দ্য জার্নি অফ লাভ

দ্য জার্নি অফ লাভ

অনেকদিন পর ভার্সিটিতে বেশ লম্বা একটা বন্ধ পেলাম।বাড়িতে নাকি বেশ রমরমা একটা অবস্থা চলছে।কারণ আমার চাচা এবার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা করবেন।এক সপ্তাহ পরেই নির্বাচন। ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও বাড়িতে যাওয়া যায়।তবে আমি বাসে যেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। জানালার পাশে বসে বাস জার্নি করার ফিলিংসটাই অন্যরকম লাগে।যথারীতি জানালার পাশের একটা টিকিট কেটে বাসে উঠে বসেছি।

সবাই মোটামুটি উঠে পড়েছে বাসে।শুধু আমার পাশের সিট আর তার সাথে ঐপাশের সিটটা খালি।বাস ছাড়ার সময় অলরেডি ২০ মিনিট পার হয়ে গেছে।কিন্তু ঐ দুই জনের জন্য বাস ছাড়ছে না এখনও। মেজাজটা খারাপ হচ্ছে আরও বেশি।যে কারণে ট্রেনে যাই না তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ট্রেন দেরী করে ছাড়ে।বাসে অন্তত রাস্তায় জ্যাম থাকলেও বাস ছাড়ার সময়টা খুব বেশি পিছায় না।অথচ এখন সেই বাস ছাড়তেই কিনা দেরী হচ্ছে। বাসের সবাই মোটামুটি বিরক্ত।এভাবে আরও ১০ মিনিট যাওয়ার পর দুইটা মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বাসে উঠলো। বাসে উঠামাত্রই আমাকে একটা মেয়ে বললো,

>>এই যে শুনুন আপনি ঐপাশের সিটটাতে গিয়ে বসেন।আমি আর আমার বান্ধবী এক সাথে এই পাশের দুটো সিটে বসবো।

এমনিতে হয়তো কেউ বললে আমি উঠে ঐ সিটটাতে বসে পড়তাম।তবে এদের কান্ড দেখে এমনিতেই মেজাজটা গরম হয়ে ছিলো।তার উপর এসে ভদ্রতার কোন বালাই নেই বরং রীতিমতো আমাকে আদেশ করছে সিট থেকে উঠে যেতে। এমনিতেই কষ্ট করে জানালার পাশে সিট ম্যানেজ করতে হয়েছে।তাছাড়া জানালার পাশে না বসতে পারলে বাসের দিকে তাকিয়ে জার্নি করাটা অনেক বোরিং লাগে আমার কাছে।

>>দেখুন আমি জানালার পাশের সিট ছাড়া বসতে পারবো না।আপনারা বরং ঐ পাশে জানালার পাশে যিনি আছেন তাকে আমার পাশে বসতে বলে আপনারা ২ জন ঐপাশে বসেন।

>>আজব তো!! আপনি অন্ধ নাকি??

দেখছেন না ঐপাশের লোকটা ঘুমাচ্ছে।আপনাকে যেতে বলেছি আপনি যান। আমার মেজাজটা ভীষণ খারাপ হচ্ছে তবুও কিছু বললাম না।মেয়েদের সাথে অযথা ঝামেলায় জড়ানোটা বুদ্ধিমানের কাজ মনে হলো না।তাই আমি উঠে গেলাম।

দুইটা মেয়ে ছিলো যার মধ্যে শুধু একটি মেয়েই কথা বলছিলো।অন্যজন চুপচাপ ছিলো। আমি উঠে পাশের সিটে বসে পড়ার পর এরা সৌজন্যতাবোধ হিসেবে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত জানালো না। কিছুক্ষণ পর আমার বিরক্তির মাত্রা আরও একধাপ গেলো বেড়ে।পাশের সিটে যেই লোকটা ছিলো সে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা শুরু করলো।একে তো দিনের বেলা ঘুমাচ্ছে তার উপর নাক ডাকছে। আমি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিলাম।সেই শব্দ ভেদ করেও যেনো নাক ডাকার শব্দ কানে আসছিলো। আমার অবস্থা দেখে পাশের মেয়ে দুটো আবার মুচকি মুচকি হাসছে। এদের চরম অকৃতজ্ঞতা দেখে আমার মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে। কিন্তু আফসোস।

কিছুই করার নেই আমার।জার্নির শেষ দিকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খানিকটা।ঘুম ভাঙার পর দেখি মেয়ে দুটো নেই।হয়তো নেমে গেছে আগের কোন স্টপে।যাইহোক এদের কথা মন থেকে মুছেই ফেলতে চাইলাম।চরম বিরক্তিকর একটা জার্নি শেষে বাড়িতে ফিরলাম। পরেরদিন চাচা এসে ধরলো তার সাথে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে যেতে। চাচার ছোটবেলা থেকেই নাকি স্বপ্ন ছিলো চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন।চাচা মোটামুটি ভালো লোকই বলা চলে।সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে মোটামুটি ভালোই পরিচিত ছিলেন।তবুও আমি নির্বাচনে চাচার জয়ের সম্ভাবনা দেখি না এমনকি চাচা নিজেও দেখেন না। কারণ এখন কেউ সৎ লোক দেখে ভোট দিতে চায় না। তারপরও চাচার ছোটবেলার স্বপ্ন থেকেই নির্বাচনে প্রার্থীতা করছেন। আমাকে সাথে করে নিয়ে চাচা গেলেন পাশের গ্রামে।

আমি একজন ভালো ছেলে হিসেবেই পরিচিত আশে পাশের ২-৩ টা গ্রামে যেহেতু ভালো একটা ভার্সিটি চান্স পেয়েছি সেই সুবাদে। চাচার সাথে বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছি।আর দোয়ার সাথে ভোট চাইছি।কিছুক্ষণ পর একটা বাড়িতে ঢুকলাম। চাচা ঐ বাড়ির মুরব্বির সাথে কথা বলছেন।আমিও তার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। হঠাৎ লক্ষ করলাম বাড়ির ভেতর থেকে গতকালকে বাসে ঝামেলা করা ঐ অকৃতজ্ঞ মেয়েটা বেরিয়ে এলো। আমার দিকে রাগী চোখ নিয়ে কটমট করে তাকাচ্ছে। অথচ রাগী চোখে তাকানোর কথা ছিলো আমার। মনে মনে ভাবছি অভদ্রতারও তো একটা লিমিট থাকে।

এই মেয়ে সব লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। চাচা ভোট চাওয়ার এক ফাঁকে ঐ মুরব্বি তার মেয়ের জন্যও দোয়া করতে বললেন।তার মেয়ে নাকি এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। একটু পর জানতে পারলাম এই মেয়ে আমারই ভার্সিটির।এবছর ভর্তি হয়েছে। মেয়েটা দাঁড়িয়ে শুনছিলো কথা।তারপর চাচা বললো আমার ভাতিজাও তো একই ভার্সিটির।এবার থার্ড ইয়ার। এই কথা শোনার পরই মেয়েটার মুখে কিছুটা অাতঙ্কের ছাপ দেখতে পেলাম।সে বুঝতে পেরে গেছে যে সে অলরেডি ভার্সিটি সিনিয়রের সাথে বেয়াদবি করে ফেলেছে।

দুইদিন পরে বিকালে বাড়িতে এসে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য আবিষ্কার করলাম।ঐ মেয়েটা বাসায় এসে বসে আছে।
আম্মু এমনিতে অনেক ব্যস্ত।কারণ চাচার নির্বাচনের জন্য বাড়িতে বারবার লোকজন আসছে।আম্মু আর চাচী তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। আম্মু বলে গেলো এই মেয়ে নাকি ভার্সিটি নিয়ে কী কথা বলার জন্য এসেছে।আমার তো একেই দেখলেই রাগ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম ভার্সিটি নিয়ে কথা বলতে সে আসে নি। সে এসেছিলো মূলত সরি বলতে। ওর নাম হলো তানিশা।

দেখে মনে হলো বেশ ভালোই ভয় পেয়েছে।না হলে এরকম ফাযিল এক মেয়ে তো এসে সরি বলবে না। যাইহোক ঐদিনের আচরণ আর আজকের কথাবার্তা পুরো ভিন্ন মনে হলো। এর মাঝে আরও দুইদিন ওদের গ্রামে গেলাম।দেখা করলাম তানিশার সাথে। তারপর নির্বাচন শেষ হলো।সবার ধারণা অনুযায়ী আমার চাচা নির্বাচনে পরাজিত হলো। তবে যেরকম ধারণা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক ভোট পেয়েছেন তিনি। চাচাকেও খুব খুশি মনে হলো।নির্বাচনে হারায় তার মনে খুব একটা দুঃখ নেই।বরং তার চোখে মুখে স্বপ্ন পূরণের হাসি। এরপর এক বছর পেরিয়ে গেলো।তানিশা এখন আমার শুধু ভার্সিটির জুনিয়রই নয় বরং আমার জীবনের অনেকটা অংশজুড়েই ও।

এখন প্রায় সময় আমরা এক বাসে বাড়িতে ফিরি।জানলার পাশে যদিও আমিই বসি। আজ হঠাৎ করেই তানিশা জানালার পাশে বসতে চাইলো।আমিও এক বছর আগের কথা মনে করে ইচ্ছে করেই না করে দিলাম। আশ্চর্যজনকভাবে ও আর কিছুই বললো না। আমি শুধু ভাবছি এটা এক বছর আগের তানিশা হলে কী করতো!! হঠাৎ করেই আশপাশের কোথা থেকে যেনো নাক ডাকার শব্দ পাচ্ছি।দুজনে দেখলাম পাশের সারিতে এক লোক নাক ডাকছে।

আমি তানিশার দিকে তাকালাম,তানিশাও আমার দিকে তাকালো।তারপর দুজনেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম ১ বছর আগের কথা মনে করে।আমরা একটু বেশি জোরেই হেসে ফেলেছিলাম বোধহয়। যে লোকটা নাক ডাকছিলো তারও ঘুম ভেঙে গেলো। এতে ভালোই হলো। অন্তত এই বিরক্তিকর নাক ডাকার আওয়াজ থেকে তো মুক্তি মিললো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত