প্রপোজ

প্রপোজ

আমার বন্ধু ফরিদ কিছুদিন আগে এক বিকেলে হন্তদন্ত হয়ে ফোন দিলো আমাকে।
-দোস্ত! একটা কথা কইতাম।
-বলে ফেল।
-ইদানীং আমার খুব একলা একলা লাগে।
-এখন আমি কি করবো? দোকলা দোকলা লাগানোর ব্যবস্থা করবো?
-হ দোস্ত,বুঝছোস তুই।
-সমস্যা কি?
-তোরা ব্যাটা আমারে টাইম দেসনা। তুই পইড়া থাকোস জিএফ নিয়া। রায়হান আর হৃদয়রে তো পাওয়াই যায়না। দোস্ত একটা ব্যবস্থা কর!
-তোর কি দরকার? মাইয়া বন্ধু নাকি গার্লফ্রেন্ড?
-এহেম! দুইটা এক জিনিস না?
-নাহ। বাংলাটা শুধু বন্ধু। কথা কইতে পারবি শুধু আর কিছু করতে পারবিনা। আর ইংলিশটা বুঝে নে।
-আমার জিএফ লাগবো দোস্ত।
-তাইলে মাইয়া পছন্দ কর। অর্ধেক ব্যবস্থা আমি করুম।
-দোস্ত! আমার একটা সমস্যা আছে। আমি যারে একবার দেখি পরেরবার তারে চিনতে পারিনা। পছন্দ করতে পারুমনা। বুদ্ধি বাতায়ে দিবি। যারে ভাল্লাগবো,তারে প্রপোজ কইরালামু। আর তুই চেহারা মনে রাখবি।
-ব্যাপার না। কালকে আমার ডায়েরী নিয়ে যাইস। ওইখানে আছে,বালিকাদের ইম্প্রেস করার তেরোটা উপায়,আর প্রপোজ করার সতেরোটা উপায়। ছন্দে ছন্দে প্রপোজ করার জন্য বাইশটা হুদানুকাব্য। হাদিয়া দুইশ টাকা। দুইদিনের জন্য ভাড়া।
-হালা! এভাবে কস ক্যান? ব্যাপার না,দুইশই তো মাত্র!
-আচ্ছা।
পরেরদিন ফরিদ দুইশ টাকা হাদিয়া আর এক প্লেট ফুসকা খাইয়ে ডায়েরীখানা নিলো।
এর পরেরদিন ফরিদ বললো,তিনটা গোলাপ আনছি। যারে ভাল্লাগে তারে প্রপোজ করুম। কথা বলতে বলতেই ফরিদ এক মেয়েকে দেখে হা করে তাকালো। এমন হা যে মনে হয়,কয়েকশ মাছি একসাথে ঢুকতে পারবে। আমার হাতটা টেনে নিয়ে গেলো। মেয়েকে ডাক দিলো,শোনো! মেয়ে হুদাই হেসে বললো,বলেন।

ফরিদ শুরু করলো,
-বালিকা! যাচ্ছো কোথা?
তোমার সনে আছে কিছু কথা।
তোমার জন্যে হৃদয়ে প্রেম গাঁথা,
শীতের রাতে হয়ে যেও তুমি কাঁথা;
তোমার জন্যে এনেছি গোলাপ তিনটা,
প্রেম নিবেদনে আমার লজ্জিত নীরবতা।
তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আঠারো বছর,
আজ ভেঙ্গেছে সেই অবসর,
অবসান ঘটেছে আজ অপেক্ষার; কতশত দিনের!
আমি তোমার পেছনে ঘুরে বড় ক্লান্ত,
তোমার প্রেমের জন্য ক্ষুধার্ত,তৃষ্ণার্ত।
দাওনা তোমার প্রেমের পরশ, আমি আর পাচ্ছিনা সাহস।
এই বলে ফরিদ হাতের তিন গোলাপ মেয়েটাকে দিলো। আমি ‘এহেম’ করলাম। ছোটোবেলায় ভাঙ্গা রেডিওতে কবিতা আবৃতি যেমন লাগতো,ফরিদের গলায় আমার হুদানুকাব্য শুনে আমার তেমনই লাগছিল।
মেয়ের দিকে তাকালাম। সে কিছু বলতে চাচ্ছে।

‘ভাইয়া! আমি পরশু এই কলেজে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি। আপনাকে আমি আর কখনো দেখিনি। আপনিও দেখেননি। আপনি কিভাবে আমার পেছনে ঘোরেন? এমন চাপা মারার কি দরকার? বাজে অভ্যাস বন্ধ করে পড়ালেখা করেন।’ মেয়েটি ফরিদের দিকে তাকিয়ে বললো। ফরিদ ইয়ে ইয়ে মানে বলার আগেই মেয়েটি চলে গেলো। ফরিদ আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম,দোস্ত! ব্যাপার না! তোর কবিতা আবৃতি সুন্দর আছে। আমার ভাল্লাগছে। আমার মামাকে বললে উনি তোকে বাংলাদেশ বেতারে ‘আবৃতিকার’ হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে পারবে।
ফরিদ খুশী হলো। বললো,কি খাবি বল?
আমি নিজের পিঠ নিজে চাপড়ে দিলাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত