ভালোবাসা দিবসের বাঁশ

ভালোবাসা দিবসের বাঁশ

বোম মারতে পার্কে গিয়েছিলাম। অবশ্য যাওয়ারও কাহিনী আছে। গতবার এই ভালোবাসা দিবসের দিন আমার গার্লফ্রেন্ড ছ্যাঁকা দিছিলো। সেদিনে পর থেকে প্রেমিক প্রেমিকার জুটি দেখলে মেজাজ গরম হয়। তাই দীর্ঘদিন ধরেই বোম তৈরি করছি কাপলগুলোকে মারব বলে। একসাথে অনেকগুলো চল্লিশাও খাওয়া হবে৷ উফফফফ খালি বিরিয়ানি। পার্কের চিপা চাপাগুলো কাপলদের দখলে।

তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বোম মারব চিপায়। পার্কে প্রবেশ করতেই দেখি জোরায় জোরায় হারামজাদা-হারামজাদী বসা। তার থেকেও বেশি আছে ঝোপের চিপাগুলোতে। আমি লুকিয়ে একটা ঝোপের ভিতরে গেলাম। কিন্তু আফসোস কাউকেই পেলাম না। ঝোপের ভিতরে ময়লা আবর্জনায় ভরা। মশা পুনপুন শব্দ করছে। বের হতেই চোখে মশা ঢুকলো। চোখ ঝাঁজাচ্ছে। আমি চোখ কচলাচ্ছি, মশা বের করার চেষ্টা করছি। এদিকে চোখ দিয়ে টুপ করে পানি পরছে। শালার বিলাই ভাগ্য। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর মশা বের করতে সক্ষম হলাম। সাথেসাথে মোবাইল ফোঁন বেজে উঠলো। উরিম্মাআআআ ক্রাশ ফোন দিছে। রিসিভ করতেই বলল….

–তোর মতন লুচু আমি এই দুনিয়ায় একটাও দেখিনি। রাবিশ একটা।
-মারিয়া কিচ্চে বকো কেন?
–চুপ শালা কথা বলবিনা আমার সাথে।
-আরে আজব, আমি কি করলাম?

–কি করছিস? ছিঃ! রুবেল তোকে ভালো ভাবছিলাম আমি। আড়ালে তোর উপর আমিও ক্রাশ ছিলাম কিন্তু তুই আমার সব কিছু মূল্যহীন করে দিলি।
-দেখো মারিয়া উল্টাপাল্টা বকোনা, আমি যথেষ্ট ভালো ঘরের ছেলে। তুমি হুট করে এমন কথা বলতে পারোনা।
–তোর মুখে এমন কথা মানায়না রুবেল। তুই চরিত্রহীন, বদমাশ।
-দেখো তুমি আমার ক্রাশ ঠিকাছে। ক্রাশ ক্রাশের মতন থাকবা উল্টাপাল্টা বলার কোন মানে হয়না।
–টুটটুট….

মারিয়া উচিৎ উচিৎ মধুর কথা বলে ফোন কেঁটে দিলো৷ কিছুই বুঝলাম না কাহিনী কি!? হোয়াট দা ফুসকা তালোই? তারমানে মারিয়াও আমার উপর ক্রাশ ছিলো? ভাবতেই দিলমে লাড্ডু ফুটেগা। কিন্তু কি এমন করলাম। চিন্তা করলাম কিছুই মনে পরলনা। যাক ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মানাবনি। আমি ‘চিল ব্রো’ ভাব নিয়ে বেঞ্চে বসে পরলাম। ছোট ভাই ফোন দিলো। রিসিভ করতেই সাইফ কান্না শুরু করলো, আমি বললাম….

–কিরে কি হয়েছে এভাবে কাঁদছিস কেন?
-তুমি কেন এমনটা করলে ভাইয়া? একটিবার আমাদের জানালেও পারতে।
–দেখ বলবিতো কি করছি আমি?

-আর না বোঝার ভান করে থেকো না। কত গর্ব করতাম তোমায় নিয়ে। বুক ফুলিয়ে চলতাম তোমার কারণে। অত্রএলাকায় তুমিই ছিলে ভালো ছেলে। আর আজ?! সবকিছু কমিয়ে দিলে। তোমার এই কাজের জন্য পরিবারের মানসম্মানও গেলো সাথে আমার বুক ফুলানিও।

–থাপড়াই কান ফাটামু কি হয়েছে তাই বল আগে।
-ফেসবুক চেক করলেই পাবে। আর বাসায় এসোনা, আব্বু রেগে আছে।

বলেই সাইফ ফোন কেঁটে দিলো। আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম। করলাম কি বাল। কিছুইতো বুঝতে পারছিনা। ডাটা অন করে ফেসবুকে গেলাম। হোমপেজ ঘাটতেই আকাশ থেকে পরলাম। হায় আল্লাহ এসব কি! আমি যখন ঝোপ থেকে বের হয়ে মশা বের করার জন্য চোখ কচলাচ্ছিলাম তখন সেই ছবি কে জানি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে, সাথে ক্যাপশন দিয়েছে….

“ঝোপের চিপায় গার্লফ্রেন্ডের সাথে কিছু করতে না পেরে অঝোরে কাঁদছে এক যুবক। দু’হাতে চোখের পানি আঁটকাতে গিয়েও পারছেনা এই হতভাগা। ধিক্কার জানাই এমন গার্লফ্রেন্ডকে।’ লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা! আস্তাগফিরুল্লাহ! এসব কি? মানইজ্জতের বারোটা বাঁজছে আজকে। কোথায় মশা আর কোথায় গার্লফ্রেন্ড? মুহূর্তেই সবকিছু শেষ হলো। সমস্ত গ্রুপ, পেজে ভাইরাল হয়েছে আমার ছবি। এখন সবাইকে কিভাবে বোঝাবো আমি। এ ক্যাসে হো সাকতা? একদাম জিন্দেগী বদলদিয়া। উ ভাই মুঝে মারো, মুঝে মারো ইয়ার। সত্যিটা আম্মাকে জানানোর জন্য কল দিলাম নাম্বার বিজি। ব্লক করে রেখেছে। আব্বাও ব্লক করে রেখেছে। জীবনডা তামার তার। এক প্রকার মুখ ছাপিয়ে বাসায় গেলাম। কিন্তু বাহিরে আম্মা ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছোটবোন রোদেলাও দেখি সাথে। ওর হাতে খুন্তি। আমি ভ্রু-কুঁচকে তাকালাম। রোদেলাকে বললাম….

–এসব কি?
-আম্মা বলেছে তোমার পেট ফুটু করতে, তুমি আকাম করছো।
–এসব মিথ্যারে বইন।
-আমি তোমার পেট ফুটু করব, আসো খুন্তি রেডি।

ছোট বোনের এমন কথাশুনে ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। আম্মার দিকে তাকিয়ে দেখি রাগে ফুঁসছে। কাছে পেলে ঝাড়ু দিয়ে পেটাবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। দূর থেকেই বললাম….

–আম্মা এসব মিথ্যে, পিউর সত্যি বলছি।
-আমার চোখের সামনে থেকে যা। আমি ভাবতেও পারিনি তুই এমন ছিঃ।
–প্লিজ আম্মা ভুল বুঝো না? আসলে আমার চোখে মশা গেছিলো।
-আমাকে বোকা পেয়েছিস? আমি ফিডার খাই?
–তিনবেলা ভাত খাও।
-ফাজলামো করছিস? বের হ এখনি বাসা থেকে। নইলে তোর বাবাকে ডাকব।
–নানার কসম আম্মা, আমার চোখে মশা গেছিলো আর তাই চোখ কচলাচ্ছিলাম।

আম্মা আর কিছুই বললনা। আব্বাকে জোড়ে ডাক দিলো৷ সাথেসাথেই আব্বা ঘর থেকে লাঠি হাতে বের হয়েই দৌঁড়। বুজতে আর বাকি রইলনা কি হচ্ছে। উপায় না পেয়ে জান বাঁচাতে দিলাম দৌঁড়। ‘হ্রামি খাড়া আজকে’ বলে আব্বাও পিছেপিছে দৌঁড়। এদিকে আমিও উড়াধুরা দৌঁড়াচ্ছি। আব্বাও পিছু ছারছেনা। দৌড়াতে দৌড়াতে নদীর পাশে আসলাম। আব্বার রাগ মাথায় উঠেছে আজকো, সেও আসছে। উপায় না পেয়ে মাথায় লুঙ্গী পেঁচিয়ে নদীতে সাঁতার দিলাম। পাড়ে এসে দেখলাম আব্বা নাই চলে গেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে শেষ। একটা ভুল জীবনটা শেষ করে দিলো। এই ভুল নিয়ে কোথায় যাব এখন আমি? এ জীবন রেখে কি লাভ? নদীর পাশেই সটাং হয়ে ভং ধরে শুয়ে রইলাম। ‘ভালোবাসা দিবসের মায়রে বাপ।’

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত