আমার ভ্যালেন্টাইন

আমার ভ্যালেন্টাইন

মাষ্টার্স এর শুরুর দিক থেকেই দিবস মিছিলকে ভীষন পছন্দ করতো। এক অদ্ভুত মায়া, অদ্ভুত ভালোলাগা, অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করতো মিছিলের প্রতি। কিন্তু দিবস নিজ থেকে কোনোদিন মিছিলের সামনে গিয়ে প্রকাশ করতে পারে নী তার এই অদ্ভুত ভালোলাগার কথা। মিছিলও খুব পছন্দ করতো দিবসকে, আর সে নিজেও জানতো যে দিবস তাকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু মিছিল চেয়েছিলো একথাটা দিবস তাকে বলুক। একটা মেয়ের কাছে নিজের পছন্দের মানুষের মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা শোনা যে কতটা তৃপ্তির আর সুখের সেটা মিছিল অনুভব করতে চেয়েছিলো।

কিন্তু দিনের পর দিন চলে যাচ্ছিলো দিবস বলছিলো না যে সে মিছিলকে ভালোবাসে। মিছিল প্রত্যেকদিন আশা নিয়ে ভার্সিটি যেতো যে আজ হয়তো দিবস কিছু বলবে কিন্তু মিছিলের একরাশ হতাশা নিয়েই প্রত্যেকদিন বাড়ি ফিরতে হতো। একসময় মিছিল কিছুটা গোলকধাঁধায় পড়ে যায় এই ভেবে যে, “আসলেই কী দিবস আমার জন্য অমনটা অনুভব করে? যেমনটা আমি ওর জন্য অনুভব করি? “। মিছিল আর দিবস ভালো বন্ধু ছিলো, খুব ভালো বন্ধু বলা যায় না কিন্তু ওদের রোজ এক আধটু কথা হতো। ভার্সিটিতে পড়েও দিবসের রিতিমতো দম বের হয়ে যেতো মিছিলের সাথে কথা বলতে। দিবস মিছিলের সাথে চোখে-চোখে কথা বলতো। আর দিবসের সেই চোখ বলে দিতো যে সে মিছিলকে কতটা ভালোবাসে। অবশেষে এমনভাবে ছয়মাস যাবার পরে একদিন মিছিল দিবসকে জিজ্ঞেস করেই ফেলে, ” দিবস তুমি কী আমায় পছন্দ করো? ”

দিবসের সেদিন নাজেহাল অবস্থা একদমই হচ্ছিলো না। কারন উত্তরটা দিবসের কাছে স্বচ্ছ আর পরিষ্কার ছিলো। কিন্তু নিজের পরিবারের অর্থিক অস্বচ্ছলতাটাও ভাবতে হবে দিবসের। দিবসের বাবা নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিবসের উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করছে। দিবস পরিবারের বড় ছেলে। দিবসের ছোট দুটো বোনও আছে, তাদের বিয়ের দায়িত্ব থেকে শুরু করে পরিবারের পুরো দায়িত্বটা তার কাধে পড়ে যাবে কয়েকবছর পর। আর সেই দায়িত্ব অগ্রাহ্য করে সে তাড়াতাড়ি বিয়েও করতে পারবে না, এদিকে মিছিল তার সমবয়সী। মিছিলকে তো আর তার পরিবার বসিয়ে রাখবে না। এতোক্ষন চুপ থেকে এসব চিন্তা করে নেয় দিবস। তারপর বাস্তবতা আর কঠোরতা মিশিয়ে কিছু আড়াল না করে মিছিলকে জবাব দেয় দিবস, ” হ্যা মিছিল আমি তোমায় পছন্দ করি এটা অস্বিকার করার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু আমি তোমার লেভেলের না মিছিল।

তোমার বাবা হয়তো তার সোসাইটি মেন্টেইন করার জন্য তোমায় উচ্চশিক্ষিত করছে কিন্তু আমি উচ্চশিক্ষিত হচ্ছি আমার দুই বোনের বিয়ের দায়িত্ব আর পরিবারের দায়িত্ব নেবার জন্য। আমি তোমায় দূর থেকে একপলক দেখেই খুশি আছি, তোমায় ভালোবেসে কাছে টানার সামর্থ্য আমার নেই মিছিল! ” মিছিল ঠিক কী বলবে তা খুজে পায় না। চুপচাপ চলে যায় সেখান থেকে। সারারাত মিছিল জেগে শুধু দিবসের কথাগুলো নিয়েই ভেবেছে। দিবসের কথার যুক্তিখণ্ডন করার কোনো উপায় মিছিলের জানা নেই। মস্তিষ্কতো বলছিলো যে দিবস ঠিক, কিন্তু মন বেহায়া হয়ে বারবার স্বম্পর্কটা শুরু করতে বলছিলো। মিছিল দিবসকে পাবার লোভটা সামলাতে পারে নী। পরেরদিন মিছিল দিবসকে বলে, ” তোমার জন্য আমার অনুভুতিগুলো যথেষ্ট তীব্র। আমি চাইলেই সেগুলো বাস্তবতা দিয়ে মাটি চাপা দিতে পারবো না দিবস! ”

– ” একটা পকেট খালিওয়ালা ছেলের সাথে প্রেম করে তুমি শুকনো ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু কী পাবে? সবটা জেনেও ভালোবাসতে চাচ্ছো? ”
– ” আমার তোমার শুকনো ভালোবাসাটা হলেই হবে দিবস! ”

দিবস কিছুটা কঠোরতা মিশিয়েই বলে, ” আমি তোমায় ভালোবাসি না এমনটা নয় মিছিল কিন্তু শুকনো ভালোবাসায় তো আর জীবন চলে না। টাকার অভাব পড়লে ঠিকই শুকনো ভালোবাসা রেখে দড়জা ছেড়ে জানালা দিয়ে পালিয়ে যাবে! ” মিছিল নিচের দিকে চেয়ে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ” যদি কখনও পালিয়েই যাই জানালা দিয়ে তাহলে নাহয় আমায় ধরে এনে বেধে রেখো আর যে ওই জানালাটা চিরতরে বন্ধ করে দিও। আমি শুধু শুকনো আর সাধা-মাটা ভালোবাসাটাই চাই। সে ভালোবাসায় যদি দরজা-জানালাও না পাই থাকার জন্য আমার কোনো আপত্তি নেই। শুধু একবুক শুকনো ভালোবাসা নিয়ে তুমি পাশে থাকলেই হবে! ”
সেদিন দিবস আর পারে নী মিছিলকে ফিরিয়ে দিতে। কারন দিবস নিজেও চাচ্ছিলো বাস্তবতার বেড়া ভেঙে অনুভুতির ছোট কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিতে।

শুরু হয় দিবস-মিছিলের অকৃত্রিম সাধা-মাটা আর রঙিন সম্পর্ক। ওদের রিলেশনশিপের টুকি-টাকি সমস্ত খরচ বহন করতো মিছিল। রেষ্টুরেন্ট এর বিল থেকে শুরু করে গাড়িভাড়া এমনকি রাস্তায় কেনা ১০ টাকার বাদামের মূল্যটাও মিছিল দিতো। মিছিল দিবসকে স্বম্পর্কের শুরুতেই বলে দেয়, ” কখনো এসব টাকা-পয়সা জনিত ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ করবে না অথবা নিজেকে ছোট মনে করবে না। এসব টাকা-পয়সার জন্য যাতে আমাদের স্বম্পর্কটা কখনও কৃত্রিম না হয়ে যায়! ” দিবসের কাছেও মেনে নেওয়া ছাড়া অন্যকোনো অপশন ছিলো না। কারন তার যে পকেটের অবস্থা তা দিয়ে তার পকেটখরচ চালাতেই সে হিমসিম খায়।

দিবস আর মিছিলের সম্পর্কটা একদম সরল গতিতে চলছিলো। মিছিলের তো অভ্যাস হয়ে গেছে দিবস। দিবসের অবস্থাও অনেকটা তেমন। দিবসের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে রিকশা চড়া, দিবসের ছুলে দেওয়া বাদাম খাওয়া, মাঝে মাঝে অনেকক্ষন দিবসের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে হারিয়ে যাওয়া, সপ্তাহে দু-তিন দিন রেষ্টুরেন্ট এর কোনার সিটটায় বসে দিবসে ছোট খোচা দাড়িতে গাল ঘষা, এগুলো যেনো মিছিলের রক্তে মিশে গেছে। দিবস মিছিলের এসব অভ্যাসে অভ্যাস্ত দিন দিন একজনের প্রতি আরেকজনের প্রেমের পরিমান বেড়েই চলছে। যদিও প্রকৃতপ্রেমের কোনো পরিমান হয় না।

মিছিল প্রত্যেক ভ্যালেন্টাইনে দিবসকে গিফট করতো। সব ডে পালন করতো মিছিল। নিজেই টেডি, গোলাপ, চকলেট এসব কিনে নিয়ে দিবসকে দিয়ে বলতো, ” নাও এগুলো এখন আমায় দাও! ” দিবসও মুচকি হেসে আলহাদ করে ওগুলো দিতো মিছিলকে। আর ভ্যালেন্টাইনের দিন মিছিল দিবসের পছন্দ করা শাড়ি পড়ে, আর দিবস মিছিলের গিফট করা পাঞ্জাবি পড়ে বের হতো। ওদিনকার সব খরচ মিছিলই বহন করতো। বিনিময়ে মিছিল দিবসের থেকে যা নিতো তাহলো, দিবসের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে রিকশা চড়া, পার্কে বসে দিবসের সাথে গল্পকরা, নিজের শাড়ির কুচিটা দিবসকে দিয়ে ঠিক করানো, একটু পর পর দিবসের কাছ থেকে গালে, ঠোটে আর কপালে চুমু খাওয়া।

পুরোদিন এসব করে সন্ধ্যায় পথশিশুদের খাবার আর গোলাপ ফুল দিয়ে বাসায় যেতো ওরা। ওদের মতো এতো অকৃত্রিম আর মৌলিক ভ্যালেন্টাইন হয়তো কোনো কাপল উদযাপন করতো না। মিছিল সবসময় গর্ব করতো দিবসকে নিয়ে যদিও মিছিলকে নিয়ে দিবসের গর্ববোধটা বেশিই ছিলো। আর গর্ব হবেই না কেনো? মিছিলের মতো একজন সঙ্গী পাওয়া যেকোনো ছেলের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু মিছিল নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করতো দিবসকে পেয়ে। কারন দিবস তার সমস্তকিছুর খেয়াল রাখতো। মাঝে মাঝে মিছিল নিজেকে টেডিবিয়ার মনে করতো, দিবসের টেডিবিয়ার। একটা টেডিবিয়ারকে যেভাবে আগলে রাখা হয়, যেভাবে আদর করা হয় ঠিক সেভাবে দিবস আগলে রাখতো মিছিলকে। নিজেকে দিবসের টেডিবিয়ার ভেবেই মুচকি হেসে দিতো মিছিল। আর এসব উদ্ভট ভাবনার জন্য নিজেকে খুব বোকাও মনে করতো সে!

মাষ্টার্স এর রেজাল্ট বের হয়ে গেছে। দিবস মিছিল দুজনার রেজাল্টই ভালো হয়েছে। আর পাচটা পরিবারের মতো মিছিলের পরিবারও মিছিলের বিয়ের জন্য উঠে-পড়ে লাগে। মিছিলের বাবা বেশ ধনী। নিজের বেশ কিছু ব্যাবসা আছে তার। মিছিল দিবসকে বলে তার বাবার সাথে দেখা করতে। মিছিলের বাবা দিবসের কথা শুনেই মনস্থির করে নেয় যে দিবসের সাথে মিছিলের বিয়ে দিবে না। দিবসের খুব ইতস্ততাবোধ হচ্ছিলো একেতো তার পরিবার এর সামাজিক অবস্থান মিছিলদের মতো না, তারউপরে দিবস বেকার। কিন্তু মিছিলের জোরাজুরিতে দিবস দেখা করে মিছিলের বাবার সাথে। মিছিলের বাবার ব্যাবহার এবং কথা বলার ধারন স্পষ্ট বলছে যে তার দিবসকে একদমই অপছন্দ। মিছিলের বাবা দিবসকে জিজ্ঞেস করে, ” তোমাদের সম্পত্তি কিছু আছে? ”

– ” জ্বী তেমন কিছু না। শুধু নিজেদের দোতলা একটা বাড়ি আছে! ”
– ” তুমি তো বেকার? ”
– ” জ্বী, হ্যা! ”
– ” তোমার কী দেখে আমি আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দিবো?

” মিছিলের বাবার কথায় বোঝাই যাচ্ছিলো না যে মিছিলের বাবা তার মেয়ের পছন্দ করা ছেলের সাথে কথা বলছে। বরং তার কথা অনুযায়ী দিবসের নিজেকে চাকরি প্রার্থী মনে হচ্ছিলো আর মিছিলের বাবাকে চাকরির ইন্টারভিউর প্রশ্নকর্তা। মিছিল দেবার মতো কোনো উত্তর খুজে পায় না। শুধু অসহায়ের মতো নিজের মাথাটা নিচু করে ফেলে। মিছিলের বাবা বলে, ” তিনদিন সময় দিচ্ছি তোমায়। যদি ৪০-৫০ হাজার টাকা বেতনের কোনো চাকরি জোগাড় করতে পারো। তাহলে মিছিলের সাথে তোমার বিয়ের ব্যাপারে ভেবে দেখবো। আর নাহয় এ বিয়ে সম্ভব না। আর শোনো এসব কথা যেনো মিছিল জানতে না পারে! ”
দিবস সবটা মেনে চলে আসে। কারন এছাড়া কোনো উপায়ও তো নেই তারকাছে। সে আর পাচজনের মতো মিছিলকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে না কারন তার পরিবারের শেস সম্বল সে। সে পারবে না নিজের ভালোবাসার জন্য নিজের বাবার কষ্টের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে। তাই মিছিল সমস্ত দিয়ে চেষ্টা করে একটা চাকরি জোগাড় করার। কিন্তু ভালো রেজাল্ট হওয়া সত্ত্বেও একটা ভালো বেতনের চাকরি দিবসের কপালে জোটে না। সবাই ঘুষ চাচ্ছিলো। কেউ ৫ লাখ, কেউ ৭ লাখ, কেউ বা ১০ লাখ কিন্তু দিবসের ১ লাখ টাকাও ঘুষ দেবার সামর্থ্য ছিলো না। তিনদন পরে দিবস অসহায়ত্ব আর হতাশা নিয়ে মিছিলের বাবার সামনে দাঁড়ায়।

মিছিলের বাবা কঠোর গলায় বলে, ” এ বিয়ে অসম্ভব! ” দিবস প্রতিবাদ করার কিছু পায় না। আর অনুরোধ যে করবে সে ইচ্ছাও মরে যায় মিছিলের বাবার ব্যাবহারে। দিবস সারারাত ভাবে যে সে যদি এখন মিছিলকে গিয়ে সব সত্যিটা বলে তাহলে মিছিল তার বাবার বিরুদ্ধে যাবে। এতে মিছিল আর তার বাবার সম্পর্ক নষ্ট হবে। তাছাড়া মিছিলকে যদি তার বাবা জোর করে বিয়ে দেয়, সে বিয়ে আটকানোর সাধ্য বা ক্ষমতা দিবসের নেই। কারন দিবসের কাধে পরিবারের দায়িত্ব। আর মিছিলের বিয়েটা জোর করে হলে মিছিল সুখি হবে না কোনোদিন। নিজের বাবাকে ঘৃনা করে আজীবন আফসোস নিয়ে বাচবে মেয়েটা। কোনো কিছুই তো দেই নী শুকনো ভালোবাসা ছাড়া, মিছিল আমায় অনেক দিয়েছে। এবার আমার দেবার পালা।

পরেরদিন দিবস মিছিলের সাথে দেখা করে বলে যে, ” দেখো মিছিলো আমি এখন ক্যারিয়ার গড়তে চাই। কিন্তু তোমার বাবা চাচ্ছে এক্ষনি আমাদের বিয়েটা দিয়ে দিতে। আমার তোমার প্রতি একঘেয়েমি চলে আসছে আর তুমি এখন আমার ক্যারিয়ারের জন্য ডেসট্রাকশন। তাই আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবো না। তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে হও, আমায় রেহাই দাও দয়া করে। ”

দিবসের মুখে এসব শুনে থরথর করে কাপতে থাকে মিছিল। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। কাপা-কাপ স্বরে মিছিল বলে, ” তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো দিবস? ” বাস্তবতার ভয়াল আঘাতে হেরে গিয়েছে দিবস। অন্য কোনো উপায় নেই তার কাছে। তাই নিজেকে শক্ত রেখে দিবস জবাব দেয়, ” তোমার প্রতি একঘেয়েভাব চলে এসেছে। আমি চাই না তুমি আর আমার জীবনে থাকো। রেহাই চাই আমি, মুক্তি দাও আমায়! ” মিছিল নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দিবসের গালে একটা থাপ্পড় মেরে কেদে দিয়ে বলে, ” তোর মতো অকৃতজ্ঞ কালসাপ প্রেমিক যাতে কোনো মেয়ের জীবনে না আসে! ” চলে যায় মিছিল।

তার একমাস পরেই মিছিলের বিয়ে হয়ে যায়। দিবস এই একমাসে চাকরি খোজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ঘুষ শব্দটা শুনে শুনে হাপিয়ে গেছে দিবস। মধ্যবিত্ত ছেলেরা বাস্তবতার আঘাত খেতে খেতে খুব শক্ত হয়ে যায়। দিবসও খুব শক্ত একজন। কিন্তু তবুও প্রত্যেকদিন দিবস বাথরুমে পানির ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে মুখ চেপে কেদে নিজেকে কষ্টের বোঝা থেকে হালকা করে নেবার মিথ্যা চেষ্টা করে।

মিছিলের বিয়ের একসপ্তাহ পরে মিছিলের বাবা দিবসকে তার অফিসে ডাকে। দিবস যেতেই মিছিলের বাবা তার হাতে একটা এপায়নমেন্ট লেটার ধরিয়ে দেয়। বেতন ৬০ হাজার টাকা। দিবস সবসময় মিছিলের বাবার সামনে অসহায়ের মতো মাথানিচু করে থাকতো কিন্তু আজ মাথা তুলে প্রশ্ন করে দিবস, ” এই চাকরিটা সেদিন দিয়েও তো আমার সাথে মিছিলের বিয়ে দিতে পারতেন আপনি! ”

– ” মিছিলের স্বামি হিসেবে আমার তোমায় পছন্দ ছিলো না। ” উত্তর শুনে দিবস বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। আর যাবার সময় নির্লজের মতো হাতে করে নিয়ে যায় ৬০ হাজার টাকা বেতনের এপায়নমেন্ট লেটারটা। কারন এই চাকরিটা তার দরকার খুব। বাস্তবতার কাছে লজ্বা মানায় না।

আজ ভ্যালেন্টাইন। কেটে গেছে পাচবছর। মিছিল তার দাম্পত্য জীবনে খুব সুখি। একটা ২ বছর বয়সি ছেলেও আছে তার। দিবস এখনো বিয়ে করে নী। বিয়ে করার ইচ্ছেটাই মরে গেছে তার। অন্য কোনো মেয়েকে দেখে তার মন অমন উন্মাদনা অনুভব করে না যতটা মিছিলকে দেখে অনুভব করতো। মিছিলকে খুব মিস করে দিবস। মিস করে মিছিলের সাথে কাটানো সেই ভ্যালেন্টাইনগুলো। মিছিলকে কোরবানি দেবার পরের ৫ ভ্যালেন্টাইনে দিবস শুধু পথশিশুদের খাওয়াতে পেরেছে আর ফুল দিতে পেরেছে।

তাছাড়া কিছুই করতে পারে নী কারন করার জন্য মিছিলই তো নেই। মিছিলের কাছে দিবসকে ঘৃনা করে জীবন নতুন করে শুরু করার কারন ছিলো। কিন্তু দিবসের? দিবস কীভাবে ঘৃনা করবে মিছিলকে? তারকাছে তো কোনো কারনই নেই মিছিলকে ঘৃনা করে নতুন করে জীবন সাজিয়ে নেবার। দিবস এখনও মাঝে মাঝে অসহায়ের মতো কাদে। এখন অবশ্য কাদার জন্য তার নিজের গাড়ি আছে। গাড়ির কাচ তুলে দিয়ে ইচ্ছে মতো চোখের পানি ফেলে নেয় দিবস। বাস্তবতার ত্রিকোনোমিতিতে সে হারিয়ে ফেলেছে তার মিছিলকে এটা মেনে নেবার আপ্রান চেষ্টা করেও বারবার ব্যার্থ হয়ে যায় দিবস!!!

ভালোবাসা মানেই কী পূর্ণতা? অনেক ভালোবাসা চাপা পড়ে গেছে এরকম বাস্তবতার ত্রিকোনোমিতিতে। তবুও সব পাশে রেখে এগিয়ে যেতে হয়। ভালোবাসতে ভুলে গেলে চলবে না। ভালোবাসা ভুল নয়, ভুল হয় পরিস্থিতি নাহয় বিপরীত পাশের মানুষটা। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। থাক না কিছু অনুভুতি দেয়াল বন্দি,থাক না কিছু গল্প শেষ দাড়ি হীন!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত