— হ্যালো রাজ তুমি এখন কোথায়?
— কেন?
— তোমার সাথে এখনি দেখা করবো তাই।
— ওকে, তুমি শিক্ষা চত্বরে এসে আমায় ফোন দাও। আমি ওইখানেই আছি।
— আচ্ছা, আমি ১৫ মিনিটের মাঝে আসছি।
— হুমম।
অহনিকার হঠাৎ দেখা করতে চাওয়ায় আমি একটুও বিভ্রান্ত হলাম না। কারন ও যে আজ আমার সাথে দেখা করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কারন, গতকাল রাতে আমি
ওর বান্ধবী নিহা কে প্রপোজ করেছি। আর অহনিকা হলো আমার হবু বউ। মানে আগামী মাসে আমাদের বিয়ে ঠিক করা আছে। পারিবারিক ভাবেই সব ঠিক হয়েছে।
বলা যেতে পারে অহনিকার সাথে আমার গত এক মাস আগে আংটি বদল হয়েছে। আর সামনের মাসে বিয়ে। কিন্তু আমি গতকাল রাতেই অহনিকার বান্ধবী নিহাকে
প্রপোজ করলাম। তাই হয়ত এখন দেখা করে আমার বেন্ড বাজাতে আসছে। কিন্তু আমি কেন প্রপোজ করলাম সেটা ও শুনলে অবাক হবে। তবে কেন প্রপোজ করছি
সেটা জানার আগে দেখবো,আমার প্রতি আজ ওর রিয়েকশন কেমন?.
আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে রোদে দাড়িয়ে অহনিকার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রায় কিছুখন পর ওরে আসতে দেখলাম। আমার সামনে আসতেই আমাকে কেমন করে
যেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো।তারপর ও বলল…
— আচ্ছা মিস্টার রাজ, তুমি রান্না করতে পারো?
ওর কথা শুনে আমি অনেকটাই চমকে গেলাম। কারন যদি বিয়ে ঠিক হয়ে থাকা কোন ছেলে যদি তার হবু বউয়ের বান্ধবীকে প্রপোজ করে তাহলে সেই মেয়ের মাথায়
রাগ থাকা উচিত ছিল। আমি শুধু ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম…
— কি হলো বললে না? রান্না করতে পারো কি না?
— হুমম একটু একটু।
— হুমম এতেই চলবে।
— মানে?
— না মানে তুমি যা করে বেড়াচ্ছো। তার জন্য তো তোমাকে ঠিক করতেই হবে।
— ও তার মানে তুমি নিহাকে প্রপোজ করায় কোন রাগ করো নি।
— না তো একটুও না।
–কেন?
— মাত্র তো প্রপোজ করলে তাছাড়া প্রেম তো আর করছো না। এবার বলো কি কারনে প্রপোজ করলে?
— বাহ্ তোমার তো ভাল বুদ্ধি আছে।
— আর কয়েকটা দিন পর থেকে একটা বাদরকে সামলাতে হবে তাই একটু নিজের বুদ্ধিতে ধার দিচ্ছি।
— মানে?
— কিছু না। এবার বলো নিহাকে কেন প্রপোজ করে ছিলে?
— আসলে তোমার মনোভাবটা বুঝতে চেয়ে ছিলাম।
–বাহ্ তো কি বুঝলেন?
— বুঝলাম আমার ভবিষ্যৎ তেজ পাতা।
— হা হা তা ঠিক। তবে আমরা এখন রোদে দাড়ি কথা বলছি কেন? নাকি এখানেও আমার মনোভাব বুঝার চেষ্টা।
— হুমম। দেখার চেষ্টা করছি যে এই রোদের মাঝে দাড়িয়ে কথা বলতে তোমার কেমন লাগে?
— আমার কোন প্রকার খারাপ লাগবে না। আপনি যে একটু ত্যাড়া টাইপের সেটা আপনার মা আমায় বলেছে। আর তাছাড়া আমার বাবা মায়েরও আপনি পছন্দ তাই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
— তুমি খুব ভাল ঘুছিয়ে কথা বলতে পারো তো।
— হুমম মনে হয় সেই গুনটা আছে।
— আচ্ছা চলো একটু সামনের পার্কে গিয়ে বসি।
— চলো।
ওর পাশে হাঁটতে খারাপ লাগছে না বরং একটা অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করছে। আমি দেখতে চেয়ে ছিলাম ও ঠিক কেমন? হয়ত ওর জায়গাতে অন্য মেয়ে থাকলে আমায় চরিত্রহীন ভাবতো কিন্তু অহনিকা তো আমায় খুব সহজেই মেনে নিয়েছে। তারপর পার্কের পাশাপাশি একটা বেঞ্চে বসলাম।
.
— আচ্ছা অহনিকা তুমি কি শুধু তোমার পরিবারের কারনেই আমায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছো?
— এই প্রশ্ন কেন?
— না এমনি। তো উত্তরটা দিলে ভাল হতো।
— আসলে ছোট থেকেই ইচ্ছা পরিবারের উপরে কথা বলবো না। সেই হিসেবে বলা যেতে পারে সবটা পরিবারের ইচ্ছায়।
— হুমম বুঝলাম।
— তো এবার তুমি বলো আমায় কেন বিয়ে করতে রাজি হলে?
— আসলে এই বাদরের জন্য কোন বাদরনী জুটছিল না তো তাই ভাবলাম তোমার গলায় ঝুলে যাই।
— রাজ?
— ওকে সরি, আসলে আমিও পরিবারের বিপরীতে কিছু করতে চাই নি তাই।
— হুমম ভালো
–হুম
তারপর দুইজনের মাঝে চলতে থাকলো নিরবতা। শুধু নিজের কাছে মনে হচ্ছে হয়ত নিজের মনের মত কাউকে পেয়েছি। হঠাৎ অহনিকা বলে উঠলো…
— অনেক সময় হলো, এবার চলো বাসায় যাওয়া যাক।
— হুমম চলো।
— এই যে মিস্টার রাজ, যখন কোন মেয়ের সাথে প্রথম দেখা করতে হয় তখন তাকে গিফট দিতে হয়।
— জানতাম না তো।
— ওকে সেটা বড় কথা না। আর শুনো, আমার সাথে দেখা করতে হলে আইসক্রিম কিন্তু আনতেই হবে।
— সামনে বৃষ্টির দিন আসছে তো।
— বৃষ্টির মাসে যে আইসক্রিম খেতে পারে সেই তো লিজেন্ড।
— হুমম তুমি ঠান্ডা লাগাও আর প্যাকেট প্যাকেট টিস্যু নষ্ট করো।
— ধ্যত টিস্যু নষ্ট কেন করবো, তোমার শার্ট থাকতে।
— এটা তোমার বাপের দেওয়া রুমাল না তো।
— কি বললে?
— কই কিছু না তো।
— হুমম মনে থাকে যেন। এবার চলো যাওয়া যাক।
— হুমম।
.
এরপর অহনিকাকে রিকশায় তুলে দিয়ে আমিও বাড়ির পথ ধরি।এতদিন ওর মনোভাব জানার চেষ্টায় ছিলাম। এখন যতটুকু ওরে বুঝলাম ততটুকুতে ওর জন্য মনে ভালবাসা জন্ম নিতে শুরু করেছে। আমি বাসায় আসতেই অহনিকার ফোন আসলো..
— হুমম বলো।
— একজন মেয়ে বাসায় পৌঁছালো কি না সেটা জানার কি আপনার দরকার নেই হুম।
— আসলে আমি একটা কথা ভাবতে ছিলাম।
— কী কথা?
— আসলে কথা না তবে গানের দুইটা লাইন।
— কি শুনি?
— কেউ প্রেম করে, কেউ প্রেম পরে। আমার হয়েছে কোনটা, জানেনা এই মনটা।
— হা হা গাধা একটা। আচ্ছা, এখন স্নান করে খেয়ে দেয়ে একটা ঘুম দেও তো।
— হুমম তুমিও।
— আচ্ছা বায়।
তারপর ও ফোনটা রেখে দিলো। ওর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে কেমন যেন পরিবর্তন হতে লাগলাম। শুধু মনে হচ্ছে হয়ত আমি খুব লাকি যে অহনিকার মত কাউকে পেলাম।
এভাবে দিন গুলো ভালই কাটতে লাগলো। আর ওর প্রতি হয়ত ভালবাসাটাও তৈরি হয়ে গেল।
.
কিছুদিন পর রাতে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছি তখনই অহনিকার ফোন আসলো। কেন জানি ওর নামটা মোবাইলের স্কিনে ভেসে উঠতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো
— হুমম অহনিকা বলো।
— ওই আমাকে নাম ধরে না ডেকে অন্য কিছু বলে ডাকতে পারো না।
— কি বলে ডাকবো?
— এই যে কত্তো নাম আছে হানি,বাবু আরো কত কি?
— কেন নাম ধরে ডাকলে বুঝি সমস্যা?
— হুমম অনেক সমস্যা।
— শুনো মেডাম, ভালবাসার মানুষকে ডাকতে গেলে কোন স্পেশাল নামের প্রয়োজন হয় না। শুধু দেখতে হয় যে কথা বলছে তার কথায় ভালবাসা আছে কি না।
— যাক আজ মেনে নিলে তুমি আমায় ভালবাসো।
— কখন বললাম?
— এই তো বললে ভালবাসার মানুষকে ডাকতে কোন স্পেশাল নাম লাগে না। আর কথাটা যেহেতু আমায় বললেন তাই ভালবাসার মানুষটাও আমিই তাই না।
— আসলে…..
— বলো বলো..
— হুমম তা একটু বলতে পারো যে ভালবাসি।
— হুমম বুঝলাম। ওই শুনো কাল সকাল ১০ টা বাজে আমার সাথে তুমি শপিং এ যাবে আর আমার বিয়ের শাড়ি আর তোমার পাঞ্জাবী কিনবো?
— কিন্তু বিয়ের তো আরো ১৫ দিন আছে।এতো তারাতারি এইসব করার কি দরকার? শুধু শুধু আমার অফিস বন্ধ হবে।
— আমি এতো কিছু জানি না। তুমি কাল আমার সাথে যাবে মানে যাবেই।আর বাকি ১৫ দিন কি করবো জানো, তোমার সাথে একদিন খুব ভোরে খালি পায়ে শিশিরের মাঝে হাটবো।তারপর রাতে তোমার হাত ধরে রেল লাইনে হাটবো। নদীর পাড়ে বসে চা খাবো। আমি দোলনায় দোল খাবো আর তুমি পেছন থেকে ধাক্কা দিবে। আর হা প্রতিদিন আমার জন্য শিউলি ফুল আনতে ভুলবে না।
— বাব্বা এত্তো স্বপ্ন।
— হুম আরো আছে। কেন তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে কি মানা? নাকি অন্য কোন মেয়ে আছে হে?
— আরে না না।
— এতেই ভাল। যদি দেখি যে আমায় বাদে অন্য কোন মেয়ের কথা তোমার ভাবনায়ও আনো তাহলে তোমারে দিয়ে বাসার সব কাজ করাবো।
— ওকে ওকে বলবো না।
— হুমম এখন অনেক রাত হয়েছে। তাই ঘুমিয়ে পরো আর সকালে ১০ টায় শপিং মলের কাছে চলে এসো।
— হুমম ঘুমিয়ে পরো।
.
সকালে শপিংমলের সামনে দাড়িয়ে আছি কিন্তু অহনিকাকে আসতে দেখছি না। প্রায় ৩০ মিনিট পর আসলো মেডাম। এসেই বলছে…
— সরি মিস্টার আর আমার জন্য অপেক্ষা করার জন্য এত্তো গুলো ধন্যবাদ। আসলে দেখছিলাম কত্তোটা ভালবাসো।
— এবার চলো আগে শপিংটা শেষ করি।
— হুমম
তারপর প্রায় ৩ ঘন্টা সময় নিয়ে ৩ টা শাড়ি আর ২ টা পাঞ্জাবী কিনলো।আজ বুঝলাম কেন ছেলেরা মেয়েদের সাথে শপিং করতে আসতে চায় না।আমিও বিয়ের পরে শর্ত দিয়ে দিবো যেন মাসে একবারের বেশি শপিং করতে না আসে।
.
একটা কফি সপে বসে কফি খাচ্ছি। আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি…
— এই যে হ্যালো মিস্টার আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে কফিটা কে খাবে? তুমি খেতে না পারলে দাও আমি খেয়ে দেই। এমনি সকালে খেয়ে আসি নি।
— আচ্ছা তুমি চুল সব সময় এক পাশ করে রাখো কেন? আর চোখে কাজল দাও কেন?
— কেন খুব খারাপ দেখা যায় বুঝি?
— না মানে এতো সুন্দর লাগে যে ভয় হয় কেউ যদি তোমায় আমার থেকে নিয়ে যায়।
— সেটা তো হওয়ার নয়। কারন যদি আমি মরেও যাই তাহলে পেত্নী হয়ে তোমার যে বউ হবে তার মাঝে থাকবো। আর তোমায় ভালবাসবো।
— তুমি বড্ড পাগলী।
— পাগলামীর দেখলে কি বাবু? আগে তো বিয়েটা হতে দাও। তারপর দেখবে তোমায় কত্তো ভাবে আমার পাগল বানাই।
— হুমম বুঝলাম।
— আরে মিস্টার তোমাকে তো একটা কথা বলা হয় নি।
— কি?
— আসলে আমার বিয়ের কারনে আমার বাসার সবাই সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবো। তুমি যাবে আমাদের সাথে।
— কয় দিনের জন্য যাবে?
— বেশি না ৪ দিনের জন্য। আসলে আজ সকালে বাবা বলল তাই তো আসতে আমার লেট হলো।
— বুঝলাম।
— ওই এতো না বুঝে আমাদের সাথে চলো না।
— এই যে মেডাম বিয়েতে এমনি অফিস থেকে বন্ধ নিবো। আবার যদি এখন ৪ দিনের বন্ধ নেই তাহলে তো আমার চাকরী আর থাকবে না।
— যাও যেতে হবে না। আর কখনো তোমায় অফিস বন্ধ করতে বলবো না।
কথাটা বলেই অন্য দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। ইশশ অভিমান করলো যে পাগলীটা।
— আরে বোকা মেয়ে তুমি অফিস বন্ধ করতে না বললে কে বলবে?আর আঙ্কেল চায় তোমরা সবাই মিলে পরিবারের পুরানো দিন গুলো ফিরে পাও তাই আমার সেখানে যাওয়া উচিত হবে না।তবে কথা দিচ্ছি বিয়ের পর সবাই এক সাথে কোথায় ঘুরতে যাবো।
— পাক্কা তো।
— একদম পাক্কা।
— ওকে তাহলে সমস্যা নেই। আর রাতে আমায় ট্রেনে তুলে দিতে আসবে কিন্তু?
— হুমম।
— এবার চলো আর বাসায় গিয়ে আমার ব্যাগ ঘুছাতে হবে।
— হুমম চলো।
তারপর চলে আসলাম। আর একটা রিকশা নিয়ে অহনিকাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলাম।
.
রাতে স্টেশনে ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছি। অবশ্য এসেই অহনিকার মা আর বাবার সাথে দেখা করলাম। ওরা বলল আমাকে যেতে তবে গেলাম না। আর অহনিকার ভাই আমার থেকে ১০০০ টাকা মেরে দিলো দুলাভাই ডেকে। আপাতত চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে যাবে পরে গাড়ীতে যাবে।
ট্রেনও চলে আসলো আর আঙ্কেল আন্টিকে সিটে বসিয়ে দিলাম। আর অহনিকাকেও বললাম যেন সিটে গিয়ে বসে। তখন ও আমার কানে কানে বলল..
— মিস্টার রাজ, আমি মাত্র ৪ দিনের জন্য যাচ্ছি। কিন্তু এসেই হিসাব নিবো এই ৪ দিনে কয়টা মেয়ের দিকে তাকালে।
— হা হা ওকে ভাল মত যাও।
ওরে সিটে বসিয়ে দিলাম আর কিছুখন ওয়েট করলাম। তারপর ট্রেন ছেড়ে দিলো। যতদূর ট্রেন দেখা যায় ততখনই কেন জানি তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার ফোনে।একটা ম্যাসেজ আসলো ” এই মিস্টার এখন বাসায় গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পরো। আমি চট্টগ্রাম পৌঁছেই তোমায় ফোন দিবো। ”
.
আমি তারপর বাসায় চলে আসলাম। মা বাবা জানে যে আমি ওদের আজ ট্রেনে তুলে দিতে যাবো। বাসায় এসে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। প্রথমে ঘুম আসছিল না কিন্তু কখন যে ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম মনেই ছিল না। ঘুমটা ভাঙ্গলো অহনিকার ফোনে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে ৫ টা বাজে। মানে এতখন চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছে।
.
— হুমম অহনিকা বলো।
— ঘুমিয়ে ছিলে বুঝি।
— হুমম তোমরা কি পৌঁছে গেছো?
— না আপাতত ট্রেনের জার্নি শেষ করে গাড়িতে উঠলাম। বাবার বন্ধু আমাদের রিসিভ করতে আসছে।
— ও সাবধানে যাও।
— হুমম তুমিও সাবধানে থেকো।
.
সকালে রেডি হয়ে অফিসের জন্য বাসা থেকে বের হলাম আর ভাবলাম অহনিকাকে ফোন দেই। দুইবার রিং হওয়ার পর ঘুম ঘুম গলায় মেডাম ফোনটা রিসিভ করলো….
— হুমম অফিসে যাচ্ছো বুঝি।
— হুম আর তুমি মনে হয় ঘুমাচ্ছো।
— হুমম।
— তোমার ঘুম ভাঙ্গা কন্ঠটা তো হেব্বি আর তোমার ঘুমন্ত মুখটা না জানি কত্তো কিউট লাগবে। ।
— হইছে মিস্টার এবার অফিসে যাও।
— ওকে বায়।
তারপর অফিসে চলে গেলাম। প্রায় দুইদিন কেটে গেল। খুব তারাতারি মেডাম চলে আসবে।
আজ শুক্রবার তাই সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে টিভিতে নিউজ দেখছিলাম। হঠাৎ একটা নিউজ দেখে বুকের বাম পাশটা আতকে উঠলো।নিউজটা ছিল ” সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে ৫টি স্প্রি-বোর্ড ডুবি “।
খবরটা দেখা মাত্র আমি অহনিকার নাম্বারে ফোন দিলাম কিন্তু ওর মোবাইল বন্ধ। বুঝতে পারতে ছিলাম না কি করবো? তাই ওর বাবাকে ফোন দিলাম কিন্তু ওনার মোবাইলও বন্ধ।তাই ভয়টা বাড়তে থাকলো। এখন কি করবো কিছুই যেন বুঝতে পারছি না। আর ও একদিন বলে ছিল ও সাতাঁর পারে না।
.
এভাবে প্রায় ৪ ঘন্টা পার হয়ে গেল কিন্তু অহনিকার কোন খোঁজ পেলাম না। হঠাৎ বাবা আমায় ফোন দিলো…
— কিরে রাজ কোথায় তুই?
— বাসায় কেন?
— একটু আগে অহনিকার বাবা ফোন দিছিল?
— অহনিকা কেমন আছে বাবা?
— তুই যে নিউজটা দেখলি এখানে অহনিকারাও ছিল। তোর আঙ্কেল আর আন্টি শুধু ফিরে আসতে পারছিল। আর অহনিকা ও ওর ভাই…
— (মোবাইলটা হাত থেকে পরে গেল।)
আমি বুঝতে পারতে ছিলাম না যে আমার শরীরের কি যেন কাজ করতেছে না। আমি রুমের মেঝেতে বসে পরলাম। খুব ইচ্ছা করছিল যে চিৎকার দিয়ে কাঁদি কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বার হচ্ছিল না। শুধু ওরে বলতে ইচ্ছে করছে আমাকে কেন অপূর্ন করে রেখে গেল। কি দোষ ছিল আমার? এত ভাল তো না বাসলেও পারতো। ও আমায় বলেছিল ওর সাথে যাওয়ার জন্য। যদি যেতাম কি এমন দোষ হতো?
.
রাত প্রায় ২ টার দিকে ওদের লাশ নরসিংদীতে আনা হয়। সাহস পাচ্ছিলাম না দেখার জন্য। ওরে বলে ছিলাম ওর ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে কত্তো জানি কিউট। আজ আমি সেই মুখের সামনে দাঁড়িয়ে আছি তবে তফাৎ শুধু একটাই যে এই ঘুম আর ভাঙ্গবে না।ওরে বলে ছিলাম এত্তো ভাল না হওয়ার জন্য তাহলে উপরওয়ালাও ওরে নিয়ে যাবে। ওরে বলছি এত্তো স্বপ্ন না দেখতে। নিজে তে স্বপ্ন দেখলো আর আমাকেও দেখালো। কিন্তু স্বপ্ন গুলো অসম্পূর্ন রেখেই চলে গেল।
.
আর এতক্ষণ রিশা আমার পাশে বসে অহনিকার অতীতটা শুনলো। রিশা হলো আমার স্ত্রী। গত ৩ মাস হলো ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। অহনিকার মৃত্যুর পর প্রায় ৫ মাস কেমন যেন হয়ে গেছিলাম। তারপর চাকরী চলে যায়। এরপর আস্তে আস্তে ঠিক হই। বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে রিশাকে বিয়ে করে নেই। তবে রিশার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর একদিন দেখা করি নি আর ফোনেও কথা বলি নি। রিশা মেয়েটা খুব ভাল, আমায় খুব মেনে চলে। আমি অবশ্য ওর সাথে তেমন একটা কথা বলি না। মায়ের কথায় ওরে নিয়ে একটু হাটতেঁ বার হইছে। আর ওরে আমার অতীতটা বলে দিছি। কারন, ওর মনে সন্ধেহ ছিল আমি কেন ওর সাথে কথা বলি না।হঠাৎ রিশা বলে উঠলো…
— এই যে মিস্টার চলো বাসায় যাই নয়ত মা চিন্তা করবে।
প্রথমে ওর মুখে এই মিস্টার ডাকটা শুনে আতঁকে উঠলাম।তবে মানিয়ে নিলাম…
— হুমম চলো।
.
সকালে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ আমার মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। চোখ খুলে দেখি রিশা আমার পাশে বসে আছে।
— কি হলো কিছু বলবে?
— এই যে তোমার কফি। আর আমি ওয়াশরুমে পানি রেখে দিছি। তারাতারি ফ্রেশ হয়ে নেও।
— কেন?
— কেন আবার অফিস যাবে না?
— ও তুমি যাও আমি রেডি হচ্ছি।
ও চলে যাওয়ার পর খেয়াল হলো আরে রিশা তো ওর চুল গুলো এক পাশে করে রাখছে আর চোখে কাজল দিছে। একটু অন্যরকম লাগলো আজকের সকালটা। বিছানা ছাড়তে আসলেমী লাগছে। তখনই রিশা আসলো…
— এই যে মিস্টার কফি কি ঠান্ডা হলে খাবে? না খেলেও সমস্যা নেই কারন সকাল থেকে কিছু খাই নি। আমি খেয়ে নিতে পারবো।
ওরে কি বলবো যে তবে আমার মুখ দিয়ে শুধু শুধু হালকা একটা হাসি চলে আসলো।
আমি আর ওয়েট না করে কফিটা খেয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আর রুমে আসতেই দেখি খাটের উপর আমার শার্ট, প্যান্ট রাখা আছে আর সাথে একটা চিরকুট। এটায় লেখা ” অহনিকা বলছিল না যে ওর আত্মা তোমার বউয়ের মাঝে আসবে আর তোমায় ভালবাসবে। রেডি হয়ে যাও মিস্টার এই পাগলীর পাগলামী সামলাতে। “