কলেজের ক্যাম্পাসের দক্ষিণ কোণে বটগাছের নিচে বসে আছে বিন্তি। বসে বসে মোবাইল টিপছে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়াটা চুকিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে বিন্তির কাছে এলো নিধি।
– ঐ, রাসেলের সাথে তোর কি চলছে?
– কই? এখনো তো কিছু শুরু হয়নি।
– এক থাপ্পড়ে দাঁত সব ফেলে দিব। রাসেলকে চিনিস?
– খুব হ্যান্ডসাম। কি সুন্দর করে কথা বলে! ইসসস প্রতিটি শব্দে ক্রাশ খাই। আর কি স্টাইল! আমি তো ফিদা।
– ভালোমতোই ফাঁসিয়েছে তোকে। ও একটা ফালতু ছেলে। আগেও দুটা প্রেমিকা ছিল। শুনেছিলাম একটার সাথে নাকি ছিঃ এমন ছেলের চক্করে পড়লে লাইফ শেষ।
– উঁহু আমি ভালো থাকলে ওসব কিছুই হবে না।
– সবাই এমন বলে। পরে ঠিকই ফাঁদে পড়ে যায়। ওর থেকে দূরে থাকবি ব্যস।
– কিন্তু আমার যে প্রেম করতে খুব মন চায়। বড় বড় চোখে বিন্তির দিকে তাকিয়ে রইলো নিধি।
– ইঁচড়েপাকা মেয়েদের ভবিষ্যৎ কিন্তু ভালো হয় না।
– তুমি আপু হয়ে আমাকে এই অভিশাপ দিতে পারলে?
– যা সত্য তাই বলছি।
– তোমাকে তো বললাম খুঁজে দিতে। তুমি তো দিলে না।
– একজন পেয়েছি। তার আগে কথা দে যে প্রতারণা করতে পারবি না। ওকে আগলে রাখবি।
– বাচ্চা নাকি যে আগলে রাখব?
– ভেবে নে বাচ্চাই। ও খুব সহজ সরল ছেলে। আধুনিক এই চালাকচতুর দুনিয়ার মারপ্যাঁচ বুঝে না।
– স্মার্ট আছে তো?
– তোদের এই একটাই দোষ। যে ছেলে ভালো ভালো মিথ্যা ও শো অফ করতে পারে, তোদের মন তার দিকেই যায়। অথচ ভালো ও সত্যবাদীদেরকে তোরা বোকা ও আনস্মার্ট ভাবিস।
– খোচা দিলে কিন্তু রাগ করব।
– ন্যাকামী বাদ দে। আমি ওকে কাল নিয়ে আসব।
– আচ্ছা। আর হ্যাঁ বায়োডাটা হোয়াটসঅ্যাপ করিও।
নিধি হনহনিয়ে হেঁটে গেল। বিন্তি হলো নিধির জুনিয়র। তবে দুজনের মধ্যে গলায় গলায় ভাব। বিন্তি অনেকদিন ধরেই একটা বফ জোগাড় করে দেওয়ার জন্য নিধিকে বলছিল। ব্যাপারটা নিধি ওতটা গুরুত্ব দেয়নি। উঠতি বয়সে মন আনচান করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গতকাল শুনলো বিন্তি রাসেলের ফাঁদে পা দিচ্ছে। তাই আজ সতর্ক করে দিলো। নিধি বেশ চিন্তায় পড়লো। বিন্তিকে বফ জোগাড় করে না দিলে রাসেলের ফাঁদে পড়বে নিশ্চিত। অল্প বয়স তাই মন উড়ুউড়ু করছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। আকবরের কল এসেছে। নিধির বেস্ট ফ্রেন্ড।
– হ্যাঁ বল।
– দোস্ত আমি আবার হারিয়ে গেছি।
– উফফ তোকে নিয়ে আর পারি না।
– আমি তো আগেই বলেছিলাম যে চিনবো না। তুইই জোর করেছিস। আমার খুব ভয় করছে। কেউ যদি আমাকে নিয়ে যায় তখন কি হবে রে?
– গাধা একটা। সেদিনের মতো লোকেশন পাঠা। আমি আসতেছি। আকবর লোকেশন পাঠালো। এর আগেরবার নিধি শিখিয়ে দিয়েছিল কিভাবে লোকেশন পাঠাতে হয়। লোকেশন অনুযায়ী আকবরের কাছে এসে তাকে আবার বাসায় দিয়ে এলো নিধি। একটা জব ইন্টারভিউ দিতে নিধি পাঠিয়েছিল আকবরকে। কিন্তু আকবর পথ হারিয়ে ফেলে। বুঝতেই পারছেন কেমন ছেলে। উঁহু ভাববেন ভাববেন না গ্রামের ছেলে। শহুরে ছেলে। তবে অত্যন্ত সাদাসিধে ছেলে। আধুনিক জগতের মারপ্যাঁচ সে বুঝেই না। ১+১ = ২ বুঝে। কিন্তু ১+০+১ = ২ তা বুঝে না। সহজ জিনিস সহজভাবেই বুঝে। একটু পেচিয়ে দিলে তা আর বুঝে না।
অনেক ভেবে নিধি সিদ্ধান্ত নিলো আকবরকেই বিন্তির বফ বানাবে। বিন্তির ব্যাপারে নিধি সবই বলল আকবরকে। আকবর বলল তুই যা ভালো মনে করিস। নিধির সব কথাই আকবর শুনে। ছেলেটা বন্ধুদের জন্য জীবন দিতে না পারলেও শেষ বিন্দু রক্ত দিতে দ্বিধাবোধ করে না। অতঃপর আকবরের বায়োডাটা ও একটা ছবি বিন্তিকে হোয়াটসঅ্যাপ করলো নিধি। আকবরের এডুকেশন ভালো। তবে ছাত্রজীবনে খুব একটা বন্ধু পায়নি সে। নিধির সাথে পরিচয় ফেবুর মাধ্যমে। একবার আকবরের এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সময় নিধি বলেছিল যদি পারে তবে যেন চলে আসে। এলাকায় হওয়ায় আকবরও এসেছিল। সেই থেকে ভার্চুয়াল ছেড়ে পরিচয়টা রিয়েলেও হলো।
পরেরদিন সকালে নিধি আকবরকে নিয়ে কলেজে এলো। বিন্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আকবরকে খুব একটা পছন্দ হয়নি বিন্তির। হ্যাবলা টাইপের ছেলে। চুলগুলো যেন মায়ের হাতে তেল দিয়ে আঁচড়িয়ে এসেছে। পোশাক দেখে মনে হচ্ছে প্রেম নয় চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। ফরমাল শার্ট-প্যান্ট, শু সবকিছু একদম পরিপাটি। শুধু টাই নেই। ইশারা দিয়ে নিধিকে একপাশ নিয়ে গেল বিন্তি।
– আপু, এই ছেলের সাথে আমার যায় না।
– জানি। তবুও আমি ওকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি।
– মানে কী? আমার সাথে যায় না বলেছি। ওকে দেখতে তো গেঁয়ো ভুতের মতো দেখায়।
– বাহ্যিকভাবে বিচার করলে বুঝবি না। ওর মনটা হীরার। আর তোরটা রূপার। তাই তো তোর সাথে ওর যায় না।
– আপু!
– প্রেম করলে ওর সাথে করবি। নয়তো সিঙ্গেল থাকবি। আমি যদি শুনেছি রাসেলে সাথে কিছু হচ্ছে। তবে কিন্তু ঠ্যাং ভেঙ্গে দিব। এখন সিদ্ধান্ত তোর।
অতঃপর বিন্তি ও আকবরের প্রেমকাহিনী শুরু। বিন্তি ভাবলো কিছুদিন সময়টা কাটানো যাক। আকবরের এমন বোকা বোকা ভাব দেখে বিন্তির খুব হাসি পায়। নিধি কড়া নির্দেশ দিয়েছে যে ইতরামি যেন আকবরের সাথে না করে। আগলে রাখে যেন। কষ্ট যেন না দেয়। ছেলেটা খুব সহজ সরল। কাচের মতো। আঘাত করলে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এক রাতে,
– আপু, এটা কেমন ছেলে?
– কেন? কি করেছে আবার?
– বললাম ট্যাগ দিয়ে একটা রোমান্টিক স্ট্যাটাস দিতে।
– তো?
– ট্যাগ কিভাবে দেয়? কি লিখব? তুমি লিখে দাও। এসব বলল আমাকে। নিধি হাসতে লাগল। সেই সাথে বেশ কয়েকটা হাসির স্টিকার দিল।
– আপু তুমি হাসছো? আমার তো রাগে গা জ্বলতেছে।
– আগলে রাখিস ওকে। ভবিষ্যৎ সুখের হবে।
– হুহ! নিরামিষ ভবিষ্যৎ।
– নিজের মতো করে নে।
– আমি কারিগর না। হুহ!
– প্রতিটি মেয়েই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারিগর।
– রাখো তোমার এসব বাণী। আজ আকবর ও বিন্তি ঘুরতে বের হলো।
– এত দেরি কেন হলো?
– কি করব? আমি আগে কখনো এখানে আসিনি। ম্যাপ দেখে দেখে আসতে দেরি হয়ে গেছে।
– গাড়িতে উঠলেই পারতে।
– ভয় করে যদি অন্য কোথাও নিয়ে যায়। বিন্তি হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে না। তবে চোখ দুটোতে রাগ ভেসে আছে।
– চলো, ঐ রেষ্টুরেন্টে বসি।
দুজনে মিলে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করল। দুজন বললে অবশ্য ভুল হবে। বিন্তি একাই বকবক করেছে। দিনদিন বিন্তি বিরক্ত হতে লাগল। আকবরের মাঝে রোমান্টিকতা নেই। অথচ বিন্তি এটাই চায়। এদিকে রাসেল বারবার বিন্তির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে। ব্যাপারটা বিন্তি নিধিকে জানালো। ভার্সিটির ভিপি সাহেদকে দিয়ে রাসেলকে ওয়ার্নিং দেওয়ালো নিধি। এরপর আর রাসেল বিন্তির ধারেকাছেও আসেনি। সময়ের সাথে আকবরের বোকা বোকা ভাবটার সাথে বিন্তি অভ্যস্ত হয়ে গেল। এখন আর বিরক্ত হয় না। বরং হাসে।
– আপু, বলেছিলাম বফ দিতে। তুমি তো পুতুল দিয়েছ।
– কেন?
– আমি যা বলি তাই শুনে।
– এটা তো ভালোই।
– কিন্তু আদর করে না।
– ইঁচড়েপাকামি করবি না। তুই মেয়ে, চাইলেই ওকে নষ্টের পথে নিতে পারবি। কিন্তু এতে তোরই ক্ষতি হবে।
– ধুর আমি ফান করছি। তুমি এত সিরিয়াস হও কেন?
– প্রয়োজন মনে হলো তাই বললাম। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আজ দুজনে ঘুরতে বেরিয়েছে।
– আজ তাড়াতাড়ি এলে কিভাবে?
– নিধি নিয়ে এসেছে।
– তুমি কিছু চিনো না কেন? তুমি মানুষ নাকি এলিয়েন? আপু কোথায়?
– চলে গেছে।
– চলো, ওদিকটায় যাই।
দুজনে মিলে হাঁটতে লাগল। বিন্তির ইচ্ছে করছে আকবরের হাতটা ধরতে। কিন্তু বিন্তি জানে আকবর ধরবে না। আজ প্রায় কয়েকমাস হয়ে গেল তবুও আকবর ওকে স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। বিন্তি দুয়েকবার ইচ্ছে করেই হাতে হাত ছোঁয়ালো। এতে আকবর নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব বাড়িয়ে নিলো। বিন্তি মনে মনে হাসি দিলো। নদীর পাড়ে বসে আছে দুজন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। আকবর বলল,
– চলো, আজ তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাই। বিন্তি কিছুটা অবাক হলো। ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষে যে চারপাশে একটা নোংরামি হয় তা বিন্তির জানা আছে। তবে আকবরের কাছ থেকে এমনটা আশা করেনি। তবুও বিন্তি রাজি হলো। শেষটা দেখতে চায়। দুজনে মিলে রিকশায় উঠলো। বিন্তি ব্যাপারটা নিধিকে জানিয়ে দিলো। আকবরের বাসায় এসে বিন্তি বেশ জোরেশোরে ধাক্কা খেল। তাদের পুরো পরিবার উপস্থিত। সেই সাথে নিধির বাবা মা এবং নিধিও আছে। এসবই নিধির প্ল্যান। অতঃপর দুজনের এংগেইজমেন্ট হয়ে গেল। ছাদে বসে আছে তারা তিনজন।
– ব্যাপারটা ঠিক হলো? আমাকে না জানিয়েই এভাবে হুট করে এসব করা ঠিক হয়েছে? নিধি বলল,
– সঠিক সময়ে সঠিকটা হয়ে যাওয়াই উত্তম।
– কিন্তু আমি আরও পড়তে চাই।
– আকবর নিষেধ করেছে? তুই পড়তে থাক। ততদিনে আকবরও একটা ভালো চাকরি ঠিক করে ফেলবে। আকবর চমকে উঠলো।
– চাকরি?
– হ্যাঁ, নিধিকে আপন করে পেতে হলে আয়-রোজগার
তো করতেই হবে। তোর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো। তারওপর তুই কেমন ছেলে তা পুরো এলাকাবাসী থেকে খবর নিয়েছে ওর (বিন্তি) বাবা মা। সর্বপরি তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস। এসব কারণে আংকেল-আন্টি রাজি হয়েছে। কিন্তু কোনো বাবা মা-ই বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিবে না। তুই স্যাটেল হলে তবেই বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেল।
এই পুরো প্ল্যানটা নিধির। কিছুদিন আগে আকবর ও নিধি দেখা করেছিল। তখন আকবর খুব কেঁদেছিল। কারণ বিন্তি নাকি তাকে আগেরমতো সময় দিচ্ছে না। তাই আকবর ভাবছে বিন্তি হয়তো এখন আর তাকে ভালোবাসে না। আকবরের চোখের পানি দেখে নিধি অবাক হয়ে গেল। একটা ছেলে একটা মেয়ের জন্য এভাবে কাঁদতে পারে তা নিধির জানা ছিল না। সে আকবরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি দিয়ে আসে। আকবর তখন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গিয়েছে। এই সুযোগে আকবরের বাবা মাকে নিধি সব খুলে বলল। এতে তারা অবাক হয়ে বললেন,
– কিন্তু আমরা তো ভেবেছিলাম আকবর তোমাকে ভালোবাসে।
– হ্যাঁ অবশ্যই ভালোবাসে। আমিও বাসি।
তবে সেটা শুধুই বন্ধু হিসেবে। আমি আমার বন্ধুত্ব নিয়ে গর্ব করি। কারণ আকবর কখনোই আমার বন্ধুত্বকে অপমান করেনি। ও আমার এক গৌরব। যাকে আমি ভাগ্যক্রমে পেয়েছিল। তাই আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করি। অতঃপর আকবরের বাবা মায়ের সাথে প্ল্যান করে বিন্তি ও আকবরের এংগেইজমেন্ট করালো।
আকবর ও বিন্তির জীবনেও উথালপাথাল এলো। কারণ আকবর তার সরল স্বভাবের কারণে কোনো চাকরিতে স্থায়ী হতে পারছিল না। স্ট্রাগল করতে করতে প্রায় দুটা বছর কেটে গেল। এদিকে বিন্তির মা বাবা বিন্তির বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগল। কিন্তু আকবরের পরিস্থিতি দেখে তারা আকবরের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিলো না। কিন্তু বিন্তি নিজ সিদ্ধান্তে অটল। প্রয়োজনে সে আরও অপেক্ষা করবে। এই নিয়ে বিন্তির মাও বেশ অসন্তুষ্ট। একমাত্র মেয়ের সংসার দেখার জন্য তিনিও কান্নাকাটি শুরু করলেন। এই নিয়ে এক বিকালে নিধি, বিন্তি ও আকবর দেখা করলো। বিন্তি এসেই কান্না শুরু করেছে। তা দেখে আকবর তো বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দিলো। দুজনই একত্রে সঙ্গ দিয়ে কাঁদতে লাগল। তা দেখে নিধির মায়া হলো। তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বলল,
– এভাবে কাঁদতে থাকলে কি সমাধান হবে?
– সব তোমার দোষ। কেন তুমি আমাকে এমন একটা হীরার টুকরার সাথে পরিচয় করালে? তার চেয়ে রাসেলের কাছ থেকে ছ্যাকা খেলেও ভালো হতো। অন্তত আজ এই দিন দেখতে হতো না। নিধি চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আকবরকে বলল,
– তুই কি রে? এই দুই বছরে পরপর দশটা চাকরি ছাড়লি। একটাতেও স্যাটেল হতে পারলি না কেন?
– কিভাবে হবো বল? চারদিকে দু নাম্বারি চলে। আর আমি থাকলে ওরা তা করতে পারে না। তাই আমাকে সরিয়ে দেয়।
– আচ্ছা আমি দেখি আমার এক বন্ধুর অফিসে তোকে চাকরি দিতে পারি কিনা। কিছুক্ষণ পর বিন্তি বলল,
– চাকরিই করতে হবে এমন কোনো কথা আছে?
– এছাড়া তোর বাবা মা এই বিয়েতে রাজি হবে না।
– টাকা ইনকাম করলেই তো হলো তাই না? আকবর লাফিয়ে উঠে বলল,
– আমি চুরি ডাকাতি করতে পারব না।
– চুরি ডাকাতির কথা তো বলিনি। তুমি ব্যবসা করবে। নিধি বলল,
– ও যে সহজ সরল, তাতে কর্মচারীরা ওর ব্যবসা লুটেপুটে খেয়ে পালাবে। পরে একূল ওকূল সবই যাবে।
– কিছুই যাবে না। আমি আছি। সম্পূর্ণ ব্যবসার তদারকি আমি করব।
– বলা সহজ করা কঠিন। হয়তো শুরুতে তুই সামলাতে পারবি। কিন্তু পরে যদি ব্যবসা বড় হয় তখন পারবি না।
– একা না পারলে তোমাকে নিবো।
– ধুর আমি এসবে নাই।
– প্লিজ আপু। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
চার বছর পর, আকবর এখন একজন সফল পাইকারি ব্যবসায়ী। তার সবকিছুর কতদারকি নিধি ও বিন্তি করে। সেদিন বিন্তি আকবরকে সবকিছু বুঝিয়ে বাসায় পাঠায়। আকবর তার বাবাকে বুদ্ধিটা শেয়ার করে। তিনিও জানতেন আকবর চাকরি করতে পারবে না।
ছেলে এই যুগে জন্মে ভুল করেছে। তার জন্ম হওয়া উচিত ছিল পৃথিবীর পুরান যুগে। আকবরের বাবা রাজি হলেন। ঝুঁকি হলেও ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য ব্যাংক ব্যালেন্স প্রায় সবই তুলে দিলেন। আকবর সেটা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলো। দেশি বিদেশির বড় বড় কম্পানির সাথে চুক্তি করে তাদের খাদ্যপণ্য পাইকারি দরে কিনে বাজারে সাপ্লাই দিতে লাগল। শুরুতে আকবরের একটা আড়ত ছিল। যেখানে মালামাল উঠানামার জন্য চারজন কর্মচারী ছিল। প্রত্যেকেই শিক্ষিত। স্ট্যাম্প পেপারে সই ছিল। যদি চুরি করে তবে সোজা জেল। ধীরে ধীরে আকবরের ব্যবসা বৃদ্ধি পেল। আড়ত বাড়লো। কর্মচারী বাড়লো। শুরুর চারজনের পদোন্নতি দিয়ে তাদের চার আড়তের ম্যানেজার বানিয়ে দিলো। আকবর তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠাবের নাম দিলো “ফ্যামিলি এণ্ড ফ্রেন্ডস”।
নিধিকে ফ্রেন্ড এণ্ড ফ্যামিলির ২০% শেয়ার হোল্ডার দিলো। কারণ ব্যবসায়ের শুরুতে নিধি নিজের জমানো পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিল। যদিও প্রয়োজন ছিল না। তবুও নিধি জোর করেই দিয়েছিল। সপ্তাহে একবার নিধি ও বিন্তি এসে সবকিছুর তদারকি করে যায়। ব্যবসার এক বছর ঘুরতেই বিন্তির বাবা আকবরের সাথে বিন্তির বিয়ে দিয়ে দেয়। সময়ের চাকায় চারটা বছর কেটে গেছে। বেশ সুখে শান্তিতেই আছে তারা। তাদের ঘরের মধ্যমণি এখন তাদের দু’বছরের ছেলে। নানা নানী মাঝেমাঝে এসে নাতির সাথে সময় কাটিয়ে যায়। মেয়ের সুখী পরিবার দেখে তারাও সুখে আছে।
ডেডিকেটেড – আকবর জনি। আমার বেস্টুর জন্মদিন উপলক্ষে এই গল্পটা তাকে উত্সর্গ করলাম। দোয়া রইলো। ভালো থাক। সুখে থাক। আল্লাহ তোর সদয় হোক। আমি গর্বিত তোর মতো একজন বন্ধু পেয়ে। তুই আমার বন্ধুত্বের গৌরব। বাবা, মা, ভাই ও বন্ধুদের সাথে আনন্দে থাক। তোর প্রতি অজস্র ভালোবাসা রইলো। তোর মোনাজাতের এককোণা রাখিস আমার ও আমার উনার জন্য।