আব্বু,ও আব্বু উঠেন ফজরের আজান দিছে নামাজ পড়তে যেতে হবে তো! আব্বু আম্মু দুজনেই আমাকে দেখে আজ ভুত দেখার মতো চমকে গেছে।কারন যে ছেলে সকাল ৮টার আগে ঘুম থেকে উঠতো না সেই ছেলে আজ ফজরের নামাজের জন্যে তাদের ডেকে দিচ্ছে?তারা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।আব্বু কে এখনো দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবার বললাম আব্বু তাড়াতাড়ি ওজু করে মসজিদে চলেন নামাজের সময় হয়ে এল।
আব্বু কিছু না বলে ওজু করতে চলে গেল সাথে আম্মু ও গেল।আব্বু ওজু শেষ করে আসলে আব্বুর সাথে মসজিদের দিকে রওনা হলাম।আজ সেই ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল।ছোট বেলায় এই ভাবেই আমাকে সাথে করে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যেত। আজ অনেক দিন বাদে এক সাথে যাচ্ছি।নামাজ শেষ করে এসে আম্মুর কাছ থেকে কোরআন শরিফ এনে পড়া শেষ করে একটু হাটতে বের হলাম।আজ অনেক দিন পর সকালের সূর্য উদয় দেখলাম। বাসায় আসার পর আব্বু ডেকে পাঠালো তার রুমে।
–আব্বু আমাকে ডেকেছেন?
–হ্যা ডেকেছিলাম।আচ্ছা বাবা একটা কথা বলতো?
–জ্বী আব্বু বলেন?
–তোর ভিতর আজ হঠাত এত পরিবর্তন এলো কী করে?
–কিছু না আব্বু মুসলমান হয়ে যখন জন্মেছি মহান আল্লাহর ইবাদত তো করতেই হবে সেজন্যে আজ থেকেই শুরু করলাম।অনেক তো পাপ কাজ করেছি সেই পাপের পাল্লাটা একটু কমাতে তো পারি।
আমার কথা শুনে দেখি আব্বুর চোখে পানি।এটা হয়তো দুঃখের না গর্বের।কারন তার বাজে অভদ্র ছেলেটা আজ ইসলামের পথে ফিরে এসেছে।সত্যে বলতে কাল পর্যন্ত আমি খারাপ ছেলে ছিলাম বাবা মায়ের কথা শুনতাম না।প্রতিদিন সকালে আব্বু ফজরের নামাজের জন্যে ডেকে দিতো কিন্তু আমি উঠতাম না সকাল ৮টার আগে।সবাই পরিবর্তন হয় কেউ দুদিন আগে কেউ বা পরে।সবার পরিবর্তন হওয়ার পিছনে কোন না কোন কারন থাকে। আমার ও আছে আর সেই কারনটা একটা মেয়ে।
মেয়েটার চোখ ছাড়া আজ পর্যন্ত তার চেহারাটা দেখিনি।মেয়েটার নাম মিহি,পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদৌস মিহি।মেয়েটাকে প্রথম দেখি কলেজের নবীন বরন উৎসবে।তারিখটা এখনো মনে আছে ১লা আগস্ট ২০১৯।সেদিন কলেজে নবীন বরন উৎসব ছিলো।আমি তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।ছাত্র ভালো হওয়াতে স্যারেরা আমাকে উপস্থাপকের দ্বায়িক্ত দেন।স্যারেরা সকলে স্টেজে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন সাথে তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন কী একটাও জানতে চাইছিলো। কেউ কেউ বলছিলো ডাক্তার হবে কেউবা ইঞ্জিনিয়ার কেউবা পুলিশ কিন্তু মিহির উত্তরটা ছিলো ভিন্ন।মিহির উত্তর শুনে শুধু আমি না বাকি সকলে মুদ্ধ হয়ে গেছিলো।মিহিকে স্টেজে ডেকে আমি ফুল দিয়ে বরন করি কিন্তু ফুল নেওয়ার সময় সে কেমন অসস্থি বোধ করছিলো তাই আমাদের ব্যাচের একজন মেয়েকে ডেকে ফুলটা দেওয়ায়।আমি জোর করলে সে নিতো কিন্তু তার পোষাক দেখে আমি দিতে সাহস পাইনি।
যেখানে অন্যেরা বিভিন্ন রং বাহারি পোষাক পরে এসেছে সেখানে মিহি পরেছিলো কালো বোরকা,হাত মোজা,পা মোজা আর নেকাব পরেছিলো।সবাই যখন তাদের স্বপ্নের কথা ভিন্ন ভিন্ন বলেছিলো তখন মিহি বলেছিলো অন্যে স্বপ্ন যেটা সেখানে থাকা সকলকে মুদ্ধ করেছিল সাথে আমাকেও।মিহি বলেছিলো তার স্বপ্ন তার বাবার একজন আদর্শ মেয়ে হওয়া,তার স্বামীর একজন আদর্শ স্ত্রী হওয়া এবং তার সন্তানদের আদর্শ একজন মা হওয়া।সেদিন থেকেই তার প্রেমে পড়ে গেছিলাম।অনেক দিন পিছে ঘুরার পর,অনেক চেষ্টার পর সে আমার সাথে কথা বলতে রাজি হয় তাই কলেজ ক্যাম্পাসের বট গাছের নিচেয় ডেকে পাঠায়।সেখানে যাবার পর সে আমাকে সালাম দেয় এবং বলতে শুরু করে
–আসসালামু আলাইকুম
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছেন?
–আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর রহমতে ভালো আছি আপনি?
–আমিও,কিছু কী বলার জন্যে ডেকেছেন?
–জ্বী
–তাহলে বলুন
–আগে বলেন আপনি আমার কথা গুলো শোনার পর রাগ করবেন কী না?
–জ্বী করবো না এবার বলুন
–আচ্ছা,আপনি কী আমাকে দেখেছেন?
–না তো কেন?
–কোন প্রশ্ন করবেন না শুধু উত্তর দিবেন?
–আচ্ছা বলেন
–আমি দেখতে কালো নাকি ফর্সা সেটাও জানেন না?
–জ্বী না
–তাহলে কী দেখে আমাকে পছন্দ করলেন?
–আপনার সেদিনের স্বপ্নের কথা শুনে।
–আপনি কী জানেন আমার সেই স্বপ্নটা আমার একার পক্ষে পূরন করা সম্ভাব না
–তাহলে??
–তার আগে আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন?
–জ্বী বলেন
–আপনি কী নামাজ পড়েন পাঁচ ওয়াক্ত?
–না
–কুরআর শরীফ পড়তে পারেন?
–জ্বী পারি কিন্তু
–পড়েন না এটা তো?
–জ্বী
–তাহলে আমাকে ভুলে যান,আমি আমার স্বামীকে এপারে না ওপারেও আমার সাথে চাই।
–আমি যদি ভালো হয়ে যাই
–আগে হয়ে দেখান তারপর আর হ্যা যেদিন পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবেন সেদিন ই আমার সামনে আসবেন?
–জ্বী ঠিক আছে।
আজ প্রায় তিন মাস আমি মিহির সামনে যায় না। জানিনা ও কেমন আছে,ভালো আছে কী না।কিন্তু সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করিনি। এখন ওর সামনে গেলে এখন আমাকে মেনে নিবে কী না জানি না তবে মিহি মেনে না নিলেও মহান আল্লাহ আমাকে ঠিকিই মেনে নিবেন তার সঠিক বান্দা হিসেবে। এখনো ওর সামনে যায় নি একেবারে আদর্শ বৌয়ের আদর্শ স্বামী হবো বলে।