কলিংবেলে বাজালাম। দরজা খুললেন আম্মা। খুলে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আম্মার চেহারা তেমন সুবিধার মনে হলো না। কেন জানি অন্য দিনের মতো লাগল না। ঘরের ভেতরও কেমন শান্ত একটা ভাব বিরাজ করছে। আমি ঘরে ঢুকলাম। আম্মা দরজা আঁটকিয়ে দিলেন। আমি ডাইনিং টেবিল থেকে জগ নিয়ে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললাম,
-কী খবর মা? এটা আমার অভ্যাস। অফিস থেকে এসে যাকে সামনে পাই তাকেই এই কথা বলি।আম্মা বললেন,
-খবর টবর পরে হবে৷ তুই আগে ফ্রেশ হয়ে নে।
আমি হাসলাম। ব্যাগ কাঁধে নিজের রুমে গেলাম। রুমে যেতেই দেখলাম সুমি কান্না করছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফেলেছে। চোখ গুলো যেন ফুলে আছে। আমার মনের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠল। পাঁচ বছরের প্রেম আমার। ছ’মাস হলো বিয়ে হয়েছে। এর মাঝে কখনই ওকে এতো কান্না করতে দেখিনি। আমি খাটের কোনায় ব্যাগটা রেখে ওর কাছে গিয়ে বললাম,
-কী হয়েছে সুমি?
সুমি কিছু বলল না। তার কান্নার বেগ খানিকটা বেড়ে গেল। ফোঁপাতে থাকল। আমি ওর সামনে বসে ওর চোখের পানি মুছে দিতে চাইলাম। সে আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো৷ ধাক্কাটা একটু জোরেই লাগল। আমার হাতের কনুই খাটের কার্ণিশে গিয়ে বাড়ি খেল। ব্যাথায় মুখ দিয়ে আপনা আপনিই একটা অস্ফুট স্বর ভেসে এলো। সুমি তোয়াক্কা করলো। আমিও কিছু বললাম না। বুঝতে পারলাম তার ভেতর অনেক রাগ চলাচল করছে৷ এখন সে তো কিছু বলবে না, বরং পারলে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে৷ সেই সাতসকালে অফিস গিয়ে সন্ধ্যার পর যখন ফিরি তখন যদি বাসায় নিজের স্ত্রীর এমন চাঁদবদন দেখি তাহলে কেমন লাগে বলুন তো। আমিও তো মানুষ। রাগ, মেজাজ তো আমারো আছে। আমি আম্মার রুমে গেলাম। আম্মা পান বানাচ্ছিলেন। আব্বা খাটের উপর পাঁয়ের উপর পাঁ তুলে পান চিবাচ্ছেন। তাঁর অনামিকা আঙ্গুলে চুন লেগে আছে। সেখান থেকে চুন মাঝে মাঝে নিজের মুখ দিচ্ছেন৷ আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আম্মার উদ্দেশ্যে বললাম,
-সুমি কান্না করছে কেন মা? আম্মা কিছু বললেন না। তিনি স্বব্ধ হয়ে বসে থাকলেন। আমি খানিকটা জোর গলায় বললাম,
-কী ব্যাপার মা? কিছু বলছো না কেন? আব্বা বলে উঠলেন,
-বউয়ের হয়ে ঝগড়া করতে এলি নাকি? আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
-মানে? আব্বা উঠে বসলেন। বুঝলাম সিরিয়াস কিছু হয়েছে৷ তিনি বললেন,
-তোর বউ তোকে কিছু বলেনি? আমি রুমের ভেতরে ঢুকলাম। বললাম,
-না তো। কিছু বলে নি।
-ওর কীওবা বলার আছে। দোষীরা কখনই তাদের দোষ নিয়ে আলোচনা করে না৷
-কী বলতে চাইছেন? সুমি কী করেছে? বাবা হঠাৎ উঁচু স্বরে বললেন,
-চেঁচাবি না। তোর কতবড় সাহস তুই আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছিস? আমি মাথা নিচু করে নিলাম। আব্বার সামনে উঁচু গলায় কথা বলিনি কোনো দিন। তবে আব্বার প্রতি এক প্রকার রাগ উঠতেছে আমার। নিশ্চিত তাঁর সাথে সুমির কিছু হয়েছে। আব্বা পান চিবাতে চিবাতে বললেন,
-যতই হোক, আমাদের শিক্ষা পেয়েছিস৷ বাপের সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে পারবি না জানি৷ এখানে বোস।
আমি বিছানার কোণায় বসলাম। আম্মা নীরব দর্শক। তিনি এক কোণায় তসবি হাতে বসে রইলেন। আব্বা বললেন,
“-শুন, অফিস তুইও করিস। আমিও করি। নাকি?
-হু।
-আমি সরকারের গোলাম। আটটায় বের হতে হয়। আসতে আসতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে যায়। সারাদিন অফিসে এই কাজ ওই কাজ করে সন্ধ্যা যখন বাসায় ফিরি তখন খুব ক্লান্ত লাগে৷ মেজাজও ভালো থাকে না। তুইও তো অফিস করিস৷ বুঝিস তো ব্যাপারটা।
-জ্বী। বুঝি৷
-আচ্ছা। আজ সন্ধ্যার খানিক আগে বাসায় ফিরলাম। মনোযোগ দিয়ে শুন কী বলছি৷ প্রতিটা কথা কিন্তু মনোযোগ দিয়ে শুনবি।
-জ্বী৷ শুনছি। আপনি বলুন৷
-বাসায় আসলাম। এসে জামাকাপড় পাল্টাচ্ছিলাম। তোর মাকে ডেকে পানি চাইলাম এক গ্লাস। তোর মা পানি নিয়ে এলো না। আমার গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। আমি জোর গলায় তোর মাকে ডাকলাম। সে তখন বাথরুমে। মেজাজটা এমনিতেই খারাপ। তারউপর আরো খারাপ হয়ে এলো। আমি ‘পানি কই?’ বলে আবার জোর করে বলে উঠলাম। সেই মূহুর্তে তোর বউয়ের উচিৎ ছিল না আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দেওয়ার? বল ছিল না?
-হ্যাঁ ছিল।
-সে আসেনি। আমি তাকে ডাকলাম। সে তাও আসল না। আমার মেজাজটা গরম হয়ে এলো৷ আমি তোর বউকে আবার ডাকলাম। এভাবে ডাকলাম যে, ‘এই যে লাট সাহেবের বেটি, আপনি কী শুনছেন?’ সে উঠে এলো তখন। আমি একটু জোরেই বললাম,
-এতোক্ষন যে ডাকছিলাম শুনোনি?
-শুনেছি। মাথাটা ব্যাথা করছিল। তাই শুয়ে ছিলাম।
-মাথা ব্যাথা করলে বুঝি এক গ্লাস পানি এনে দেওয়া যায় না? আদবকায়দা কী কিছুই শেখোনি? তোর বউ কী বলল শুন। মনোযোগ দিয়ে শোন। সে বলল,
-এক গ্লাস পানির জন্যে এতো চেঁচাতে হয় নাকি? আপনি নিজেই তো নিয়ে নিতে পারেন। তোর মা তখন বেরিয়ে এসেছিল। তোর মা সাক্ষী। তার কতো বড় সাহস সে আমার মুখে উপর কথা বলে উঁচু স্বরে? আমি তখন বললাম,
-তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমার মুখে মুখে কথা বলছো?
-মুখে মুখে কথা বলার কী আছে? যা স্বাভাবিক তাই তো বললাম।
-তোমার কাছে এটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে?
-তা নয়তো কী! পানি নিয়ে খাওয়া তো তেমন কঠিন কাজ নয়।
সে কিন্তু তখনও আমাকে পানি এনে দেয়নি। আমার মুখে মুখে তর্ক করছিল। কতো বড় বেয়াদব মেয়ে হলে সে এমন করতে পারে একটু ভেবে দেখ। তোর মা পানি এনে দিল। সে আমাকে থামাতে চাইছে। তোর বউকেও থামতে বলছে। অথচ তোর বউ কার কথা শুনে! তার কথার উত্তরে আমি বললাম,
-সারাদিন তো ঘরে বসে বসে কাটাও। মহারানীর মতো থাকো তো! খাওয়া সময় মতো চলে আসে। আর টেনশন কী! আমার মতো তো আর এতো বেলা অফিস করো না। করলে বুঝতে কতো ধানে কতো চাল। কেমন লাগে সারাদিন অফিস করে৷
-আশ্চর্য ব্যাপার। আপনি সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এমন চেঁচাচ্ছেন কেন? এমন করছেন কেন?
-তোমার কাছে এটা সামান্য লাগছে?
-নয়তো কী।
-তোমাকে কি তোমার বাপ মা আদবকায়দা শেখায়নি? শশুরের সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে সেটাও কী জানো না!
-জানি। তারা বেশ ভালো করেই শিখিয়েছেন।
-এই তোমার শিক্ষা৷ তোমার শিক্ষার এই অবস্থা?
-মুখ সামলে কথা বলুন বাবা৷
-তুই মুখ সামলে কথা বল বেয়াদব মেয়ে। আমার খেয়ে আমার পরে আবার আমার মুখের উপর কথা বলছিস?
-আমি আপনার খাই না৷ আপনার ছেলের সংসার করি আমি৷
-তো আমার ছেলে কি হাওয়ার বলে আসছে এখানে? কথা বলবি না তুই আর। খুব বেশি কথা বলছিস তুই৷ প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমার ছেলের গলায় ঝুলেছিস…”
আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকলাম। বাবা বলে যাচ্ছেন। বাবার শেষ কথা গুলো খুব কমন। তিনি ঝগড়া শুরু করলে পেছনের কথা গুলো টানতে শুরু করেন। তাঁর ধারণা সুমি আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে৷ এই প্রেম ট্রেম তিনি পছন্দ করেন না৷ তাঁর ইচ্ছে ছিল আমাকে তাঁর কোনো এক কলিগের মেয়ের সাথে বিয়ে করাতে৷ আমি রাজি হইনি বলে সেই সময় এক কেয়ামত করে ফেলেছেন। তারপরও আমার খুশির জন্যে সুমির সাথে আমার দিয়ে দেন। তবে তার ধারণাটা মোটেও পাল্টানো যায়নি। তার ধারণা সুমি আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমার গলায় ঝুলেছে। প্রায় ঝগড়ার সময়ই তিনি এমন কথা বলেন৷ বাবার রাগ প্রচণ্ড। রাগের মাথায় তিনি কী বলেন তার কিছুই খেয়াল থাকে না৷ যাচ্ছে তাই ব্যবহার করেন৷
আমার মায়ের সাথে ঝগড়া হলে আম্মার বাবাদের নিয়ে অনেক কথা বলেন৷ যা শুনে মা কষ্ট পায়৷ আড়ালে কান্না করেন। আম্মা আব্বার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন৷ আব্বার রাগ পড়লে তিনি নিজেই আম্মার সাথে কথা বলেন৷ আম্মার রাগ ভাঙ্গান৷ আমার বাবাটা এমনই এক অদ্ভুত ধরনের মানুষ। তিনি ভালো করেই জানেন আমার আম্মা ছাড়া তিনি একদম অচল। তারপরও তিনি ঝগড়া করবেন এবং ঝগড়ার সময় ওইসব কথা গুলো বলবেন৷ আবার নিজে নিজেই আম্মার রাগ ভাঙ্গাবেন। কিন্তু আজকের ঘটনাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আব্বার সাথে সুমির ভালোই ঝগড়া হয়েছে বুঝা যাচ্ছে৷ আব্বা যে পুরনো কথা গুলো তুলে ধরেছেন তা অনেকটা নিশ্চিত। কথা শেষে আব্বা বলে উঠলেন,
-এই হলো ঘটনা৷ এখন বল৷ দোষ কার৷ আমার না তোর বউয়ের? পানি কার দেওয়া উচিৎ ছিল। তোর বউয়ের না? নাকি তুই বউয়ের সাথে সম্মতি দিয়ে বলবি পানি আমার নিজের নেওয়া উচিৎ ছিল? আমি কী বলব ভেবে পেলাম না৷ সত্য কথা হলো দোষ এখানে বাবারও আছে। তিনি কষ্ট করে পানিটা নিয়ে খেতে পারলেই এই ঝামেলাটা হতো না। আব্বার এই একটা বাজে অভ্যাস। বসে বসে সবাইকে ফরমাশ দেওয়া। নিজে নিজে তিনি কিছুই করবেন না৷ আবার সুমিরও দোষ আছে। সে যদি কথা না বাড়িয়ে পানি এনে দিত তবে এই ঝামেলাটা হতো না। বাবার ডাক শুনেও না আসাটা সুমির অন্যায় হয়েছে। আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। বাবা বললেন,
-যা, বউকে গিয়ে বল আমার কাছে ক্ষমা চাইতে। ক্ষমা না চাইলে তার ভাত নাই এই ঘরে। আমি বাবার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। বেরিয়ে আসতেই দেখলাম সুমি আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। সে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
-এখানে আমার কোনো দোষ নেই। আমি কেন ক্ষমা চাইবো। আমি কারো কাছে ক্ষমা চাইবো না৷ প্রয়োজনে যদি ভাত না পাই, তবে তা-ই সই৷ ভাত খাব না আমি। এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো৷ আব্বা নিজের রুম থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,
-ছাড়। এই বাড়ি ছেড়ে চলে যা তুই৷ তোর মতো বেয়াদব মেয়ের প্রয়োজন নেই আমার। আম্মা বলে উঠলেন,
-আহ! থামো না তুমি। এমন করছো কেন?
-কেমন করছি?
-কেউ ছেলের বউকে ঘর ছাড়তে বলে?
-কেউ না বললে আমি বলি। এমন বেয়াদব মেয়ের দরকার নেই এই ঘরে।
-চুপ করো তো৷ আর কথা বাড়িয়ো না। দোষ তোমারো কম ছিল না৷ নিজে পানি নিয়ে নিলেই তো পারতে?
-রেহানা? এবার কিন্তু তুমি বেশি বেশি বলছো?
-আরে ছোট্ট একটা ব্যাপার নিয়ে…
-এই ব্যাপারটাকে তোমার ছোট্ট মনে হয়?
বাবা মায়ের ঝগড়া শুরু হলো তখন। বাবা আম্মার উপর চিল্লাতে থাকলেন। আমি সুমির কাছে গেলাম। সুমি নিজের লাগেজ বের করে নিলো৷ আমি ওর হাত চেপে ধরে বললাম,
-প্লীজ সুমি? এমন পাগলামো করো না?
-আমি পাগলামি করছি? তুমি শোনো নি তোমার বাবা কী বললেন আমায়?
-আরে উনার রাগ সম্পর্কে তো তোমার ধারণা আছে৷ উনি মানুষ হিসেবে ভালো। কিন্তু রাগ উঠলে…
-রাগ উঠলে কী? তিনি যাচ্ছে তাই ভাবে বলবেন? আমি এই বাড়ির বউ! আমার কী মান ইজ্জত নেই? এই বাড়িতে আমারো তো একটা মান সম্মান আছে৷ তিনি সেটাকে একদমই তুচ্চ করে দিয়েছেন।
-প্লীজ সুমি। একটু বুঝার চেষ্টা করো৷ সবাইকে এতো রাগি হলে হয় না৷ প্লীজ৷
-আমি রাগ করে যাচ্ছি না। নিজের মান সম্মান বাঁচাতে যাচ্ছি।
তুমি জানো উনি কী বলেছেন? বলেছেন, আমার বাবা কেন ঘর সাজানি দেয়নি? খাট, ড্রেসিংটেবিল, আলমারি কেন দেয়নি। তিনি সেসব কথাও তুলেছেন। আমি নাকি তোমাকে বস করে নিয়েছি। তাই তুমি আমার বাবাকে এসব পাঠাতে নিষেধ করেছো৷ সাদিক, তুমিই তো নিজ থেকে বললে যাতে এসব খাট-টেবিল না দেওয়া হয়৷ আমি কি তোমাকে বস করেছি? কিংবা তোমাকে এ নিয়ে কোনো বাধা দিয়েছি? আমিও তো চেয়েছিলাম আমার বাবা এসব দিক৷ এ বাড়িতে আমার কিছু আছে তা যেন আমি সবাইকে বলতে পারি। কেবল তোমার না চাওয়াতেই এসব দেওয়া হয়নি৷ আর তোমার বাবা কি না বলছেন আমি তোমাকে বস করে নিয়েছি? এটা কেমন কথা সাদিক? আমি কিছু বললাম না। চুপ করে থাকলাম কেবল। সুমির লাগেজ গোছানো শেষ৷ আমি বললাম,
-আমার কথা তো একটু ভাববে সুমি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকবো কীভাবে?
-আমাকে যদি একান্তই চাও তবে নিজে একটা ফ্ল্যাট কিনে নাও৷ সেখানে কেবল আমি আর তুমি থাকবো৷ আর কেউ না৷
-কী সব বলছো তুমি। সুমি, তুমি স্থির হও প্লীজ। ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবো। আমি, আমাদের প্রেমের কী হবে! তোমাকে তো বলেছিলাম আমার বাবা একটু বেশি রাগি৷ তখন তো বললে ম্যানেজ করে নিবে৷ তাহলে এখন কেন এমন করছো? সুমি লাগেজ গুছিয়ে প্রস্তুত হয়ে আমার দিকে তাকালো। বলল,
-ভুল হয়েছে, তোমার সাথে প্রেম করেছি আমি। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। সুমির দিকে তাকিয়ে থাকলাম কেবল। তার চেহারায় ভীষণ কাঠিন্যতা দেখতে পেলাম আমি৷ আমার মনে হলো আমি এই সুমিকে চিনি না৷ একদমই চিনি না৷ আম্মা এলেন আমাদের রুমে। সুমির লাগেজ দেখেই বললেন,
-সে কি মা? তুমি তো দেখি সত্যি সত্যিই রাগ করে ফেললে। সুমি স্পষ্ট ভাষায় বলল,
-আপনার স্বামী যা যা বলল তার পর এই বাসাতে থাকাটা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না৷ আচ্ছা আমার যায়গায় আপনি নিজেকে দাঁড় করিয়ে বলুন তো, আপনি কি থাকতে পারবেন এভাবে? আম্মা বললেন,
-এই বাড়ির বউ যখন ছিলাম তখন আমি আরো কঠিন কঠিন কথা শুনেছি মা। তবুও আঁকড়ে পড়ে ছিলাম। স্বামির বাড়ির প্রতি মহব্বত থাকতে হয়৷ মহব্বত না হলে স্বামীর সংসার করা মুশকিল।
-মা, আমার এতো মহব্বত নেই৷ আমি থাকতে পারবো না। সাদিক লাগেজটা নিয়ে আসো। এই বলে সে বেরিয়ে গেল। আমি কিছু বললাম না। লাগেজটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম৷ মা সুমিকে আঁটকানোর চেষ্টা করলেন৷ সুমি তা উপেক্ষ করলো৷ আমি মাকে বললাম,
-আম্মা, আর কিছু বলি না ওকে৷ ও যেতে চাইছে যেতে দাও৷
সুমি চলে গিয়েছে আজ দুদিন হলো। ঘর খালি। আজকাল বাসায় ফিরতেও মন চায় না। কেমন জানি শূন্য লাগে। বাসাতে চলছে নীরব যুদ্ধ। আম্মা আব্বার সাথে কথা বলছেন না৷ আব্বা কারো সাথেই কথা বলছেন না। আমি আব্বার সাথে কথা বলছি না৷ কেন বলছি তাও ঠিক বুঝতে পারছি না৷ খাবার টেবিলে একসাথেই সবাই খেতে বসি৷ যা শব্দ হয় প্লেট বাটির শব্দ। আর কোনো শব্দ হয় না। প্লেট, বাটি, চামুচ এরা একে অপরের সাথে কথা বলে। ভাত খাওয়ার পর যে যার রুমে। আমার কিছু ভালো লাগছে না৷ মন কেবল সুমির কাছেই পড়ে আছে। নেহাত সামান্য একটা কারণ আজ অযথাই পাহাড় সমান বেদনা হয়ে আমার বুকের ভাঁজে ভাঁজে চাপা পড়ে আছে। যখনই সুমির কথা ভাবি, কষ্ট গুলো যেন দলা পাকিয়ে ব্যাথার সৃষ্টি করে। চন্দ্রের পাশে জ্বলতে থাকা নিঃসঙ্গ তারার মতো মনে হয় নিজেকে। কিংবা মাঝে মাঝে মনে হয় নিঃসঙ্গ চন্দ্র আমি। যে কেবল নিজেই জ্বলতে থাকে৷ জ্বলে জ্বলে সবাইকে আলো দেয়। অথচ তার জ্বলনটা কেউই দেখে না৷
সুমিকে কতোগুলো কল দিয়েছি তার অন্ত নেই। কখনও বন্ধ পেয়েছি তো কখনও নিজেই কেটে দিয়েছে। কল ধরে না৷ নিজ থেকে তো দেয়ই না। দিলে কী হয়? তার ইগো হার্ট হবে? অথচ প্রেমের মাঝে বিন্দুমাত্র ইগো থাকতে নেই। তাহলে কি সুমির মাঝে আমাকে নিয়ে কোনো প্রেম নেই? যে মেয়ে আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না সেই মেয়ে দুদিন কাটিয়ে দিল আমার সাথে কথা না বলেই? কীভাবে পারলো ও? এখন কী আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে আমাদের মাঝে কখনই প্রেম ছিল না৷ যা ছিল কেবল উপরে উপরেই একটা সুক্ষ্ণ অভিনয়? ও আল্লাহ? আমাকে আজ এসব নিয়েও ভাবতে ইচ্ছে? এমন বিচিত্র চিন্তাভাবনা? সেদিন মা এলেন রুমে। বললেন,
-চোখের নিচে তো কালী বসিয়েছিস অনেক৷ আর কতো! যা ওকে গিয়ে নিয়ে আয়? আমি হাসলাম। মায়ের কোলে মাথা রেখে বললাম,
-আজকাল সুমির কাছে আমার চোখের নিচের কালির কোনো দাম নেই মা। আমি গিয়েছিলাম ওদের বাড়ি। সে নিজ থেকেই দেখা দেয়নি৷ ওর বাবা মাকে বলে এলাম। তারও বাবার দোষ দিচ্ছেন। আবার মেয়েকেও বুঝাচ্ছেন।
-আবার যা বাবা! ঘরটা ভীষণ খালি খালি লাগছে৷ বউটা থাকতো, দু’চারটা কথা বলতে পারতাম প্রাণ খুলে। আজকাল তো তাও হচ্ছে না।
-মায়া নেই মা। এই পৃথিবীতে মায়া নেই। কিংবা আছে৷ সবার মাঝে নেই হয়তো৷ মা বললেন,
-এক কাজ কর না৷ আলাদা একটা ফ্ল্যাট নিয়ে নে৷ তোর কষ্ট আর সহ্য হয় না আমার।
-তুমি এই কথা বলছো? মা চুপ করে থাকলেন৷ আমি বললাম,
-মা, এই দুনিয়ে এপাশ থেকে ওপাশ হয়ে যাবে, তবে আমি কখনই এমন নাফরমানী করতে পারবো না। তুমি জানো না তোমরা আমার জন্যে কী৷ আর তাছাড়া আমি চলে গেলে তোমাদের দেখভাল করবে কে?
-তার চিন্তা করিস না তুই। এখনও বল আছে শরীরে।
-এই বল কতোক্ষণ থাকবে হু? মা, তুমি এটা ভাবলে কীভাবে?
-সন্তানের সুখের জন্যে আমরা মায়েরা অনেক কিছুই ভাবতে পারি রে বাবা৷
-তুমি ভাবছো আমি আলাদা থাকলে সুখে থাকবো? পাঁচ বছরের সম্পর্কের জন্যে পঁচিশ বছরের সম্পর্ক ভুলে যাবো? যেখানে পাঁচ বছরের সম্পর্ক আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে?
-চলে যাওয়ার কারণটা যে আমরা৷ দোষ যে আমাদের!
-তোমরা গুরুজন। দোষ হতেই পারে। তাই বলে তার এরূপ ব্যবহার কাম্য নয়৷ আমি সুমিকে আগেই বলেছিলাম। প্রেমের আগে৷ আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে। সে সব জেনেই এখানে এসেছে৷ বলেছে সব ম্যানেজ করে নিবে৷ এখন দেখলে তো কেমন ম্যানেজ করলো?
মা ছিলেন নিরুত্তর। তিনিও জানি আজ কেমন কেমন হয়ে গিয়েছেন৷ ঘরময় থোকায় থোকায় অশান্তি বিরাজ করছে। যার জন্যে অশান্তি সে যদি জানে তবে কি এখনও মন খারাপ করে থাকবে? আচ্ছা সে কি জানে না, তার জন্যে এই ঘর আজ মলিন,বেদনাময়? আমার পাঁচ বছরের প্রেম কি কিছুই নয়? সপ্তাহ হলো৷ সুমি নেই৷ বাবা মায়ের কথা বলাবলিও বন্ধু৷ আজ সন্ধ্যার পরে যখন ডাইনিং রুমে পানি খেতে গেলাম হঠাৎই শুনলাম বাবা কথা বলছেন। আম্মা জবাব দিচ্ছেন না৷ বাবা বললেন,
-আমি জানতাম নাকি এমন কিছু হবে৷ তুমি তো জানোই। আমার বাজেরকম রাগ আছে। যেটাকে তুমি কুত্তা রাগ বলো৷ আমি কী করবো বলো। আমি তো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না৷ বাবা কথা গুলো শুনে কেমন জানি লাগল। তাঁর মন মরা। কণ্ঠ ভার। বাবাদের এমন কণ্ঠ সত্যিই হৃদয় বিদারক। মা বললেন,
-আমার সাথে এসব করে পার পেয়েছো৷ সবার সাথে যে এমন করে পার পাবে তা তো না। সুমি পরের মেয়ে। বড় কথা সে এই বাড়ির বউ৷ আমাদের মেয়ের মতো। তোমার মেয়ের সাথে কেউ যদি এমন ব্যবহার করতো তাহলে তোমার কেমন লাগবে? আমার কৌতূহল বাড়ল। আমি বাবার রুমের দরজার কাছে দাঁড়ালাম। বাবা বললেন,
-রেহানা। রাগ ছাড়ো না এবার৷ তুমি আমার সাথে কথা বলো না৷ ছেলের সাথে লজ্জায় কথা বলতে পারি না৷ আমিও তো মানুষ।
-চেঁচাবার সময় এসব মনে ছিল না? আর যাই হোক, বউ এই বাড়িতে না ফেরা অব্দি আমি তোমার সাথে কথা বলছি না। বাবা নিচু স্বরে বললেন,
-সুমিদের বাসায় গিয়েছিলাম আমি। মেয়েটার জন্যে আমারও খুব খারাপ লেগেছে৷ ঘরে যতদিন ছিল ঘরটা কেমন জানি পরিপূর্ণ লাগত৷ আজকাল বড় ফিকে লাগে এই ঘর।
-তুমি সুমিদের বাসায় গিয়েছিলে?
-হ্যাঁ।
-গিয়ে আবার কোন ভেজাল করলে? তোমার তো ঠিক নেই।
-তোমার কী মনে হয়? আমি সারাক্ষণ রাগ নিয়া থাকি নাকি? আমি ওদের বাসায় গেলাম। তারা ভালো আপ্যায়ন করলেন৷ সুমির সাথে কথা বলতে চাইলাম। সে বড্ড বেশি রাগ করেছে। আমার সাথে কথা তো দূরে থাক, দেখাও করেনি। আমার বড় মন খারাপ হলো রেহানা। আমি এ কী পাপ করলাম।
বাবার কণ্ঠ যেন ক্রমশ নরম হয়ে আসছে। আমি আমার রাগি বাবার এমন কণ্ঠ সত্যিই নিতে পারিনি। কষ্ট হলো মানুষটার জন্যে। এই মানুষটা, এই পাথরের মতো মানুষটার হৃদয় যেখানে গলিত হয়ে গেল সেখানে সুমি এখনও নিজের যায়গায় অটল থাকল। এটা মহা অন্যায় করে ফেলেছে সে। এবার আর তাকে ক্ষমা করার কোনো কারণ বাকি রইলো না। মা বললেন,
-সত্যি বলছো? ঠিক তখনই আমি রুমে ঢুকলাম। দেখলাম বাবা মা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি সোজা বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাথা নিচু করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-তুমি ওই বাড়িতে গিয়েছো এই অনেক বাবা৷ সুমি আর না ফিরুক। সুমিকে লাগবে না আমার। যে আমার বাবার সম্মান রাখতে পারে না তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই বলে বাবাকে ছেড়ে দিলাম৷ তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আমি আমার জীবনের সবচে কঠিন সিদ্ধান্তটি জানালাম। বললাম,
-এই ঘরে সুমিকে নিয়ে আর কোনো আলোচনা হবে না। আমি সুমিকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো৷ তোমরা এ নিয়ে আর একটা কথা বলবে না আমার সাথে। এই বলে আমি চলে এলাম। বাবা ডাকলের পেছন থেকে। সায় দিলাম না। সুমির বাকি যে জিনিস গুলো ছিল সেগুলো একটা লাগেজে গোছাতে শুরু করলাম। ঠিক তার কিছু পরেই বাসার বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই দেখলাম সুমি আর তার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি দরজা ছেড়ে দাঁড়ালাম। বাবা মাকে ডাকতেই তারা বসার ঘরে এলেন। সুমির বাবা জনাব আবু তাহের সাহেব বললেন,
-বড় অন্যায় হয়ে গিয়েছে বেয়াই সাহেব৷ মেয়েটা ভীষণ জেদি৷ এতো রাগ যা বলার মতো না। কিন্তু মনটা তার খুব ভালো। বেয়াই সাহেব, আপনি চলে আসার পর থেকে সে কান্না করছে৷ বলছে সে লজ্জায় আপনার সাথে দেখা করতে পারেনি। এখন আমার কাছে এসে বলছে আমি যেন ওকে এই বাড়িতে নিয়ে আসি। ও সবার কাছে ক্ষমা চাইবে। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। এতটুকু বলে সুমির বাবা থামলেন। আমি কিছু বললাম না৷ দাঁড়িয়ে থাকলাম কেবল। বাবা বললেন,
-তার দরকার নেই বেয়াই সাহেব৷ আমরা তো কতো আগেই ওকে মাপ করে কথাটা শেষ হবার আগেই সুমি বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পাঁ ছুঁতে যাবে তার আগেই বাবা ওকে উঠিয়ে নিলেন। বললেন,
-আমিও ভুল করলাম। আমাকেও ক্ষমা… সুমি বলে উঠল,
-এমনটা বলবেন না বাবা৷ লজ্জায় লাগে আমার। নিজের উপর রাগ হয়৷ বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। সুমি আম্মার কাছে এলো। মা বললেন,
-তুমি চলে গেলে মা। ঘরটা একদম খালি হয়ে গিয়েছিল। আমি যেন আমার এক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি। এই বলে তিনি সুমিকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি আর দাঁড়ালাম না। নিজের ঘরে চলে এলাম। বারান্দা এসে দাঁড়ালাম। অল্প কিছু পরেই সুমি এসে দাঁড়ালো পাশে। সে কান্না করছে। ফোঁপাচ্ছে। আমার হৃদয়ের ভেতর যেন তোলপাড় হচ্ছে৷ বৃহৎ কোনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে যেন৷ আমি দূরে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নীল আকাশে কী ভীষণ শূন্যতা বিরাজ করছে৷ সুমি ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলল,
-কথা বলবে না আমার সাথে? আমি খানিকটা চুপ করে থাকলাম। দূরে তাকিয়ে থেকে বললাম,
-প্রেম করে কী ভুলটাই করেছি আমি। এতো কষ্ট জানলে শালা জীবনে প্রেমই করতাম না। সুমি আমার হাত চেপে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-সরি সাদিক। আ’ম রিয়েলি রিয়েলি সরি। তুমি তো জানো রাগের মাথায় আমি কী না কি বলি৷ আমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
-আমিও তো তোমায় কতো করে বললাম আমার বাবাটা এমন। অথচ তুমি কী করলে? ভুল স্বীকার করলে। প্রেম করে ভুল করেছো তুমি। সুমি আমার হাতটা আবার নিজের হাতের ভাঁজে নিলো। চুম খেল। বলল,
-মাপ করে দাও না আমায়! আমি বললাম,
-আমি আরো ডিভোর্সের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। অথচ তুমি চাইলে এমন হতো না। বাবা বৃদ্ধ মানুষ। তার দ্বারা ত্রুটি হতেই পারে। তুমি তো বুঝের ছিলে। তুমি তখন বুঝলে না কেন?
-রাগের মাথায় কী করছিলাম না করছিলাম কিছুই বুঝতে পারছিলাম না৷ আমায় ক্ষমা করো প্লীজ৷
-এতোটা দিন, কোনো ফোন নেই৷ আমার ফোন রিসিভও করলে না৷ অন্তত একটা বার রিসিভ করে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দটা শোনাতে। রাতের ঘুমটা ভালো হতো৷
-প্রথমে তো রাগের কারণে ধরিনি৷ পরে যখন ভুল বুঝতে পারি তখন লজ্জায় আর ফোন দেওয়া হয়নি৷ ভয় হচ্ছিল কেবল সাদিক। তোমার সাথে কথা না বলে থাকাটা কষ্টকর। কী ভীষণ কষ্টকর তা কেবল আমি জানি। এই ক’টা দিন যে কীভাবে পার হলো সেটা আল্লাহই ভালো জানেন৷ বুকের ভেতর এখনও ঝড় বইছে৷ পাগল পাগল লাগছে নিজের কাছে৷ সাদিক একটু জড়িয়ে ধরবে? তোমার বুকে মাথা রাখি না অনেকদিন৷ বুকটা হাসফাস করছে ভীষণ। আমার একটু কান্না করতে হবে৷ তোমার বুকে কান্না করবো আমি৷
আমি অদূরে সেই নীলের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নীল আকাশে একটা চিল উড়ে বেড়াচ্ছিল৷ নিঃসঙ্গ চিল। উড়ে উড়ে ক্লান্ত হচ্ছিল। ঠিক তার কিছু পরেই কোত্থেকে যেন আরেকটা চিল চলে এলো। নিঃসঙ্গ চিলের নিঃসঙ্গতা কাটল। আমারও কী কাটবে? আমি সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম কেবল। চোখের কোণা বেয়ে ক’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। সুমি নিজ থেকেই আমার বুকে মাথা রাখল। এবং আচমকা কান্না শুরু করে দিল৷ গা কাঁপিয়ে কান্না করে সে৷ আমি তার চুলের ভেতর মুখ গুঁজে দিলাম।
নিঃশব্দে কেঁদে উঠলাম কেবল। বাহুডোরে জড়িয়ে নিলাম তাকে। এখন কেমন জানি শান্তি লাগছে। শিরশিরে অনুভূতিরা খেলা করছে সমস্ত শরীরের। প্রেম বইছে যেন বাতাসে বাতাসে। এই অসময়ে কী একটা ফুলের ঘ্রাণ ভেসে এলো যেন। অদ্ভুত আনন্দপূর্ণ ঘ্রাণ। ঘ্রাণটা কী ফুলের তা বুঝা গেল না। তবে হৃদয়ে প্রেমের পদ্ম ফোটানোর মতোই একটা ঘ্রাণ। আমার হৃদয়ে আবার প্রেমের পদ্ম ফুটল৷