বিকেল ৫টা,অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাত করেই ফোন দুইবার ভাইব্রেট হয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো।পকেট থেকে ফোন বের করেই দেখি আমার প্রানপ্রিয় বউ নুপুর ফোন দিয়েছে।ফোন রিসিভ করার আগে দুইবার মনে মনে ভাবলাম আজকে কোন উল্টাপাল্টা কাজ করছি কিনা।মন নাহু নাহু বলে আমার নিস্পাপ চরিত্রকে প্রকাশ করে দিলো।মনে মনে দুইবার বিপদের দোয়া পড়ে ফোন রিসিভ করতেই বউ তার রিনরিনে গলায় বলল,”আমার সোনা বাবুটা কই এখন? কখন আসবে বাসায় আমার স্বামীটা?”বউয়ের মুখে আজকে এতো মধু বিষয়টা কি? উহু নিশ্চয় কিছু ফন্দি আটছে।
আবার নাও হতে পারে।আজকাল ঢাকা শহরের আবহাওয়া কখন সুইয়িং হয়ে ব্যাংকক পাতায়া আবার কখনো সুইজারল্যান্ডের জুরিখ হয়ে যাচ্ছে তাই নিয়েই বিটিভির বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদরা নাকানি চুবানি খাচ্ছে।আর আমি কোন মহাপুরুষ যে আমার বউয়ের মুড সুইয়িং ধরতে পারবো। আমি ঢোক গিলে বললাম, “কি ব্যাপার আমার কুচুবুচু বাবুটার কি কিছু কেনাকাটা লাগবে বুঝি?”অমনি বউ মুখ ঝেমটিয়ে উত্তর দিলো,”ছ্যাচড়ামী বাদ দিয়ে লাইনে আসো।সকাল বেলা কয়টা মেয়েকে এড করছো ফ্রেন্ড লিস্টে আর কয়টা মেয়েকে বলছো বিবাহিত জীবন বেদনার?প্রশ্ন শুনে আবুল হয়ে গেলাম।উহু বউয়ের তো এসব জানার কথা না।নিতান্ত নিরীহ রান্নাঘর প্রিয় বউ আমার।
সারাদিন রান্নাঘরেই বসে থাকে তাহলে এসব জানলো কিভাবে।বউকে যদিও পাসওয়ার্ড দেয়া আছে আইডির কিন্তু ঢোকে না তো।কথা ঘুরানোর জন্য বউকে বললাম,” আমার লক্ষ্মী বউটার কি মাথা ঘুরাচ্ছে নাকি? কিসব আজেবাজে কথা বলছে বউটা?”বলতে না বলতেই নুপুর বলে উঠলো শোনো পরাগ বেশি ভালো সাজার চেস্টা কইরোনা।কি লেভেলের ছ্যাচড়া তুমি তা আমার থেকে কেউ ভালো জানেনা।কি পাপটাই করছিলাম তোমার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে।এবার আসল কথায় আসো,কেন এড করছো এতোগুলা মেয়ে?আমি উত্তর দিলাম, “বাবু তোমার জামাইটার কলিজা কি এতোই ছোট যে দুই একটা মেয়ের জায়গা হবেনা তাই কি হয় বলো?তুমিতো জানোই আমি কাউকে না করতে পারিনা।
কথা শেষ করতে না করতেই লুচ্চ,খাটাশ থাক তোর বড় কলিজা নিয়ে।কি ভুল করে যে আমি তোরে ভালোবেসে বিয়ে করছিলাম নইলে কি আমার এইদিন দেখা লাগে।আমি আমার বাপের বাড়ি যাচ্ছি।খবরদার যদি ভুলেও ওইদিকে দেখি এলাকার কালো কুত্তাটারে দিয়ে ম্যারাথন দৌড় করাবো বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।উহু বউ যেতে না করছে মানে ১০০%আমাকে যেতে হবে।এখন গিয়ে বউকে আটকানো ও যাবেনা কারন আমার বউ আবার আন্না হাজারের গোষ্ঠীর কেউ হবে হয়তো এক কথা একবার বললে সেটার।থেকে ফেরানো যে কথা আর বলদের বদলে কুত্তা দিয়ে জমি চাষ একই কথা।নুপুরের বাপের বাড়িও বেশিদুর না।
টাংগাইলের দিকে খুব বেশি হলে ঘন্টা দুয়েক লাগবে।ফোন দিলাম একমাত্র ছোট শালা বাবু শাওন কে।ফোন ধরা মাত্রই, “কিরে শালা কেমন আছিস?” শাওন বলল,”ভাই আফসোস আপনি আমারে কখনো নিজের ভাইয়ের চোখে দেখেন নি।আমি কি জানতাম নাকি আপু আপনার মতো একটা বদমাইশের খাড়া ঝিল্কির পাল্লায় পড়বে।”আমি বললাম, “পুরাতন আলাপ ছাড়, তোর আপায় যাইতেছে রাগ করে। তুই বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে আয় বলে ফোন কাটলাম।চিন্তা করতেছি বাসায় গিয়ে খাবো কি আর যে শীত পড়ছে বউ ছাড়া ঘুমানো অসম্ভব।তাই অতসব চিন্তাভাবনা না করে অফিস থেকে আমিও রওনা দিলাম শ্বশুরবাড়ির দিকে।বাসে যেতে ঘন্টা দুয়েক লাগলো।
নুপুরদের এলাকার বাজারে এসে বসে চা খাচ্ছি কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা।কি করা যায় চিন্তা করতেই ৪৪০ভোল্টের ব্রেইনটা জানিয়ে দিলো ব্যাটা তোর শাশুড়ি আম্মা আছে কি করতে।উনারে ফোন দে সব সমস্যার সমাধান।ফোন বের করে আম্মারে ফোন দিলাম।ধরার পর সালাম দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম,” আম্মা নুপুরের মন মেজাজ কেমন এখন?এখন কি আপনাদের বাসায় ঢোকা যাবে?”আম্মা আগে আমার কথা শুনে কিছুক্ষন হেসে বলল,”বোকা ছেলে আমার আসছো ই তো এতোদুর বুকে সাহস নিয়ে বাড়ির ভিতরে আসো সমস্যা নেই।আমি ফোন কেটে দিয়ে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিলাম।বাসার কলিং বেল একবার বাজাতেই দরজা খুলে গেল।মনেহয় দরজার ওপাশে কেউ দাড়িয়েই ছিলো আগে থেকেই।সামনে তাকিয়েই দেখি নুপুর মুখটা টমেটোর মতো লাল করে দাড়িয়ে আছে।আমি কোন কথা না বলে দ্রুত বাসার ভিতরে ঢুকলাম।কারন এখানে আর একটু দাড়ালে শার্টের কলার সহ বোতাম একটাও থাকবেনা।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসতেই দেখি আমার সব পছন্দের রান্নাবান্না।বেগুনভর্তা থেকে গরুর মাংস অবধি।বেগুন ভর্তা দেখেই আম্মার উদ্যশ্যে বললাম,”আম্মা আমার ভার্সিটি লাইফে এক বান্ধুবি ছিল ইডেনের।মাঝেমাঝেই বেগুন ভর্তা খাওয়াতো রান্না করে এনে।আম্মার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি মুচকি মুচকি হাসছেন। কেন হাসছেন জিজ্ঞাস করার পরই আম্মার পিছনে দেখি নুপুর তাকিয়ে আছে চোখ বড় বড় করে।আমি ওদিকে আর না তাকিয়ে খাওয়ার দিকে মন দিলাম।কারন এইরকম খাবার সবসময় পাওয়া যায়না।খাওয়া শেষে বউয়ের রুমে এসে শুয়ে আছি।নুপুর রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,”খুব বেগুন ভর্তা খাওয়ার শখ তাইনা,এখানে এসেছিস কেন?”বলেই একটা চাদর আর কম্বল মেঝেতে ছুড়ে মেরে বলল,”খবরদার বিছানায় উঠার সাহস দেখাবিনা একদম।”নুপুরের কথাশুনে মুচকি হাসলাম।
আমার হাসি দেখে নুপুর আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল,”খবরদার এই লুলামি হাসি হাসবানা একদম বলে দিলাম।”নুপুর উপরে বিছানায় শুয়ে পড়লো আর আমি মেঝেতে শুয়ে পড়ে ঘুমিয়ে পড়ার ভান করে করে আছি।রাত বারোটার কাছাকাছি হঠাত খেয়াল করলাম আমার হাত দুটো খুলে টুক করে কেউ একজন আমার বুকের মধ্যে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আমিও উনার কানে কানে বললাম”জানোই তো পচা জামাইটার বুকে ছাড়া ঘুমাতে পারবেনা তাহলে চলে আসলা যে।নুপুর বলল,”চুপ থাকো আমার জামাইকে আমি হাড়েহাড়ে চিনি,একটু লুচু টাইপের কিন্তু সমস্যা নেই আমারই তো তাইনা।
আমার একটু রাগ হওয়া দেখে নুপুর ওর মেঘরাশির মতো চুলগুলো আমার মুখের উপর ছড়িয়ে দিয়ে বলল,”একদম রাগ দেখাবেনা বলে দিচ্ছি। আবার যদি দেখি কোন মেয়েকে মেসেজ দিচ্ছো দেইখো সেইদিন কি করি।খুব বড় কলিজা উনার। এহ আসছে কলিজাওয়ালা।আমি নুপুরকে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে বললাম, “বালিকা তোমার এই অকৃত্রিম ভালোবাসা পেতে গিয়ে আমি মাঝেমাঝে লুচ্চামি করতেও রাজি আছি।