ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৩.৩০ মিনিট বাজে।কিছুতেই ঘুমোতে পারছিনা।শুধু এপাশ ওপাশ করছি।কি যে করি??কি করলে যে ঘুম আসবে কিছুতেই বুঝতে পারছিনা।মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিলো,সকাল হলেই তো শারমিন কে আংটি পড়াতে চলে আসবে বর পক্ষ।
 ইসসসসস…কি করে যে চোখের সামনে শারমিন কে অন্যের হতে দেখবো?.
 সেই ছোট বেলা থেকেই শারমিন কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে আসছি।কত স্বপ্ন ছিলো তাকে নিয়ে।
 যখন থেকে শারমিন হামাগুড়ি দিতো,তখন থেকে ই এক অজানা ভালো লাগা কাজ করতো তার প্রতি।
 রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে আমার মায়ের মুখ টা দেখার পরে ই শারমিনের পালা।ওরে একটা দিন না দেখলে ভালো লাগতো না।কোন একটা অজানা ভয়ে শারমিন কে আমার ভালো লাগার কথাটা বলতে পারিনি কখনও।কারণ শারমিন আমাকে পছন্দ করে কিনা জানিনা।তবে আমাকে অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা করে।আমাকে না বলে কোথাও যেতো না।
 শারমিনদের আর্থিক অবস্থা ততটাও উন্নত ছিলো না।কিন্তু আল্লাহ আমাদের যথেষ্ট দিয়েছেন।তাই বোন হিসেবে হোক আর পছন্দের মানুষ হিসেবেই হোক,শারমিনের পড়াশোনার দায়িত্বের ক্ষাণিক টা আমি নিলাম।
 শারমিন এইবার BBA 2nd ইয়ার এ পড়ছে।আর আমি মাস্টার্স করছি।পাশাপাশি একটা জব ও করতাম।
 –
 শারমিনের প্রতি এতটাই দূর্বল ছিলাম যে,ওর মুখের একটু হাসির জন্য জীবনে কত কিছু যে করিছি তার কোন ঠিক নাই।
 –
 একবার শারমিনের কল পেয়ে ওদের বাসায় গিয়ে দেখি শারমিন রান্না করছে,আর মন খারাপ করে আছে।
 আমি গিয়েই শারমিন কে কাছে ডাকলাম।আমি কি হয়েছে জিঙ্গাসা করতেই কাঁন্না করে ফেলল।বুঝতে বাকি রইলো না,কোন কারণে খুব কষ্ট পেয়েছে।কি বলে শান্তনা দিবো বুঝতেছিলাম না।আমারো যে সহ্য হচ্ছিলো না।কয়েকবার জিঙ্গাসা করার পর কাঁন্না থামিয়ে বলল,আমি চাকরি করতে চাই।রোজ রোজ পরিবারের মানুষদের এত কথা শুনতে ভালো লাগেনা আমার।
 আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,কে কি বলে শুনি???
 পরে মামি কে মানে ওর মা কে ডাকলাম।বললাম,মামি এখন কি শারমিনের চাকরি করাটা খুব দরকারি???
 তাছাড়া আমি তো ভালো চাকরি খুঁজছি শারমিনের জন্য নাকি??
 কেন এত প্যারা দিচ্ছেন ওরে।
 মামি বলল,আমি তো কিছুই বলিনি।ওরা দুই ভাই-বোন ঝগড়া করছে।তাই ওরা ই নানা রকম কথা বলছে।
 আমি বললাম যাই হোক ওর সমস্থ দায়িত্ব আমি নিলাম।আমি শারমিনের মাথা টা আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম,কান্না করার কি আছে বোকা??
 আমি আছি তো।ততদিন থাকবো,যতদিন না পর্যন্ত তোর কোন ভালো পজিশন সৃষ্টি হয়।
 মামি বলল,কি যে বলো বাবা??
 আমরা কি মারা গেছি নাকি??
 আর যতদূর করো, ততদূর ই যথেষ্ট।তাছাড়া বাড়ির কেউ জানলে কি ভাববে??আমি বললাম,
 আপনি বাড়ির আর সমাজের মানুষ কি বলবে,তা নিয়ে ভাবার কোন দরকার নাই।কারণ অন্যের মেয়ের বদনাম খুঁজা ই মানুষের কাজ।কিন্তু আপনি একদিন না খেয়ে থাকুন,দেখবেন কেউ খুজঁ নিবে না।
 আর আমি আপনি না বললে,কেউ কিভাবে জানবে???
 আমি তো বলবো ই না।আপনি ও বইলেন না।
 পরে সেখান থেকে শারমিন কে নিজের প্রতি যত্ন নিস বলেই বাসায় চলে আসলাম।
 বলা রাখা ভালো ওদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ির দূরত্ব ১মিনিট এর রাস্তা।
 বাসায় গিয়ে ভাবছিলাম,শারমিনের এক ফোঁটা চোখের পানিই সহ্য করতে পারিনা।যদি ওরে আমি জীবন সঙ্গী হিসেবে না পাই???চোখের সামনে অন্যের হতে সহ্য করতে পারবো তো??
 বুঝতেই পারিনি সেই অজানা ভয় টা ই এতদিনে আমার জীবনে সত্যি হবে।
 তবে এতে শারমিনের কোন দোষ ই নাই।কারণ আমি নিজেই কখনও ওরে আমার পছন্দের কথা বলিনি।
 আর বললেই বা কি হবে??আমার পরিবার যদি না মেনে নেয়?মেনে না নেওয়ার যদি ও কোন কারণ নেই।কারণ শারমির যথেষ্ট ভালো,বুদ্ধিমতী।যদিও শ্যামলা কিন্তু চেহারা টা অনেক সুন্দর। মিশুক ও বটে।
 অপরিচিতদের সাথে ও এমন করে কথা বলে,মনে হয় যেন কত জন্মের পরিচিত।
 ওর এইসব গুন গুলো ই আমাকে ওর প্রতি বেশি আকৃষ্ট করেছে।
 –
 একবার এক সয়তান ছেলের পাল্লায় পড়েছিল।
 খুব পাগল ছিল ওই ছেলের জন্য।ছেলেটি ওরে নিজের মতো করে নাচাচ্ছিল।তখন মাএ ইন্টার ১ম বর্ষে পড়তো।
 তেমন বয়স ছিলো না তো,তাই যা বলতো তাই হয়তো বিশ্বাস করতো।
 কিন্তু ব্যাপার টা বুঝতে বুঝতে আমি অনেকটাই দেরি করে ফেলি।ততদিনে ওই ছেলে শারমিন কে, ওর প্রতি এতটাই আকৃষ্ট করে ফেলেছিলো যে,শারমিন ওর জন্য নিজের জীবন দিতে ও রাজি ছিলো।
 আমি আমার এক বন্ধু( আবিদের) কাছ থেকে ওই ছেলের আর শারমিনের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পারি।আবিদ নাকি ওদের দুজন কে মার্কেটে এক সাথে ঘুড়তে দেখেছে।
 শুনে তো মাথায় পুরোই আকাশ ভেঙে পড়লো।
 তাও যখন জানতে পারলাম, ছেলেটি একদমই ভালো না।
 কি করি, কি করি ভাবতে ভাবতে সারাটা রাত ঘুমায় নি।সকালে ফযরের নামাজ পড়ে আল্লাহ কে বললাম, আল্লাহ আমি ওরে পাই বা না পাই,ও যেন কোন খারাপ পাল্লায় না পরে।ওরে না পেলে আমার কোন আফসোফ নাই।কারণ ভোগে নয়,ত্যাগ্যেই নাকি প্রকৃত সুখ।
 আমি শুধু শারমিন কে ভালো দেখতে চাই।
 আল্লাহ তুমি শুধু শারমিন কে ওই ছেলের থেকে দূরে সরিয়ে দাও।
 পরে আল্লাহ মনে হয় আমার ডাক শুনেছে।
 শারমিন নিজেই ওই ছেলেকে এক মেয়ের সাথে দেখে ফেলেছে।পরে সে নিজেই বুঝে গেছে ছেলেটা যে ভালো না।
 তাই সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে।
 কিন্তু আমার ভালোর চেয়ে খারাপ ই হলো।শারমিন প্রায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়েই দিয়েছে।কলেজে যায় না।সারাদিন শুয়ে থাকে।কারো সাথেই তেমন কথা বলেনা।
 আমি ওর কাছে গেলে দায় সাড়া একটু কথা বলে।আমি যথা সাধ্য হাসানোর চেষ্টা করি।আমাকে দেখিয়ে যতই হাসে,আড়ালে কাদেঁ তা আমি জানি।কেমন জানি কালো হয়ে গেছে,শুকিয়ে গেছে একদম।
 পরে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
 –
 অনেক দিন পর আবারো একই পরিবর্তন হচ্ছিলো শারমিনের।আগের কারণ টা যদিও জানতাম।এখন কার টা অজানা।
 হঠাৎ এমন পরিবর্তন আমাকে ভীষণ ভাবাচ্ছিলো।
 কিভাবে কারণ টা জানি,বুঝতেই পারছিলাম না।ওর মুখটা দেখলে ও ভালো লাগেনা।কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছ।
 ওর কাছাকাছি থাকে এমন দুইটা ভাতিজি আছে আমার।ওরা আমাকে যথেষ্ট ভয় পায় আর সম্মান ও করে।ওদের কে খুব ভালো ভাবে জিঙ্গাসা করলাম।সত্যি করে বল,শারমিনের কি হইছে??ও দিনে দিনে এমন কালো আর শুকাচ্ছে কেন???
 ওরা বলল,জানিনা আমরা।মানে কি হুমমম?
 সারাদিন তো তোরা সাথেই থাকিস,তো জানিস না কেন??
 কি জানিস হুমম?
 আবারো বলল,সত্যিই জানিনা।আন্টি আমাদের কে কিছুই বলেনি।
 আমার মেজাজ টা খুব ই খারাপ হয়ে গেলো।ওদের মধ্যে একজন কে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।
 সারাদিন এক সাথে থেকেও জানিস না কি হয়েছে,এইটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে নাকি??বলবি না তা বল।
 বলেই মেজাজ দেখিয়ে ওখান থেকে চলে গেলাম।
 একটু পর দেখি শারমিন একা দাড়িয়ে আছে।ওর কাছে যেতেই ও একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।হয়তো আমার এমন হঠাৎ আগমন টা আশা করেনি।
 আমি বললাম,শারমিন তোরে একটা কথা বলি??সত্যি সত্যি উওর দিবি কেমন..
 শারমিন বলল,বলেন ভাই।কি কথা?.আমি বললাম,কি হইছে তোর??
 ও বলল,কই কিছু না তো।
 কি হবে??
 আমি বললাম,কিছুই না??তবে দিনে দিনে এমন কেন হচ্ছিস??
 কেমন হচ্ছি ভাই?
 কিছুই হয়নি।ঠিক আছি আমি।কোন উপায় না পেয়ে
 সাথে সাথে ওর হাত টা আমার মাথায় দিয়ে বললাম,আমার কসম।সত্যি করে বল কি হইছে তোর??
