ।

আমিঃ এইতো বউ এসে গেছো

রিয়াঃ তো কি হইছে ?

আমিঃ বলছি একটা আড্ডা দিতে যাবো ?

রিয়াঃ আমার কাছে শুনছো কেনো ?

আমিঃ তো কার কাছে শুনবো ?

রিয়াঃ আমি তোমার কে যে আমার কাছে শুনবে ?

আমিঃ তুমিতো আমার কিউট বউ

রিয়াঃ না কেউ না

আমিঃ কে বলেছে ?

রিয়াঃ তুমি

আমিঃ আমি ? কখন ?

রিয়াঃ এইতো ফোনে বললে একটু আগে

আমিঃ ওইটাতো ফ্রেন্ডকে বলেছি

রিয়াঃ কেনো

আমিঃ ওরা যদি জানতে পারে যে আমি বিয়ে করেছি তাহলে আমাকে সারাদিন ক্ষেপাবে

রিয়াঃ তুমি বিবাহিত তোমার ফ্রেন্ডরা জানে না ?

আমিঃ না

রিয়াঃ কেনো ?

আমিঃ ওরা যদি জানতে পারে তাহলে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে ।

রিয়াঃ হাসাহাসি করবে কেনো ?

আমিঃ এতো অল্পবয়সে বিয়ে করেছি তারপর তুমি আমার বড় এইকথা জানলে হাসাহাসি করবে ছাড়া কান্নাকাটি করবে ?

রিয়াঃ এতকিছু জানিনা বিয়ে যখন করেছো তখন ওদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিবা

আমিঃ আমি পারব না ।

রিয়াঃ কি বললি আবার বল

আমিঃ না কিছু বলি নাই তো

রিয়াঃ না তুই বলেছিস

আমিঃ আরে না কি বলেছি

রিয়াঃ পরিচয় করাবিনা বলেছিস

আমিঃ না তুমি ভুল শুনেছো

রিয়াঃ তাহলে কালকেই তোমার ফ্রেন্ডেদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবা ।

আমিঃ না

রিয়াঃ কিইইইই ?

আমিঃ কই কিছু না তো

রিয়াঃ কি বললি তুই ?

আমিঃ হ্যা দিবো

রিয়াঃ এইতো গুড বয়

আমিঃ হুম । আচ্ছা আমি যাবো ?

রিয়াঃ কোথায় ?

আমিঃ আড্ডা দিতে ?

রিয়াঃ হুম যাও তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবা

আমিঃ ওকে জান

রিমিঃ ওইইইই

কে শোনে কার কথা এক দৌড়ে চলে আসলাম বাসা থেকে । সোজা আড্ডা দিতে এসে দেখি আছে মাত্র দুইজন শান আর অনি আমিও ওদের সাথে যোগ দিলাম ।

অনিঃ দোস্ত একটা কথা বলবি ?

আমিঃ কি কথা ?

অনিঃ ফোনটা কে ধরেছিলো ?

আমিঃ সেটা কালকেই জানতে পারবি

অনিঃ কিভাবে ?

আমিঃ সময় হোক তারপর বুঝবি

অনিঃ ওকে

আড্ডা চলল আরো কিছুক্ষন । তবে আড্ডার পরিমান এতো বেশি হয়ে গেলো যে সন্ধা হয়ে গেলো । তখন মনে পড়ল যে আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে বলেছে । তারপর বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম । ফিরেই বউয়ের ঝাড়ি

রিয়াঃ এতোক্ষন কোথায় ছিলে ?

আমিঃ আড্ডা দিচ্ছিলাম ।

রিয়াঃ তোমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে বলেছিলাম ?

আমিঃ হ্যা বলেছিলে

রিয়াঃ তাহলে এতোদেরি করলে কেনো ?

আমিঃ মনে ছিলোনা

রিয়াঃ সেটাই আমি তোমার কে যে আমার কথা মনে থাকবে ?

আমিঃ তুমিতো আমার টিয়া পাখি

রিয়াঃ যদি তাই হতাম তাহলে আমার কথা মনে থাকতো

আমিঃ আচ্ছা সরি এবার থেকে মনে থাকবে

রিয়াঃ হুম এবার পড়তে বসো

আমিঃ হ্যা কিন্তু তুমি বসবা না ?

রিয়াঃ আমার কথা তোমার চিন্তা করতে হবে না তুমি পড়তে বসো

আমিঃ না প্রতিদিন তো একসাথেই পড়ি তাই বললাম

রিয়াঃ আমার কাজ আছে আমি পরে বসবো

আমিঃ ওকে

কি আর করার আজ একা একাই পড়তে বসলাম । পড়তে ইচ্ছা করছিলো না তারপরও পড়লাম । কিছুক্ষন পর রিমি আসলো । তারপর দুজনে পড়লাম । আমি আগে পড়তে বসেছিলাম তাই আমার আগে পড়া শেষ হলো । এবার একটু ফেসবুকে ঢুকতে হবে ।

আমিঃ ও বউ ফোনটা একটু দিবা ?

রিয়াঃ কি দরকার ?

আমিঃ না মানে একটু ফেসবুক চালাবো ।

রিয়াঃ না হবে না

আমিঃ কেনো দাও না একটু দরকার আছে ।

রিয়াঃ কি দরকার ?

আমিঃ দাও তারপর বলছি

রিয়াঃ আগে বলো তারপর দিবো

আমিঃ তোমাকে যে সবার সাথে পরিচয় করাবো এটা সবাইকে জানাতে হবে না ?

রিয়াঃ হুম । তাহলে নাও

আমিঃ এইতো লক্ষী বউ আমার আসলে আমার ফেসবুকে ঢোকার জন্য মনটা ছটফট করছিলো তাই ফোনটা নিলাম । কিছুক্ষন ফেসবুক চালিয়ে টিভি দেখছিলাম । তারপর রিমি খেতে ডাকল । যথারিতী খেতে গেলাম ।  খাওয়া দাওয়া শেষ করে এসে টিভি দেখছিলাম ।

রিয়াঃ এই শুয়ে পড়ো

আমিঃ না এখন পড়তে পারবো না তাও আবার শুয়ে

রিয়াঃ তোমাকে বলেছিন আমার ফাজলামো ভালো লাগে না ?

আমিঃ ফাজলামো কখন করলাম ?

রিয়াঃ আচ্ছা এখন ঘুমাতে যাও

আমিঃ আমি একা ?

রিয়াঃ তবে ?

আমিঃ তুমি ঘুমাবা না ?

রিয়াঃ আমার একটু দেরি হবে

আমিঃ আচ্ছা বাধ্য ছেলের মতো ঘুমাতে গেলাম।ভাবছি কাল কি হতে চলেছে । হঠ্যাৎ টের পেলাম পাশে কেউ এসেছে । হ্যা ঠিক ধরেছি বউ এসে গেছে । রিয়া আদর না করলে এখন আর ঘুম আসে না ।

আমিঃ একটু ঘুম পাড়িয়ে দাও

রিয়াঃ তুমি কি কচি খোকা ? প্রতিদিন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে ?

আমিঃ হ্যা দিতে হবে ।

রিয়াঃ পারবো না ।

আমিঃ আমি পারবো না

রিয়াঃ কি ?

আমিঃ ঘুমাতে

রিয়াঃ আচ্ছা দিচ্ছি ঘুমাও

আমিঃ হুম রিয়ার আদরে ঘুমিয়ে গেলাম ঠিকি । কিন্তু মাঝ যাতে ব্যাথায় ঘুম ভেঙে গেলো । হাতে একটু ব্যাথা অনুভব করলাম। পাশে দেখি রিয়া হাসছে । বুঝলামাম রিয়া কিছু একটা করেছে ।

আমিঃ হাসছো কেনো ?

রিয়াঃ এমনি

আমিঃ এমনি এমনি কেউ হাসে ?

রিয়াঃ আমি হাসি গাধা

আমিঃ ওহ তাহলে চিমটি দিছো ?

রিয়াঃ হ্যা

আমিঃ তোমাকে না বলেছি চিমটি দিবা না ?

রিয়াঃ আচ্ছা চলো ছাদে যাই

আমিঃ পারবো না

রিয়াঃ আবার বলো

আমিঃ যাবো তো

রিয়াঃ হুম চলো

আমিঃ দাড়িয়ে আছো কেনো চলো

রিয়াঃ কোলে নিয়ে চলো

আমিঃ কে আমি ??

রিয়াঃ তাছাড়া কে ?

আমিঃ আমার দ্বারা এইকাজ অসম্ভব

রিয়াঃ নিবা কিনা ?

আমিঃ নিচ্ছি অতঃপর রিয়াকে কোলে নিয়ে ছাদে আসলাম । চন্দ্রবিলাস করতে করতে রিয়ার কাধে মাথা রেখে ঘুমি গেছিলাম । ঘুম ভাঙল রিয়ার চিমটির ব্যাথায়

আমিঃ ওহহহহ

রিয়াঃ ঘুমাচ্ছো কেনো ?

আমিঃ তো কি করবো ?

রিয়াঃ চাদটা দেখো কতো সুন্দর

আমিঃ হুম।তবে তোমার চেয়ে খারাপ

রিয়াঃ থাক ঢপ দেওয়া লাগবে না

আমিঃ সত্যিই

কিছুক্ষন দুজনে চন্দ্রবিলাস করলাম।তারপর ঘুমাতে গেলাম । প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী আজও কলেজ যাচ্ছি।তবে সাথে রিয়া আছে । কলেজে গিয়ে বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম । আমার কথা শুনেতো বন্ধুরা সবাই আকাশ থেকে পড়ল ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত