প্রতি রাতের মতো আজও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া শেষ করে একটু রেস্ট নিয়ে,ফজরের নামাজ পড়ার জন্য রওনা হলাম।সাম্মি ঘুমিয়ে আছে।সাম্মি হলো আমার স্ত্রী নাম।আমার নাম হলো আরিফ। সবসময় আমি আর সাম্মি একসাথেই নামাজ পড়তাম।ও নিজ থেকে ওঠে নামাজ পড়ার জন্য। আজ না ওঠায় আমি ওকে আর ডাকলাম না।ভাবলাম আজ শরীরটা খারাপ হয়তো তাই ওঠেনি।
ফজরের নামাজ পড়ে এসে দেখি সাম্মি এখনো শুয়ে আছে। আমি অফিসে যাবো।প্রতিদিন সাম্মি আমার জন্য ফজরের নামাজ পড়ে সকালের ব্রেকফাস্ট আর দুপুরের জন্য খাবার তৈরী করে অপেক্ষা করতো।আজ কিছু না করায় আমি সাম্মি কে না ডেকে নিজেই সকালের আর দুপুরের খাবার তৈরী করলাম।অফিসের জন্য তৈরী হয়ে সাম্মি কে ডাক দিলাম।ওর কোনো সারা না পেয়ে কাছে গিয়ে জাগানোর জন্য গায়ে হাত দিতে দেখি।ওর শরীর খুব গরম।
দুই থেকে তিন বার ডাক দেয়ার পর শুধু চোখ খুললো।কোনো কথা বলছে না।আমার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে।সাম্মির গায়ে খুব জ্বর।আমি এখন কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।অফিসেরও সময় হয়ে গেছে। আজকে অফিসে অনেক কাজ। এদিকে আমার সাম্মি কে এমন অবস্থা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।আজকে না গেলে পরের দিন হয়তো বসের কথা শুনতে হবে।সব কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো না।আমার স্ত্রীর আমার কাছে অনেক বড় আর অফিসে বসের যে কথা শুনতে হবে ইহা আমাকে কাছে তুচ্ছ মাত্র।এসব ভাবনা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি পানি এনে সাম্মির মাথায় পানি দিলাম।রুটি খাওয়ালাম।সাম্মির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আমি সাম্মিকে জড়িয়ে ধরে বললাম চিন্তা করনো সব ঠিক হয়ে যাবে।এরপর সাম্মিকে শুয়ে দিয়ে আমি ওর মাথায় জলপট্টি দিলাম।
আমার কেউ নেই,প্রায় ৭ বছর হবে বাবা-মা এক্সিডেন্টে মারা গেছে।এখন আমার স্ত্রী আমার সব।৯টার দিকে সাম্মিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে রওনা হলাম।ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলো করতে।টেস্ট গুলো করার পর ডাক্তার দেখে বললো তেমন সমস্যা না।একটু রেস্টে রাখবেন আপনার স্ত্রী কে।আর ডাক্তার কিছু ঔষধ নিতে বলছে। ঔষধ কিনে সাম্মি কে নিয়ে বাসায় আসলাম।সাম্মিকে শুয়ে দিয়ে সাম্মির কাপড় ধুয়ে দিলাম।এরপর সাম্মিকে দুপুরের খাবার খায়িয়ে ঔষধ খাওয়া তে যাবো এমন সময় সাম্মি আমার হাত ধরে কাঁদতে লাগলো।আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম তুমি কেন কান্না করছো?সাম্মি বললো তুমি আমার জন্য খুব কষ্ট করছো।আমি বললাম তুমি এসব কি বলছো।
আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তুমিও তো আমার জন্য অনেক কষ্ট করছো। সাম্মি বললো স্ত্রী হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। আমি বললাম স্বামী হিসেবে আমার কি দায়িত্ব নাই।সাম্মি চুপ করে রইল। বিকেলে আছরের নামাজ পড়ে এসে দেখি সাম্মি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দুই কাপ চা বানিয়ে সাম্মি কে ডাক দিতেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো তুমি চা বানাতে গেলে কেন।আমাকে বললে তো আমি বানিয়ে দিতাম।আমি বললাম প্রতিদিন তো তুমিই বানিয়ে খাওয়ায় আজ না হয় আমি বানিয়ে খাওলাম।সাম্মি কে একটা চেয়ার এনে বসিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো জানো আমি অনেক সুভাগ্য যে আমি তোমার মতো একজন স্বামী পেয়েছি। আমি সাম্মির হাত ধরে বললাম আমিও ভাগ্যবান যে তোমার মতো স্ত্রী পেয়েছি।
সাম্মি বললো আমি আমার আল্লাহতালার কাছে বলবো যেন তোমাকে ভালো রাখে এবং আমাদের এই ভালোবাসা অটুট রাখে।আমি বললাম আমিন।আমি বললাম জানো সাম্মি একটা সংসারে যদি একজনের প্রতি আরেক জনের বিশ্বাস ভালোবাসা অর্থাৎ একটা সংসার সুখে থাকার জন্য যা প্রয়োজন যদি তা থাকে।তাহলে সে সংসারে আল্লাহতালার রহমত থাকে।সাম্মি আমার কাদের উপর মাথা রেখে বললো তুমি সবসময় আমার পাশে থেকো,আগলে রেখো তোমার মাঝে।আমি বললাম ভালোবাসি যে তোমায়,তোমার সব কথাতো রাখতেই হবে।
এই শুন আল্লাহতালার কাছে প্রতি দিন দোয়া করবে আল্লাহ যেন আমাদের সবসময় সুখে রাখে।সাম্মি বললো ইনশাআল্লাহ।সাম্মি বললো আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?আমি হাসি দিয়ে সাম্মি কে জড়িয়ে ধরলাম।সাম্মি বললো এভাবে কাটাতে চাই আমাদের বাকিটা জীবন। আমি বললাম ইনশাআল্লাহ। সাম্মি বললো মাগরিবের নামাজের সময় হয়েছে চল নামাজ পড়তে যা।দিন শেষে দু’জনে
হাসি মুখে নামাজ পড়তে গেলাম।