 সাথে সাথে আমার মাথা থেকে হাত টা সড়িয়ে নিয়ে বলল,আমার কসম কিছুই হয়নি।
 বলেই চলে গেলো।
 অবশেষে কিছুদিন পরে ভাতিজির কাছ থেকে জানতে পারলাম,ওই ছেলেই নাকি আবার নানা ভাবে জালাচ্ছে।কলেজে ও রোজ রোজ বিরক্ত করে।
 শুনেতো মাথা ই গরম হয়ে গেলো।ওই ছেলের সাথে দেখা করে ভালো ভাবে বললাম,শারমিনের থেকে দূরে থাক।না হলে সমস্যা হবে তোর।এমনি তে ই তোর জন্য অনেক সহ্য করেছি,তার মানে এই না যে,সব সহ্য করবো।
 বলেই চলে আসলাম।পরে আর ওই ছেলে শারমিন কে জ্বালায়নি।ভালোয় কাটছিল দিন গুলো।
 –
 হঠাৎ-ই আমার একটু গাফিলতীর জন্য আমার চাকরিটা চলে গেলো।কিযে করি, কিছুই বুঝতেছিলাম না।নিজেই বা চলবো কিভাবে?শারমিনের ও অনার্সে ভর্তির সময় চলে আসছে।পরিবার থেকে তো আর টাকা নিয়ে ওরে ভর্তি করাতে পারবোনা।কারণ এইটা হয়তো কোন পরিবার ই ভালো ভাবে নিবে না।
 এইদিকে শারমিন ও কাঁন্না করে।আমি পড়ে গেলাম মহা মুসকিল এ।আমি শারমিনের কাছে গেলাম আর ওরে শান্তনা দিয়ে বললাম,আমি নিজে অনার্স করতে পারিনি।ডিগ্রি করেছি।তবে আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোরে অনার্সে এ পড়াবো।জানিনা এই স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কিনা??
 তবে তুই ভাবিস না।অনার্সে ভর্তি করতে না পারলেও ডিগ্রিতে ভর্তি করে দেবো।আর সবার সব আশা তো আর পূরণ হয়না।
 শারমিন ও ভালো ভাবেই মেনে নিলো।কারণ ও আমাকে কখনই অতিরিক্ত চিন্তা দিতো না।
 পরে অনেক কষ্টে টাকা জোগার করে শারমিন কে অনার্সেই ভর্তি করালাম।
 –
 অনেক দিন পর চাকরির জন্য আমাকে হঠাৎ পরিবার আর শারমিন কে ছেড়ে গাজিপুর চলে যেতে হলো।
 যদিও সবাই কে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো,তবুও কি আর করার।থাকতে তো হবেই।
 এক বছর চাকরি করে, ওই চাকরি ছেড়ে বাসায় চলে আসলাম।ভালো লাগেনা সবাই কে ছেড়ে থাকতে।
 মাএ কিছুদিন হলো বাসায় চলে আসলাম।আবার সেই সুখের দিন শুরু।চাইলেই শারমিন কে দেখতে পারি।কথা বলতে পারি।
 কিন্তু সুখ আর কপালে বেশি দিন টিকলো না।সব সুখে আগুন দিয়ে শারমিনের পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে ফেললো।
 আমার পরিবারের ইচ্ছের কথা না জেনে, এখন শারমিনের বিয়েটাও আটকাতে পারছিনা।কারণ যদি আমার পরিবার ওরে না মেনে নেয়???
 এইসব ভাবতে ভাবতেই ফজরের আযানের আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।বাস্তবে ফিরে এলাম।এত কষ্টের মধ্যেও যেন এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছিলো।সাথে সাথে শুয়া থেকে উঠে নামায পরে নিলাম।
 নামাজ শেষ করে একটু ঘুমিয়ে পড়লাম।
 হঠাৎ কে জানি দরজায় খুব জোড়ে জোড়ে নক করছিল।
 উঠে গিয়ে দরজা খুলেই দেখি মা দাড়িয়ে আছে।মা আমার দিকে তাকিয়েই ব্রু কুচকে বলল,কিরে আপন তোর কি হয়েছে।তোর চোখ মুখ গুলো এমন লাগছে কেন??সারা রাত ঘুমাস নি নাকি?
 নাকি কোন কারণে খুব চিন্তায় আছিস??
 আমি শুধু একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,কিছু না তো মা।
 তুমি শুধু শুধু ই চিন্তা করছো।
 বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
 ফ্রেশ হয়ে আসতেই মা বলর,তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে নে।পরে শারমিনদের বাড়ি যা।ওইখানে তোর আজ কত কাজ।তোরা না করলে কে করবে বল তো??
 আমি চুপচাপ খেতে বসে পড়লাম।একদমই খেতে ইচ্ছে করছিলো না।এমনিতেই মনে সুখ নাই।এর মধ্যে নিজের প্রিয়তমার বিয়েরকাজ নিজেকেই করতে হবে।
 মনে মনে বলছিলাম,আল্লাহ্ গো আর কত ধৈয্যের পরিক্ষা নিবে আমার???
 পরে নাস্তা শেষ করতে না করতেই শারমিনের আগমন।আমার দিকে কেমন জানি একটা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
 মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে চায়।আমি ডেকে কাছে বসালাম।
 ….কিরে খেয়েছিস???
 ….না।
 ….কেন, খাসনি কেন??
 …এমনি ইচ্ছে করছে না।
 ….তোর আবার হঠাৎ খেতে কেন ইচ্ছে করছেনা??
 …এমনি।বলেই চলে যাচ্ছিলো
 আমি পিছু ডাকলাম।
 একটা প্রশ্ন করি তোরে??
 সত্যি কথা বলবি।
 কি প্রশ্ন???
 ….তুই কি এই বিয়েতে রাজি না???
 …একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল,আমার আবার রাজি অ-রাজি।
 মানে???
 কিছুই না।
 আমি একটু রেগে বললাম,তোর রহস্যময় কথা বলা বন্ধ করবি??
 আমার ধমকে শারমিন কেদেঁ ফেললো।পরে আমার সামনে দাড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদঁতে শুধু করলো।
 কিরে কি হলে তোর?কাঁন্না কেন করছিস।বল আমায়???
 কিছুই না বলে চলে গেলো।
 মেজাজ টা গেলো আরো খারাপ হয়ে।এমনিতেই পুড়া গা,আবার দিয়ে গেলো লেবুর রস।
 –
 পরে আল্লাহ আমাকে একটু সময় করে দিলো।হঠাৎই কোন একটা সমস্যার কারণে বরপক্ষ আংটি পড়ানোর ডেট টা একটু পিছিয়ে দিলো।
 আমি তো মহা খুশি।
 –
 পর আর কি সাত পাঁচ না ভেবে বাসায় বলেই ফেললাম,আমি যে শারমিন কে বিয়ে করতে চাই।
 কিন্তু আমার পরিবার মানতে রাজি না।
 ওরা বলে শারমিনের যেখানে বিয়ে ঠিক হয়েছে,সেখানেই বিয়ে হলে ভালো হবে।
 এইদিকে বরপক্ষ ও কোন ভাবেই এই বিয়েটা ভাঙতে রাজি না।
 পরে আর কি। বহু কষ্টে ও শেষ রক্ষা হলো না।
 শারমিনের ওই ছেলের সাথেই বিয়ে পাকাপাকি হলো।শীগ্রয় ই বিয়ের ডেট।
 –
 দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো।আমি ও এইদিকে দেশের বাহিরে চলে যাওয়ার জন্য সব ঠিক ঠাক করছিলাম।কারণ চোখের সামনে এত প্রিয় মানুষ টা কে অন্যের হতে দিতে পারবোনা।যদিও শারমিন আমাকে ওরে নিয়ে পালিয়ে যেতে ও বলছিলো।কিন্তু আমি পরিবারের মান সম্মান আরো অনেক কিছুই ভেবেই যাইনি।
 –
 পরে চলে আসলো সেই দিন।যেদিন শারমিনের বিয়ে।ভাগ্যক্রমে ওইদিন ই সকাল ৬ টায় আমার ফ্লাইট।
 আমি সিঙ্গাপুর চলে যাবো।জানিনা আর কখনও দেশে ফিরবো কিনা।
 যদি কখন ও দেশের প্রতি, পরিবারের মানুষ গুলোর প্রতি টান অনুভব হয়, তবে হয়তো আসতে ও পারি।আসলে খুব ক্ষোভ জন্মেছিল পরিবারের প্রতি।কারণ আমার পরিবার চাইলে ই শারমিন কে আমার করে দিতে পারতো।কিন্তু তাড়া নানা অযুহাতে আমার থেকে শারমিন কে আলাদা করে দিয়েছে।ওরা আমার মনটা বুঝতে চাইলো না।
 একটি বার ভাবলো না সেই ছোট্টবেলা থেকে আমি হৃদয়ে কত স্বপ্ন পুষে রেখেছি শারমিন কে নিয়ে।অথচ তাড়া আমার স্বপ্ন গুলো এক নিমিষে ভেঙে দিলো।
 কষ্টে বুকে পাথর চাপা দিয়ে একটা ছোট্ট চিরকুট লিখে পাড়ি জমালাম সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে।
 জানি চিঠিটা পড়ে শারমিন খুব কাঁন্না করবে।কিন্তু কি করবো,আমি ও যে ওর ভালোর জন্যই ওর থেকে দূরে চলে যাচ্ছি।
 –
 চিঠিটা ছিল এমন,
 প্রিয়তমা…
 জানিস তো আমার জীবনে তুই একজন,যারে নিয়ে বুনা ছিলো আমার প্রতিটা স্বপ্ন।এই হৃদয় টা তে শুধু তোর-ই স্থান।জানিনা জীবনে আর কাউকে তোর জায়গা টা দিতে পারবো কিনা।তবে আমি শুধু চাই তুই খুব ভালো থাক।আমি তোর চোখের সামনে থাকলে তুই কখনই আমাকে ভুলে সংসারে মন দিতে পারবিনা।তাই তোরে ভালো রাখতে দূরে চলে গেলাম।
 কারণ ত্যাগ নাকি মহৎ গুন।
 তাই করার চেষ্টা করলাম।
 তুই মন দিয়ে সংসার করবি।স্বামী,শাশুরী কে ভালো রাখার চেষ্টা করবি।কেননা অন্যকে ভালো রাখার মাঝে ও অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করে রে।এইটা আমি খুব ভালো জানি।
 জানি চিঠিটা পড়ে খুব কষ্ট পাবি।আর তোর কষ্টটা কিছুটা লাঘব করতেই আমি আগে থেকে সিঙ্গাপুর যাবার কথাটা তুরে বলিনি।
 ভালো থাকিস তুই।আর আমাকে মাফ করে দিস রে পাগলি।তোর ভালো করার চেষ্টাই করেছি সব সময়।তাই আজকে ও তাই করলাম।
 All the best ra…
 চিঠির
 ভিতরে রাখা চেইন টা তোর বিয়েতে দেওয়া আমার উপহার।
 ইতি,আপন।
 –
 আমি শুধুমাএ আমার বড় ভাইকে সাথে নিয়ে এয়ারপোর্ট এ গেলাম।
 পরে সিঙ্গাপুর চলে গেলাম।
 –
 প্রায় দুই বছর পর একদিন বাড়িতে কল করলাম।
 কল করে শুনলাম,শারমিনের নাকি একটা ছোট্ট রাজকন্যা হয়েছে।নামটা আমার পছন্দের নাম আরোভী রেখেছে।
 আমি একদিন মজা করে বলেছিলাম,আমার প্রথম কন্যার নাম হবে আরভী।
 আমার আর দেশে ফেরার ইচ্ছে নাই একদম।নিজের অপূরনীয় ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন গুলো নিয়ে একা একা ই খুব ভালো আছি।আর বাকি জীবন এইভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই।
  










