আমি যে মেয়েটাকে ভালোবাসি, সেই মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে না। একদমই বাসে না, একফোঁটাও বাসে না। কিন্তু তাই বলে আমি থেমে নেই। দিনের মধ্যে হাজারবার তাকে আমার ভালোবাসার কথা জানাই। যতবারই আমি ‘আই লাভ ইউ’ বলি, ততবারই ও রেগে যায়। রেগেমেগে বলে, ‘দেখেন, আমি আপনাকে মানা করেছি না? এটা আর কখনো বলবেন না।’
– কেন বলব না?
– কারণ আমার ভাল্লাগেনা। রাগ লাগে।
– তুমি কি একটুও ভালোবাসো না আমাকে?
– উহু, একটুও না।
– তাহলে কথা বলো কেন আমার সাথে।
– কারণ আপনি একটা পুরোপুরি পাগল মানুষ৷ কথা না বললে কি সব উল্টাপাল্টা পাগলামি করবেন তার ঠিক নাই। এইজন্যই বলি।
এটা অবশ্য ঠিক। আক্ষরিক অর্থেই আমি পাগলামি করি। একবার কথা বন্ধ করে দেয়ার পর এগারোটা ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম। আরেকবার আছাড় দিয়ে আমার নতুন আইফোন টেন ভেঙে ফেলেছিলাম। ওকে ইমপ্রেস করার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা আমি করিনা। ও রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সারারাত জেগে জেগে ওকে মেসেজ দেই। দিতেই থাকি। আমাদের প্রেম হওয়ার পর আমরা কি কি করব, আমাদের বিয়ের পর আমরা কি কি করব, এইসব বলতে থাকি। কত প্লান আমার, কত কত আইডিয়া আমাদের দুজনকে নিয়ে। পরদিন সকালে ও অনলাইনে এসে দেখে আমি মেসেজ দিয়েই যাচ্ছি। হাজারখানেক মেসেজ জমা হয়ে গেছে। ও হয়তো পড়েও দেখে না, আবার কে জানে, হয়তো পড়ে। রিপ্লাই দেয়, ‘আপনি পুরা পাগল। ডাক্তার দেখান।’
আমি হাসি, ‘আমি তো সবসময় দেখাতে চাই, তুমিই রাজি হও না। চলো দেখা করি।’ উল্লেখ্য, মেয়েটা মেডিকেলে পড়ে। আচ্ছা, আর কতক্ষণ মেয়েটা দিয়ে চালাবো? আসল নাম বলতে চাই না। সে রাগ করবে। কাল্পনিক একটা নাম দেই। ধরি, মেয়েটার নাম রোজ। টাইটানিকের রোজ না, আমার রোজ। ওর জন্মদিনের দিন রাত বারোটা এক মিনিটে আমি ওর হোস্টেলের সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শীতে কাপি। ও ফোন দেয়, ‘এক্ষুনি বাসায় যান।’
– হ্যাপি বার্থডে।
– উফ, আপনি পুরা পাগল একটা।
– সেতো কবে থেকেই৷ তোমার জন্য।
– দেখেন, এবার কিন্তু মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার।
– তাইলে বলো, ভালোবাসি।
– না, বলব না।
– কেন, ভালোবাসো না আমাকে?
– উহু বাসিনা।
– একটুও না?
– কতবার বলব, না। বাসিনা৷ এখন বাসায় গিয়ে আমাকে দয়া করে উদ্ধার করেন।
পরদিন লাইফে প্রথমবারের মত রোজ আমাকে নিজে থেকে ফোন দেয়। বলে, ‘আমার কলেজের সামনের নিউ মেট্রো ক্যাফেটেরিয়ায় আসেন। আধাঘন্টার মধ্যে।’ আমি জ্যামের শহরে দুইবার উবার চেঞ্জ করে অর্ধেক দৌড়ে বাকি অর্ধেক গাড়িতে করে কুড়ি মিনিটে পৌছে যাই। দেখি রোজের বার্থডে পার্টি। ওর সব বন্ধুরা আছে। আমি বলি, ‘আমাকে ইনভাইট করার জন্য অনেক থ্যাংকস।’ রোজ মুখ বাকায়, ‘থাক, হইছে। এখন দয়া করে সবার সামনে আমাকে ভালোবাসেন টাইপ উল্টাপাল্টা কথা বইলেন না। এমনভাবে বিহেভ করবেন যেন আপনি আমার ফ্রেন্ড।’
– আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি রাজি হই। দাওয়াত দিছে এটাই আমার কাছে স্বপ্নের মত। ফাইনালি রোজের জীবনে আমি ইম্পর্টেন্ট কিছু হয়ে উঠছি! দুইদিন পর আবার ফোন আসে।
– আমি শপিং এ যাব। সাথে যাওয়ার মত কাউকে পাচ্ছি না। বিরক্ত লাগতেছে।
– কই আছ বলো, আমি এক্ষুনি আসতেছি।
– আচ্ছা আমার হোস্টেলের সামনের থেকে আমাকে পিক করেন। আর হ্যা, ভাববেন না যে আমি আপনাকে দাম দিচ্ছি। কাউকে পাচ্ছিনা বলেই আপনি। স্টিল আই ডোন্ট লাভ ইউ।
– আচ্ছা ঠিক আছে, সমস্যা নাই। আমি তো লাভ ইউ।
– উফ, আবার! চুপচাপ আসেন তো আপনি।
শপিং এর পর আমরা রেস্টুরেন্টে বসি। খাওয়াদাওয়া করি। বলি, ‘রোজ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি। বিশ্বাস করো, আমার থেকে ভালো তোমাকে এই দুনিয়ায় কেউ বাসতে পারবে না। কোনোদিন না।’
– কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
– কেন বাসোনা?
– জানিনা কেন, বাসিনা তাই বাসিনা। এতো কারণ বলতে পারব না। এখন আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসেন।
হোস্টেলে যাওয়ার পথে বাসে আমি আলতো করে ভয়ে ভয়ে রোজের আঙুল আমার আঙুল দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করি। তারপর কি ভাববে মনে করে দ্রুত হাত সরিয়ে ফেলি। এমনিতেই অনেকদিন পর একটু পাত্তা দিচ্ছে। মেসেজও সীন করে ফেলে রাখে না আর। এখন এরকম কিছু করতে গেলে আবার উল্টা রেগে না যায়। রোজ চোখের কোণা দিয়ে আমার হাত সরিয়ে নেয়া দেখে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জানালার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এতো শখ করলে হাত ধরতে পারেন আপনি। ভয় পাওয়ার কিছু নাই।’ আমার বুকের মধ্যে ধক ধক করে ওঠে। হার্টবিট মিস হয়। mছোটখাটো একটা চিৎকার দেই আমি, ‘সত্যি?’
– না মিথ্যা। এতো ঢং করেন ক্যান। ধরতে চাইলে ধরেন, না হলে থাক।
– তুমি রাগ করবা না তো?
– হুম করব।
– তাইলে থাকুক, দরকার নাই।
– ইস, বিরক্তিকর মানুষ একটা আপনি। ধরেন তো হাত৷ কিছু বলব না।
রোজ ওর কোমল হাতটা আমার হাতের মধ্যে রাখে। আমার নিজেকে মনে হয় পৃথিবীর সবচাইতে সুখি মানুষ। আমার আর কিচ্ছু পাওয়ার নেই দুনিয়ায়। কিছু চাওয়ারও নাই। এখন আমাকে মরে যেতে বললে আমি হাসিমুখে মরতে পারব। আমি আলতো করে ওর হাতটা ধরে রাখি। আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগে। কতক্ষণ সময় যায় তার কোনো হিসাব আমার থাকে না৷ গাড়ি কখন সিগন্যালে দাড়ায়, কখন জ্যামে পড়ে, কিচ্ছু টের পাইনা আমি। রোজ ওর হাত সরিয়ে নিলে আমার হুশ আসে।
– কি হলো?
– অনেক হইছে, এখন নামি চলেন। আমার হোস্টেল পেছনে ফেলে আসছেন। হাটতে হবে।
আমরা হাটতে থাকি। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনের গন্ধও আমার কাছে হাস্নাহেনার ঘ্রাণ লাগে। রোজ বলে, ‘হাত ধরতে দিছি এর মানে এই না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। এরকম কিছু ভাবলে ভুল করবেন। স্টিল আমি আপনাকে একটুও ভালোবাসি না।’
– একটুও না?
– একফোঁটাও না।
– হাত ধরতে দিলে কেন তাইলে?
– বাসের মধ্যে আপনি হাত ধরার জন্য মরে যাচ্ছিলেন তাই দিছি। না দিলে আপনি আবার কি পাগলামি করেন, এইজন্য৷ এর সাথে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক নাই।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– আর হ্যা, কাল আমি বাসায় যাব। আমাকে বাসে তুলে দিয়ে আসবেন সকালে। সকাল আটটার বাস। মনে থাকবে?
– হ্যা থাকবে, কিন্তু হঠ্যাৎ বাসায় কেন যাবা?
– আপনাকে কেন বলব? আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড না, ওকে?
– আচ্ছা ঠিক আছে বলা লাগবে না।
– হুহ ঢং। এতো সেন্টি খাওয়া লাগবে না। আম্মু ফোন করে যেতে বলেছে আর্জেন্ট, তাই যেতে হবে।
– আবার ঢাকায় ফিরবা কবে? আমি তোমাকে মিস করব।
– আপনি মিস করবেন বলেই তো দেরি করে ফিরব৷ আপনাকে তো আমি ভালোবাসি না যে তাড়াতাড়ি ফিরব।
– কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
– থাক হইছে, আবার শুরু করা লাগবে না। আচ্ছা যান, তাড়াতাড়িই ফিরবনে৷ এখন বাসায় যান, কাল সকালের কথা আবার ভুলে যাইয়েন না।
বাসায় এসে সারারাত আমার ঘুম হয় না৷ আমি বিছানার ওপর জেগে বসে থাকি। রোজ কি আসলেই আমাকে ভালোবাসে না? নাকি বাসে? আমার রাতের খাবার বিছানার নীচে ঢাকা দেয়া অবস্থায় সেরকমই পড়ে থাকে৷ আমার বসে বসে আজকের কথা ভাবতে ভালো লাগে। রোজের হাত স্পর্শ করার কথা ভাবতে ভালো লাগে। এই হাত আমি কোনোদিন ছেড়ে দিব না, কোনোদিন না৷ রোজ যখন অনেক বুড়ো হয়ে যাবে, তখনও আমি ওর কুচকে যাওয়া হাতটা ধরে রাখব। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত। আচ্ছা, ও আমাকে কখনো ভালোবাসি বলবে?
বলবে, বলবে। নিশ্চয় বলবে। ফজরের আজান শুনে আমার ভাবনা ভঙ্গ হয়। আমি বাসা থেকে বের হয়ে ওর হোস্টেলের দিকে হাটতে থাকি। ওকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে তারপর ঘুমানো যাবে। রোজদের বাসা ময়মনসিংহ। ঢাকা থেকে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না৷ আমি বাসায় এসে ঘুম দেই। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে রাত হয়ে যায়৷ ফেসবুকে ঢুকে রোজের মেসেজ পাই,
– এই যে মিস্টার পাগল। আপনার জন্য একটা ব্যাড নিউজ আছে।
– কি নিউজ?
– আমার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলে বিসিএস ফরেন ক্যাডার। আমি অনেক খুশি। বিদেশে বিদেশে ঘুরতে পারব।
– হোয়াট, এইসব তুমি কি বলতেছ? আমি কিন্তু মরে যাব সত্যি সত্যি। প্লিজ!
– আপনি মরে গেলে আমার কি! আপনি তো আমার বয়ফ্রেন্ড না। আমি আপনাকে ভালোও বাসি না। এখন আপনাকে বলাই ভুল হইছে, একবারের বিয়ের পর বলা উচিত ছিল।
– তো এখন কেন বললে?
– না বললে আবার কি পাগলামি করবেন, তাই বলছি।
– আমি সত্যি সত্যি মরে যাব।
– থাক, হইছে। এতো ঢং করা লাগবে না৷ এখনো বিয়ে হয়ে যায়নি৷ কথাবার্তা চলতেছে। আপনি চাইলে আমার আম্মুর সাথে দেখা করতে পারেন। যদিও আপনার সাথে বিয়ে টিয়ে হয়ে গেলে আমার লাইফটাই নষ্ট হবে, তারপরও আম্মু রাজি হলে আমি আর কি বলব। আম্মুর কথাই শেষ আমার কাছে।
– কিন্তু এখন হুট করে আমি তোমার আম্মুর কাছে গিয়ে কিভাবে কি বলব? তুমি একটু বলো না আমার কথা।
– হেহ, এমনভাবে বলতেছেন যেন আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড।
আমার বয়েই গেছে। আমি বিদেশে বিদেশে ঘুরবো, ইয়েএএএ। কি মজা। ফোন রাখেন৷ বাই। রোজ ফোন কেটে দেয়। আমি বুঝতে পারিনা কি করব। আমার মাথা ঘুরতে থাকে৷ ঘন্টাখানেক পর আবার ও নিজেই ফোন দেয়। বলে, ‘কি হলো, মারা গেছেন? হার্টএটাক নাকি স্ট্রোক?’
– এরকম করো কেন আমার সাথে তুমি?
– যাক, বেঁচে আছেন দেখা যাচ্ছে। এখন একটা ঘুম দেন।
– ঘুম আসবে না আমার।
– আবার ঢং।
ঘুমাতে বলেছি না? কাল ময়মনসিংহ আসবেন। আম্মুকে বলেছি আপনার কথা৷ প্রেমিক টাইপ কিছু বলেছি ভেবে খুশি হইয়েন না। আপনি যে বিশাল বড় পাগল সেটাই বুঝায় বলছি। আম্মু দেখা করতে রাজি হয়েছে। দুপুরে খেতে বলেছে আপনাকে। এখন ঘুম দিয়ে চেহারা ঠিক করেন। উস্কোখুস্কো ফেস নিয়ে হাজির হইয়েন না। চুল কেটে শেভ করে আসবেন। আর ফর্মাল শার্ট প্যান্ট পরে আসবেন। ব্রেকিং ব্যাডের টিশার্ট পরে চলে আইসেন না আবার।
– থ্যাংক ইউ সো মাচ রোজ। আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে অনেএএক…!
– উফ, এসব বলতে মানা করেছি না? আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
– একটুও না?
– একফোঁটাও না। এখন ঘুমান। কাল দেখা হবে।
রোজের আম্মুর আমাকে অনেক পছন্দ হয়। বলেন, ‘বিসিএস ক্যাডার না হলেও তুমি ছেলে খারাপ না। আর তাছাড়া আমার মেয়ের খুশি আমার কাছে সবার চাইতে আগে। তুমি তোমার আব্বু আম্মুকে দেখা করতে বলো আমার সাথে। বিয়ে পরে হোক, সমস্যা নাই। মুরব্বিদের মধ্যে কথাবার্তা হয়ে থাকুক। তোমরা ছেলে মানুষ, তোমাদের ওপর বিশ্বাস নাই।’
আমার আব্বু ওর আম্মুর সাথে কথা বলে। ঠিক হয়, রোজের সেকেন্ড প্রফ এক্সামের পর আমাদের এনগেজমেন্ট হবে। বিয়ে লেখাপড়া শেষ করার পর। আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচাইতে ভাগ্যবান পুরুষ মনে হয়। আমি পাইলাম, তাহাকে পাইলাম, টাইপ ফিলিংস হয়। রোজ কপট রাগ দেখিয়ে বলে, ‘ফ্যামিলির প্রেশারে আপনাকে বিয়ে করতে হচ্ছে। এই ছিলো কপালে আমার। কই, দেশ বিদেশ ঘুরবো ফরেন ক্যাডারের সাথে, তা না। ঢাকায় পড়ে থাকো। হুহ। এই সমাজে একটা মেয়ের ইচ্ছার কোনো মূল্য নাই। স্যাড লাইফ।’ আমি হাসি, ‘তুমি বিয়েতে রাজি না?’
– একফোঁটাও না। আপনি তো আমার বয়ফ্রেন্ড না যে আমি খুশিতে নাঁচবো। এমনকি আমি আপনাকে ভালোও বাসি না।
– একটুও বাসো না?
– উহু, এক ইঞ্চিও না।
– তাহলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দেই?
– না থাক, আপনি আবার মরে টরে যাবেন। আমি কারো মরে যাওয়া দেখতে পারিনা। আমার কষ্ট লাগে।
সেই মুহুর্তে আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। আমি দেখব, ও আমাকে ভালোবাসে কিনা। ভালোবাসার কথা স্বীকার করে কিনা। একটা প্লান করি। প্লানের অংশ হিসাবে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আর ফ্রেন্ডের আম্মুকে রাজি করাই। আমার শ্বাশুড়িকেও দলে টানি। ওর ফ্রেন্ডের আম্মু ওকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যায়। বলে, ‘তোমার জামাই কি করে যেন?’
– কিছু করে না। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেছে প্রাইভেটে।
– ইস, এইসব আজকাল চলে নাকি? তোমার মত মেয়ে অনেক বড় কিছু ডিজার্ভ করে। আমার বোনের ছেলে ফয়সল। বুয়েট থেকে পড়ে আমেরিকায় জব করে। দেশে আসছে বিয়ে করতে। আমি তোমার আম্মুকে ওর কথা বলি?
– না আন্টি, এখন আর দরকার নাই।
ওর ফ্রেন্ড পাশ থেকে বলে, ‘কেন দরকার নাই? তুই তো সোহাইল না কি নাম, ঐ ছেলেকে ভালোও বাসিস না। তাছাড়া এখন মাত্র বিয়ের কথা হচ্ছে৷ বিয়ে হয়ে যায়নি। আম্মু তুমি অবশ্যই ফয়সল ভাইয়ার ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নাও। রোজের আম্মুর সাথে আজই কথা বলো।’ প্লান মোতাবেক রোজের আম্মুও রাজি হয়। বলে, ‘আজকাল বিয়ে ভেঙে দেয়াই যেখানে কোনো ব্যাপার না, সেখানে সোহাইলের এটা তো কেবল কথাবার্তা চলতেছে। এনগেজমেন্টও হয়নি।’ রোজ আমাকে কল দেয়, ‘আরেকটা গুড নিউজ আছে।’
– কি?
– আমার আম্মু আমেরিকার এক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতেছে। আপনি মাইনাস হয়ে যাচ্ছেন। আমি আমেরিকায় যাবো। কি মজা। ইয়েএএ।
– আচ্ছা ঠিক আছে। যাও আমেরিকা।
– ঠিক আছে মানে? আপনি কিছু করেন। এখনো সময় আছে। পরে নাহয় আবার হার্ট এটাক হবে আপনার।
– নাহ, কিছুই করব না।
– মানে কি?
– মানে তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমি তোমার বয়ফ্রেন্ডও না। তাছাড়া আমেরিকা যাওয়া নিয়ে কত খুশি তুমি। আমি এতো খুশি দিতে পারব না তোমায়। তুমি ঐ ছেলেকে বিয়ে করে হ্যাপি হও।
– উফ, আপনি আমার আম্মুর সাথে কথা বলেন তো।
– নাহ, অনেক হইছে। আর নিতে পারতেছিনা আমি। তুমি ভালো থাকো, বাই।
আমি ফোন রেখে দেই। রোজ সাথে সাথে আবার কল করে, ‘দেখেন, আপনি পাগলামি করতেছেন এখন। পরে কিন্তু পস্তাবেন। সত্যি সত্যি আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিব।’
– আচ্ছা করো বিয়ে। সমস্যা নাই।
এবার ফোন রেখে আমি ফোন অফ করে দিই। ঘন্টাখানেক পর আমার বাসার কলিংবেল বাজে। দরজা খুলে দেখি রোজ। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। কান্না কান্না ভাব। আমার অনেক মজা লাগে। আমি যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার ট্রাই করি। রোজ আমাকে ধাক্কা দেয়, ‘আপনি পাগল হয়ে গেছেন। আপনি আমার আম্মুর সাথে কথা বলেন। আমার আম্মু আপনাকে কথা দিছে। এখন অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিলে আপনি কেন মানবেন?’
– আমি মানবো। আমি এই বিয়ে দিয়ে কি করব, যেটা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়। তুমি তো আর আমার গার্লফ্রেন্ড না। এমনকি তুমি আমাকে ভালোও বাসো না।
– বাসি।
– হোয়াট, কি বললে?
– ভালোবাসি।
– না বাসো না। তুমি যাও আমেরিকা। মজা করো। বাই।
রোজ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। ভ্যা…..য়ায়ায়ায়া…করে কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। আমি আমেরিকা যাব না। আমি ঢাকা থাকব আপনার সাথে। আমি আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারব না। আপনি আমার আম্মুর সাথে কথা বলেন প্লিজ। আমি আপনাকে অনেএএএক বেশি ভালোবাসি।’আমি দুই হাত প্রসারিত করে দেই শাহরুখ খানের মত। রোজ আমার বুকের মধ্যে চলে আসে। আমি শক্ত করে ওকে ধরে রাখি। ও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদে। আমি জিজ্ঞেস করি, ‘এখন ভালোবাসো?’
– হুম বাসি।
– একফোটা, নাকি এক ইঞ্চি?
– উহু, অনেক বেশি।
– তাহলে আই লাভ ইউ বলো।
– না, বলবো না।
– তাইলে আমেরিকাতেই যাও তুমি৷ আমি আন্টিকে কিছুই…
– আচ্ছা ঠিক আছে, আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ। খুশি এখন?
– হুম অনেএএক।
রোমান্টিক গল্পটি এখানেই শেষ। পুরোপুরি শেষ। সবাইকে পরিশিষ্ট না পড়ার অনুরোধ রইলো।
পরিশিষ্টঃ
(দুই মাস পর)
রোজ আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমার জন্য অনেক পাগলামি করে। দিনের মধ্যে হাজারবার আমাকে আই লাভ ইউ বলে। আমি ঘুমিয়ে গেলেও ও জেগে জেগে আমাকে মেসেজ দেয়। সারারাত! আমরা বিয়ের পর কি কি করব, সেইসব মেসেজ। কত কত প্লান আছে ওর আমাকে নিয়ে। আমাদের সংসার নিয়ে। কিন্তু আমার মনে হয়না আমার আর রোজের আদৌ বিয়েটা হবে। কারণ অনেস্টলি আমার এখন আর ওকে বেশি ভাল্লাগে না। আমার এখন তাসনিম নামের একটা মেয়েকে অনেক ভাল্লাগে। আমি আসলে তাসনিমকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু তাসনিম আমাকে বাসেনা। আমি তাসনিমকে ‘আই লাই ইউ’ বললে ও রেগে যায়। বলে, ‘দেখেন, এইসব বলবেন না। আমি আপনাকে ভালোবাসি না।’
– একটুও না?
– উহু, একফোটাও না।
চ্যাট হেডে তখন আসা রোজের ‘আই লাভ ইউ’ মেসেজটা সীন করে ফেলে রেখে আমি তাসনিমকে মেসেজ দিতেই থাকি, দিতেই থাকি। এই মেয়েটাকে পেয়ে গেলে আমার আর পৃথিবীতে কিছুই চাওয়ার থাকবে না, কিচ্ছু না!