ঢাকার শহরে রাতের রাস্তাটা একদম ফাঁকা থাকে ।
শুধু মাঝে মাঝে অথাৎ ২০ মিনিট অথবা ২৫ মিনিট বাদে একটা গাড়ি আসে আবার নাও আসে ।
তাই বাইকটার স্পিডটা বাড়াচ্ছি ।
কারণ এই শহরে দিনের বেলা রাস্তাটা অনেক যানবহন দিয়ে ভর্তি থাকে পুরো রাস্তাটা ।
যেটা বলা হয় ট্রাফিক জ্যাম আর এসময় গাড়ির স্পিড তেমন উপড়ে ওঠে না । যদিও ওঠে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ এর চাইতে বেশি হয়না সর্বোচ্চ ৪০ এর উপর ওঠাতে পারি না ।
তাই আজকে রাস্তাটা ফ্রি থাকায় বাইকের স্পিডটা বাড়িয়ে দিলাম ।
রাস্তার মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি পচন্দ স্পিড এ ।
মাঝে মাঝে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ দোল দিচ্ছি ।
খুব ভালো লাগছে এরকম ভাবে গাড়ি চালাতে ।
মিটার এর দিকে তাকিয়ে দেখি ৯০ এর মতো স্পিড উঠেছে ।
মাঝে মাঝে ল্যামপোষ্টের আলোকে দূত অতিক্রম করছি খুব মজা পাচ্ছি ।
বাইকের স্পিড যখন ৯০ উঠেছে তখনই পেছনে সাইরেন শুনতে পেলাম !
সর্বনাশ !
পুলিশ ! এতো রাতে !
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় দুইটা বেজে গেছে ! এতো রাতে তো পুলিশের থাকার কথা না ! কাজ সেরেছে !
আমি পিছনে তাকালাম এবং লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম ! সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির গতিও কমিয়ে আনলাম ! পুলিশের
গাড়িটা আর একটু কাছে আসেই আমার বুকটা একটু ধক করে উঠলো !
আবারও সর্বনাশ !
এতো গাড়ি !
গাড়িটা আমাকে অতিক্রম করে ।
মনে মনে ভাবলাম যাহ্ যেটা ভেবেছিলাম সেটা কেটে গেলো ।
ভাবতে না ভাবতেই পুলিশের গাড়িটা আমার বাইকের সামনে থামালো ।
আমি তখন বাইকটা থামালাম ।
আমি বাইকে থেকে নামি নাই । লক্ষ করলাম পুলিশের গাড়ি থেকে দুই জন অফিসার নেমে পরলো ।
কাম সেরেছেরে এটা পুলিশ না র্যাব (RAB) ।
কালো পোশাক পরা ।
লোক দুটি আমার দিকে আসছে ।
বাইক ছেড়ে দৌড় দিবো কি , নাকি বাইক ঘুরিয়ে পালাবো কম্পিউটারের ভাইসিটি গেম এর মতো কিছুখন দৌড়ানোর পর ক্রেসটা শেষ হতো ।
এগুলি ভাবতে ভাবতে র্যাব অফিসার দুটি আমার কাছে চলে আসে আর বলে ,
—এতো রাতে কোথায় থেকে আসলে । ( অফিসারটি )
—অফিস থেকে । ( নাসির )
—আমার জানা মতে অফিস বিকালে ছুটি হয় । কিন্তু এতো রাতে অফিস থেকে আসলে ।
—কিছু কাজ ছিলো তাই ।
—এতো রাতে ।
কথাটা শুনে আমি গাড়ির দিকে তাকালাম । দেখি কালো পোশাক পরা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আছে একটা মেয়ে অফিসার ।
আমি আমার চোখ দুটি ফেরাতে পারছিনা । কালো পোশাক পরা চোখে কালো চশমা পরে আছে ।
মনে হচ্ছে কোন সিনেমার হিরোইন ।
কোন একটা স্যুট হবে র্যাবের।
আর কিছু বলমু না কারণ আপনারা আবার বলতে পারেন খারাপ পোলা ।
—আপনি কোন অফিস এ কাজ করেন । ( অফিসারটি )
আমি কোন কথা বলছিনা শুধু ওই হিরোইনকে দেখে যাচ্ছি ।
আমার দিকে আসছে ।
মনে হচ্ছে সিনেমার কোন হিরোইন আসছে ।
টাইট ফিটিং পোশাক পরেছে । মনে হচ্ছে না সে র্যাব ।
সিনেমার মধ্যে পুলিশের রোল দেয় সেই রকম ভাবে দেখা যাচ্ছে ।
কোয়াইট হট ।
আর কিছু বলমু না যদি আপনারা আমাকে খারাপ পোলা ভাবেন ।
মহিলা অফিসারটি আমার কাছে এসে ধারালো আর গাড়ির নাম্বার দেখে বললো ,
—এতো রাতে এরকম ভাবে গাড়ি চালাই নাকি । ( মেয়ে অফিসারটি )
আহা । কতো সুন্দর কন্ঠ ।
চাকরি না করে কোন সংবাদ নিউজ এ কাজ করতো তাহলে ভালো হতো ।
—এই মাত্র অফিস থেকে বের হলাম তাই দূত বাসায় যেতে হবে । ( নাসির )
—তা গাড়ির নাম্বারটা কি বলেন ।
—ম্যাম আপনি মনে হয় চোখে দেখেন ।
আমার কথাটা শুনে ম্যাম রাগি লুক নিয়ে তাকালো ।
—যেটা বলছি সেটা করেন । ( রেগে )
আহা কি সুন্দর কন্ঠ রে রাগি না এটা মধুর মতো কন্ঠ । যদি সারাদিন এভাবে আমাকে কথা শুনিয়ে যেতো তবুও রাজি হতাম কথা শুনতে ।
—ওই যে দেখুন ম্যাম ।
—হুম । গাড়ির কাগজ আছে ।
—জ্বী এই নিন ।
কথা ববলার ভঙ্গি দেখে মনটা কেমন জানি ভালো লাগছে।
আহা কি চোখের চাওনি শুধু প্রেমে পড়তে চাই ।
কাগজ দেখে বললো ,
—হুম দেন ।
কাগজ দেখে আমাকে দিয়ে দেয় ।
—কোন অফিসে চাকরি করেন আপনি । আর আমার জানা মতে এতো রাত পযন্ত ডিউটি হয় না ।
—ম্যালটিমিডিয়া কোম্পানি । আর তাদের সময় আমাদের সময় এক না। একটা ভিডিও কনফ্রারেন্স করতে করতে কখন যে এতো রাত হয়েছে আমি নিজে জানি না ।
—তা এভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন কেনো ।
—ফাঁকা রাস্তা তাই ভালো লাগছিল ।
—আর কোন দিন যদি আবার এরকম গাড়ি চালাতে দেখি তাহলে সোজা হাজোতে ।
.
বালিকা আমি তোমার ওই মনের হাজোত খানায় বন্ধি করে রাখ আমি কখনো বের হবো না ।
আমি বললাম ,
—জ্বী ম্যাম ।
—রতন চল ।
—চলেন ম্যাডাম ।
আহা ম্যাম তোমার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছি ।
ম্যাম অফিসার আর দুজন অফিসার চলে যেতে পিছন দিকে ঘুরে যাচ্ছে ।
আমি তখন বললাম,
—তাজনিন ম্যাম । একটা কথা বলতে চাই ।
আমার কথাটা শুনে ম্যাম রতন আর অফিসারটি আমার দিকে কেমন জানি লুক নিয়ে তাকালো ।
কারণ নাম জানলাম কেমন করে তার কালো পোশাকের সাথে একটা ব্যাচ আছে সেখানে লেখা আছে ।
—বলো ।
—আপনি যদি র্যাব না হতেন তাহলে আপনার সাথে প্রেম করতাম ।
এটা বলার সাথে অফিসার রতন আর মানিক হাসছে ।
—ক্যাম্পে নিয়ে একটা রুলের ডলা দিলে প্রেম করার ইচ্ছে পূরণ হইবে । । ( রাগি কন্ঠে )
—আপনি যদি অবিবাহিত হোন তাহলে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করতে পারি আপনাকে ।
এটা শুনে অফিসার রতন আর মানিক অফিসার হাসছে ।
তাজনিন ম্যাম আরও রেগে গেলো ।
ফর্সা মেয়েটির লাল বর্ণের চেহারা আকর্তি হয়েছে।
আহা । রাগলে তো আরও বেশি সুন্দর লাগে ।
অফিসার তাজনিন আরও রেগে গিয়ে বললো ,
—আপনাকে ক্যাম্পে নিয়ে রুলের ডলা দিলে ভালো হবেন । (রাগি কন্ঠে)
—ক্যাম্পে একটা কেনো দশটা রুলের ডলা খেতে রাজি আছি আপনার জন্য ।
—( চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে )
—তাজনিন ম্যাম আপনি চাইলে আপনার বাসায় গিয়ে প্রস্তাব দিয়ে আসতে পারি ।
আহা । কতো সুন্দর করে হেটে যাচ্ছে।
পুরাই হিরোইনের মতো ।
যদি আমি নায়কেরর মতো হতাম তাহলে জোর করে গিয়ে ভালোবাসি কথাটা বলে আসতাম।
আমি নায়ক না কাই আশাটা অসমপূর্ন রয়ে গেলো ।
তাজনিন রাগ করে গাড়ির দিকে যাচ্ছে । কারণ এটা শুনতে চায়নি ।
অফিসার রতন আর মানিক দুজনে হাসতেছে ।
আমি জিঙ্গেস করলাম ,
—স্যার ম্যাম কে ।
—নতুন জয়েন করেছে ।
—বাসা কোথায় ।
—সিরাজগ্ঞ্জ ।
—ধন্যবাদ স্যার ।
—আসি । আবার কথা বলা দেখলে অসুবিধা আছে ।
বলেই অফিসার দুজন চলে গেলো ।
আমি শুধু গাড়ির দিকে চেয়ে আছি ।
অফিসার দুজন গাড়িতে উঠে পরলো ।
গাড়িটি ছেড়ে দেয় ।
মনে মনে কি জেনো ভেবে হেসে উঠি ।
তারপর আমি বাইক নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেই ।