হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। অনেক্ষন থেকেই কলিংবেলের আওয়াজটা কানে আসতেছিলো। ঘুমের মধ্যে থাকায় বুজতে একটু দেরি হয়ে গেল, ভাবছিলাম স্বপ্ন দেখতেছি। না এখন ঘুমটা পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে, বুজতে অসুবিধা হয়নি কলিংবেলটা আমাদের বাসায়ই বাজতেছে। উঠে বসে পড়লাম , বসেই কিছু একটা খুজতেছি। যা খুজতেছি তা পাচ্ছি না, পাওয়ার কথাও না। কারন রাতে ঘুমানোর সময় কোথায় রেখে যে ঘুমিয়েছিলাম ভুলেই গেছি। যা খুজতেছি তা লুঙ্গি নয়, আমার টি-শার্ট খুজতেছিলাম। অবশেষে কম্বলের ভিতরে পায়ের কাছে খুজে পেলাম। টি-শার্টটি গায়ে দিয়ে দরজা খোলার জন্য হাটতেছি আর ভাবতেছি আব্বু অফিসে, আম্মু চট্টগ্রামে খালামনির বাসায় গিয়েছে, ছোট ভাই কলেজের টুরে সিলেটে গিয়েছে। এই সাঝ সকালে কে আসবে আমাদের বাসায় (যদিও সকাল ১১ টা বাজে)। চিন্তা করতে করতে দরজা খুলে শক খেলাম। শক খাওয়ারই কথা, দরজার সামনে অপরুপ সুন্দরী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা রঙ এর সালোয়ার কামিজ পড়ে , মাথায় সানগ্লাস, ২ টি ব্যাগ, অত সুন্দর মুখখানি ও ঠোটের উপরে আর নাক ঘামে চিকচিক করছে। সবদিক মিলিয়ে ক্লান্ত পরীর মতো লাগছে।
– সরেন রুমে যাবো। আর ব্যাগগুলো নিয়ে আসুন। বলেই রুমে ঢুকে পরলো (ক্লান্ত পরী)
– – আপনি কে ? আর আমার রুমেই বা কি? (আমি)
– আমি ইশা, খালামনি কোথায়? খালামনিকে ডাকুন। আর আপনিই বা কে?
– – আমি ইভান, আর আম্মু বাসায় নেই, বেড়াতে গেছে।
– বেড়াতে গেছে মানে, আমাকে আসতে বলে বেড়াতে গেছে। কখন গেল?কোথায় গেল? আর আপনার আম্মু মানে কি?
– – এত প্রশ্ন করলে কয়টার উত্তর দিবো। আপনাকে আম্মু কেন আসতে বলছে?
– কেন আসতে বলছে মানে, আমি বেড়াতে আসছি আর আপনি তাসকিয়ার কি হোন বলেন ত ?
পুরো ঘটনা এবার মাথায় আসলো। উনি তাহলে পাশের ফ্ল্যাটের জামিল আঙ্কেলের বাসায় এসেছেন । তাসকিয়া জামিল আঙ্কেলের পিচ্ছি মেয়ের নাম। অনেক কিউট আর আমার কোলেই সারাক্ষন থাকে। উনারা আগে আমাদের ফ্ল্যাটেই থাকতেন, আমরা আসাতে উনারা পাশের ফ্ল্যাটে উঠেছেন।
– – আপনি একটু ভুল করছেন, আপনার খালামনি এই ফ্ল্যাটে নয়, পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন। তাসকিয়াদের ফ্ল্যাট আমাদের পাশের ফ্ল্যাটটি। আর শুনোন আপনার খালামনিকে আবার বলবেন না যে আপনি আমার ফ্ল্যাটে ঢুকেছেন। আসলে আমি পুরো ফ্ল্যাটে একা আছি ত, এতো সুন্দর একটা মেয়ে খালি ফ্ল্যাটে আসছে শুনলে খারাপ লাগে।
আমার কথা শুনে মনে হয় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, আমার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেড়িয়ে পাশের ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপ দিল। উনার ২টা ব্যাগ যা কিনা আমিই আমার রুমে এনেছিলাম সেগুলো নিতেই ভুলে গেছে। অগত্যা আমিই ব্যাগ দুটো উনাদের ফ্ল্যাটের সামনে দিতে গেলাম । ততক্ষনে শায়লা আন্টি দরজা খুলে দেখে আমি ব্যাগ দুটো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমাকে দেখেই আন্টি বললো, কিরে ঘুম ভাঙছে তোর? ফ্রেশ হয়ে দুপুরের নাস্তা করতে আয়? আর ব্যাগ নিয়ে কি করছিস?
