ক্লাস এইটের মেয়ে

ক্লাস এইটের মেয়ে

গতকাল স্টুডেন্টকে পড়িয়ে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়! এমন দুষ্টু স্টুডেন্ট আমি পাইনি।এখনকার ছেলে মেয়েগুলা খুব দ্রুত পেঁকে যায়।কিছু বলা যায় না।একটা বলতে গেলে সাথে ওরা পাঁচটা যোগ করে শুনিয়ে দেই।ক্লাস সিক্সে পড়ে একটা ছেলে সে নাকি প্রেম করে।ডেটিং এ যায়।রেস্টুরেন্ট পার্কে যায়।স্টুডেন্টের এমন কথা শুনে মাথা আমার হ্যাঙ হয়ে রইলো।

আমি স্টুডেন্টের এমন কথা শুনে বললাম “সামনে তোমার ব্রাইট ফিউচার এসবের পিছনে না দৌড়ে লেখা পড়া করো মন দিয়ে “! ছাত্র আমার কথা শুনে আমাকে বলে “স্যার ব্রাইট ফিউচার দিয়ে কি করবো ;দুদিন পর তো মারাই যাবো “। “আজেবাজে কথা কেনো বলো এসব প্রেম ছেড়ে পড়ায় মনযোগ দাও “”স্যার মন যখন প্রেমে পড়ে তখন কি আর পড়ায় মনযোগ থাকে।স্যার এগুলা আজেবাজে কথা না।স্যার কাল যদি মারা যাই তাহলে এত পড়ে লাভ কি আমার। তাই প্রেম করেই মরি “!

ছাত্রের এরকম কথা শুনে আহাম্মক হয়ে গেলাম।মরার ভয়ে পড়তে পারবেনা।কি বলে এসব আজ কালকার পুলাপাইনে।এগুলা আমার মাথায় আসেনা।আমি যে প্রেম করিনা তা কিন্তু নয়।আমারও একটা ছোটখাটো গার্লফ্রেন্ড আছে।কিন্তু এখন আপাতত ব্রেকাপ কাল চলতেছে।কিন্তু আমি তো আর এই পিচ্চির মত এত ছোট বয়সে প্রেম করিনি।ক্লাস সিক্সেও তো পরীক্ষার সময় বাবা গিয়ে দিয়ে আসতো।প্রেম কি বা কেমন কেনো করে ভাল লাগা বা ভাল কাউকে লাগবে এমন কোন কিছুই মাথায় ছিল না।পড়তে হবে না পড়লে স্যার মারবে এটাই শুধু জানতাম।কিন্তু এখন তাদের মার খাওয়ার কোন ভয় নাই;পড়ার কোন দরকার নাই।আগে প্রেম তারপর পড়া।

এই মুহূর্তে আমি বিশাল পেটের খিদেয় ভুগতেছি।বললাম না গতকাল স্টুডেন্টকে পড়িয়ে আসতে লেইট হয়েছে।মেসে এসে দেখি খাবার সব শেষ।কোন হ্রার্মিই খাবারটা তুলে রাখলো না আমার।কি আর করবো হালকা মুড়ি খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম।এখন সকাল আট টা বাজে আমি এখনো শুয়ে আছি।কমড়ে পেঁচ দেওয়া লুঙ্গিটা খুলে যাচ্ছে পেটের খিদায়।সকাল বেলা হোটেলে নাস্তা করি আর বুয়া দুই বেলা খাবার রান্না করে দিয়ে যায়।কিন্তু গরিবের এত ফকির হইছি যে টাকা নাই হোটেলে গিয়া নাস্তা করবো।এদিক দিয়া গার্লফ্রেন্ডের সাথে ১০ দিনের জন্যে ব্রেকাপ হইছে।এমন সময় ব্রেকাপ টা না হলে অন্ততপক্ষে গার্লফ্রেন্ড কিছুটা হেল্প করতো।

টেবিলের উপর ফোনটা আমার বেঁজেই চলছে।এই নিয়ে তিনবার বাঁজতে লাগলো।কিন্তু আমি ফোনটা রিসিভ করছিনা।কথা বলার মোড নাই।পেটে খিদে থাকলে কি আর মুখে কথা বের হয়? ফোনটাতে আবার শব্দ হলো মেসেজ আসার।হাতে নিয়ে দেখলাম আকাশের মেসেজ।মেসেজে বললো তামিম কই তুই ফোনটা ধরো ভেরি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তোর সাথে। আকাশ হচ্ছে আমার বন্ধু তার সব কথায় গুরুত্বপূর্ণ। এটা তার ধারণা।তবে আমি তার কথায় কোন গুরুত্ব খুঁজে পাই না।যাইহোক ফোনটা আবার বেঁজে উঠলো।স্কিনে আক্কু নামটা ভেসে উঠলো।আকাশ থেকে আক্কু ইজ এ ভালবাসার নাম।যাই হোক ফোনটা রিসিভ করলাম।

“দোস্ত কই তুই ” আক্কু বললো।আমি বললাম”আমারে কই তুই না জিঙ্গেস করে তোর গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বল ;পেটে অনেক খিদা বেশি কথা বলতে পারবো না।””তামিম তোকে আমি পেট ভরে খাওয়াবো।আমার কথাটা শুনে সমস্যাটা সমাধান করে দে “খাওয়ানোে কথা শুনে পেটে ডাক দিয়ে উঠলো।পেট শুধু খাবো খাবো করছে।আক্কুকে বললাম ঠিকাছে তুই খাবার নিয়ে আমার মেসে আয়।তোর কথা শুনি ; তারপর দেখছি।”ঠিকাছে আমি আসছি কোথাও যাস না “। এই বলে আকাশ ফোনটা রেখে দিলো। আমি ওঠে ফ্রেশ হতে গেলাম।খাওয়া লাগবে তো।

ওয়াশ রুমে ঢুকার সাথে সাথেই দরজায় নক পড়লো।বুঝতে পারলাম আক্কু আসছে।এত তাড়াতাড়ি কেমনে আসলো; তারমানে সে আমার মেসের আশেপাশেই ছিলো।তার কথাটা মনে হয় আজকে গুরুত্বপূর্ণই হবে।আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দরজা খুলে দিলাম।দেখি আকাশ রুটি কলা সাথে সিগারেট হাতে নিয়া দাঁড়িয়ে আছে।আমি তাকে ভেতরে আসতে বললাম। “আচ্ছা তুই রুটি কলা আনলি ঠিক আছে কিন্তু সিগারেট কেনো আনলি, আমি কি সিগারেেট খাই নাকি? ” সরি দোস্ত মাথা ঠিক নাই;তুই এগুলা খেয়ে আমাকে উদ্বার কর। ঠিকাছে খাচ্ছি। কিন্তু তোর সমস্যার কথাটাও বল সাথে।খাবারও খেতে থাকি তোর সমস্যাটাও শুনি। “দোস্ত আমি প্রেমে পড়েছি ”

বাহ ভাল কথা তুই প্রেমে পড়েছিস।তা এটা সমস্যার কি এমন।সমস্যা আমি তাকে বলতে পারবো না।তোকে আমার হয়ে বলে দিতে হবে।তুই তো আমাদের বন্ধু বান্ধব অনেকের রিলেশন করিয়ে দিলি প্লিজ আমারটাও একটু করিয়ে দে। প্রশংসা শুনে বললাম।ঠিকাছে ঠিকাছে তোরটাও করিয়ে দিবো।তো মেয়ের বায়োডাটা বল।নাম কি কই পড়ে।দোস্ত নাম খুঁজ নিয়ে জেনেছি তিন্নি।আর এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

আমার মুখের ভেতরে রুটি ছিলো।আর কলার মধ্যে কামড়টা দিতে চাচ্ছিলাম।কিন্তু আর দিতে পারলাম না।যখন শুনলাম আক্বু একটা পুঁচকে ক্লাস এইটের মেয়ের প্রেমে পড়েছে।মুখ থেকে রুটি বের করে হাতের কলাটা আক্ককে দিয়ে বললাম যা শালা।তোর রুটি কলা খাবো না।মেয়ে পাইলিনা।শেষ পর্যন্ত ক্লাস এইটের বাচ্চা মেয়ে। দোস্ত বাচ্চা মেয়ে না বড়ই আছে।দোস্ত প্লিজ রাগ করিস না।আমার তার সাথে প্রেম করতেই হবে।জীবনে একটা প্রেমও করিনাই।প্লিজ দোস্ত।আর তুই তিন্নিকে আমার কথা বলে আসার পর পরেই রেস্টুরেন্টে যাব।দু’জন মিলে অনেক খাবো। খাবার কথা শুনে পেটটা মুচর দিয়ে উঠলো।আক্কুকে বললাম ঠিকাছে যা তোর জন্যে এই ছোট মেয়ের কাছে গিয়ে তোর জন্যে প্রেম নিবেদন করবো।আমার কথা শুনে আক্কুর মুখ খুশিতে ভরে উঠলো।

আমরা এখন জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।পরীক্ষা প্রায় শেষ।সবাই বের হচ্ছে।আমি আক্কুকে জিঙ্গেস করলাম “কিরে কই তোর তিন্নি ” আক্কু আমাকে হাতে ইশারা করে বললো ঐযে সাদা ড্রেস পড়া ঐটাই তিন্নি।আক্কু হাতে দেখিয়েছে সেটা আবার মেয়েটাও লক্ষ করলো দেখলাম।ভাবলাম কিছু একটা অবশ্যই আছে।আর মেয়েটাও দেখতে খারাপ না।আক্কুর চয়েজ আছে।আমরা রাস্তার অপজিট সাইডে দাঁড়িয়ে আছি।মেয়ে আর তার কিছু বান্ধবি ঐপাশে রাস্তা ধরে হাটছে।আক্কুরে আমারে বললো “দোস্ত তিন্নি চলে যাচ্ছে প্লিজ কিছু একটা বলে আয় “।আমি আক্কুকে আসস্ত করলাম।এই বলে আমি রাস্তা পার হবার জন্য যাচ্ছি।ওপাশেই তিন্নি হাঁটছে। এইযে শুনেন “জ্বি আমাকে বলছেন? ” তিনবার ডাক দেবার পর ফিরে বললো তিন্নি।

হ্যাঁ আপনাকেই বলছি।একটা কথা বলতে এসেছি। কি বলবেন আমি জানি! জানেন আপনি? হুম জানি।বলবেন আমি খুব সুন্দর,আমার ঠোঁটের নিচে তিলটার জন্যে আমার হাসিটা সুন্দর।আর বলবেন আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে। মাইয়ার কথা শুনে পুরাই ‘থ’ হয়ে গেলাম।এই মাইয়া কি আসলেই এইটে পড়ে?যাক ভাল হয়েছে তুমি না বলে আপনি করে বলেছি।এই মাইয়া তো দেখতেছি এক পা আগে চলে।যাই হোক আমি আক্কুর হয়ে আসছি তাই আক্কুর কথা বলতে হবে।.

আচ্ছা শুনেন আমি আপনাকে এসব কিছুই বলবোনা।আসলে আমার বন্ধু আকাশ অনেক ভাল ছেলে।সে কখনো প্রেম করেনি।সে আপনাকে পছন্দ করে ভালবাসে। তারপর মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো “আপনার বন্ধুকে সরি বলা ছাড়া আমার কাছে কিছু নেই।কারণ আমার অলরেডি ৩জন বয়ফ্রেন্ড আছে।আর কতগুলা যে প্রোপোজ করছে জানা নাই।আর লাইনে যে কত আছে তা অগণিত।তাই আপনার বন্ধুকে সরি বলতে হচ্ছে। “কিন্তু যদি আপনি আমার সাথে প্রেম করতে চান তাহলে ভেবে দেখবো।”

আমি আর কিছুই বললাম না।বলার কিছু নাই।উল্টা ঘুরে হাঁটা শুরু করলাম।আক্বুর কাছে এসে বললাম দোস্ত জীবনে বড় বাঁচা বেঁচে গেলি এই মেয়ের সাথে প্রেম না হওয়াতে।তোর জীবন ত্যানাত্যানা করে ফেলতো।তারপর আক্কুরে ভাল করে সব খুলে বললাম।আক্কু মাথায় হাত দিয়া ডিপ্রেশনে চলেগেল।চোখ দিয়া তার নুনা জ্বল বের হচ্ছে।

ভাবতে অবাক লাগছে ক্লাস এইটের মেয়ের যদি এমন হয়।তাহলে প্রেম ভালবাসার দাম কেনো থাকবে।আক্বু আমাদের মত খাঁটি প্রেমিকদের কি হবে।পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম মায়ার মেসেজ।দেখা করতে বলেছে।আজকেই ব্রেকাপকে প্যাচাপ করার দিন।কারণ দশদিনের ব্রেকাপ ছিল আমাদের।মায়া মেয়েটা বড্ড ভাল আমি ছাড়া কোন বয়ফ্রেন্ড নাই কোন ছেলে বন্ধুও নাই।আমাকে অনেক ভালবাসে।আর আমিও তাকে ভালবাসি অনেক।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত