-আপনার যদি বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে হয় তাহলে ছাতাটা আমাকে দিতে পারেন,যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ছাতাটা ছাড়াই আপনি বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন। মিতু পিছনে তাকিয়ে দেখলো শফিক দাঁড়িয়ে,মুখ ভর্তি বিরক্তি ভাব! শফিকের গা বৃষ্টিতে প্রায় ভিজে গেছে! নিশ্চয় কোন ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। মিতুকে দেখেই এগিয়ে এসেছে! মিতু মুখে হাসি এনে বলল,
-ভিজেই তো গেছেন ছাতা নিয়ে আর কি করবেন?
-যা ভিজেছি তা তো হয়েই গেছে, আর ভিজবোনা!
-আর ভিজলে কি হবে?
-রাতে তোমার জ্বর আসলে কে দেখবে?
-আর যদি তোমার আসে?
-আসবেনা আমার!
-এত শিউরিটি কিভাবে দিচ্ছ?
-দুজনের জ্বর হলে ঝামেলা হবে,তাই আসবেনা! মিতু আবার হাসলো! তবে শফিক খানিক টা বিরক্ত হয়ে বলল,
-এই জন্য সকালে তোমাকে ছাতা টা দিয়েছিলাম?
-হুট করেই বৃষ্টি আসলো!
-আসলেই ভিজতে হবে?
-হুম৷
শফিক কিছু বলল না, ও মিতুর ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে নিয়ে খুলে ধরলো।ততক্ষনে বৃষ্টি কমে গেছে অনেকটা।
সকাল বেলা ও মিতুকে ছাতাটা দিয়েছিলো যেন সে বৃষ্টি তে না ভিজে! বৃষ্টির সিজন চলে, সারাদিনই প্রায় বৃষ্টি হয়! জানা কথা ছিল আজো বৃষ্টি হবে তাছাড়াও সকাল থেকে আকাশে মেঘ ও ছিল!
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শফিক দেখলো বাসায় ছাতা একটাই আছে।অনেক খোঁজাখুঁজি করেও অন্য ছাতাটা পাওয়া গেলোনা! আরেক টা কোথায় এমন প্রশ্নে মিতু উত্তর দিলো সে হারিয়ে এসেছে! কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর আর আসেনি! নিশ্চয় ওর ভার্সিটি তে হারিয়ে এসেছে! শফিক আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি! ও মিতুর হাতেই ছাতা টা দিল! বৃষ্টিতে ভিজলেই মিতুর জ্বর আসে এই ভয়েই দেয়া! কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি, রাতে আবার মিতুর জ্বর আসবে! কদিন আগেই জ্বর থেকে মেয়েটা সেরে উঠেছে! বাসায় ফিরেই শফিক মিতুকে বলল,
-শাওয়ার নিয়ে জলদি আসো। তুমি বের হলেই আমি যাবো!
-একসাথেও তো যাওয়া যায়!
-কোথায়?
-শাওয়ার নেওয়ার জন্য! এত বিরক্তির মধ্যও শফিক হেসে উঠলো! বলল,
-একটু পরেই তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা!
-হবোনা! বাজি?
-না হলে রাতে বাইরে নিয়ে গিয়ে তোমাকে ফুচকা খাওয়াবো?
-সত্যি?
-হ্যাঁ, কিন্তু খুব দ্রুত শাওয়ার নিয়ে বের হবা।
-আচ্ছা!
মিতু শাওয়ার নিয়ে খানিক ক্ষনের মধ্যই বের হলো! মাথায় তোয়ালে পেঁচানো মিতুকে দেখে শফিকের মনে হলো সে পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর মেয়েটাকে দেখছে! এই মেয়ের কাছে পৃথিবীর অনান্য সব মেয়ের রুপ হার মেনে যাবে!
মিতুকে খোলা চুলেও ভাল লাগে, কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলের প্রশংসা শফিক সব চাইতে বেশি করেছে। মিতু শফিককে রোবটের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
-ভেজা কাপড় ছাড়োনি এখনো, রাতে তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে ফুচকা খাওয়াবে কে?
-যাচ্ছি আমি,
শফিক গোসল শেষে এসে দেখলো মিতু রান্না শুরু করে দিয়েছে! দুজন মানুষের রান্না অল্প। সারাদিনে তরকারীটা একবার রান্না করলেই হয়,ভাত টা শুধু দুবেলা করতে হয়! সকালে অবশ্য মিতু রান্না করেই যায়! আজ হাফ ডে ছিল বলেই শফিকের দ্রুত এসে গেছে অফিস থেকে নয়ত সকালে যা থাকে তাই দিয়েই মিতুর দিব্যি চলে যায়! রান্না বান্না নিয়ে মিতুর কোন অভিযোগ নেই , ওর শুধু অভিযোগ জন্মায় ওর মন মত চলতে না দিলেই। মন মত চলা মানেই রাতে ছাদে যাওয়া,বৃষ্টিতে ভেজা এগুলো। শফিক যদিও এসব কঠিন ভাবেই মানা করে! কিন্তু শেষে গিয়ে মেনে নিতেই হয়। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর থেকেই শফিক টেনশনে ছিল কখন যেন মিতু বলে ওঠে ওর মাথা ব্যাথা করছে! তবে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত মিতু এমন কিছুই বলল না! সন্ধ্যার সময় মিতু বলে উঠলো,
-চলো ফুচকা খেতে।
রাতে মিতুকে নিয়ে বের হতে হলো শফিকের। ফুচকা অনেক পছন্দ করে মিতু, একারণেই সব সময় ফুচকার লোভই দেখাতো শফিক! এতে অবশ্য কাজ হতো! মিতু ক্লাস শেষে একা একাই খেতে পারে তবে শফিকের সাথে ওর খেতে ভাল লাগে! রাতের খাবার টাও ওরা বাইরে খেয়ে এলো! শফিকের ভালই লাগলো সব! মিতুর যে জ্বর আসেনি এজন্য ও খুশি ছিল। তবে মিতুর জ্বর এলো মধ্য রাতে! শফিক মনে মনে ভাবলো ওর সাথে বাইরে ফুচকা খাওয়ার লোভেই এই মেয়ে রাতে ঠিক ছিলো! মিতুর মাথায় পানি ঢালতে লাগলো ও। মিতুর জ্বর অল্পই ছিলো। তবুও কেন যেনো শফিক চিন্তা করছিলো! এই মেয়েটার কিছু হলে ওর খুব অসুবিধাই হবে! শফিকের এত ঘাবড়ে যাওয়া দেখে মিতু বলেই ফেলল,
-তুমি এত চিন্তা করছো কেন?জ্বর কি এই প্রথম আসছে!
শফিকের ইচ্ছা হলো কঠিন কিছু শুনিয়ে দেয়ার জন্য! তবে মিতুর মুখ দেখে ও আর কিছু বলল না! শেষ রাতে মিতুর জ্বর বাড়লো! শফিক ভেবেছিল সকালে মিতুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে কিন্তু তার দরকার হলোনা!ভোর রাতে মিতুর জ্বর কমে গেলো! একবারে কমে গেল না! ওঠা নামার মধ্য রইলো! সারাদিন শফিকের ব্যাস্ততার মধ্য গেলো! অফিস যায়নি তবে বাসায় রান্না বান্না করতে হয়েছে! আরো অনেক কাজ! রাতের খাওয়ার পর মিতু শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,
-চলো ছাদে যাই!
-জ্বর নিয়ে যেতে হবেনা!
-কই জ্বর! মিতু ওর কপাল টা শফিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-দেখো,জ্বর নাই!
-ছাদে গিয়ে কি করবা?
-হাওয়া খাবো
-লাভ?
-দ্রুত সুস্থ হবো! শফিক মিতুর হাত ধরে বলল,
-নামতে পারবা বিছানা থেকে?
-হুম,
এই বাসার ছাদ টা বেশ ছোট,তবে মিতুর ভাল লাগে! আশে পাশে তেমন বাড়ি নেই,তাই অনেকটা বিশাল লাগে এটাকে! হালকা জোছনায় ছাদের উপরের টবে লাগানোর ফুল গাছ গুলো যেন জ্বলছিলো! ওরা দুজন গিয়ে দোলনায় বসলো।
এই বাসাটা ওদের নিজের না, ভাড়া নেওয়া।ছাদ ওয়ালা একটা বাসার খুব শখ ছিলো মিতুর! শফিক যেদিন প্রথম বার মিতুকে দেখতে গেলো সেদিনই মিতু জানিয়ে দিয়েছিলো,বলেছিলো,বিয়ের পর সে ও তার হ্যাজবেন্ড একসাথে ছাদে বসে চাঁদ দেখতে চায়! শফিক অবাক হয়ে ছিল,এমন ইচ্ছা ওর কাছে কেউ কখনো জানায় নি! শফিক তখনই ঠিক করেছিল বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করবে আর একটা বাড়িও বানাবে! বাড়ি যেহেতু বানাতে দেরীতে আছে এখন রাই ভাড়া বাসাই তে কাজ চলুক।
-তোমার ভাল লাগছে এখন? মিতু জবাব দিল না, মাথাটা শফিকের ঘারের উপর দিলো!আর আস্তে করে বলল,
-তোমার অনুমতি ছাড়া আর ভিজবোনা, স্যরি!
-আচ্ছা,ঠিকাছে!চুপ করে থাকো।
-তুমি এখনো রেগে আছো?
-নাহ,রেগে নেই!
-তাহলে এমন করে কথা বলছো কেন?
-কেমন করে বললাম?
-এই যে চুপ করে থাকতে বললা,
-আচ্ছা,তাহলে কথা বলো?
-কি বলব?
-যা ইচ্ছা!
-একটা টপিক বলো!
-তোমার পড়াশোনা কেমন চলে?
-উহু, এটা বাদে অন্য কিছু!
-তোমার চুলের গন্ধ ভাল লাগছে!
-দুনিয়াতে অন্য কিছু নাই?
-কাল একসাথে শাওয়ার নিবো?
-তোমার রাতে মুড আসে!
-চাঁদ কেমন লাগে তোমার?
-ভালই, তোমার?
-আগের মত ভাল লাগেনা!
-কেন? চাঁদের মত সুন্দর কিছু আছে নাকি?
-এই যে তুমি আছো আমার!
-মিথ্যা কম বলো, সারাদিন বকা ঝকা করো!
-ভালোওবাসি!
-কখন বলছ?
-এই যে এখন!
-এহ!
-একটা গান গাও!
-কোন টা!
-এই রাত যদি না শেষ হয় মিতু গেয়ে উঠলো!
দূর থেকে একটা শেয়াল ডেকে উঠলো। এই লোকালয়ে শেয়ালের ডাক যেন কালে ভদ্রে শোনা যায়! শেয়াল দেখা যায়না বললেই চলে! তবে এখানে দেখা যায়, শোনা যায় বিশুদ্ধ ভালবাসার গল্প!যেগুলো রাতের পর রাত বিস্তৃত হয়! মেঘের উপর মেঘ, রাতের উপর রাত এর মত যেন সেগুলো পুরু হয়। কোন ভাবেই সেগুলো ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকেনা।