ভালোবাসার দিবস

ভালোবাসার দিবস

ছাত্রীর বাসায় টিউশনি করতে গিয়েছি। ছাত্রী মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে। একমাস হলো এই বাসায় টিউশনি করি। ছোট বয়সেই মেয়েটা প্রচুর পাকনা। নাম আবিয়া। তো যাই হোক, আমি গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছি। আবিয়া এখনো স্কুল থেকে ফিরে নি। আমি বসে বসে ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে পড়ছি।

হঠাৎ করে মেইন দরজা খোলার শব্দ হলো। ভেবেছিলাম আবিয়া এসেছে। তাই পিছনে ফিরে যেই না বলবো যে ‘আবিয়া তুমি আজকে এত দেরি করে আসছো কেন?’ঠিক তখনই সামনে তাকিয়ে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে গেল। কারণ সামনে আমার ওয়ান এন্ড অনলি স্বয়ং ক্রাশ যে কিনা আবিয়ার বড় ভাই, আবির দাড়িয়ে আছে । আমার এক বছরের ক্রাশ আবির। তাকে দেখে আমি নির্লজ্জের মতো হা করে তাকিয়ে আছি।

উফফ এই ছেলেটা এতো সুন্দর কেন ! প্রত্যেকটা মেয়ের মন চুরির ক্ষমতা রাখে আবির। ভার্সিটিতে পড়ে আবির। আর আমি মাত্র ইন্টারে পড়ি। ভার্সিটির সকল মেয়ের ক্রাশ আবির। যখন আবির ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকে তখন সব মেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে। অনেক মেয়ে তো তাকে প্রোপোজ ও করে বসেছিল। কিন্তু আবির এসবে পাত্তা দেয় না। কি জানি বাপু, বেশি সুন্দর বলেই হয়তো এতো অহংকার।

তো যখন দরজার কাছে থাকা আবিরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখন এক পর্যায়ে আমাদের চোখাচোখি হয়। আমি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে সামনে ঘুরে বসলাম। বুকের ভিতর হার্টবিট বেড়েই চলেছে যেন এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। মনটা অস্থির হয়ে গেল কারণ এখন সে আমার সামনে দিয়ে যাবে। আবির যখনই আমার আশেপাশে থাকে তখন যেন আমার মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যায়। আমি চোখ বন্ধ করে রয়েছি। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজার আওয়াজে চোখ খুলি। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম আবির আছে কিনা।নাহ নেই,এবার একটু শান্তি লাগছে। দেখলাম যে আবিয়া এসেছে।কিছুটা ধমকের সুরে বললাম,

-এতো দেরি হলো কেন?

-সরি ম্যাম। আসলে আজকে রাস্তায় জ্যাম বেশি ছিল তাই লেট হয়েছে। সরি।

-ইটস ওকে। যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে পড়তে এসো।দেরি হয়ে যাচ্ছে।

-জি ম্যাম।

বলেই দৌড় দিয়ে গেলো আর দৌড় দিয়ে বই খাতা নিয়ে চলে আসলো। আবিয়াকে কিছু অংক দিয়ে আমি পুরো বাড়িটাতে একবার চোখ বুলাতে লাগলাম। হঠাৎ আবিরের রুমের দরজায় আমার চোখ আটকে গেল কারণ আবির গোসল করে তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হচ্ছিল। থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর নগ্ন বুকে আবিরকে এত হ্যান্ডসাম লাগছিল যা বলার বাইরে। কী বডি!! হা করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। আবিয়ার ডাকে ঘোর ভাঙ্গে আমার।

-ম্যাম, এই যে অংকটা করেছি। একটা বড় করে গুড লিখে দিন। আমি তখনও আবিরকে নিয়েই মগ্ন ছিলাম। আবিয়ার খাতাটা নিয়ে অজান্তেই আবিরের নাম কয়েকবার লিখে ফেললাম। ‘ আবির, আবির, আবির ‘।

– ম্যাম, আপনি ভাইয়ার নাম লিখছেন কেন? চমকে গিয়ে তাকালাম খাতাটার দিকে। তাইতো! কতবার আবিরের নাম লিখে ফেললাম। ইশ্ , এখন যদি আবিয়া জিগ্যেস করে তাহলে কি উত্তর দিবো?

-ম্যাম ম্যাম। আপনি ভাইয়ার নাম কেন লিখছেন? বলেন? আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম,

– এ..এ..এম..নি..

– জেহী, এই নাও আজকে আমি পায়েশ বানিয়েছি। খেয়ে দেখোতো কেমন হয়েছে।

আবিয়ার আম্মু আসায় কথাটা চাপা পড়ে গিয়েছে।আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম। পারি নাতো আন্টিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। আমি তাড়াহুড়া করে দুই চামচ পায়েশ মুখে দিয়ে ‘অনেক ভালো হয়েছে’ বলেই বেরিয়ে এলাম। কারণ আর কিছুক্ষণ থাকলেই নাছোড়বান্দা মেয়েটা আমাকে দিয়ে কথাটা বলেই ছাড়তো। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আন্টিকে ঠিক সময়ে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য।

পরদিন আবার গিয়ছিলাম পড়াতে। গেইট দিয়ে ঢুকতেই আবির সামনে পড়ল। আমাকে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিলো। হাসি দেওয়ার কারণটা আমি বুঝতে পারলাম না তবে আরেক দফা ক্রাশ খেলাম তার বাঁকা হাসিটায়। ড্রয়িং রুমে গিয়েই দেখি আবিয়া আগে থেকে বসে আছে। আমাকে দেখে সালাম দিল। আমিও সালামের উত্তর দিয়ে পড়াতে লাগলাম। খেয়াল করলাম যে আবিয়া মিটিমিটি হাসছে। নিজেকে ভালো করে দেখলাম যে কিছু লেগেটেগে আছে নাকি। নাহ্, কিছুই তো নেই। তাহলে আবিয়া এমন করে হাসছে কেন!! তার হাসির কারণ খুঁজে পেলাম না। ঝাঁঝালো সুরে বললাম,

-এতো হাসাহাসি কিসের!!! হু!! চুপচাপ পড়ো। ধমক খেয়ে মেয়েটা চুপ হয়ে গেলো কিন্তু মাথা নিচু করে মিটিমিটি হেসেই চলছে। বুঝতে পারলাম একে বলে আর কিছুই হবে না। তাই চুপ থাকলাম। কিছুক্ষণ পর আবিয়া বলল,

-ম্যাম, জানেন, আমিও না আমার বয়ফ্রেন্ডের নাম খাতায় সবসময় লেখি।

এই বলে চুপ হয়ে আবার মিটিমিটি হাসতে লাগল। আবিয়ার বয়ফ্রেন্ড আছে কথাটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। কি বলে এই মেয়ে। এই দুধের বাচ্চার কিনা বয়ফ্রেন্ড!! মাথাটা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম,

-এই কি বললে তুমি? তোমার আবার বয়ফ্রেন্ড! এখন যদি এই কথাটা তোমার ভাইয়াকে বলে দেই তাহলে কি হবে তুমি জানো?? ডাক দিবো তোমার ভাইয়াকে?? হুম! আবিয়া নির্ভয়ে বলল,

-ঠিকাছে। ভাইয়াকে ডাক দেন।

আমি চোখ বড় বড় করে আবিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আবিয়া খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিলো যে আবির কে আমি ডাক দিতে পারবো না। বলল,

-আমিই ভাইয়াকে ডাক দিচ্ছি। ভা আমি তাড়াহুড়া করে আবিয়ার মুখ চেপে ধরলাম আর বললাম,

-কাউকে ডাকার দরকার নেই। চুপচাপ পড়ো।

আবিয়ার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। তবুও আফসোস হচ্ছে এইটুকুন মেয়ের একটা বয়ফ্রেন্ড আছে আর আমি কিনা এত বছর সিঙ্গেল রইলাম। হায়রে জীবন!! আজকে ভ্যালেন্টাইনস ডে। রাস্তায় রাস্তায় খালি কাপল আর কাপল। আর আমি ছাদে বসে আফসোস করছি আমার যে কেন একটা বয়ফ্রেন্ড নাই আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। হঠাৎ করে ফোনটা ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি আবিয়ার আম্মু ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিলাম। উনিও সালামের জবাব দিয়ে বলল,

-আজকে বিকেলে একটু আবিয়াকে পড়াতে বাসায় আসতে পারবে?

-আজকে তো শুক্রবার। আজকে তো আবিয়ার পড়া নেই।

-আসলে কালকে ওর স্কুলে ম্যাথ এক্সাম আছে তাই। আসতে পারবে?

-জি আন্টি। আসবো।

যতই হোক আন্টি আমার গুরুজন। তাই আন্টির কথা ফেলতে পারলাম না। বিকেলে রেডি হয়ে আবিয়ার বাসায় রওয়ানা দিলাম। রাস্তায় হাঁটছি আর কাপলদের দেখছি।আহা! কি প্রেম। কিছুক্ষনের মধ্যেই আবিয়ার বাসায় পৌঁছে গেলাম। দরজা খোলাই ছিলো। ভিতরে গিয়ে আবিয়াকে পড়ানোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ করেই একটা চিৎকার আসলো। মনে হলো ছাদ থেকে এসেছে। আওয়াজটা কেমন যেন আবিয়ার কন্ঠের মতো লাগলো। ভাবলাম আবিয়ার কোনো বিপদ হয়নি তো! তাড়াতাড়ি দৌড়ে ছাদে গেলাম। ছাদের শেষ সিঁড়িতে পা দেওয়া মাত্রই কে যেন আমার মুখ চেপে ধরে ছাদের কোণার রুমটাতে নিয়ে গেল। ভয়ে হাত পা জমে যাচ্ছিলো প্রায়।

আমাকে অন্ধকার রুমে এনে ছেড়ে দিলো। চিৎকার করার সাহসটুকুও যেন পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ করেই দেয়ালে ‘ I love you ‘ লেখাটা ভেসে উঠলো। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। তারপর এক এক করে রুমের বাতি জ্বলে উঠলো। চারিদিকে গোলাপ ফুলের পাপড়িতে ভর্তি। আর মাঝখানে লেখা ‘ i love you sweetheart ‘। পুরো রুমটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। রুমে যেনো কারো উপস্থিতি টের পেলাম। পিছনে ফিরেই দেখি আবির একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে আছে।

আমাকে ফিরতে প্রোপোজ করল। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখেছি। মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটতে লাগলো। আমার ক্রাশ কিনা নিজে থেকে আমাকে প্রোপোজ করছে তাও আবার এই ভালোবাসার দিবসে। ভাবা যায়!! পারি নাতো নাগিন ডান্স দেই। কিন্তু নাহ,, আবিরকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমিও তাকে ভালোবাসি। একটু ভাব তো নিতেই হয়। কিন্তু কেন যেন ভাব নিতে পারলাম না। ভাবলাম তার থেকে বরং এক্সেপ্ট করেই ফেলি। আবিরের হাত থেকে ফুল নেওয়ার পর হাততালির আওয়াজ শুনতে পেলাম। পাশে তাকিয়ে দেখি আন্টি আর আবিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। আন্টি আমার কাছে এসে চিবুকে হাত দিয়ে মাথা তুলে বলল,

-আমার তো আগে থেকেই তোমাকে পছন্দ। তোমাকে তো আমি একমাস আগে থেকেই নিজের বৌমা হিসেবে মানি। আবির তো তোমার কথা প্রায়ই বলে। আমি চমকে আবিরের দিকে তাকালাম। তার ঠোঁটে সেই বাকা হাসি। আবিরের আম্মু চলে যেতেই আমি আবিরের পেটে কিল দিয়ে বললাম,

-আপনি আমাকে আগে থেকে পছন্দ করেন আর আজকে কিনা বললেন? আবির আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-তোমাকে আমি একমাস আগে থেকে না একবছর আগে থেকেই ভালোবাসি। যেইদিন তুমি কলেজে নতুন ভর্তি হও সেইদিন ই তোমার প্রেমে পড়ে যাই। আর আম্মুকে একমাস আগে তোমার কথা বলেছি। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আবির বলতে শুরু করল,

-আর সেইদিনের পর থেকে কোনো মেয়ের দিকেও পর্যন্ত তাকাই নি সবসময় তোমার কথাই ভাবি। তারপর যখন আবিয়ার একজন টিচারের প্রয়োজন হয় আমি আম্মুকে দিয়ে তোমাকে আনিয়েছি যাতে সবসময় তোমাকে চোখের সামনে দেখতে পারি। তুমি পরশুদিন যখন আবিয়ার খাতায় আমার নাম লিখেছিলে আবিয়া এসে আমাকে খাতাটা দেখায়। আর সেদিনই বুঝতে পারি যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো। এমনকি আবিয়াও বুঝে গিয়েছিলো যে তুমি আমায় ভালোবাসো। তাই আজকে এই প্ল্যান করেছি। আবিয়াকে দিয়েই চিৎকার দেওয়ালাম যাতে তুমি উপরে উঠে আসো। আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে কথা শুনছি। ইশশ, আমার ক্রাশও আমাকে আগে থেকে ভালোবাসে আর আমি বুঝতেই পারলাম না। কত বোকা আমি।

-হ্যা হ্যা আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। কালকে আমার জন্য দুইটা চকলেট এনো। উম্মাহ, হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে। আই লাভ ইউ ,উম্মাহ।

এইরকম কথা শুনে আমি আর আবির দুজনেই তাকিয়ে দেখি আবিয়া ছাদ থেকে কাকে যেনো কথাটা বলছে। দেখলাম যে একটা পিচ্চি ছেলে ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি রইল না যে এই পিচ্চিটাই আবিয়ার বয়ফ্রেন্ড। আমি আর আবির দুজনেই হেসে দিলাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত