হিমা

হিমা

আমার জাস্টফ্রেন্ড হিমার কথামত সিদ্ধান্ত নিলাম গার্লফ্রেন্ড সাদিয়াকে ভাগিয়ে নিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করবো ৷ এজন্য পরেরদিন বিকেলে বাসা থেকে বের হলাম ৷ বের হবার সময় আম্মু আমাকে থামিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ বাঁশির সুরের মত আওয়াজ বানিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, “ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে কই যাস? তোর বিয়ে কিন্তু ঠিক হয়ে আছে, সময়মত পাত্রীকে দেখতে পারবি ৷ খবরদার! এর আগে উলটপালট কিছু করবিনা! অন্যথায় তোর জন্য বাড়ির দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হবে যাবে; কি আমার কথা বুঝছিস?” আম্মুকে মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে বুঝাইলাম, “বুঝতে পেরেছি!” আম্মু ফের বলল, “তো যাচ্ছিস কই সেটা বল?” আমার প্রতিত্তরের পূর্বে আম্মু নিজেই আমার সম্ভাব্য বাক্য প্রকাশ করে বলল, “বুঝছি, বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিস, ঠিকআছে যা; কিন্তু কাল সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরবি, বলে দিলাম!”

অতঃপর বাসা থেকে প্রস্থান গ্রহণ করলাম ৷ আম্মু আব্বু মিলে কার না কার সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে,যার কিছুই জানিনা! অনেক দিন ধরে বলছে আমাকে পাত্রীর ছবি দেখাবে; অথচ প্রায় ১৯ দিন পার হয়ে গেল, ছবি দেখাচ্ছে না ৷ এদিকে আমার গার্লফ্রেন্ড চাচ্ছে আমি যেন তাড়াতাড়ি তাকে বিয়ে করি, কারণ, তাকেও তার বাবা, মা যখন তখন বিয়ে দিতে পারে ৷ আমার সমস্যার সমাধান বের করেছিল জাস্টফ্রেন্ড হিমা ৷ তার কথামতই আজ কাজী অফিসের দিকে যাচ্ছি, সাদিয়াকে বিয়ে করবো বলে! মনে সহস্র হাজার স্বপ্ন নিয়ে আর হ্নদয়ের গহীনে লাখো কোটি কল্পনা বুনে চোখের সামনে সুখের ছবি অঙ্কন করতে করতে পৌঁছলাম কাজী অফিসে ৷ কাজী অফিসের সামনে গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে না পেলেও জাস্টফ্রেন্ডকে ঠিকই দেখতে পেলাম ৷ এটা মিথ্যা নয় যে, প্রেমিকার চেয়ে বন্ধুই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় আগে! হিমার সামনে দাঁড়িয়ে নরম গলায় বললাম,

—কতক্ষণ হলো আসছিস?

হিমা কপট রাগ দেখিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকালো ৷ তার শিকারি চোখ ৷ মাঝেমধ্যে হিমাকে দেখে ভয় পেয়ে যাই ৷ বন্ধু হিসেবে যতই আমার কেয়ার করুক, কিন্তু সে আমার উপর রেগে গেলে একদম বারোটা বাজিয়ে দেয় ৷ হিমা রাগমাখা স্বরে বলল,

—-সেটা তোর জেনে লাভ কি? তোর নায়িকা কই? সে কখন আসবে? নিচুস্বরে বললাম,
—আসবে, সময় হলেই আসবে ৷
—সময় কখন হবে? বিকেল তো পেরিয়ে যাচ্ছে ৷
—আরে আসবে ৷ আমার চিন্তা হচ্ছেনা তাকে নিয়ে, তোর এত চিন্তা কেন?
—-গাধা! আমারই তো চিন্তা, তোদের বিয়েটা হয়ে গেলে নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে যেতে পারি! জানিসই তো, বাসায় দেরিতে ফিরলে বাবা, মায়ের বকা শুনতে হয় ৷

—-আচ্ছা, চিন্তা করিস না; এসে যাবে ৷ কিন্তু সন্ধ্যার আগমন ঘটলো অথচ সাদিয়ার আসার খবর নাই ৷ সে আসছেনা দেখে হিমা আওয়াজ কিঞ্চিত বাড়িয়ে বলল,

—-মনে হচ্ছে আসবেনা রে ৷ আমার আগেই সন্দেহ হচ্ছিল সে আসবেনা ৷ সাদিয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছিল খুব ৷ হিমার কথায় চিন্তার মাত্রা ব্যাপকহারে বেড়ে গেল ৷ কপালে চিন্তার ছাঁপ ফেলে ক্ষীণস্বরে বললাম,

—-কি বলিস এসব, আমাকে তো চিন্তার মধ্যে ডুবিয়ে দিচ্ছিস ৷ কই একটু সান্ত্বনা দিবি, তা না; উল্টো বলছিস আসবেনা সে ৷ ধুর, ভাল্লাগেনা!
—-আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, সে আসবেনা ৷ এলে তোকে বিরিয়ানী খাওয়াবো, না এলে তুই কি দিবি আমাকে?
—-যা চাইবি, তাই দিবো ৷
—-বুঝে বলছিস তো?
—-হুম, বুঝে বলছি!
—-পরে পল্টি মারলে খবর করে দিবো!
—-আরে, যা চাইবি তাই দিব, কোনো পল্টি মারামারি করবো না!
—-ঠিক আছে!

সন্ধ্যা চলে গেল ৷ রাতের প্রারম্ভিকতায় আমার বুকের জমিনে ধীরে ধীরে চিন্তার মাত্রা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি কষ্টের মাত্রাও বাড়িয়ে তুলছিল ৷ রাস্তার ধারে ভাগ্যিস ল্যাম্পপোস্ট ছিল, সেটার আলোতে দুজনে ঠিকমত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি ৷ যদিও মশার কামড়ে অসহ্যকর অবস্থা ৷ মনে হচ্ছিল মশাকে ওদের মত করেই কামড়াই ৷ আকাশ অন্ধকার কারণ চাঁদের দেখা নেই ৷ ওদিকে গার্লফ্রেন্ড নামক চাঁদটাও লুকিয়ে আছে, ঐ আকাশের চাঁদের মত করে ৷ ভাবছি সে কারো আশায় আমাকে ভুলে লুকালো কিনা? অন্যথায় তার তো আসার কথা ছিল ৷ হিমা যে কয়টা মশার কামড় খেয়েছে, ঠিক সেই কয়টা থাপ্পর আমার গালে মেরেছে ৷

আর ধমকের স্বরে সে ডায়লগ ডেলিভারি দিয়ে বলেছে, “আজীবন বোকায় থেকে গেলি, সাদিয়ার সাথে তুই সম্পর্ক শুরু করার আগে থেকেই বলেছি, মেয়েটা ভাল নয় ৷ সমস্যা আছে, একদিন তোরে কষ্ট দিয়ে চলে যাবে; অন্যজনের হাত ধরে ৷ তুই শুনিস নি, এখন বোঝ ৷ দেখ, ওরে খোঁজ, খুঁজে পাস কিনা; না পেলে খবরদার ভুলেও কাঁদিস না; কাঁদলে খাবি, মশার কামড়ের সাথে আমার জুতার বাড়ি! রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম ৷ হিমা থাকবেই না, ওর হাতে পায়ে ধরে ১০টা পর্যন্ত কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ ১০টা বাজার পর আর সাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করলাম না, সে আসবেনা এটা নিশ্চিত হলাম ৷ এবার বাসায় যাবার জন্য হাঁটা শুরু করতে লাগলাম, তখন হিমা আমার হাত শক্ত করে ধরে চেঁচানো গলায় বলল,

—-আরে কই যাস? আমার শর্তের কি হবে? বিস্ময়ের কন্ঠে বললাম,
—-কিসের শর্ত রে? হিমা আমার মাথায় চটাস করে থাপ্পর মেরে নিচুস্বরে বলল,

—-কি বারোভাতারি মেয়ের ইয়াবড় বাঁশ খেয়ে স্মৃতি হারিয়ে ফেলছিস, হুহ? আমার শর্তের কথা মনে নেই, না? জায়গামত দিলে ঠিকই মনে পড়বে, কি দিব একটা? ধাঁই করে হিমার শর্তের কথা মনে পড়ে কৃত্তিম হাসি হেসে তোরজোর কন্ঠে বললাম,

—-আরে মনে পড়ছে মনে পড়ছে, হু; তুই জিতছিস ৷ বল কি চাস তুই!
—-প্রথম চাওয়া, আজকে আমার বাসায় যেতে হবে ৷
—-কিন্তু, আন্টি আমাকে দেখলে তো রেগে যাবে ৷ এমনিতে সে দেখতে পারেনা আমাকে!
—-আরে কিছুই বলবেনা ৷ আমি আছি তো ৷ তাছাড়া, আম্মু আর আগের মত নেই ৷ এখন সে তোর কথা প্রায় সময়ই বলে!

—-ও আচ্ছা! তাহলে চল!
—-যাবি তো ঠিক আছে, আগামীকাল কিন্তু আমার আসল চাওয়াটা পূরণ করতে হবে ৷
—-কি সেটা?
—-সেটা কালকেই জানতে পারবি!
—-কি এমন চাওয়ার কথা যে আজ বলা যায়না?
—-আজ বলবোনা, কালই বলবো ৷ আর কালকে সেটা পূরণ করতে হবে ৷ পিছিয়ে যাবার চেষ্টা করলেই লাগিয়ে দিবো, বুঝলি?
—-হুম, বুঝলাম ৷

হিমার বাসায় গেলাম ৷ বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে মজা করে গরম গরম বিরিয়ানী খেয়ে নিলাম ৷ হিমা ফোন করেছিল আন্টির কাছে, আন্টি পুনরায় বিরিয়ানী রেঁধেছে ৷ সেই বিরিয়ানী পেট পুড়ে খেয়ে ডিপ্রেশন হারিয়ে গেল ৷ মানে সাদিয়া যে অসহ্যকর ছ্যাকা দিছে সেটার ডিপ্রেশন ৷ কে বলে ভালবাসার মানুষের দেওয়া মস্তবড় কষ্ট ভুলে থাকা যায়না,কই? আমি তো ঠিকই ভুললাম ৷ সবার উচিত ছ্যাকা খাবার পর গরম গরম বিরিয়ানী খাওয়া ৷ তাহলে সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডের বাঁশের আঘাত সহজে মুছে যাবে! খাওয়ার পর বিছানায় গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম ৷ এক ঘুমে রাত পার!

ঘুম থেকে উঠার পরপরই হিমার হুকুম, আমাকে গোসল করতে হবে ৷ করলাম গোসল ৷ হিমাদের সুইমিংপুলে ৷ ফ্রেশ হয়ে, সকালের নাস্তা করে চললাম হিমার কথামত অজানা কোন এক জায়গায় রিকশাতে চড়ে ৷ ওমা, চলতে চলতে দেখি কাজী অফিসে পৌঁছে গেল অটো রিকশাটা ৷ মানে বুঝলাম না ৷ পরে মনে হলো আজ বোধহয় সাদিয়া কাজী অফিসে আসবে ৷ আর এটা সে আমাকে বলতে লজ্জা পাওয়ায়, হিমাকে বলেছে আর হিমা আমার নিকট ব্যাপারটা গোপন করে কৌশলে এখানে নিয়ে এসছে! হিমা আমার হাতটা ধরে কাজী অফিসের ভেতর নিয়ে গেল ৷ সঙ্গে রিকশাওয়ালাও ঢুকলো! কাজীর সামনে দাঁড়ানো আমি ৷ হিমাও ৷ কাজী বসতে বললো আমাদের ৷ বসলাম ৷ কাজী কিছু বলার আগেই হিমা শক্তকন্ঠে বলল,

—-কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান ৷ কাজী ভ্রু জুগল কুঞ্চিয়ে মৃদ্যুস্বরে বলল,
—-তো, পাত্র কে আর পাত্রী কে?
—-এইযে বসে আছে গাধামার্কা চেহারা সে পাত্র, আর আমি পাত্রী ৷
—-হবু বরকে গাধা বলছেন? এটা কেমন কথা?
—-আপনি ওদিকে তাল না দিয়ে বিয়ে পড়ান!

হিমার কথায় আমি তো জ্ঞান হারিয়েও হুশে আছি ৷ তবে একবার নয় বারবার এবং বারংবার আকাশ থেকে থপাস করে মাটিতে পড়ছি আবার আকাশে উড়ে শেষপ্রান্তে পৌঁছে ফের আকাশ থেকে মাটিতে প্যারাসূট ছাড়া পড়ছি ৷ চলছে এভাবে,কিছু বলতে পারছিনা ৷ বলার মত ভাষা নেই যে, ভাষা কি সেটাই ভুলে গেছি ৷ কি বলবো সেটা তো আরো আগেই ভুলে যাবার কথা আর সেটাই হয়েছে! হিমাকে যদি বলি তাকে বিয়ে করবোনা, তাহলে এখানেই জ্যান্ত কবর দিবে ৷ নিরিহ প্রাণীর মত নিরুপায় হয়ে রইলাম ৷ যেন আমি জড়পদার্থ কিংবা বৃক্ষ, শুধু নিরবে অবস্থান করবো ৷ কিছু বলতে পারবোনা! শেষপর্যন্ত বিয়েটা হয়েই গেল ৷ আমার মুখটা বিষাদে ভরা, আর হিমার চেহারা জ্বলজ্বল করছে খুশিতে ৷ আমি যে একটা বাঘিনীর স্বামী হলাম এটা কি সে বুঝতে পারছে? সে তো মনে করছে আমার বোধহয় ভালই হয়েছে ৷ তবে এটা নিশ্চিত যে আমার মত এত ইনোসেন্ট ছেলেকে বিয়ে করতে পেরে সে ধন্য!

হিমাকে নিয়ে কই উঠবো চিন্তা করছিলাম ৷ কিন্তু আমার চিন্তার অবসান ঘটলো যখন রিকশাওয়ালাকে হিমা বললো, ধানমন্ডির দিকে চলেন মামা, তারপর বাসার ঠিকানাটা বলছি! ধানমন্ডিতে আমারই বাসা ৷ হিমা আমাদের বাসাতেই যাবে ৷ সর্বনাশ ৷ বাসায় গেলে নিশ্চিত আম্মুর ছ্যাচা খেতে হবে ৷ তবুও যেতেই হবে ৷ কারণ, হিমাকে কিছুতেই বলতে পারবোনা যে তাকে নিয়ে আমার বাসায় যেতে পারবোনা ৷ এটা বললেই সে আমাকে তাজা গিলে খাবে ৷ এজন্য, থম মেরে রইলাম ৷ বিখ্যাত বোবা অভিনেতা আমি ৷ আমার উপর দিয়ে দুনিয়ার শক্তিশালী ঝড় বয়ে যাক, কিছু করার নাই ৷ চুপ করে থাকতে হবে ৷ আর সেটাই করছি!

আমার বাসায় পৌঁছলাম ৷ একদম আম্মুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ৷ সে আমাদের দুজনকে দেখে হকচকিয়ে গেল ৷ এবং ভূত দেখার মত করে তাকালো ৷ ওদিকে হিমা কখন যে আম্মুর পায়ে পড়ে কদমবুঁচি করছে সেদিকে খেয়ালই ছিলনা আমার ৷ আচমকা আম্মু আমাকেই থাপ্পর মারলো, আর হিমাকে থাপ্পর তো দূর চোখ তুলেও তাকালোনা ৷ বুঝলাম এখানেও সব ঝড় আমার উপর দিয়ে যাবে ৷ আল্লাহ রক্ষা না করলে আমার অস্তিত্ব শেষ! আমার গালে হাত, আম্মু আমাকে মেরেছে দেখে হিমা ছলছল চোখে ঈষৎ কান্নার স্বরে বলল,

—-প্লিজ আম্মা, তাকে আর মারবেন না ৷ সব আমারই দোষ ৷ আমিই জোর করে তাকে বিয়ে করেছি ৷ তার কোনো মত ছিলনা বিয়েতে ৷ আসলে মানুষটাকে মনের অজান্তে ভালবেসে ফেলেছি ৷ বলতেও পারছিলাম না মনের কথা ৷ ভেবেছিলাম ভালবাসি কথাটি বললে মেনে নিবেনা আমাকে ৷ তাই প্ল্যান করে তাকে বিয়ে করে নিলাম ৷ সাদিয়া নামের একটি মেয়ের সাথে রাফাতের ৫ মাসের সম্পর্ক ছিল ৷ সম্পর্ক শুরুর আগে থেকে মেয়েটাকে চিনতাম, সে ভাল মেয়ে ছিলনা ৷ রাফাতকে বলেছিলাম তার সাথে সম্পর্ক না করতে কিন্তু সে শোনেনি ৷ জানতাম রাফাত যদি মেয়েটাকে বিয়ের কথা বলে কিছুতেই বিয়েতে রাজি হবেনা মেয়েটা ৷ তবুও সাদিয়াকে ভয় দেখিয়ে বলেছিলাম,

—-শোনো সাদিয়া, তুমি রাফাতকে বলবে ২ তারিখে কাজী অফিসে আসতে হবে বিয়ে করার জন্য, জোর দিয়ে বলবে তাকে ৷ এতে সে রাজি হয়ে যাবে ৷ যদি এতে কাজ না হয় ৷ তবে বলবে যে কাজী অফিসে না গেলে তুমি বিষ খাবে ৷ এতে নিশ্চিত কাজ হবেই হবে ৷ কিন্তু মনে রেখো, রাফাত কাজী অফিসে উপস্থিত হলেও তুমি ঐদিন কাজী অফিসে তো দূর বাসা থেকেই বের হবেনা ৷ যদি এরকমটা করতে না পারো, তবে সজল ও তানিম নামের কোটিপতি বাপের ছেলে দুটার নিকট তোমার ভন্ডামীর খবর লিক করে দিবো! বুঝলে ? সাদিয়াকে ঠিক এরকমটা করতে বলায় সে কাজী অফিসে আসেনি ৷ আর আমিও রাফাতকে শর্তের জালে ফেলে আমার করে নিলাম ৷ বলেন তো আম্মা, প্ল্যানটা কেমন হয়েছে? আম্মু, মিষ্টি হেসে বলল,

—-হুম খুব ভাল পরিকল্পনা ৷ তবে আমার প্ল্যান খারাপ না ৷ রাফাত বিয়ে করতে চাচ্ছিলনা, বিয়ের কথা বললেই রেগে যেতো ৷ খুব ভাল করে জানি প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা বিয়ের কথা শুনলে কেন রেগে যায় ৷ কারণ, তারা মনের মানুষের প্রেমে মজেছে, তাকে ছাড়া বিয়ে করবেনা ৷ কিন্তু সেই মনের মানুষ কবে বিয়ের জন্য চাপ দেয় কে জানে? এজন্য মা হয়ে ছেলেকে বিয়ের চাপ দিলাম ৷ জানি যে বিয়ের চাপ দিলে সে নিজেই বিয়ে করে আনবে ৷ আমাদের এত কষ্ট করতে হবেনা ৷ আর সেটাই হলো ৷ কয়দিৱ পর বড় করে অনুষ্ঠান করলেই সব ঠিকঠাক!

হিমা ও আম্মুর প্ল্যানের কথা শুনে তো ভালোই লাগলো, কিন্তু আমি কি করে তাদের নিজের প্ল্যানের কথা বলি?
আরে হিমার প্রেমে পড়ে আমি তো ৩ বছর ধরে পাগল ৷ কিন্তু তাকে মনের কথা খুলে বলতে ভয় পেতাম ৷ কারণ সে ডেঞ্জারাস গার্ল, অ্যাংগ্রি বার্ড, হিংস্র বাঘিনীর মত ভয়াবহ ৷ এজন্য পারিনি কখনোই ভালবাসার কথা প্রকাশ করতে ৷ তাই কি করলাম? সাদিয়া নামের একজনকে ৫০ হাজার টাকা দিলাম, প্রেমের অভিনয় করার জন্য ৷ তার সাথে প্রেমের অভিনয় করার একটি কারণ, হিমার মধ্যে আমার প্রতি ফিলিংস আছে কিনা সেটা খুঁজে বের করা ৷ যদিও প্রথমে টের পাইনি যে হিমা জিলাস ফিল করছে সাদি়য়ার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি বলে ৷ তবে, শেষ মুহূর্তে ঠিকই টের পেয়েছি যে হিমা আমাকে চাই ৷ এজন্যই বিয়ের প্ল্যান করলাম ৷ হিমার প্ল্যানকে নিজের প্ল্যানের সাথে যুক্ত করে একটা মাস্টারমাইন্ড গেম খেললাম ৷ এতে আমি সফল হলাম ৷ কি আমার প্ল্যান কি ভাল হয়নি? অবশ্যই হয়েছে!

একটা সত্য যে যতদিন হিমার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে ছিলাম ততোদিন মনটা বলে উঠতো, সে বন্ধু হিসেবে সেরা ৷ প্রেমিকা হলে কি বন্ধর চেয়ে বেশি কেয়ার করবে? এমনকি এই ভয়ও পেতাম, যদি সে প্রেমিকা হয়ে যায় তখন তো বন্ধুত্ব থাকবেনা, আবার যখন সামান্য ভুলের কারণে সম্পর্কের ফটল ধরবে তখন সে প্রেমিকা হিসেবেও থাকবেনা; তখন দুটোই হারাতে হবে ৷ মূলত এই ভয়টার কারণেই হিমাকে মনের কথাটি বলা হয়নি ৷ কিন্তু আমি ভাগ্যবান, আজ আমি আমার ভালবাসাকে ফিরে পেয়েছি ৷ সে শুধু আমার ভালবাসা নয়, আমার বন্ধু আমার স্ত্রী!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত