মধ্যবিত্ত প্রেমিকা

মধ্যবিত্ত প্রেমিকা

আপনি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। টিউশনি করেন। তবে আপনার প্রেমিকা হিসাবে আরেকজন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে, এবং সেও টিউশনি করে এমন মেয়ের চেয়ে উত্তম আর কেউ হতে পারে না। দুজনে মধ্যবিত্ত এবং টিউশনি করার ফলে যে ফায়াদাগুলো হয়। তা আমার প্রেমিকার দিকে তাকালেই বুঝবেন। যদিও তাঁর দিকে কাউকে তাকাতে দেখলে আমার জ্বলে।

তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো খুবই করুণভাবে। আমার পকেটে ছিলো দেড়শো টাকা। তাঁর কাছেও ছিলো দেড়শো টাকা। একটা দোকানে কাকতালীয়ভাবে দুজনের একটা টিশার্ট পছন্দ হয়ে গেলো। আমি পছন্দ করেছিলাম আমার ছোট ভাইয়ের জন্য। সে পছন্দ করেছিলো তাঁর ভাইয়ের ছেলের জন্য। দুজনেরই যখন মনে হলো আমাদের কাছে আসলে দেড়শো টাকার বেশি নাই। আর টি শার্টের দাম ছিলো দুইশো। তখন একজন আরেকজনকে বলতে শুরে করেছিলাম, “ আচ্ছা আপনিই নিয়ে নেন। আমি আরেকটা খুঁজে নিবো। ”

“ নাহ, না। আপনিই নিয়ে নেন। আমিই আরেকটা খুঁজে নিবো। ”

“ কিন্তু আপনার তো এটা পছন্দ হয়েছে না? তাছাড়া মার্কেটে তো আর এ টি-শার্ট একটাই না তাই না? ”

তাঁর কথা আমি মেনে নিলাম। কিন্তু সেদিন আর কিনতে পারিনি। মাস শেষ হওয়ার পর আট তারিখ শুক্রবারে সে দোকানে আবার গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই টি-শার্টটা আর পাওয়া হলো না। তবে জীবনে এমন একজনকে পেয়ে গেছি। যে আমার জীবনটাকে আমার চেয়েও বেশি বুঝে। যেমন ধরেন মাথার চুলই। সে আমাকে মাথার চুল কাটার জন্য বলতে মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে।

কারণ এর আগে যে আমার পকেট ফাঁকা থাকে। সে ভালো করেই জানে। তাঁকে নিয়ে ঘুরতে গেলে। একশো বিশ টাকার বেশি আমার লাগে না। শুনতে একটু কিপ্টে কিপ্টে লাগলেও এটাই সত্য। যাওয়া আসা রিকশা ভাড়া চল্লিশ। দুজনের দু-প্লেট ফুচকা আশি। সুন্দর হিসাব। তারপরেও খরচ হয়ে গেলে ম্যাডাম হাজির। মোবাইলে কথা বলতে গেলে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি না। খুব বেশি হলে ত্রিশ মিনিট রাতে। যদিও আমি, কেমন আছো? কী করছো? আজকে তোমাকে কোন ছাত্রের বড় ভাই লাইন মারার চেষ্টা করেছে? ”

এই তিনটা কথা বলার পর আর কথাই খুঁজে পাই না। বাকি কথা সেই বলে। যেমন, রোদ উঠলে ছাতা ব্যবহার করতে। পানি বেশি বেশি খেতে। মোবাইলের দিকে বেশি না তাকিয়ে থাকতে ইত্যাদি! আমার পরিবারে কী চলছে সে তা চোখ দেখেই বুঝে ফেলে। মাঝে মাঝে খুব অবাক হই। কিন্তু যখন দেখি সেও আমার চেয়ে বেশি ব্যথা নিয়ে কী সুন্দর চলছে। দিনের পর দিন একই হাসি মুখ। তখন অবাক না হয়ে আশ্চর্য হই।

আরো একটা চরম সুবিধা হলো। ধরুন এই দিবসে, ঐ দিবসে তাঁকে কোনো দামি উপহার দিতে হয় না। বরংচ দামি কিছু কিনলে তাঁর জন্য, সে খুবই রাগ হয়। কথা বলতে চায় না! সে আমার সময় বুঝে, কখন কোন অবস্থায় আছি৷ কী করছি। দুবার ফোন কেটে দিলে সে তিনবার ফোন দিবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি আবার ফোন দিচ্ছি।

অন্যের বাড়িতে গিয়ে যারা পড়ায়। তাঁরা মানুষের শরৎ বৈশাখ ভালো করেই চেনে। সে মনে হয় আমার থেকে বেশিই চেনে। তাঁকে আমি প্রেমিকার চেয়ে অন্যকিছু ভাবি। একজন বন্ধু। যে সবসময় পাশে থাকে। একজন মানুষ, যার কপাল ধরতে হয় না। হাতটা ধরেই শরীরে কতো ডিগ্রী জ্বর তা বুঝে ফেলে। তাঁর সাথে যে আমার ঝগড়া হয় না এমন না। আমাদেরও প্রচুর ঝগড়া হয়।

কিন্তু ঝগড়ার একটা সময় পর সবকিছু ভুলে দুঃখিত বলি। একটা কথা ধরে বসে থাকলে তো থাকাই যায়৷ কিন্তু সময় তো আর থেমে থাকে না। তারপর ধরুন তাঁর রান্নার হাতের কথা যদি বলি। সে আলু দিয়ে পেপের তরকারি খুব দারুণ বানায়। কদিন পরপরেই টিফিন বাটি করে নিয়ে আসে। আমি মাঝে মাঝে হাত না ধুয়েই খেতে বসে পড়ি। সে তরকারি দেখলে আমার ক্ষিধে চরম পর্যায়ে চলে যায়!

এইযে তাঁর ব্যাপারে এতো কথা বললাম। এগুলো আসলে কিছুই না আমার কাছে। আমি তাঁকে মাথায় করে রাখি। তাঁকেই বিয়ে করবো। এর একটাই কারণ, সে কখনো আমাকে ফুটবল ম্যাচ দেখার সময় বিরক্ত করে না! তা দিন দুটো হোক বা রাত দুটো! যদিও সে ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে আর্জেন্টিনার খেলোয়ার মনে করে!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত