“এত রাতে অনলাইনে কী করো তুমি?”
“মুত্তে আসছি।”
“কীহহহ?” আমি মোবাইলটা বিছানার পাশে রেখে টেবিলের সামনে গেলাম। তারপর এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে আবার বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম।
“অনলাইনে কী করো বললা না তো।”
“বাসায় বাথরুম নেই তো তাই অনলাইনে প্রশাব করতে আসছিলাম।”
“ফাইজলামী করো তুমি আমার সাথে?” ম্যাসেজটা দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম।
“ফাইজলামী তো তুমি আমার সাথে করছ।”
“মানে?”
“মানুষ অনলাইনে কী করে? অনলাইনটা কী তোমার কাছে চা, বিড়ির দোকান মনে হয় যে আমি এখানে এসে বিড়ি কিনব?” বউ আমার ম্যাসেঞ্জারে গোটাকয়েক এংরি রিয়েক্টের ইমোজি পাঠাল। তারপর বলল,
“খবরদার তুই আমাকে নিতে আসবি না।”
“আচ্ছা আসব না।”
“কথাটা যাতে মনে থাকে।”
“হ্যাঁ, এই কথা বেশ ভালোই মনে থাকবে আমার। কাল একবার টিনা, মিনাকে বাসায় আসতে বলব তাহলে।”
“টিনা, মিনা কে?”
“আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড।”
“ওদের বাসায় আসতে বলবি কেন তুই?”
“বেশ জমিয়ে আড্ডা দিব ওদের সঙ্গে। কতদিন ধরে ওদের কাছ থেকে দেখি না!”
“কী বললি তুই লুইচ্চা?”
“তুমি যে রাতে চোখে দেখতে পাও না সেই কথা তো আমায় আগে কখনও বলো নাই।”
“তোরে হাতের কাছে পাইলে এখন..!”
“রাত অনেক হয়েছে, ঘুমাও এবার।”
“তুই চুপ থাক। তোর টিনা, মিনার সাথে পিরিত আমি ছুটাইতাছি দাঁড়া।”
আমি ডাটা অফ করে সুন্দর করে অফলাইনে চলে এলাম। বিয়ে করেছি আজ ছ’মাস হয়েছে; কিন্তু বউয়ের সাথে ঝগড়া করা দেখলে মনে হবে বিয়ের বুঝি আট-দশ বছর পেরিয়ে গেছে। সামান্য বিষয় নিয়েও উনি প্রচণ্ড হাই হয়ে যান। আত্মীয়দের মাঝে বিয়ে করলে এই এক ঝামেলা। আম্মা খুব শখ করে তার ভাইয়ের মেয়েকে এনেছিল আমার বউ করে। কিন্তু শালীর বেটি এক নাম্বারের বান্দর।
দেয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে একবার তাকালাম। ঘড়িতে সময় রাত ২:৫৭ মিনিট। দু’দিন আগে বাপের বাড়ি গেছে ক’দিন থাকবে বলে। আম্মাকেও সাথে নিয়ে গেছে। ঘুমিয়েই ছিলাম আরামে, কিন্তু স্বপ্নে কুত্তার দৌড়ানি খেয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠেছি। বাবুরে বাবু, শালার কুত্তা কী এক দৌড়ানিই না দিল আমাকে! কী করব কী করব ভেবে একটু ইউটিউবে এসেছিলাম নাটক দেখার জন্য। কিন্তু বউয়ের জ্বালায় সেটাও শান্তিমত করতে পারলাম না। সিঙ্গেল লাইফটাই ভালো ছিল। কোনো প্যারা ছিল না। যখন তখন যেকোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারতাম; কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না। আর এখন তাকানো তো দূরের কথা মেয়ে দেখলে দশ হাত দূর দিয়ে যেতে হয়। বিয়ে করে দুনিয়ার সব ঝামেলা একসাথে বাসায় এনে জায়গা দিয়েছি। এখন স্নো লাগবে, তখন পাউডার লাগবে, ওমুকের জামাই দশ হাজার টাকা দিয়ে উনার বউকে শাড়ি কিনে দিয়েছে; তুমি আমায় পনেরো হাজার দিয়ে শাড়ি কিনে দিবে, ওমুকের এইটা তমুকের এইটা! এগুলা শুনতে শুনতেই লাইফ শেষ। বয়স মাত্র আটাইশ। শুরু না হতেই সব যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।
পরেরদিন সকালে মন্টু মামার চায়ের দোকানে বসে কড়া লিকার দিয়ে চা খাচ্ছি আর বিড়ি টানছি। আহা বিড়ি টেনে কী শান্তি লাগছে মনে! আজ বহুদিন পরে বিড়ি টানছি৷ বউ বাসায় থাকলে তো ভুলেও বিড়ি টানা যায় না। গুরু উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছেন, সিগারেটের লাস্ট টান আর তিনশো যুবতী মেয়ের চুম্বন একই কথা।
আরামসে পায়ের উপর পা তুলে চা খাচ্ছি আর চায়ের সাথে ফিলিংস নিয়ে সিগারেট টানছি। হুট করেই ফোনটা ভাইব্রেশন করে উঠল। ম্যাসেজ ভেবে এড়িয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু ফোনটা যখন অনবরত ভাইব্রেশন করতেই লাগল তখন বুঝতে পারলাম নিশ্চয়ই বউ ফোন দিয়েছে। চায়ের কাপটা পাশে রেখে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। ওই তো বলেছিলাম না বউ ফোন দিয়েছে!
“হ্যাঁ ডার্লিং বলো।”
“খেতায় আগুন ধরা তোর ডার্লিং এর। তুই কই এখন বল তো?”
“আমি এইতো বাসায়।”
“সত্যি করে বল বলছি।”
আমি চায়ের কাপে একটু চুমুক দিয়ে ভাবতে লাগলাম, ওর কাছে ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি আছে। নিশ্চয়ই বাসায় এসেছে তাহলে। মিথ্যা বললেই এখন কেস খেয়ে যাব।
“ডার্লিং আমি তো মন্টু মামার চায়ের দোকানে।”
“মন্টুর দোকানে না তোরে যাইতে মানা করছি?”
“একটু চা খেতে এলাম। ঠাণ্ডায় সমস্যা করছে একটু।”
“এক্ষন বাসায় আয়।”
“তুমি কোথায় বেবি?”
“বাসায় আয় বলছি নয়তো তোর খবর আছে বলে দিলাম।”
কাপে থাকা অল্প একটু চা পাশে ফেলে দিলাম। তেরো টাকা দিয়ে সিগারেটটা কিনলাম সেটাও অর্ধেক খেয়ে ফেলে দিলাম। তারপর মামার দোকান থেকে এক টুকরো লেবু খেলাম। কী টক রে বাবা! সাথে সাথে একটা লাভ ক্যান্ডি আর একটা পালস চকোলেট খেয়ে ফেললাম। তারপর একটা চুইংগাম চাবাতে চাবাতে বাসায় ফিরে এলাম। বাড়ির সামনে এসে দেখি গেইট খোলা, দরজার সামনে গিয়ে দেখি তালা নেই দরজায়। তার মানে বউ এসেছে। দরজার সামনে এসেই হাতে হা দিয়ে দেখলাম মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ আসে কিনা। উহু, আসে না। হেহেহে বালিকা, তুমি কোত্থেকে ধরবা। তুমি চল ডালে-ডালে, আমি চলি পাতায়-পাতায়। কলিংবেল চাপ দিলাম। বউ আমার সুন্দর করে দরজাটা খুলে দিল। “ডার্লিং ভালো আছো?” নীলাঞ্জনা আমার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। “আমি মন্টুর দোকানে সিগারেট খেতে যাইনি, চা খেতে গিয়েছিলাম। এই দেখ।” কথাটা বলেই আমি আমার মুখ থেকে নীলাঞ্জনার মুখে একটু হাওয়া দিলাম। হাওয়া দিতেই নীলাঞ্জনা আমায় একটু ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে গেল।
“খাডাস, সকালবেলা দাঁত ব্রাশও করেনি।”
“চা খেতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এসে ব্রাশ করব।”
নীলাঞ্জনা একটু একটু করে আমার সামনে এগিয়ে এল। তারপর আচমকা আমার ডান হাতটা ওর নাকের সামনে নিয়ে ধরল। “তুই না সিগারেট খাস নাই বললি?” “সত্যি খাই নাই।” “তাহলে হাতে কিসের গন্ধ এটা?” আমি ডান হাতটা আমার নাকের সামনে নিয়ে এলাম। খেয়েছে রে! হাত থেকে সিগারেটের গন্ধ আসছে। ঠ্যালা সামলাই এবার।
“সিগারেট খাস নাই?” “না মানে বেইবি!” “চুপ কর তুই। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। আমি এই কথা ভুলেও এখন জিজ্ঞাসা করতাম না কিন্তু তোর কথা শুনে মনে সন্দেহ হলো।” আমি পড়ে গেলাম মহাবিপদে। একদিকে খালি পেটে সিগারেট খেয়ে মাথা সেই চক্কর দিচ্ছে, অন্যদিকে বউ দিচ্ছে প্যারা! ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে বাঁশ খাচ্ছি। নীলাঞ্জনা চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে একবার তাকাল। তারপর রাগে ফুলতে ফুলতে রুমে চলে গেল। আমি বিড়ালের মতো ম্যাও ম্যাও করতে করতে দরজা লাগিয়ে নীলাঞ্জনার পিছুপিছু রুমে গেলাম। রুমে গিয়েই সে আলমারি থেকে সব জামাকাপড় নামিয়ে ব্যাগে ভরতে লাগল।
“কী ব্যাপার জামাকাপড় ব্যাগে ভরছ কেন?”
“বাপের বাড়ি চলে যাব। থাকব না আর তোর বাড়িতে।”
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে নীলাঞ্জনার কাণ্ড দেখতে লাগলাম। ব্যাগ গুছিয়ে সে বোরকা পড়ে রুম থেকে বাইরে বেড়িয়ে গেল। আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে টিনাকে ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ রিং হবার পর টিনা ফোন রিসিভ করল।
“টিনা ডার্লিং, আপদ বিদায় হয়েছে। ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে। তুমি জলদি বাসায় চলে আসো। তোমায় নিয়ে আজকে ধানমন্ডি লেকে যাব।” আমার ফোন তখনও কানে। আচমকা নীলাঞ্জনা কোত্থেকে জানি এসে আমার চুলের মুঠি ধরে বলে উঠল, “শালা, আমি যেতে না যেতেই লুইচ্চামী শুরু করে দিছিস? আমি আপদ তাই না? দে ফোন দে বলছি।” নীলাঞ্জনা আমার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে ফোনের লাউডস্পিকার অন করে দিল। তারপর বলতে লাগল, “হারামজাদি, তুই যদি এই বাসায় আসিস তাহলে তোরে ন্যাড়া করে মাথায় আলকাতরা ঢেলে দিব। ভুলেও যদি আর আমার জামাইরে ফোন দিছিস তাইলে তোর চোদ্দগুষ্টিরে গুলি কইরা মারমু আমি। চিনিস তুই আমারে? আমার আব্বুর চাচাতো ভাইয়ের শালার সমুন্দির ঘরের নাতী পুলিশের এস.আই। তোর চোদ্দগুষ্টিরে জেলের ভাত খাওয়ামু আমি।”
নীলাঞ্জনার কথা শুনে আমি হিসাব মেলাতে লাগলাম, পুলিশ অফিসার সম্পর্কে আসলে নীলাঞ্জনার কী হয়।
নীলাঞ্জনার কথা শেষ হবার পর ওপাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠে এক মহিলা বলে উঠল, “কাস্টমার ম্যানেজারের সাথে ষাট পয়সা প্রতি মিনিট কথা বলার জন্য শূন্য চাপুন।” ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসা সুরেলা কণ্ঠস্বর শুনে নীলাঞ্জনা আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তারপর মোবাইলটা ঢিল দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল। তারপর বিছানায় বসে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেঁদে দিল। “তোর সাথে আমি আর থাকমু না। তুই ভালা না।” নীলাঞ্জনা কেঁদে কেঁদে আমায় কথাগুলো বলল। আমি শার্টের কলারটা একটু উঁচু করে চোখের চশমাটা নাকের ডগায় এনে নীলাঞ্জনার দিকে তাকালাম। তারপর বললাম, “আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইক্কো।” আমার কথা শুনে নীলাঞ্জনার কান্নার মাত্রা আরও বেড়ে গেল।
“বউ কাঁদছে কই কাছে এসে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করবে তা না করে উনি আরও রাগাচ্ছে আমাকে। ভ্যাঁ ভ্যাঁ!” নীলাঞ্জনা কাঁদছে। আমি বিছানা থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে নীলাঞ্জনার কান্নার ভিডিও করতে লাগলাম।
“এই কী করছ তুমি?”
“তোমার কান্নার ভিডিও করছি।”
আমার কথা শুনে নীলাঞ্জনা আরও ক্ষেপে গেল। সাথে সাথে আমার কলারটা ধরে বাড়ির প্রধান দরজার সামনে নিয়ে এল। তারপর আস্তে করে দরজাটা খুলে দিল। বাইরে ভীষণ বাতাস, বৈশাখ মাস, মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পর পর খুব জোরে জোরে আকাশটা গর্জে উঠছে।
“যাও, তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো।” আমি নীলাঞ্জনার দিকে একবার তাকালাম। এই বৃষ্টির ভিতরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মাথার উপর যদি একটা পড়তে পারে তাহলে সোজা জমের বাড়ি। আর রক্ষ্যে নেই।
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও বলছি।”
“তোমার মাথা ঠিকাছে নীলাঞ্জনা? এই বৃষ্টিতে ভিজলে আমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে।”
“লাগুক, ডাক্তার দেখাবা।”
“তুমি পাগল হয়ে গেছ?”
“যেতে বলেছি না?”
আমি নীলাঞ্জনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে রইলাম। রাস্তায় যেই পাগল থাকে সেই পাগলও তো এখন এই বৃষ্টিতে ভিজবে না। আর আমি তো সুস্থ একটা মানুষ। এই বৃষ্টিতে ভিজলে আমার কী হাল হবে তা কী সে ভেবেছে একবারও?
আমি আস্তে আস্তে দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেলাম। শরীরে কয়েকটা বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই শরীরটা হাল্কা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। খানিকটা শীতও লাগছে। আমি উঠানে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা আমার কাছে কয়েক কেজি ওজন মনে হচ্ছে। সামান্য কয়েকটা বৃষ্টির ফোঁটা এতটা ভারী কীভাবে হতে পারে?? আমি পিছন ঘুরে দরজার দিকে তাকালাম। দরজাটা এখনও খোলা। “নীলাঞ্জনা, দরজাটা খোলা। ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকছে। দরজাটা বন্ধ করে দাও।” কথাটা বলে আমি হতাশ হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম। আমার কথাটা হয়তো নীলাঞ্জনা শুনতে পায়নি। শুনলে এতক্ষণে দরজাটা লাগিয়ে দিত। মেয়ে মানুষ এই ভালো তো এই খারাপ। কী দরকারটা ছিল এই বৃষ্টির মধ্যে আমাকে ভেজানোর? নিজে ভিজলে বুঝত জ্বর, ঠাণ্ডা শরীরে লাগলে কেমন লাগে। বুঝেনা কামের বাও, খালি কয় বেতন বাড়াও!!
মিনিট পাঁচেক একনাগাড়ে বৃষ্টিতে ভিজলাম। এখন ভিজতে বেশ ভালোই লাগছে। আনন্দ লাগছে খুব। ক’জনই বা পারে এরকম মন খুলে বৃষ্টিতে ভিজতে? আমি উঠানে দাঁড়িয়ে দু’হাত উপরে তুলে দু’বার ঘুরলাম। কী আনন্দ! তারপর একবার দরজার দিকে তাকালাম। আরে, এটা কীভাবে হতে পারে? আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। চোখ দুটো দু’হাত দিয়ে ভালো করে কচলে আবার সামনের দিকে তাকালাম। আরে হ্যাঁ, এইটা তো নীলাঞ্জনা৷ আমি হাত দিয়ে এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখ দিয়ে তাকালাম। উহু, ভুল দেখছি না তো। এটাই তো নীলাঞ্জনা। নীলাঞ্জনা মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে আমার দিকে ধীরেধীরে এগিয়ে আসছে। নীলাঞ্জনার পরণে নীল শাড়ি। আমি অবাক হয়ে নীলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। আমি একবার আমার শরীরের দিকে তাকালাম। আরে, আমার শরীরে যে হলুদ পাঞ্জাবি। এটা কী জাদু? আমি হলুদ পাঞ্জাবি, নীলাঞ্জনা নীল শাড়ি!
পরক্ষণেই আমি নিজেকে হিমু ভাবতে শুরু করলাম। ওই তো আমার রূপা আসছে, আমার কাছে আসছে। আমি দূর থেকেই চেঁচিয়ে বলে উঠলাম, “এত দেরি হলো কেন আসতে?” নীলাঞ্জনা একটু থেমে গিয়ে বলল, “শাড়ি পরতে দেরি হয়ে গেছে একটু।” আমি চুপচাপ নীলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছু বলতে পারছি না। সবকিছু কী মুখেই বলে দিতে হয়? কিছু কিছু কথা অনুভব করে নিতে হয়। আমি নীলাঞ্জনার কাণ্ড থেকে অবাক। সত্যিই অবাক। আজকে আমরা মনের আনন্দে ভিজব। আমি হব হিমু আর নীলাঞ্জনা হবে রূপা। দু’জনে মিলে আজকে “বৃষ্টি বিলাস” করব।