নতুন নতুন প্রেমে পড়েছিলাম। অল্প বয়সের হালকা একটু ক্রাশই মারাত্নক হয় আর এতো প্রেম! তখন চারদিকে শুধু প্রেম প্রেম আবওহাওয়া লাগে। মনে হয় এত সুখ আমি কোনোদিনও পায়নি। সবে ক্লাশ সেভেন থেকে এইটে উঠেছি। আর আম্মু দিতে যায় না স্কুলে। বান্ধবীদের সাথেই যাওয়া আসা করতাম রোজ। এই সুযোগে আমাদের এলাকার লোকাল একটা ছেলের সাথে আমার প্রেম টা হয়েছিলো।
পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা! ছেলেটা আসলেও জোস ছিলো দেখতে। আমার থেকে বয়সে দুবছরের বড়। মানে ক্লাশ টেনে পড়ে। সেই বয়সেই সে বাইক চালাতে পারতো, চোখে চকমকা চশমা পরতো, চুলে জন আব্রাহাম টাইপ কাট দিয়ে ঘুরতো। আমি তে দেখে পুরা ফিদা হয়ে যেতাম। কিন্তুু আমার মা জননী কোনো এক অজানা কারণে তার দুচোখের কোণা দিয়েও দেখতে পারতো না। যখন ও হুসসস করে বাইক চালিয়ে যেত, আম্মু বলত-“হুহ, মরণ দশা! উইপোকার পাখা গজাই মরিবার তরে! এলাকাটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে একদম। বখাটে পিচ্চি শয়তান কোথাকার”। আমার এসব শুনলে পিত্তি জ্বলে উঠত কিন্তুু আম্মুকে কিছু বলারও সাহস পেতাম নাহ। পাছে যদি আবার সন্দেহ করে বশে!
রোজ স্কুলে যাওয়ার সময় আর আসার সময় ও আমার পিছু পিছু আসত। আমার বেণী নাড়াতে ওর দিকে ফিরে মুচকি মুচকি হাসি দিতাম। নিজেকে তখন সিমরান আর ওরে রাজ মনে হয়। আহহা কি প্রেম আমার! একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ও আমাকে বললো-“অর্পি ঘুরতে যাবা?” আমি তো পুলকে শেষ। প্রথম প্রথম প্রেমিকের হাত ধরে ঘুরতে যাবো, আহা কি ফিলিংস। দুজন চলে গেলাম।
আমি ওর বাইরের পিছনে বসে আছি। বেণী করে বেরুলেও বাইকে উঠেই চুলগুলো খুলে দিলাম। বাতাসে চুল উড়ছে। আমার হাত ওর কাঁধে। অস্থির ব্যাপার স্যাপার। বড় রাস্তায় আসার সময় দেখি মা আমার ব্যাগ ভরতি কাঁচা বাজার নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে। আমি তারে দেখেই বললাম-“রিয়াদ, জোরে চালাও, জোরে। ” সে বললো-“জোরে চালাতে ভয় করে, আমার ময়না পাখিটা যদি বাতাসে উড়ে যায়! ”
এমনি সময়ে এটা বললে আমিও ‘ওলে লে আমাল বাবুটা লে’ বলে আদর করতাম কিন্তুু আমার এখন এসব কিছুই ভালে লাগছে না। আম্মু দেখলে পুরা বাঁশ। আমি বললাম-“উফফ ঢং করোনা তো। আম্মু আসছে। তাড়াতাড়ি রাস্তা ছাড়ো না হলে বাজারের ব্যাগ দিয়ে পিটাবে। ” আমি মুখের সামনে আমার স্কুল ব্যাগটা যথাসম্ভব এগিয়ে নিয়ে লুকিয়ে রাস্তা টা ক্রস করলাম।
বাড়ি ফিরে আম্মু বললো ক্লাশ কেমন হলো আজ স্কুলে?আমি ভাবছিলাম আম্মু তো এসব কখনও জানতে চাই না আজ হঠাৎ! তাও স্বাভাবিক ভাবেই বললাম -“হ্যা ভালোই। “আম্মু কেমন যেন চোখ মুখ পাকিয়ে সন্দের চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আমি দেখেও না দেখার ভান করে নিজের ঘরে চলে গেলাম।
আমার মেজ মামা দুবাই থেকে এলো এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর। আ দিনের পরে আম্মু আমাকে রোজ স্কুলে এগিয়ে দিয়ে আসে আবার আসার সময় সাথে করে নিয়েও আসে। আমার জান পাখি ফাহিম কাঁঠাল গাছটার আড়ালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে। বুকটা আমার ফেটে যায়!
মামা এসেই আমার হাতে একটা মোবাইল দিয়ে বলে তোর জন্য নিয়ে এলাম। আজকালকার ছেলেমেয়ে রা কত্ত স্মার্ট। মন দিয়ে পড় আর গেইম খেল। আম্মু আমার এই ফোনের ব্যাপারটা মোটেই মন থেকে মানতে পারছিলো নাহ। বার বার বলছিলো -“না না রমিজ(আমার মেজ মামা) এটা ঠিক না। এত অল্প বয়সে মোবাইল। মামা কোনো মতে ভুজুং ভাজুং দিয়ে বুঝিয়ে দিলো আমি নতুন ফোন পেয়ে আনন্দে আত্নহারা। ফেসবুক খুলে ধুমাইয়া চ্যাটিং করি। দিন নেই রাত নেই, পড়াশোনাই মন ও নেই। নাই বা হলো রোজ রোজ দেখা, এই ছোট্টফোনে আমার ছোট্ট সংসার টাতো আর আম্মু ভাংতে পারবে নাহ।
সেদিন রাতে ফেসবুকে কথা বলছি। প্রেম তুংগে তখন। পাশে আম্মু বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ফাহিম বললো -“তুমি আমার জীবনে এসে জীবনের মানে টাই বদলে দিয়েছো সোনা। ” আহ! চোখে জল এসে যায়! আমিও বললাম-“আমিও তোমাকে এত্ত ভালোবাসি যে আমার একার ভালোবাসাই তোমার আমার জন্য যথেষ্ট হবে। “হুট করে আম্মু বলে উঠলো-“এত্ত ভালোবাসা তরা পাস কেমনে? ” আম্মুযে কখন জেগে গিয়ে পাশে শুয়ে আমার চ্যাটিং দেখছে আমি খেয়ালই করিনি। অতঃপর বাজারের ব্যাগ থেকে পালংশাকের আঁটি দিয়ে পিটানি। ভাগ্যিস ব্যাগে ডাটা বা লাউ ছিলোনা!