ভালবাসা

ভালবাসা

“আপনি এত সিগারেট খান কেন?” বাক্যটি শুনে রফি মাথা উঁচু করে তাকালো।সামনে অচেনা এক কন্যা দাঁড়িয়ে। রফি কিছুটা বিরক্তির সাথে জবাব দিলো “এটা আমার পার্সোনাল ব্যপার।”

– জানেন না সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
– আমায় দেখে মনে হচ্ছে স্বাস্থের কোন ক্ষতি হয়েছে?
– তা মনে হচ্ছে না।কিন্তু এটা তো জানেন সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়।
– সিগারেটের কারণে ক্যান্সার হয়ে নিজ চোখে কাউকে মরতে দেখেছেন?
– এখন পর্যন্ত দেখিনি।

– তাহলে শোনা কথায় কান দিতে যান কেন?সিগারেট খেয়ে মৃত্যু কিছুটা লটারির মতন।খুব স্বল্প পরিমাণ ভাগ্যবান ব্যক্তি এর কারণে মারা যায়।
– বুঝলাম।কিন্তু আজ থেকে সিগারেট ছাড়তে হবে।
– কোন দুঃখে?আর আপনি কে?হুদাই এসে লেকচার দিচ্ছেন।
– আস্তে আস্তে জেনে যাবেন।
– আমি এখনই জানতে চাই।
– ওকে।তবে আগে সিগারেট ফেলতে হবে।

রফি রাগি একটা ভাব নিয়ে সিগারেট ফেলে দিলো।নীরা রফির ভাবটা দেখে মনে মনে হাসছে।তবে সেই হাসি প্রকাশ না করে বললো “দেখি ওইদিকে একটু চেপে বসেন তো।” রফি হালকা চাপতে নীরা পুরো গা ঘেষে বসলো।

– এটা পাব্লিক প্লেস।তাছাড়া আমরা দুজনে অপরিচিত।আমার মনে হয় আপনি হালকা ওপাশে বসলে ভালো হয়।
– প্রয়োজন নেই।কারণ আমি আপনার হবু বউ।
– বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
– জ্বি না।
– হা হা হা।so funny. আপনার মতন মেয়ে অনেক দেখেছি।ব্যাগে টাকা নেই বলে একটু গা ঘেষে বসে দুই মিনিট গল্প করে চা কফি খেয়ে গায়েব হয়ে যায়।বাট সরি আপু আমি এগুলো পছন্দ করি না।যদি চা বা কফি খেতে চান এমনিতে খেতে পারেন।বিল আমি পে করে দিবো।এতকিছুর দরকার নেই।

– এটা জোক্স ছিলো?
– না।
– তাহলে আমায় দেখে কি মনে হচ্ছে আমি ওই ধরণের মেয়ে?
– আমি এর বাইরেও কিছু মনে করতে পারছি না।

পরক্ষণে রফির ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে মায়ের নাম্বার। রিসিভ করতে ওপাশ থেকে ভেসে এলো “কোথায় তুই?” রফি সাধারণ ভাবে জবাব দিলো “অফিসের সামনে।কেন?”

– নীরা দেখা করতে যাবে।
– কোন নীরা?
– মানে?তোর বাবা তোকে কিছু বলেনি?
– না।কি বলবে?
– উনি ওনার এক কলিগের মেয়ের সাথে তোর বিয়ের কথাবার্তা বলেছে।মেয়েটা দেখতে নাকি খুব সুন্দরী।
– বাহ্।আমার বিয়ের কথা আমি এখন জানতেছি।
– আচ্ছা রাখলাম।তোর বাবা ফোন দিচ্ছে।
– দাঁড়াও, নাম কি বললা?
– নীরা।
– ওকে।

রফি ফোন কেটে দিয়ে সামনে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “আপনার নাম কি যেন?”
মেয়েটা মুচকি হেসে জবাব দিলো “নীরা।”

– আমার আব্বু তাহকে……
– আপনার আব্বু না, আমিই আমার আব্বুকে আপনার ফ্যামিলিতে কথা বলতে বলেছি।
– ভালো সংবাদ।প্রধানমন্ত্রী সফল।যুগ অনেকটা এগিয়ে গেছে।
– হি হি হি।
– আমাকে চিনেন কিভাবে?
– ওইযে আপনি আপনার আব্বুর সাথে আমার জন্মদিনে এসেছিলেন।সেদিন দেখে পুরো ফিদা হয়ে গেছিলাম।এরপর বাসে একবার পাশাপাশি বসে ঢাকাও গিয়েছি।

– তাহলে আপনাকে চিনতে পারছি না কেন?
– তাকালে তো চিনবেন।দুইবার সামনে এসেছি অথচ একবারও ভালভাবে তাকান নাই।
– ওপ্স।
– তবে আপনার এই পার্সোনালিটির জন্য আপনাকে এত ভাললাগে।
– But sorry to say, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
– কেন?[অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে]
– বিয়ের মতন বাজে প্যারায় জড়িয়ে স্বাধীনতা নষ্ট করতে চাই না।এইযে এসেই বললেন সিগারেটের কথা।বিয়ে করলে এরকম আরও অনেক কিছু শুনতে হবে।যা আমার স্বাধীনতার দিকে আঙুল তুলবে।

– আপনার ধারণা ভুল।
– আপনার দিক থেকে ভুল।আমার দিক থেকে ঠিক।
– বাদ দেন।বিয়ে করবেন না তাইতো?
– না।
– ওকে।এই কথা আংকেল’কে বলে দিয়েন।
– ভয় পাই।
– হা হা হা।তাহলে আমার কিছু করার নাই।

নীরা খুশি মনে উঠে চলে গেলো।এদিকে রফি রাগে পুরো জ্বলে যাচ্ছে। সে বিয়ে করতে চায় না।এদিকে বাবার কথা অমান্য করার মতন পর্যাপ্ত সাহসও নেই। বিচিত্র এই জীবন কত না রঙ দেখায়। অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হতে চলে গেলো রফি।কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা। বাবা মা দুজনে টিভি দেখছে।ফারিহাও ভার্সিটিতে।তাহলে ভেতরে কে? কিন্তু সব ভাবনার অন্তঃ ঘটিয়ে বের হয়ে এলো নীরা।খুব সাধারণ একটা শাড়ি পড়া।কোমড় ছুই ভেজা চুল।সে তোয়ালে হাতে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে। এই মুহূর্তে তাকে ঠিক কতটা সুন্দরী লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। রফি থ মেরে নীরার দিকে তাকিয়ে রইলো।নীরা হেসে জিজ্ঞাসা করলো “কি দেখছেন?” রফি থতমত খেয়ে জবাব দিলো “আপনাকে।না মানে আপনি এখানে?”

– বাসায় কেউ নেই।এক একা বোরিং লাগছিলো।তাই চলে এলাম।
– আম্মু বাসায় ঢুকতে দিছে?
– আপনার আম্মুই গিয়ে নিয়ে আসছে।
– বাহ্।আম্মুর সাথেও সেটিং করে ফেলছেন।
– হি হি হি।আপনার ছোট বোন তো জন্মদিনের দিন থেকে ফ্যান হয়ে আছে।
– দেখেন বেশি বাড়াবাড়ি কইরেন না।হয়তো আব্বুর ভয়ে বিয়ে করবো কিন্তু কখনো বউয়ের প্রাপ্ত অধিকার পাবেন না।so, এখানে সময় নষ্ট না করে ভালো একটা ছেলে দেখে সুখের জীবন কাটান।
– হাহ্।ভালো একটু কম বাসলে সোজা আংকেলের কাছে বিচার যাবে।
– আজব মেয়ে তো আপনি।সুযোগে সৎ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন?

নীরা কোন জবাব না দিয়ে চুল মুছতে লাগলো।শাড়ির পাশ দিয়ে হালকা কোমড় বেড় হয়ে আছে। আচমকা সেদিকে রফির চোখ চলে গেলো। মুহূর্তে মন অন্য গান গাইছে। পুরুষ হয়ে এ এক জ্বালা। হালকা দর্শনে জায়গায় পল্টি মেরে দেয়। তবে রফি মনকে বোঝাচ্ছে। এটা ভালো মানুষের কাজ নয়।সে নারী।তাকে সুদৃষ্টিতে দেখো। কিন্তু কে শোনে কার কথা।মন উল্টো বললো, আর কতকাল ভাই?এমন রূপসী মেয়ে দ্বিতীয়টা পাবি না।তোর জন্য তো অনেক করলাম।এবার না হয় আমার জন্য একটু প্যারা সহ্য করে আমাকে আরাম আয়েশ করতে দে। নীরা রফির দৃষ্টি অন্য দিকে দেখে একদম কাছে এসে বললো “কিছু ফিল হচ্ছে?লাভ নাই।বিয়ের আগে নো টাচ কিস।” রফি হকচকিয়ে গিয়ে বললো “আপনাকে দেখে ফিল?ব্যপারটা কেমন হাস্যকর।আমার কোন ফিল-টিল হয় না।”

– মানে?হি হি হি।তাইতো বলি বিয়ে করতে চান না কেন?এবার রহস্য উন্মোচন হলো।
– হেই।আমি তা বলতে চাই নাই।
– আপনি বলছেন।হি হি হি।
– আপনি অহেতুক মজা নিচ্ছেন।
– বুঝি বুঝি।এত হট একটা মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে।অথচ আপনার কোন রিএক্সন নেই।কুচ তো গারবার হে।
– হেই।আমার সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই।
– এতক্ষণ ছিলো না।এখন হয়ে গেছে। বাক্যটি শোনা মাত্র রফি নীরার হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে একদম কাছে চলে গেলো।মুহূর্তে দুজনের নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।বুক ধরফর করছে।

– ফিল কি দেখাবো?
– পাশের রুমে আংকেল আন্টি আছে প্লিজ।
– নো বেবি।আমার তো ফিল হয় না।চলেন প্রমাণ হয়ে যাক।
– আমি তো মজা করছিলাম।
– নো।কাছে যখন এসেছি না ছুয়ে ছাড়ছি না।
– প্লিজ।এর জন্য অনেক সময় আছে।
– নো বেবি।

নীরা কিছু বলতে যাবে তখন রফি নীরার কোমড় ধরে ওপরে তুলে ঠোঁটে আলতো ভাবে ঠোঁট স্পর্শ করলো।নীরা কোন উপায় না পেয়ে সেও কিছুক্ষণের জন্য রফির সাথে সাঈ দিলো। এ যেন এক অজানা সুখের নাম।যা থেকে দুজনে এতদিন বঞ্চিত ছিলো। পরমুহূর্তে রফির মনে হলো এটা সে কি করছে।তাড়াহুড়ো করে রফি নীরাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো।নীরা আর অপেক্ষা করলো না।সে দৌড়ে চলে গেলো। কিছু ভালবাসা ধীরে ধীরে জন্ম নেয়। কিছু ভালবাসা মুহূর্তে। রফির বেলায় দ্বিতীয়টা ঘটেছে।সে নীরার প্রেমে পড়ে গেছে।কিন্তু মনে ভয়।একটু আগের ঘটনায় নীরা রাগ করেনিতো?

সে রফিকে বাজে চরিত্রের ভাবছে নাতো? এই ব্যপারে নীরার সাথে কথা বলা দরকার। রফি ড্রয়িং রুমে গিয়ে তাঁর বাবাকে বললো “আব্বু ছাদে গেলাম।” তাঁর বাবা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো “তো আমাকে বলার কি আছে।” জবাব শুনে রফি বোকা হয়ে গেলো।তাই সে তাল মিল খুঁজে না পেয়ে নীরার উদ্দেশ্য করে বললো “আপনি যাবেন সাথে?” নীরা ভেংচি কেটে বললো “জ্বি না।” এটা যেন রফি আশা করেনি।সে রেগেমেগে ছাদে চলে এলো। আকাশটা আজ কেমন রঙিন লাগছে।পাখিদের কলরবে মন নেচে উঠছে।ইচ্ছে করছে ছাদ থেকে লাফিয়ে অন্য ছাদে যেতে। আচ্ছা এরকম লাগছে কেন? রফি নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করলো।ভাগ্যক্রমে উত্তর অজানা। এরমধ্যে পেছন থেকে মধুর সুরে ভেসে এলো “এমন কেন আপনি?” রফি পেছন ঘুরে তাকিয়ে মনমুগ্ধকর একটা হাসি দিলো।এবং বললো “কেমন?”

– এইযে একটু রিকোয়েস্টও করলেন না।সোজা রেগেমেগে চলে আসলেন।
– আব্বুর সামনে ছাদে আসতে বলছি এটাই অনেক।
– হাহ্। [অনেক্ষণ দুজন নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো।রফি কিছু একটা বলতে চাচ্ছে।তবু বলার সাহস পাচ্ছে না।]
– চুপ কেন?
– এমনি।
– কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন।
– আপনি কি তখন মাইন্ড করছেন?
– অন্যকেউ হলে মাইন্ড না সোজা মেরে ফেলতাম।কিন্তু আপনি তো।তাই ইটস্ ওকে।
– আসলে তখন নিজের ওপর কন্ট্রোল ছিলো না।
– হুম।

– আমার না আবার কেমন কেমন লাগছে।বিশ্বাস করেন আগে এই স্বভাব ছিলো না।কিন্তু…
– চুপ।একদম চুপ।বিয়ে করবেন কি না সেটা বলেন?
– করতে তো চাই।যদি প্যারা না দেন।
– প্যারা দিবো।ইচ্ছা হলে বিয়ে করেন না ইচ্ছা হলে নাই।
– অল্প অল্প দিয়েন হ্যা।
– অন্নেক প্যারা দিবো।
– ধ্যাত আর পারবো না।প্যারা দিয়েন তো।যত পারেন দিয়েন।

বলেই রফি নীরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে এক অজানা অনুভবে ডুবে গেলো।নীরা চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো “আজব ছেলে।বিয়ে করবেনা করবেনা বলে এখনই আচল ছাড়ছে না।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত