মাশকারা

মাশকারা

বাজারে যাওয়ার জন্য রওনা দিবো। এমন সময় বউ এসে কাধে হাত রেখে বললো,

–“ওগো শোনো,আজকে বাজার করে আসার সময় আমার জন্য মাশকারা নিয়ে এসো তো। আমি বউয়ের এমন ঢংঙি আবদার দেখে বললাম,

–“আচ্চা আনবো।

বাজারে এসে, বন্ধুবান্ধব সহ আড্ডা দিয়ে, বউ কি আনতে বলেছিলো মনে নেই। এ যা কিছুক্ষণ সময়ের মাঝে সব ভুলে খেয়ে ফেললাম। আজ নির্ঘাত বাসায় ফিরলে বউ ঝাটা পেটা করবে। অনেকক্ষণ ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো। কি আর আনতে বলবে, হয়তো মাষকলাই-টালাই হবে। ভাবলাম আজ হয়তো রান্না করার জন্য মাষকলাই আনতে বলেছে। যেহেতু সঠিক মনে হয়। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে ১ কেজি মাসকলাই নিয়ে বাসায় ফিরলাম। দরজায় কলিং বেল বাজাতেই, বউ খুশিতে গুলুমুলু হয়ে,একটা হাসি দিলো। বউয়ের হাসিতে মুক্তা ঝরে। ভিতরে প্রবেশ করে বউকে বললাম,

–“এই নাও তোমার মাষকলাই।

বউ আমার বাজার ব্যাগটা হাতে নিয়ে,ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। মাষকলাই ব্যাগটা মাথায় ঢিল মারলো। কি ব্যাপার কি, মাথায় ঢিল মারলে যে, ১ কেজি কি কম হয়েছে নাকি। ততক্ষণে বউ রাগে তেলেবেগুন হয়ে গেছে। এখন যদি মুখে ধান দেওয়া যায় তো খই ফুটবে। রাগে কটমট করতে করতে বললো,

–“আফরাতের বাচ্চা আফুু,তোরে আজ আমি খাইছি। হাদারাম তোরে মাশকারা আনতে বলছিলাম। মাষকলাই নাআআআআআআ।

এরপরে যা করার তাই করলো, আজ তিনদিন যাবত বারান্দার শুয়ে রাত কাটাচ্ছি। শীতের রাত,একটা পুরুষই জানে শীতকালটা কত কষ্টের। তবুও আর কি করার বউয়ের হুকুম মানতেই হবে। আসলে ব্যাপারটা হলো, এমন আদরের বউকে কে না ভয় পায়। অনেক চেষ্টা করেও বউয়ের মন ভালো করতে পারিনি। মাশকারাও কিনে এনেছিলাম।দুপুরবেলা বারান্দায় বসে রব্বানির ওয়াজ শুনছিলাম। ওয়াজে রব্বানি হুজুর বলছিলো,বউয়ের বেশি বেশি প্রশংসা করলে বউ খুশি হয়। অনেক ভালোবাসা, আদরযত্নের অভাব হয়না। এমন সময় বউয়ে আদুরে গলায় ডাক দিলো,,,

–“এইযে মিস্টার কলাগাছ, আসেন ভিতরে আসেন। খেয়ে-দেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন। এমনিতে তো কোন কাজ নেই। ভাবলাম, রব্বানি হুজুর বয়ান এবার কাজে লাগা যাক। এটাই সুযোগ বউয়ের রাগ ভাঙ্গানোর। যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। খাবার টেবিলে দেখলাম,বউ ডাল আর আলুভর্তা করেছে। চেয়ার টেনে নিয়ে বললাম,,,

–“আহ কি ঘ্রাণ, যেন অমৃত। এই না হলো আমার বউয়ে রান্না। আমার বউয়ের হাতের রান্নার তুলনা হয়না। কিছু বুঝে উঠার আগেই, বউ ডাল আর আলুভর্তা মাথায় ঢেলে দিলো। কি ব্যাপার প্রশংসা কি বেশি বেশিই করলাম।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,,

–“শালা ২ বছর থেকে হাতপুড়ে রান্না করে খাওয়াচ্ছি। কোনদিন প্রশংসা নামগন্ধ নাই। আর আজকে পাশের বাসার ভাবি রান্না করতেই প্রশংসা উত্তলে পড়ছে।

এজন্যই লোকে বলে, অন্যের বুদ্ধিতে বাদশাহ হওয়ার চেয়ে, নিজের বুদ্ধিতে ফকির হওয়া ভালো। কেন যে প্রশংসা করতে গেলাম। রাতের বেলা ছাদে একা একা বসে চাদ দেখছিলাম। আর মাশকারা ও মাষকলাইয়ের মাঝে কি এমন তফাৎ বোঝার চেষ্টা করছিলাম। গুনগুন করে চাদ উঠেছিলো গগনে গানটা গাচ্ছিলাম। এমন সময় বউয়ের আগমন লক্ষ করলাম। তখন বিদ্রোহী কণ্ঠে বললাম,

–“বউ বড় ধন রক্তের বাধন, বউ লক্ষি বউ প্রাণ। বউ হচ্ছে ভালোবাসার জিনিস, যে বউয়ের রাগ ভাঙাতে পারে না। সে হচ্ছে পৃথিবীর বড় অকর্মা। বলেই পিছনে তাকিয়ে হা করে রইলাম,,

–“এই এমন হা করে কি দেখছো। এর আগে আমাকে দেখনি বুঝি। বউয়ের ডাকে ঘোর কাটলো, কল্পনার সাগরে ডুবে গিয়েছিলাম। বউকে আদুরেকন্ঠে বললাম,

–“হ্যা দেখেছি তো। তবে আজকে মতো এতটা সুন্দর কখনো দেখিনি। সবুজ শাড়ীতে তোমাকে অপরূপ লাগছে। মনে হয় চাদও হার মানবে। আমি শতবার জন্ম নিলেও বারবার তোমার প্রেমেই পরতে চাই। বউ আমার লজ্জা লাল হয়ে বললো,

–“যা দুষ্টু কোথাকার। তুমিও পারো ও বটে। এরপর বউ আমার পাশে এসে বসলো,

–“চলো না, এখন রুমে যাই। আর সরি,আমার অন্যায় হয়েছে। এবারের মতো মাফ করে দেও। যাক এবার তাহলে কাজ হয়েছে। এরপর দুজনই নিঃচুপ। প্রকৃতির কোন সাড়াশব্দ নেই। চাদটা কেমন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে নিরবতা পালন করছে। বউয়ে একটু রাগানোর জন্য বললাম,

–“এইযে মিসেস, রাগিণী, এবার আমাকে ছাড়ুন। এভাবে বসে থাকলে আমার ঘুম হবে না। বরং আমার বারান্দায় যাওয়া উচিৎ। বউ একটু কাছে এসে, আমার মুখটা চেপে ধরে বললো,

–“উহু আর না। এবার থেকে একই সাথে ঘুমাবো। বলেই বুকের উপর মাথা রাখলো। আমি আস্তে করে বুকে জরিয়ে নিলাম। আর কানে কানে বললাম,
–“মাষকলাই,মাষকলাই,সরি মাশকারা লাগবে নাকি। বউ একটা ভেংচি কেটে বললো,
–“আবার শুরু করলে। আমি কানে কানে ফিসফিস করে বললাম,
–“ভালোবাসি,,ভালোবাসি, ভালোবাসি তো।
–“উহু! কোন ভালোবাসা নয়। আমার মাশকারাই লাগবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত