কাঠগোলাপ

কাঠগোলাপ

– একে একে সবার মুখগুলো তো। (ডিসি বিমল)
– জ্বী স্যার খুলছি।
– দেখ মেয়ের বয়সের মেয়ে এরা। এইসব কি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
– কিছু বলার নেই স্যার।
– আচ্ছা নীরব কই গেল? আসে নি এখনো?
– নিরব স্যারকে ফোন দিয়েছি। বললো কাছেই আছে আসছে। কিছুক্ষন পর..

– কি ব্যাপার? এতো দেরি করলে যে নিরব? তুমি তো ডিউটিতে অবহেলা করো না।
– না স্যার আসলে আম্মুর শরীরটা তো ভালো না। তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।
– ঐ সমস্যা আবার?
– জ্বী স্যার।
– তো বিয়েটা করে ফেলো এবার। কথাটা বলেই ডিসি বিমল স্যার হো হো করে হেসে উঠলো)
– বাদ দেন স্যার এইসব। কথা হচ্ছে এগুলাকে কি করবেন এখন?
– ভাবছি কি করবো। আরেকটা সুযোগ দিবো নাকি আদালতে পাঠাবো সেটা ভাবছি।
– আপনার ইচ্ছা। তা কতজন সব মিলে?
– অল্পকিছু জন নীরব। এই পাঁজ জনের মতো।

এতোক্ষন কথা হচ্ছিল ডিসি বিমল আর এসি নীরবের মাঝে। কথোপকথন শেষ হওয়ার মাঝে নীরবের চোঁখ কাওকে দেখে থমকে যায়। কিছুটা অবাক হয়েছে নীরব।

– কি ব্যাপার নীরব চুপ হয়ে গেলে যে?
– নীরব?
– জ্বী স্যার। না স্যার কিছু না।
– মনে হলো ভূত দেখে ফেলেছো?
– কিছুটা এরকমই। খানিক সময় বাদ…
– স্যার এদের কি ছেড়ে দিবেন? (নীরব)
– ছেড়ে দিবো। তবে এদের পরিবারদের ফোন দিয়েছি। তারা আসছে। এদের কথা বার্তা শুনে বুঝলাম বর্তমান সময়ের প্রেমের ব্যাপার সব। বিয়ে দিয়ে দিতে বলি এদের পরিবারকে।

– অহ সবারইকি স্যার?
– না একটা মেয়ে বাদে। বললো কেও নাকি নাই তার।
– তো তাকে কি করবেন?
– কি আর করবো। আদালতে সোপর্দ করি। তারপর তারা যা করবে।
– স্যার একটা কথা বলবো?
– বলো।
– মেয়েটাকে কি আমার বাসায় নিয়ে যেতে পারি?
– তুমি এই কথা বলছো? কোন কারন?
– হয়তো স্যার। কিন্তু কারনটা বলতে চাইছি না এই মহুর্তে।
– আমি জানি তুমি কোন অন্যায় করবে না। তো যাও নিয়ে যাও কোন সমস্যা যেন না হয়।
সবকিছু সমাল দিতে প্রায় রাত দুইটা বেজে গিয়েছে। গেটের ঠক ঠক আওয়াজে নীরবের মা দরজা খুললো।

– এতো রাত করলি যে?
– দেরি হয়ে গেল।
– অহ। তো ভেতরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নে। আমি খাবার দিচ্ছি।
– ক্ষুধা নেই।
– তো এতো রাতে এই মেয়ে তোর সাথে। একে তো চিনলাম না?
– তুমি চিনবে না। কালকে চলে যাবে।
– ওমা সে কি? কাল কেন যাবে দুই একদিন থাকবে তারপর যাবে। মা তুমি ভেতরে আসো।
– তুই খাবি না?
– না।

– যাইহোক মেয়েটা খুব সুন্দর। বউমা করার ইচ্ছা নাকি? খুব মানাবে তোর সাথে।
– হাসালে আম্মু।
– কেন?
– তুমি বুঝবে না। সত্যটা জানলে তুমি ঘৃণা করবে তাকে।
– পাগল নাকি তুই? এতো সুন্দর মিষ্টি একটা মেয়ে।
– ঘুমাবো আম্মু।
– ঠিক আছে ঘুমা।

পরেরদিন সকালেই বেরিয়ে পরলো নীরব। গায়ে নিজের ইউনিফর্মটা জড়িয়ে। সারাদিনের ব্যাস্ততা সেরে সন্ধ্যাবেলায় বাসাতে আসলো।

– জানিস বাবা মেয়েটা খুব লক্ষী। আমাকে সারাদিনে একটা কাজও করতে দেয় নি।
– তাই?
– হ্যাঁ বাবা। মেয়েটাকে বিয়ে কর না বাবা।
– মিথ্যে মায়াতে নিজেকে জড়িয়ো না। শেষে কষ্ট পাবে।
– আরে না। কিসের মায়া। আমি সত্যি বলছি। নামটাও খুব মিষ্টি, নিলীমা।
– তাই? ক্ষুধন লাগছে। কিছু খেতে দাও।
– তুই পোশাক ছেড়ে আয়। আমি খেতে দিচ্ছি।

মিনিট পনেরো পর নীরব টেবিলে খেতে বসেছে। মায়ের জোড়াজুরিতে নিলীমাও খেতে বসলো। নীরব শুধু একবার নিলীমার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়াতে মনযোগ দিল।

– নীরব?
– কি?
– নিলীমার দুনিয়াতে কেও নেই।
– তো?
– ভাবছি নিলীমার সাথে তোর বিয়ে দিলে কেমন হয়। শুনলাম তুই নাকি ওকে আগে থেকে চিনিস।
– আর কিছু বলে নি?
– আর কি বলবে?
– এখন কি করে বলেন নি।
– আমি শুনতে চাই নি।
– নিজেকে শুধু মোহ এর মাঝে রেখ না।
– দেখ বাবা….
– নিলীমা আপনি কাল সকালে চলে যাবেন। কোথায় যাবেন আমি জানি না। সকালে ঘুম থেকে ওঠে যেন আপনাকে আর না দেখি।

নীরব ক্ষিপ্ততা নিয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল। ঘড়ির কাটাতে রাত বারোটা ছুই ছুই করছে। ছাদে রাখা চেয়ারে বসে চোঁখ বুজে সিগারেট টানছে। কোন এক বিষণ্ণতা তার মাঝে কাজ করছে। এমনটা কেন হলো। চোঁখের কোন ঘেষে কখন যে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার জানা নেই। ঠিক বছর সাতেক আগের দিনগুলো মনে পড়ছে তার।
নীরব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর নিলীমা কোন এক নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পহেলা বৈশাখের এক রৌদ্রময় বিকেলে নিলীমাকে প্রথম দেখেছিল নীরব। বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল সে। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগে তার। সারাটা বিকেল নিলীমার আশে পাশেই ঘুরছিল সে।

ভীড়ের মাঝে হয়তো নিলীমা তাকে দেখতে পায় নি। মাঝে কয়েকটা সপ্তাহও কেটে গেল। মনটা যে পড়ে আছে সেই মেয়েটির কাছে। তাকে কি খুজে পাবে নাকি পাবে না সেই আক্ষেপে। পেয়েছিল খুজে নিলীমাকে। পেয়েছিল নীল সাদার ভার্চুয়াল জগৎের দ্বারা। কোন এক মেঘলাছন্ন দিনে হঠাৎ নীলকাব্য নামের কোন এক আইডিত তার চোঁখ আটকে যায়। ছবিটা দেখে চিনতে সময় লাগে নি। এটাতো সেই মেয়েটা, যাকে আমি পাগলের মতো খুজছি। প্রথমের দিকে মেয়েটা নীরবের টেক্সটের উত্তর না দিলেও আস্তে আস্তে উত্তর দিতে শুরু করছে। ধীরে ধীরে তাদের মাঝে কথাটাও বেশ হতে থাকে। কে যেন বলেছিল, মনের কথাটা ভালোবাসার মানুষকে দ্রুত বলে দিতে হয়। না হলে পরে আফসোস করতে হয়।

– আচ্ছা নিলীমা তুমি কাওকে পছন্দ করো?
– এক সময় করতাম। তবে এখন করি না।

কথাটা শুনে নীরব খুব আনন্দ পেল। যাইহোক মেয়েটির মনে কেন নেই। এভাবে আরো কিছুদিন গেল। ম্যাসেন্জারের টেক্সটটাও আস্তে আস্তে মোবাইলের কথাতে রূপান্তর হলো। ছোটখাটো একটা জব করতো নীরব। নিলীমার ছোট ছোট আবদারগুলোও পূরণ করার চেষ্টন করতো নীরব।

– নিলীমা তোমাকে দুইটা কথা বলার ছিল।
– বলো।

কিছু না ভেবে নীরব বলে বসলো। কারন, নিলীমার সাথে কথা বলার সময় সেও বুঝতে পারতো নিলীমাও তাকে পছন্দ করে।

– ভালোবাসি তোমায়। খুব ভালোবাসি।
– মানে?
– কিছু না।
– সামনা সামনি যদি ভালোবাসি নাই বললে তাহলে ভালোবাসলে কই?
– (নীরব চুপ করে আছে)
– দেখ করো পরশু দিন।
– ঠিক আছে।

নীরব এতটুকু নিশ্চিত হয়েছিল নিলীমা আসলেই তাকে পছন্দ করে। না হলে দেখা করতে কেন চাইবে। দুইরাত একদিন পার হলো। কাঙ্খিত দিনের বিকেল বেলা চলে আসলো। দেখাও হলো দুইজনের। কথাবার্তা, ঘুরাঘুরি, সবিই হলো। নিলীমা চলে যাওয়ার সময় নীরব বলে উঠলো..

– নিলীমা?
– হুম।
– উত্তরটা দিবে না?
– কোনটা?
– যেটা বলেছিলাম।
– পরে বলবো।

নিলীমা চলে গেল। কিন্তু নীরব খুশি। কারন, নীরবতা যে সম্মতির লক্ষন। কিন্তু নিলীমা আর আগের মতো নীরবের টেক্সটের উত্তর দেয় না। ফোনটাও করে না। নীরব বুঝতে পারছে নিলীমা তাকে এভোয়েড করছে। তবুও নিজেকে বুঝ দিতে লাগলো। হয়তো ব্যাস্ত আছে। বেশ কিছুদিন পার হলো।

– আগামীকাল অামার সাথে দেখা করো। (নীরব)
– কেন? (নিলীমা)
– কথা আছে। আসলে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।
– এতো দেখা করার কি আছে?
– প্লিজ…
– কাল বিকেলে আসবো।

নীরব কিছুটা সস্তি পেল। পরেরদিন ঠিক সময় পৌঁছে গেল। নিলীমা আসছে দেখে তার মনে একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।

– বলো কি বলবে?
– তোমাকে দুইটা কথা বলতে চাই।
– কি?
– প্রথমতো তোমাকে ভালোবাসি।
– দ্বিতীয়?
– দ্বিতীয়তোও তোমায় ভালোবাসি।
– আপনি কান্না করছেন কেন?
– না। চোঁখে কি যেন পড়লো। কিছুক্ষন পর…
– আমাকে যেতে হবে।
– চলে যাবে?
– হুম।
– উত্তরটা দিলে না?
– পরে বলবো?
– কবে? এখন বলো।
– রাতে বলবো। সমস্যা নেই। চিন্তা করো না। নীরব অনেক খুশি। কারন সে নিশ্চিত হয়েছে নিলীমাও তাকে ভালোবাসে। রাত্রি দশটায় নিলীমার ফোন..

– নীরব দেখ তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে। ভালো বন্ধু। তবে আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। আসলে তোমাকে বলা হয় নি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। নীরব কথাটা শুনে স্তম্ভ হয়ে গেল। ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছে। দুনিয়াটা ঘুরে বসলো তার। নিজেকে কিছুটা সামাল দিয়ে নিলীমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না।

ইদানীং নীরব পাগলের মতো হয়ে পরেছে। ঠিক মতো খায় না। সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়। সারাদিন সিগারেটের উপর দিয়ে চলে। তবুও নিলীমাকে সর্বদা টেক্সট করে। নীরব বুঝতে পারছে নিলীমা তাকে মিথ্যা বলেছে। নীরবকে না বলার কারনটাও বুঝতে পারছে। যোগ্যতা, শিক্ষা, পেশা কোনটাই নিলীমার সাথে যায় না। কারন সে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। নীরবের চাচাতো বড় ভাইটাও নিলীমার সাথে কথা বলেছে। কোন কাজ হয় নি। সবাই বলেছে মেয়েটা শুধু নীরবকে ব্যাবহার করেছে।

– তোমাকে আজ দেখলাম একজনের সাথে।
– আমকর ফ্রেন্ড ছিল।
– ফ্রেন্ড? ফ্রেন্ডের সাথে সন্ধ্যার অন্ধকারে থাকা যায়?
– দেখ নীরব, তুমি আমাকে আর টেক্সট বা কল করবে না।
– কথা বললেও কি খুব সমস্যা?
– হ্যাঁ। কারন তুমি তো পাগল। পাগলের সাথে কথা বলা যায় না।

– তাই না? তার মানে এতোদিন কথা বলাটা ছিল তোমার কাছে সময় পার করা। এতোদিন শুধু ব্যাবহার করেছো? নিলীমা আমি জানতাম তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছো এতোদিন। তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে নেই সেটন জানি। আমার যোগ্যতা, শিক্ষা তেমন না সেটা বললেই পারতে। বয়ফ্রেন্ড আছে বলে দিলেই হতো। অন্তত এতোটা কষ্ট পেতাম না। তবে একটা কথা মনে রেখ তোমাকে ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, ভালোবাসবো। কিন্তু তুমি বুঝলে না। প্রতি ওয়াক্তে আল্লাহর কাছে তোমাকে চাই।

– আচ্ছা সে কি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে? নাকি শুধুমাত্র তার চাহিদা পূরণের জন্য তোমাকে ভালোবাসে? আমার তো তেমনটাই লেগেছিলো তাকে। যাই হোক তুমি সুখে থেকো এটাই চাই। আর হ্যাঁ! যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি ঠিক ততটা কষ্ট তুমি তার কাছে থেকে পাবে। তখন আমাকে স্মরন করো। ঠিক এতোটাই ভালোবাসবো তখনো।

– দেখ তোর কথা শুনতে আমার রাগ হয়। কেন বুঝিস না তোকে আমার পছন্দ না। পরবর্তীতে ফোন বা টেক্সট করবি না। আর তোর বদদোয়া তোর কাছে রাখ। বুঝলি?কাধে হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে চোঁখ খুললো নীরব।

– বাবা রে এতো রাতে ছাদে কেন তুই?
– জানো আম্মু। আজকে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। খুব জোড়ে চিল্লাতে ইচ্ছে করছে।
– এটাই সেই মেয়েটা। তাই না?
– হ্যাঁ।
– তাকে যখন পেলে আপন করে নিলি না কেন?
– সত্যতটা জানলে তুমিও ঘৃণা করবে তাকে আমার মতো।
– কেন? এতোবড় কোন অপরাধ করেছে সে?
– আম্মু তাকে আপন করবো কি করে? সে তো পতিতা।
– মানে?
– বাংলাতে বেশ্যা যাকে বলে। কিভাবে আপন করবো বলো? যাকে আমার ফোর্সরা হোটেলে পেয়েছে। কিভাবে আপন করবো। ওরে বাসা থেকে চলে যেতে বলো এই রাতেই

– চলে গেছে। (কান্না করছে)
– ওকে এখনি ভালোবাসি আম্মু। কোন মেয়েকে আজ পর্যন্ত আপন করতে পারি নি শুধু ওরে ভালোবাসি দেখে।
– হ্যাঁ ওযদি ধর্ষিতা হতো তাহলে আপন করে নিতাম এখনো। কিন্তু যে টাকার বিনিময়ে সর্বদা ধর্ষিত হয় তাকে আপন করবো কি করে? কিন্তু এখনো ভালোবাসি তাকে। সারাজীবন ভালোবাসবো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত