এক্স

এক্স

– আব্বু ডাকছেন? (আমি)
– হুম। (আব্বু)
– জ্বি বলেন।
– তোমার বয়স কত?
– ছত্রিশ (কিছুটা অবাক হয়ে বললাম)
– ফাহিমের ছেলের বয়স কত জানো?
– বারো বছর। এসব জিজ্ঞাস করছেন কেন?
– ফাহিম তোমার থেকে কয়বছরে বড়?
– এক বছরে ছোট। কিন্তু এইগুলা কেন জিজ্ঞাস করছেন?
– শরম লাগে না তোমার? তোমার জুনিয়ারের ছেলে হাইস্কুলে পড়ছে আর তুমি এখনো বিয়েই করলে না।
– ওহ এই কথা? সরাসরি বললেই পারেন। এতো অপমান করার কি আছে।

এটা বলে ওখানে থেকে চলে আসলাম। গত বারোটা বছর ধরে আব্বু আম্মু বিয়ে বিয়ে করেই আসছেন। আমার যে বিয়ে করতে ইচ্ছা করে না এমনটা না। আসলে আমি একজনকে অনেক ভালবাসতাম। কিশোর কালের প্রেম। এখনো তাকে ভুলতে পারি নি। তাই বিয়ে করি নি এখন পর্যন্ত। তবে সে হয়তো আমাকে ভুলে ঠিকই সুখে আছে।
ওর নাম জিনাত। অনেক হাসিখুশি একটা মেয়ে। তখন আমার বয়স ১৯ হবে। আর তার ১৭ কি ১৬। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সে পিছন থেকে ডাক দিলো,,

– ভাইয়া,, আসেন এবার আপনার পালা। (জিনাত) আমি কিছু বুঝলাম না। তবে তার দিক থেকে চোখ সরাতে পারলাম না। জীবনের প্রথম কাউকে দেখে ক্রাশ খাইলাম। যতক্ষনে হুস ফিরলো দেখি সে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। তাবু টানানো একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে আমাকে সুইয়ে দিলো। এপ্রন পড়া একটা লোক আসলো হাতে ব্লাড ব্যাগ নিয়ে। এসে আমার ডান হাত ধরে সুই হাতের দিকে এগিয়ে আনলো। ভয়ে আমার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা। কখনো আমার শরীরে সুই ঢুকে নি। উঠে পালাবো। কিন্তু উপায় নাই। পাশে জিনাত অন্য হাত ধরলো। পুরো দশ মিনিট ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিভাবে শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত বের গেল বুঝতে পারলাম না।

– আমার রক্ত নেওয়া হল কেন (আমি)
– আপনিই তো ডোনেট করতে চাইছিলেন ভাইয়া। (জিনাত)
– ও আল্লাহ,, কবে? খামোকা শরীর থেকে এক ব্যাগ গেলো। (কান্না করে দিব এমন অবস্থা) এই সময় আর একটা ছেলে রুমে ঢুকলো,,
– আপু আমার রক্ত নেয়ার কথা ছিল, কখন দিবো? (ছেলেটা) জিনাত ভয়ে আমার দিকে তাকালো। সে ভুল ছেলের থেকে রক্ত নিছে এটা বুঝতে পারলো।
– স সরি ভাইয়া। আমি আসলে (জিনাত)
– থাক। বুঝছি। জীবনে প্রথম শরীরে সুই ঢুকলো। কি বিশ্রি অবস্থা।
– দেখেন ভাইয়া এটা তো একটা ভাল কাজই হইছে। আপনার গ্রুপ ও নেগেটিভ। খুব রেয়ার গ্রুপ। রক্ত দান তো ভাল কাজ।

– হুম। তো তুমি দাও রক্ত। অন্যের রক্তের দরকার কি?
– আমার এখনো বয়স হয় নি। আসলে সরি ভাইয়া। সত্যি বুঝতে পারি নি আমি।
– সমস্যা নাই। ভবিষ্যতে রক্তের প্রযোজন হলে বলবেন। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিবো।
– হাহাহা। আপনার নাম্বারটা দিয়ে যান। প্রযোজন হলে ডাকবো।
– ওকে। আপনারটাও দেন।
– কেন?
– এক ব্যাগ রক্ত নিছেন তার প্রতিশোধ এটা।

সে নাম্বার দিলো। এরপর থেকে প্রতিদিন কথা চললো আমাদের। জিনাত খুব সহজ সরল মেয়ে ছিলো। একমাসের মধ্যেই তাকে পটিয়ে ফেললাম। এক বছর জমিয়ে প্রেম করছি। একবছর পর হুট করে একদিন জিনাত বলে দিলো তার পরিবারের অবস্থা ভাল না। আর আমার সাথে রিলেশন রাখা সম্ভব না। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে রিলেশন শেষ করে দিলো। আর তার কোন খবর পাই নি। কিন্তু এখনো তাকে ভুলতে পারি নি।

এদিকে আমার বাবা মা বিয়ের জন্য আমার উপর অত্যাচার শুরু করে দিছে। উপায় না পেয়ে শেষে রাজি হতেই হলো। বয়স তো অনেক হলো। বিয়ে না করলে আবার সমাজে সবাই অন্যকিছু ভাববে। আব্বু আম্মু আমার জন্য মেয়ে খুজা শুরু করে দিলো। শেষে একটা মেয়ে নাকি পাইছে। তার কোন বর্ননা বা কোনকিছুই আমি জানি না। জানার প্রযোজন মনে করি নি। বিয়েটা শুধু আব্বু আম্মুর জন্য করছি তাই তারা জানলেই চলবে। আমার মন তো পড়ে আছে জিনাতের কাছে। সাদামাটা ভাবে বিয়ে হলো। তেমন কোন অনুষ্ঠান হয় নি। বাসরঘরে ঢুকলাম। ঘরটাও সাদামাটা। তবে কিছুটা সাজানো। খাটের মাঝে একটা মেয়ে বিশাল ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমাকে ঘরে ঢোকা দেখে আমাকে সালাম দিলো। তার কন্ঠ শুনে আমি চমকে উঠলাম। খুবই চেনা কন্ঠ আমার। বিছানায় তাকে বসিয়ে দিয়ে তার ঘোমটা উঠালাম। তাকে দেখে অবাক হয়ে গেছি।

– জি জি জিনাত বলেই জ্ঞান হারালাম। চোখে পানির ঝাপটায় জ্ঞান ফিরলো। দেখি কারো একজনের কোলে বসে আছি। সে আর কেউ না। আমার বউ। লাফ দিয়ে উঠলাম।

– জিনাত তুমি এখানে? (আমি)
– কি বলছেন? আমি তো জবা। আপনি আমার মায়ের নাম বলছেন কেন বার বার? (আমার বউ) এটা শুনে আমার পায়ের তলার খাট,, খাটের তলার মাটি সব সরে গেল মনে হচ্ছে। অবশেষে আবার জ্ঞান হারালাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত