পূর্ণতায় তুমি

পূর্ণতায় তুমি

সন্ধ্যাবেলা নদীর পাড়ে বসে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর হিসেব মিলানোর চেস্টা করছি কিন্তু কিছুতেই কিছু মিলছে না, চোখ বেয়ে নোনাজল ঝরঝর করে পড়ছে।একেকটা দিন যাচ্ছে আর একেকটা ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নিজের ছায়া খুজছি নিজেই। এই নিয়ে ১৮টা ভার্সিটিতে এক্সাম দিলাম ফলাফল ওয়েটিং লিস্টেও নাম নাই।বাবা মায়ের চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না,লজ্জায় ঘড় থেকে বের হওয়া দায় তাদের জন্য,এইসব কিছুর জন্য দায়ী আমি। বন্ধুবান্ধব সবাই কোনো না কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাইছে পাইনি শুধু আমি।ইদানিং প্রাপ্তির সাথে যোগাযোগ কম হচ্ছে। প্রাপ্তি হলো আমার সেই ছোট্ট বেলার খেলার সাথে এক সাথে পড়ালেখা হাইস্কুল,কলেজ, এক সাথেই ফার্মগেটে এডমিশন কোচিং সব পাশাপাশি ৮বছরের রিলেশনশীপ আমাদের।ইদানিং প্রাপ্তিও বদলে গেছে কল দিলে রিসিভ করে না,দুইবারের বেশি কল দিলে ফোন বন্ধ, এমনকি মাঝ রাতেও তার ফোন ওয়েটিং পাই কার সাথে কথা বলছো বললে উত্তর আসে ভার্সিটির বড় ভাইয়ার সাথে ভর্তি সংক্রান্ত কথা বলি।মুচকি হেসে ফোনটা কেটে দেই।

একটা পাবলিক ভার্সিটির সীটই কেবল আমাকে আমার বন্ধুবান্ধব আত্নীয় স্বজন সবার কাছে ছোট করেছে।এসব ভাবতে ভাবতেই প্রাপ্তির কল।রিসিভ করতেই বল্ল কাল সকালে লেকের পাড়ে আসিস কথা আছে বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো।এই প্রথম প্রাপ্তি আমাকে তুই করে বল্ল। আচ্ছা তুই তো দুই ধরনের মানুষকেই বলা যায় একদম খুব কাছের মানুষকে নাহলে তুচ্ছার্থক কাউকে। প্রাপ্তি যে কিভাবে বলল কথাটা আমি ভাবছি আর হাসছি।যাইহোক বাসায় ফিরে একটু খেয়ে ঘুমালাম ইদানিং বাসার কারো সাথে কথা বলতেই লজ্জা লাগে।এক ঘুমেই রাত পার।অথচ একটা সময় সারারাত ফোনে কথা বলছি প্রাপ্তির সাথে। এখন হয়তো প্রাপ্তির মনে নেই।আমার নিজের জায়গাটা যে অন্যকেউ দখল করছে সেটা বোঝাও শেষ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না করেই লেকের পাড়ে গেলাম।দেখি প্রাপ্তি তো আছেই সাথে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই মিলি,রাজিব,সায়েম সবাই।সবাই খুব হাসাখুশি কারন এদের সবার গায়েই পাবলিক ভার্সিটির লেবেল লেগে গেছে আমি কাছে আসতেই প্রাপ্তি সবাইকে বল্ল দেখ ফেল্টুস বাবু আসছে আমার,আবাল কোথাকার।সবাই হো হো করে হেসে উঠলো, আমি কোন কথার উত্তর না দিয়ে ওদের একপাশে দাড়ালাম।তারপর প্রাপ্তি বল্ল শোনো পরাগ দেখো আমাদের মধ্যে যা ছিল ভূলে যাও, আমার পক্ষে আর সম্পর্ক টা রাখা সম্ভব হচ্ছে না,এবার আমি চুপ থাকতে পারলাম না জিজ্ঞাস করলাম হঠাত এতোদিন পর এমন??বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো তারপর যা বল্ল তা শুনার আগে মরে যাওয়া ভালো ছিল।

কথাগুলা ছিল এইরকম নিজের লেভেলটা দেখ আগে, কই তুই আর কই আমি,আমি ঢাবি তে চান্স পাইছি তোর সাথে আমার যাচ্ছে না প্লিজ বিরক্ত করিস না আমাক আর,আর বন্ধুদের কেউ বল্লো ওকে বোঝা একটু আমার সময় নাই সবাই ভুলে যা,দুই একটা মজা নিয়ে কেটে পড়লো নিজের মতো করে,মাটির দিকে তাকিয়ে হিসেব মিলাচ্ছি আমিতো এতো খারাপ ছাত্র ছিলাম না,এই সেই প্রাপ্তি যে কিনা আমার সাথে একবেলা কথা না হলে কান্নাকাটি করে চোখ ফুলিয়ে রাখতো,নিজের পড়ালেখার চেয়ে ওকেই গাইড করছি বেশি আর সেই কিনা ভাবতেই চোখ ভরে এলো পানিতে।২০মিনিটের এই প্রকৃতির দেয়া শিক্ষা জীবনটাকে চিনিয়ে দিয়ে গেল।

নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই দেখি একটা প্রানী আমার চোখে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আর কেউ না সে, মিলি যাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারিনা আর এখন আরো বেশি অসহ্য লাগছে কারন ও নিজেও এখন বুয়েটিয়ান।কিছু বোঝার আগেই আমার হাতটা ধরে বল্ল চলো।আমি চুপ করে আছি দেখে টানতে টানতে আমার বাসায় নিয়ে গেল,বাসায় গিয়ে প্রথমেই আমার মাকে ডাকলো তারপর বল্লো দেখো এই মায়ের দিকে তোমার মনে যে সুইসাইডের চিন্তাভাবনা ঘুরছে আমি জানি,কিন্তু ভূলেও এসব ভাব্বে না কিছুই হয়নি নতুন করে শুরু করো আবার।তারপর দিন যেতে লাগলো সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আর হবেই না কেন ওদের পদচারনায় মুখর ক্যাম্পাস গুলো, কেবল এই বোকা মেয়ে মিলি ছাড়া।

আম্মুকে অনেক কস্টে রাজি করিয়ে আমাকে আবার ঢাকায় আনলো তারপর শুরু হলো আমার একাকিত্ত্বের জীবন কেউ পাশে নাই সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু ব্যতিক্রম এই মেয়ে সারাদিন ক্লাস করে বিকেল বেলা শহীদ মিনারে ডেকে আমার কাছ থেকে পড়া নেয়, পড়া দেয় আর না বুঝলে বুঝিয়ে দেয় ওর শাসন আর সহযোগিতায় নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে পরের বছরের জন্য নতুন করে তৈরি করলাম।টার্গেট আমার স্বপ্নের সাব্জেক্ট ঘ ইউনিটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সায়েন্সের স্টুডেন্ট হলেও আমার স্বপ্ন ছিলো এই বিষয়টার প্রতি যার জন্য ক ইউনিটে এক্সাম দেইনি। নির্ধারিত দিনে এক্সামে বসে আমিতো অবাক প্রায় সব কমন পরীক্ষা শেষ করে বের হয়ে দেখি মিলি তীর্থের কাকের মত চেয়ে আছে কেমন হয়েছে জানার জন্য আমি ওর দিকে তাকিয়ে এই এক বছরে প্রথম মুচকি হাসলাম ওর যা বোঝার বুঝে গেছে ও তারপর ওয়েট করতে লাগলাম রেজাল্টের জন্য।

মাঝখানে কিছুদিন কেটে গেছে আজকে রেজাল্ট আমি আর মিলি গেছি ক্যাম্পাসে ঢাবির রেজাল্ট দেখতে,আজকে হঠাত মিলির দিকে তাকালাম চোখ মুখ শুকিয়ে কাঠ। আরে পরীক্ষা তো দিছি আমি এই বোকা মেয়ে এতো টেনশন করে কেন। রেজল্ট দেখি ৭৮তম হইছি আর সাব্জেক্টের চয়েজ ইচ্ছা মত দিতে পারবো।সেইদিন আবেগে মিলিকে জড়িয়ে ধরছিলাম সবার সামনে একি এই মেয়ে কাদে কেন শার্টের কলার ভিজে যাচ্ছে।তারপর আমি আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করলাম এখন মিলির সাথে সম্পর্কটা এখন আরেকটু ফ্রেন্ডলি হইছে।

এই মেয়েটা জ্বালিয়ে মারে একদম মাঝরাতে ফোন দিয়ে বলে পরাগ একটা কথা বলবো রাগ করবে নাতো??না বলতেই চলো ফুচকা খেয়ে আসি তুমি আমার হলের সামনে এসে দাড়াও আমি নামছি,কোনদিন বলবে চলো জোসনা দেখি আমি এসব দেখি আর ভাবি এই বোকা মেয়ে কোনদিনো বড় হবেনা।দিনকাল ভালই যাচ্ছিল। প্রাপ্তির দেয়া ক্ষতটা অনেকটা সেরে গেছে। ২জুন আমার জন্মদিন।আমার এইসবে কোন খেয়াল নেই,ভূলেই গেছিলাম প্রায় হঠাত রাত রাত বারোটায় একটা পুকিং আওয়াজ হলো মেসেঞ্জারে সিন করে তো আমি অবাক মেসেজটা ছিল মিলির।এই সাদাসিধে মেয়েটা আমাক প্রেম পত্র লিখছে আমি অবাক।

যা লিখাছিলো তা পড়ে আমি হাসতে হাসতে পেট ব্যথা ধরার যোগার।মেসেজটা ছিল এইরকম এই ছেলে খুব তো বোকা বলিস আমায়, কিন্তু তুইতো আস্তো গাধা,আমি তোকে কেন এতো কেয়ার করি বুঝিস না তুই,জানিস আমিনা তোকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমার রাজপুত্র ভাবি কিন্তু তুইতো আমাকে পাত্তাই দিস না, আমি ওতো কিছু জানিনা তোকে আমি নিয়ে নিছি তোর আম্মুর কাছ থেকে ভুলেও অন্য মেয়ের দিকে তাকাবিনা বলে দিলাম।মেসেজ দিলাম কাল দেখা করো সকালে।সারারাত হাসলাম মেসেজটা পড়ে,এই দুই বেনী করা মেয়েটা হঠাত করে ক্যামন করে বড় হয়ে গেল,গোল গোল মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া মেয়েটাকে খুব আপন আপন লাগতেছে আর এই প্রথম আমাকে তুই বল্ল কিন্তু এবার অনুভূতি টা অন্যরকম ঠিক করলাম এই বোকা বোকা চেহারার মেয়েটাকে কখনো হারাতে দিবোনা।সকালে গেলাম দেখা কতগুলো কাচের চুরি, গোলাপ আর একটা নাকফুল নিয়ে এগুলা নিয়ে।গিয়ে দেখি ম্যাডাম চুপ করে বসে আছে।

দিলাম এক ধমক মজা করার জন্য ও তো ভয়েতে কেদে দিছে, চশমার গ্লাস ঝাপসা হয়ে গেছে ভয়েতে তাকাচ্ছে না আমার দিকে।জোড়ে বললাম হাত বাড়াও ও ভাবছে হাতে মারবো আস্তে বল্ল না মেরো না প্লিজ। আরেকটা ধমক দিতেই হাতটা বাড়ালো আমার দিকে সুযোগ বুঝে কাচের লাল টুকটুকে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিলাম হাতে, মেয়েতো ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হাটু গেড়ে গোলাপ টা সামনে বাড়িয়ে বললাম চোখ খোলো চোখ খুলেই তো অবাক এবার আমাকে অবাক করে দিয়ে বল্ল নিবোনা।এভাবে বলবে ও ভাবতে পারিনি চুপ করে উঠে চলে যাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল আবার ঠকেছি নিজেকে সামলে নিয়ে তখনি বল্ল এই ছেলে যাস ক্যান খোপায় বেধে দে ফুল ভালো লাগবে।

দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম অনেকক্ষন। প্রকৃতি হয়তো ফাকা জায়গা পছন্দ করেনা,একজনের জায়গা আরেকজনকে দিয়ে দেয় যে তার জন্য পারফেক্ট। কিহলো নাকফুল পড়িয়ে দে এক সপ্তাহ আগে ফূটো করছি তোর হাতে নাকফুল পড়বো বলে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম তুমি কিভাবে নাক ফুলের কথা জানলে?? মিলি বল্ল তোর দায়িত্ব যে আমাকে দিছে সেই বলছে। তারমানে আম্মা বলছে আমি নাকফুল পছন্দ করি।পড়িয়ে দিলাম নাকফুল আবার শক্তকরে জড়িয়ে ধরে ভাবছি ছ্যাকা থেকে ভালকিছু হলে ছ্যাকাই ভাল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত