বিয়ের পর এটা আমার প্রথম জন্মদিন। আমি ২২২২% নিশ্চিত, বরমশাই মনে মনে আমার জন্য একটা জমকালো সারপ্রাইজ প্ল্যান সাজাচ্ছেন। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এতদিনের চেনা এই ভুলোমনা মানুষটা কিভাবে আমার জন্মদিন মনে রাখবে আর কি করেই বা সারপ্রাইজ প্ল্যান সাজাবে? তার উত্তরও আমার কাছে আছে। বিয়ের আগে আমাকে দেখতে আসার দিন যখন আমাদের আলাদা করে কথা বলতে দেয়া হয়, তখন বরমশাইয়ের আমাকে করা প্রথম প্রশ্নটা ছিল- “আপনার জন্মদিন কবে?”।
তার মানে তার ভবিষ্যৎ বউয়ের জন্মদিন নিয়ে তিনি বিয়ের আগে থেকেই যথেষ্ট সিরিয়াস ছিলেন। সুতরাং আজ আপনারা নিশ্চিন্তমনে পপকর্ণ নিয়ে বসতে পারেন। এই পর্বে বরমশাইয়ের আগের সুকর্মগুলো পুনরাবৃত্তি হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাছাড়া জন্মদিনের প্রথম প্রহরে তিনি আমাকে শুভেচ্ছা না জানিয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন, এটাকেও ধামাকা কিছুর পূর্বলক্ষণ বলে ধরে নেয়া যায়। আমার নিরামিষ বেরসিক বরটা এতদিন পর আমার জন্য কিছু একটা করতে যাচ্ছেন, তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আজকের দিনটা আমার কাছে অন্যরকম স্পেশাল একটা দিন।
এদিকে আমার ফুপু শ্বাশুড়ির কাণ্ড দেখুন। সকাল সকাল আবদার করে বসেছেন, আজ তিনি নিজের হাতে আমার পছন্দের সব আইটেম রান্না করবেন। এজন্য বরমশাইকে তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছেন অফিসে যাওয়ার আগে বাজার করে দিয়ে যাওয়ার জন্য। গতকালই ফ্রিজে থাকা মাছ মাংস সব শেষ হয়ে গেছে। বরমশাই মোচড়াতে মোচড়াতে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে ফুপুকে বললেন,
– বাজারে পাঠাচ্ছো ঠিক আছে কিন্তু বাজারের ব্যাগটা ভালো করে দেখে দিও। সেদিনের মত ভুল যেন আর না হয়।
ওহ্, আপনাদের বলা হয়নি। সেদিন বরমশাই ফুপু শ্বাশুড়ির কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সত্যিটা বলেন নি। বলেছেন, ওই বাজারের ব্যাগটা উপরের ফ্ল্যাটের ভাইজানের ছিল। বরমশাই আগের সপ্তাহে বাজারে যাওয়ার সময় ওই ফ্ল্যাটের ভাইজানের সাথে দেখা হয়ে গেলে দু’জনে কথা বলতে বলতে টং-দোকানে চা খেতে বসে যান। ভাইজানের হাতেও বাজারের ব্যাগ ছিল, তিনিও বরমশাইয়ের মতো বাজার করতেই যাচ্ছিলেন। তো তখনই দু’জনের বাজারের ব্যাগ দু’টো অদলবদল হয়ে যায়। ব্যাগ যেহেতু বরমশাইয়ের না, সেহেতু ব্যাগের ভেতরে থাকা চিঠির সম্পর্কেও তার কিছু জানার কথা না। সব শুনে ফুপু গালে হাত দিয়ে তওবা তওবা করতে করতে বললেন,
– হায় আল্লাহ্, জমানা কত খারাপ! ঘরে বউ রাইখা বেডা মানুষ এহন পরনারীর লগে চিঠি দেওয়ানেওয়া করে!
সাথে সাথে বরমশাই বলে উঠলেন,
– আরে না না ফুপু, বিষয়টাকে এভাবে দেখছো কেন? এমনও তো হতে পারে, ভাবীই হয়তো ভাইজানকে এই চিঠিটা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সম্ভবত মান-অভিমান চলছিলো। এত বড় নাটকটা সাজানোর কি দরকার ছিল, বরমশাইকে সেই প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন,
– সত্যিটা বললে ফুপু এটাকে নিয়ে অযথা প্যাঁচাতেন। কি দরকার শুধু শুধু আগ বাড়িয়ে ঝামেলা বাড়ানোর?
তো যাই হোক, যা বলছিলাম। ফুপুর কথামতো বরমশাই অফিসে যাওয়ার আগে বাজার করে দিয়ে গেলেন। তারপর ফুপু আমার কাছ থেকে আমার পছন্দের আইটেমগুলো জেনে নিয়ে রান্নার কাজ শুরু করে দিলেন। আমি সাহায্য করতে চাইলাম কিন্তু ফুপু আমাকে রান্নাঘরের ধারেকাছেই ঘেঁষতে দিলেন না। এতকিছুর পরও কি আর বুঝতে বাকি থাকে যে এসব কার বুদ্ধিতে হচ্ছে? বরমশাই না বললে ফুপু আমার জন্মদিনের কথা কি করে জানবেন? ফুপু এমনিতে সব ব্যাপারে তিলকে তাল বানালেও, তার মন খুব ভালো।
আমি একটু পরপর ঘড়িতে সময় দেখছি। কখন সন্ধ্যে হবে, কখন বরমশাই আসবেন আর কখন আমি সেই কাঙ্ক্ষিত সারপ্রাইজটা পাবো! সকাল গড়িয়ে মাত্র দুপুর হতে চললো। সময় কাটানোর জন্য কাপড় ভিজালাম একগাদা। তারপর কাপড় ধুয়ে ছাদে গিয়ে মেলে দেয়ার সময় নিজের অজান্তেই সারপ্রাইজের ঘোরে ডুবে গেলাম। সেই সময়টায় আমি কি এক্সপ্রেশন দিবো, আমি কিভাবে রিয়েক্ট করলে বরমশাই খুশি হবেন সেসব ভাবতে লাগলাম। এভাবে পার হলো আরো কিছু বাড়তি সময়। তারপর আবার যখন ময়লাওয়ালা ময়লার বিল নিতে আসলো, আমি তখন ময়লাওয়ালাকে বরমশাই কল্পনা করতে লাগলাম। মনে হলো, এক্ষুণি বুঝি বরমশাই বিশাল বড় একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিবেন। ঘোর কাটলো ময়লাওয়ালার ডাক শুনে।
– ভাবী, ভাংতি দেন। আমার কাছে ভাংতি নাই। আমি মুখ ফস্কে বলে ফেললাম,
– আমার সারপ্রাইজ কই? ময়লাওয়ালা ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দিলো,
– আমি কি জানি?
আমারে কি আপনার চোর মনে হয়? আর আমি কি আপনার ঘরের ভিতরে ঢুকছি যে আপনার জিনিস চুরি করুম? সম্বিত ফিরে পেয়ে ব্যাপারটা ঝামেলার দিকে এগুনোর আগেই তাড়াতাড়ি করে ময়লাওয়ালাকে ভাংতি দিয়ে বিদেয় করলাম। আজকে সব কাজই এমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এই যেমন একটু আগে এক ফ্রেন্ড ফোন করলো বার্থডে উইশ করার জন্য। আর আমি কল্পনা করছিলাম বরমশাই উইশ করছেন। এই ঘোরে থেকে কয়েকটা আবোলতাবোল কথাও শুনিয়ে দিয়েছি ওই ফ্রেন্ডকে। কি জানি ও কি ভাবলো। এখন আবার লজ্জা লাগছে খুব। ধুর, আজ এমন কেন হচ্ছে!
বাবা-মা আর ছোটবোনকে খুব মিস করছি। ওরা সিলেটে বড়চাচার বাসায় বেড়াতে গিয়েছে সপ্তাহ খানেকের জন্যে। নয়তো এতক্ষণে ওরা এসে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো আয়োজন করতো। ফোনে কথা হয়েছে যদিও। কিন্তু তবুও, ফোনে কথা বলা আর সামনে উপস্থিত থেকে একসাথে আনন্দ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। কিন্তু আমার অবাক লাগছে আমার শ্বাশুড়ি-মায়ের কথা ভেবে। বরমশাই ফুপু- শ্বাশুড়িকে যেহেতু বলেছেন আমার জন্মদিনের কথা, তাহলে নিশ্চয়ই শ্বাশুড়িকেও বলেছেন। অথচ আম্মার কোনো খবরই নেই। অন্যান্যদিন দিনে দু’তিনবার করে ফোন দেন আর আজ! তবে কি এখানেও কোনো প্ল্যান তৈরী হচ্ছে? হতেও পারে।
ফুপু-শ্বাশুড়ির রান্না শেষ হয়ে গেছে। আমাকে খেতে ডাকছেন। আমি বলেছি, বরমশাই এলে একসাথে খাবো। তিনিও তাতে সায় দিয়েছেন। আজকে দেখছি, ফুপুরও মন মেজাজ বেশ ভালো। অযথা কথা বাড়াচ্ছেন না, অকারণে ভুল ধরছেন না, হুটহাট মেজাজও খারাপ করছেন না। তাছাড়া ফোনে ছেলেমেয়েদের সাথেও অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বেশি মিষ্টি করে কথা বলতে দেখলাম। বাহ্, দিনটাই আজ ভালো ভালো যাচ্ছে, শুধু আমার অনিয়ন্ত্রিত উদ্ভট কল্পনাগুলো ছাড়া।
উত্তেজনার চাপে পড়ে বরমশাই অফিস থেকে আসার সাথে সাথে জোর করে তাকে নিয়ে তিনজন মিলে খেতে বসে গেলাম। আমার কবলে পড়ে বরমশাই আর ফুপুকে রাত ১০টার ডিনার সন্ধ্যে ৭টায় সেরে নিতে হচ্ছে। কি করবো, আর যে অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। খাওয়াদাওয়া সেরে না নিলে বাকি প্ল্যানগুলোতে বড্ড দেরী হয়ে যেতো। আমি তো সময় বাঁচানোর জন্য বরমশাই আসার আগেই রেডি হয়ে বসে আছি, তিনি এসে যদি আমাকে নিয়ে কোথাও বের হতে চান। তাছাড়া আমি তো এখনো জানিনা তিনি কি বাসায় সব আয়োজন করবেন নাকি বাইরে।
খাবার টেবিলে এত এত আইটেম দেখে বরমশাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– এত রান্না কে করেছে? আমি হেসে উত্তর দিলাম,
– ফুপু করেছেন। বরমশাই ফুপুর দিকে তাকালেন,
– তুমি হঠাৎ এসব করতে গেলে কেন? বরমশাইয়ের অভিনয় দেখে আমি মনে মনে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। মানুষটা অভিনয়ও জানে! তাও আবার এত নিখুঁত! ফুপু জিজ্ঞেস করলেন,
– আইজকের তারিখটা কি ভুইলা গেছোছ্? বরমশাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে আমার আর ফুপুর দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি মুখ নিচু করে লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে আছি। আড়চোখে দেখতে পাচ্ছি, ফুপুও লজ্জা পাচ্ছেন। খানিকবাদে ফুপু আহ্লাদী গলায় বলে উঠলেন,
– আইজ যে তোর এই অভাগী ফুপুডার জন্মদিন, মনে নাই তোর? ফুপুর কথাটা শোনামাত্র আমি যেন ৪৪০ ভোল্টের একটা শক্ খেলাম। মুখ তুলে হা করে বরমশাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বরমশাই সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললেন,
– ওহ্, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। সকালে মনে করিয়ে দিতে ফুপু, একটা শাড়ি কিনে নিয়ে আসতাম অফিস থেকে আসার সময়। আরে প্রিয়তি তুমি তো জানো না, ফুপু এমনই। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, ফুপু তার জন্মদিনে নিজের হাতে সবার পছন্দের আইটেম রান্না করে সবাইকে খাওয়ান। বিয়ের পরও ফুপুর এই অভ্যাস বদলায় নি। এজন্য ফুপার কাছে কত বকা খেয়েছে, তার হিসেব নেই। তাই না ফুপু?
বরমশাইয়ের কথায় ফুপু বেশ মজা পাচ্ছেন মনে হচ্ছে। আমি অবাক হয়ে তা দেখতে লাগলাম। নিজের জন্মদিনে নিজের হাতে সবার পছন্দের আইটেম রান্না করে সবাইকে খাইয়ে আবার সেজন্য নিজের বরের কাছে বকা খাওয়াটা কি কোনো গর্বের ব্যাপার হল? কি এক পরিবারে এসে পড়লাম রে বাবা, যেখানে সব উল্টো কাহিনী! এই মুহূর্তে আমার ইচ্ছে করছে, খাওয়া শেষ না করেই টেবিলে ছেড়ে উঠে পড়তে। কিন্তু এটা বেয়াদবি হবে। তাছাড়া বুড়ো মানুষটা কত শখ করে সারাদিন ধরে এসব রান্না করেছেন। এখন আমার এরকম আচরণে কষ্ট পেতে পারেন। নিজের মন ভেঙে গেছে বলে আরেকজনের আনন্দ মাটি করে দিতে পারি না আমি। এই ভেবে ভেতরের যন্ত্রণাটা দমিয়ে রেখে হাসিহাসি মুখ করে ফুপু শ্বাশুড়িকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম, সাথে প্লেটের খাবারটাও শেষ করলাম।
পেটপূজো করে এসে বরমশাই শুয়ে শুয়ে মনের আনন্দে গুণগুণ করে গান গাইছেন, “ইয়ে ম্যারা দিল প্যায়ার কা দিওয়ানা” তার বেসুরো গলায় গানটার অন্তর্নিহিত অর্থ পালটে গিয়ে গানের প্রত্যেকটা লিরিককে যুদ্ধের স্লোগান বলে মনে হচ্ছে। আর আমি এখানে খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাগ্যের দশ পুরুষ উদ্ধার করতে করতে রাগ কমানোর উদ্দেশ্যে রাস্তাঘাটের পথচারী গুণছি। এটা আমার ছোটবেলার অভ্যেস, মানুষ গুণলে আমার মেজাজ স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে। তো পথচারী গুণতে গুণতে আমার মেজাজ যখন প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, ঠিক তখনি বরমশাই তার যুদ্ধের স্লোগান থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– আচ্ছা প্রিয়তি, অফিস থেকে ফেরার পর থেকে দেখছি তুমি শাড়ি পরে সাজগোজ করে আছো। কেন? এরকম হুটহাট অকারণে সাজগোজ করা কিন্তু একধরনের মানসিক রোগ, সেটা জানো তুমি? আমি পেছন ঘুরে বরমশাইয়ের সামনে এসে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বললাম,
– আর একজন মানসিক রোগীর সাথে সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় সংসার করাটাও আরেক ধরনের মানসিক রোগ।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বরমশাই আর কথা না বাড়িয়ে টি-শার্ট পরে চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে গেলেন। কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো না আমার। যাক, যেখানে খুশি। ১ ঘণ্টা পর বরমশাই ফিরে আসলেন হাতে করে এক ঠোঙা ঝালমুড়ি নিয়ে। ঝালমুড়ির ঠোঙাটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
– এটা খাও। মামাকে দিয়ে স্পেশাল ঝালমুড়ি বানিয়ে এনেছি তোমার জন্য। আমি আর সাতপাঁচ কিছু না ভেবে ঠোঙাটা হাতে নিয়ে ঝালমুড়ি চিবুতে শুরু করলাম। প্রথমবারেই কেমন যেন একটা তিতকুটে ভাব লাগলো। খুঁটে খুঁটে দেখতে লাগলাম ভেতরে কি আছে। তারপর ঠোঙার ভেতরে ঝালমুড়ির সাথে গোলাপের পাঁপড়ি আবিষ্কার করলাম। একটা পাঁপড়ি উঠিয়ে নিয়ে বরমশাইকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– এসব কি? তিনি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গীতে উত্তর দিলেন,
– গোলাপের পাঁপড়ি। তোমার মধ্যে ভালোবাসার খুব অভাব তো তাই এই গোলাপের পাঁপড়ি খাইয়ে ভালোবাসা বাড়াতে চাচ্ছি। রাগে দুঃখে বাকি ঝালমুড়িটুকু ঠোঙা থেকে মেঝেতে ফেলে দিলাম। হঠাৎ ঠোঙাতে চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম, কি সুন্দর হাতের লিখা! প্রথম দু’তিন লাইন পড়ে বুঝতে পারলাম, এটা একটা প্রেমপত্র। ততক্ষণে বরমশাই নিচু হয়ে মেঝে থেকে ঝালমুড়ি টোকাতে শুরু করে দিয়েছেন। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,
– এই দেখুন, কি সুন্দর একটা প্রেমপত্র! কে জানে, কে সেই সৌভাগ্যবতী। কিছু তো শিখেন অন্তত? বরমশাই উঠে দাঁড়িয়ে প্রেমপত্রটা দেখে বললেন,
– এরা হচ্ছে নিচু শ্রেণীর প্রেমিক। দেখছো না কি অশ্লীল কথাবার্তা লিখা?
– এই অশ্লীলতার মধ্যেও না এক ধরনের আবেগ আর ভালবাসা লুকিয়ে আছে, যা আপনার বোঝার সাধ্য নেই।
– তাই? তো না বুঝলে, লিখলাম কি করে?
ভ্রু কুঁচকে ফেললাম আমি।
– মানে?
– মানে বউয়ের হাতের লিখা না চিনলে সেটা মহা অন্যায়। আর বরের হাতের লিখা না চিনলে, সেটা কি?
আমি বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম এ পর্যায়ে। বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত তার হাতের লিখা দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনি কখনো তাই এখন চিনতে পারিনি। আমাকে এভাবে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বরমশাই আমাকে পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– সবাই তো ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়, আমি না হয় আমার বউকে ফুলের পাঁপড়ি খাইয়ে আর অশ্লীল প্রেমপত্র দিয়েই শুভেচ্ছা জানালাম। তারপর আমি একটা ভয়ংকর কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললাম যা এই অশ্লীল প্রেমপত্র থেকেও আরো বেশি! প্রেমপত্রে কি অশ্লীলতা লিখা ছিল তা জানতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না প্লিজ।