আর আন্টির কথা শুনেই ইশা বললো, ভুলে উনার রুমে চলে গিয়েছিলাম। আর এখন দুপুরের নাস্তা,এ কেমন কথা?
আন্টিঃ ও এমনি, সকালের খাবার দুপুরে খায়, দুপুরের খাবার রাতে খায়।
আমিঃ ফ্রেশ হয়ে আসতেছি বলেই রুমে চলে আসলাম। এসেই ব্রাশ খুজতে লাগলাম, কিন্তু কপাল খারাপ একটা মাত্র ব্রাশ তাও খুজে পাচ্ছি না। দীর্ঘ পাঁচ মিনিট খুজার পর অবশেষে ব্রাশ পেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এবার মনে হয় পেটে ক্ষুধা লাগছে, এবার যাই কিছু খেয়ে আসি। আম্মু কোথাও বেড়াতে গেলে আমি আর আমার বাবার খাবার খেতে হয় শায়লা আন্টির বাসায়। আন্টিও অনেক যত্ন করে খাওয়ায়।
আমার ফ্ল্যাটের দরজা খুলেই আন্টির দরজার কলিংবেলটি চাপলাম। এক মিনিট পরেই দরজা খুলে গেল, আর দরজাটি খুলেছে ইশা।
ইশাঃ আমি ভাবছিলাম আপনিই আসছেন।
আমিঃ আপনি আমাকে ভাবতেছিলেন, বাহ ভাল লাগলো। ভাবতেই থাকুন , ভাবনা বন্ধ করবেন না যেন।
আন্টিঃ আয় দুইজন টেবিলে আয়, খেতে বস।
আমি আর ইশা খাওয়ার টেবিলে বসে পরলাম তাও আবার মুখোমুখি বসে আছি। কিন্তু আজ খাবারে ভীন্ন জিনিস, হরেক রকমের পিঠা। আর আমি ত পিঠা দেখে মহা খুশি।
আমিঃ বাহ আন্টি এতো পিঠা কখন বানাইলা।
আন্টিঃ আরে পিঠা আমি বানাইনি , ইশা বাড়ি থেকে আনছে। আপা বানিয়ে দিছে আমার জন্য।
ইশাঃ জি না। পিঠা আম্মু না আমি বানিয়েছি। অনেক কষ্ট হইছে।
আমিঃ তাহলে খাওয়া যায়, আপনি বানিয়েছেন না খেলে আবার রাগ করতে পারেন।
তারাতারি খেয়ে আন্টিকে বলে আমার রুমে চলে আসলাম। সারাদিন বাহিরে অনেক জায়গায় ঘুরলাম, বন্ধুদের সাথে অনেক আড্ডা দিয়ে সন্ধার পর ঘরে ফিরে আসলাম, এসেই দেখি বাবা রুমে বসে টিভি দেখতেছে। বাবা একগাদা কথা শুনিয়ে বসে বসে নিউজ চ্যানেল দেখতেছে। এখন এইখানে থাকা নিরাপদ নয়, তাই ভাবলাম ছাঁদ থেকে ঘুড়ে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ, এক দৌড়ে ছাঁদে চলে গেলাম। গিয়েই দেখি সেই ক্লান্ত পরী ইশা ও শায়লা আন্টি ছাঁদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে পিছন থেকে আচমকা ভয় দেখালাম। আন্টি ভয় পেলেও ইশার কোন প্রতিক্রীয়াই দেখলাম না।
আন্টিঃ ভাল হয়েছে তুই এসেছিস, অনেক্ষন ধরেই রুমে যাবো ভাবছিলাম কিন্তু ইশা যেতে চাচ্ছে না তাই যেতেও পারছিনা। এদিকে আমার মেয়েটাকে একা রুমে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসেছি, কখন আবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর ঘুম ভেঙ্গে আমাকে না দেখলে ভয় পেয়ে কান্না করতে থাকবে। তুই ইশার সাথে একটু থাক, ও একা একা ভয় পায়। আমি নিচে গেলাম বলেই আন্টি চলে গেলেন।
আমিঃ আপনি একা একা ভয় পান? এত বড় মেয়ে তাও নাকি ভয় পায়।
ইশাঃ শুনুন, আমি মোটেও বড় নই। আর একা একা সবাই ভয় পায়, আপনিও পান।
– – একদমই না। আমি কাউকে ভয় পাই না। আপনি ত ভীতু তা চেহারা দেখলেই বুঝা যায়।
– মেয়েরা ভীতু হওয়াই ভাল। আপনি এমন কেন? শুধু মানুষকে পচাতে থাকেন।
– – আমি কাউকে পচাই না, একটুখানি মজা করি। আপনি কি কিছু মনে করেছেন? আসলে আপনাকে জ্বালাতে ভাল লাগে।
– আমি কিছু মনে করি নি। আচ্ছা ভাইয়া আপনি ত ইউনিভার্সিটিতে পড়েন আচ্ছা বলেন ত পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রেডুয়েশন করলে ভাল হবে নাকি প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে।
– – আমি ভার্সিটিতে পড়ি আপনাকে কে বললো?
– খালামনি আপনার সম্পর্কে সব বলেছে?
– – কি বলেছে শুনি? আল্লাহই জানে কি না কি বলেছে?
– কি আর বলবে? এই যে, আপনি বাবা মায়ের দুইমাত্র খুব ভাল একটা ছেলে, প্রাইভেট ভার্সিটিতে বিবিএ তে পড়তেছেন, স্বভাবে বাদরের মতো, মেয়েদেরকে খুচানোর অভ্যাস আছে, কিছুটা প্লেবয় টাইপের, কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড আছে, অগোছালো চলাফেরা,খেতে অনেক বেশি পছন্দ করেন, আর হা ভাল গীটার বাজাতে পারেন।
– – এ কেমন বিশ্লেষণ দিলেন? প্রশংশা করলেন নাকি দূর্নাম করলেন বুজতে পারলাম না? আর আপনি ত আমার চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন তাও আবার উল্টো ।
– আরে না প্রশংশাই করেছি। আর সবগুলোই সত্যি।
– – জ্বী না, কিছু কিছু একদমই সত্যি নয়। এই যে বললেন প্লেবয় আর গার্লফ্রেন্ড যার কোন বৈশিষ্ট্যই আমার মাঝে নেই। আর আন্টি আমায় নিয়ে এগুলো বলেছে?
– না না, খালামনি ত ভালগুলোই বলছে। বাকি গুলো আপনাকে দেখে মনে হলো তাই বললাম। আপনি আবার কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
– – আপনি দুইবার দেখেই এতকিছু বলে দিলেন। আপনি ত আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন কিন্তু আমি ত কিছুই জানি না।
– হা বুজলাম। আমি ইশা।
– – আমি সেটা জানি।
– বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, আমি চাদপুরেই থাকি। চাদপুর মহিলা কলেজ থেকে এইবছর এইসএসসি পরীক্ষা দিলাম। পরশু দিন এইসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো, ভার্সিটির ভর্তি কোচিং করবো তাই খালামনির বাসায় আসলাম। ইচ্ছা আছে পাবলিক ভার্সিটিতে পড়বো যদি চান্স না পাই তবে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়বো।
– – তার মানে আপনি এখন থেকে এই বাসাতেই থাকতেছেন?
– জি তাই। আপনি কিন্তু বললেন না কোন ভার্সিটি ভাল।
– – পাবলিক ভার্সিটি ভাল আর যদি চান্স না পান তখন প্রাইভেট এ পড়তে পারেন।
– আপনাকে দেখলে বুঝাই যায় না আপনি ভার্সিটিতে পড়েন, দেখতে একদম পিচ্চির মতো লাগে।
– – আমি পিচ্চি হলে কি আপনি ত বুড়ি।
– ইশ…।। আপনি ত গীটার বাজাতে পারেন, তা গীটার ছাড়া ছাঁদে আসলেন কেন?
– – গীটার তেমন ভাল বাজাতে পারি না, আর গীটারের কট হাড়িয়ে ফেলেছি তাই আজ কয়েকদিন ধরে বাজাই না।
– কাল নতুন কট কিনে নিয়ে আসবেন, আমার গীটারের সুরে গান শুনতে অনেক ভাল লাগে।
– – গীটার বাজাতে পারি, গান ত গাইতে পারি না। ঠিক আছে আমি গীটার বাজাবো আর আপনি গান গাইবেন।
– ইশ, বললেই হলো বাজাতে পারেন আর গাইতে পারেন না। বাজাতেও হবে গাইতেও হবে। আর শুনেন আমাকে আপনি বলবেন না, আমি আপনার অনেক ছোট তাই তুমি করে বলবেন।
হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো, পকেট থেকে মোবাইল বাহির করে দেখি শায়লা আন্টি ফোন দিয়েছেন।
– – হা আন্টি বলো।
আন্টিঃ তোরা দুইজন তাড়াতাড়ি নিচে আয়, খাবার টেবিলে দিচ্ছি, চলে আয়।
– – আসতেছি বলেই ফোন রেখে দিলাম।
চলেন নিচে যাওয়া যাক, আন্টি খেতে ডাকছেন।
সরাসরি আন্টির রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম।
নাহ এবার আমি একাই, ভাবছিলাম দুপুরের মতো ইশার সংগে একসাথে খাবো কিন্তু এবার মনে হয় আর হলো না।
আন্টি খাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছে , নাহ এই খাবার এখন আর ভাল লাগবে না। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
একটু পর ইশা আসলো খাবার রুমে, অমনি আন্টি বললো কখন ডেকেছি তোকে আর এখন আসলি। নে বস খেয়ে নে।
অতঃপর খাবারের স্বাদ কয়েকগুন বেড়ে গেল। ইশা মনে হয় আমার সামনে খেতে কেমন লজ্জা পাচ্ছে। নইলে নিচু হয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করতেছে কিন্তু মুখে খাবার নিতে এখনো দেখি নি।
আন্টিঃ ইভান কাল কি করবি?
আমিঃ কি আর করবো, ঘুমাবো। কাল কোন ক্লাস নেই তাই আজ সারারাত মুভি দেখে কাল সারাদিন ঘুমাবো।
আন্টিঃ নাহ আজ এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পরবি। কাল সকালে ইশা কে নিয়ে একটু ফার্মগেট যাবি। যেই কোচিং এ ভাল হবে ভর্তি করিয়ে আসবি।
আমিঃ মনে মনে মহা খুশি, তারপর ও আন্টির সাথে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে। খেয়াল করে দেখলাম ইশা আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসছে, তার মানে ইশাও মনে মনে খুশি।
আমি মহা খুশিতে খাবার শেষ করতে পারলাম না । আন্টিকে ডেকে বললাম আর খেতে পারছি না, নিয়ে যাও। আপাতত খুশি মনে বিদায় নেয়ার প্ল্যান করে আন্টিকে বলে বিদায় নিলাম। খেয়াল করে দেখলাম ইশা আমার দিকে খাওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে আছে।
আমার ফ্ল্যাটে এসে দেখি বাবা কি যেন খুজতেছে, আর মনে হলো খুজে না পেয়ে মেজাজ অনেক গরম আছে। কিছু বলার আগেই কেটে পরার চিন্তা নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। এসেই ওর কথা ভাবতে লাগলাম। একদিনে অনেক বেশি ভাবতেছি ওকে নিয়ে। পরিচয় হলো ১২ ঘন্টা হলো মাত্র এতেই এই অবস্থা , নাহ ভাবতে ভালই লাগতেছে।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কথা মাথায় আসাতেই মনে পড়লো গত রাতে একটি মুভি খানিকটা দেখে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, এইটা দেখেই আজ ঘুমিয়ে পরবো।
মুভি দেখতে দেখতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুজতেই পারলাম না।
হঠাৎ কানের মাঝে কলিংবেলের আওয়াজ শুনতেছি। কম্বল মুড়ি দিয়ে কঠিন ঘুমের চিন্তা করলাম। একটু পর আবারো বেলের আওয়াজ। নাহ এবার আর থামছেই না এক নাগারে বেজেই চলেছে। মেজাজটা গরম হয়ে গেল। এত সকালে কে আসছে আবার আমার ১৪ টা বাজাতে। কোন রকমে কিছুটা চোখ খুলে দরজা খুললাম।
একি এ যে কালকের ক্লান্ত পরী কিন্তু আজ মনে হয় স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। অনেকটা ফ্রেশ লাগতেছে। বুঝতে বাকি রইলো না কিছুক্ষন আগেই হয়তো গোসল করেছে, কারন চুল গুলো এখনো ভেজা।
ইশাঃ এই যে আপনি এখনো ঘুমাচ্ছেন, আমাকে নিয়ে বাহিরে কে যাবে শুনি।
– – তুমি রেডি হও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
– আর শুনেন রেডি হয়ে আমাদের ফ্ল্যাটে আসুন নাস্তা খেয়ে তারপর বের হবো।
– – ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আন্টির ফ্ল্যাটে গেলাম। গিয়ে দেখি ম্যাডাম খাবার টেবিলে আমার জন্য বসে আছে।
হালকা নাস্তা করে দুইজন বেড়িয়ে পরলাম। বাসার নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কোন রিক্সা নেই। বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বুজলাম এখানে রিক্সা পাওয়া সম্ভব না, তাই একটু এগিয়ে গিয়ে মোড় থেকে রিক্সা নিবো ভাবলাম। কিন্তু মোড় পর্যন্ত যেতে হলে পুরো গলিটিই পার হতে হবে। আর খেয়াল করে দেখলাম গলির রাস্তা বন্ধ করে রাস্তার মাঝেই এলাকার সব ফ্রেন্ডরা ক্রিকেট খেলছে। এই জন্যই গলিতে রিক্সা আসতে পারে নি। ইশাকে নিয়ে ঐ বাদরগুলোর সামনে দিয়ে যেতে হবে। আমি ওদের কাছাকাছি এসে বললাম একটু বন্ধ রাখ আমরা যেয়ে নিই। সবাই খেলা বন্ধ করে আমাদের দুইজনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নিজেকে পুরাই ইমরান হাশমির মতো পপুলার মনে হচ্ছে। এত সুন্দর একটি মেয়ে নিয়ে সবার সামনে দিয়ে চলে আসলাম ইশ ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। একটু সামনে এসেই রিক্সা পেয়ে গেলাম। দুই জনে একই রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছি, মনের মাঝে ফুল ভলিউমে কন্সার্ট হচ্ছে।
অবশেষে সারাদিন অনেক কোচিং ঘুড়ার পর একটি ভাল কোচিং এ ভর্তি করলাম। মধ্যিখানে দুপুরে রেস্টুরেন্টে দুইজনেই লাঞ্চ করে নিলাম।
এরই মধ্যে বিকেল হয়ে আসছে, সে বললো সে নাকি ঢাকাতে কোথাও ঘুড়ে নি । আর কাছাকাছি ছিল চন্দিমা উদ্যান। সেখানে যাওয়ার কথা বলাতে রাজি হয়ে গেল। দুইজন মিলে চলে গেলাম সেখানে। এসেই আন্টিকে একটা ফোন দিয়ে বললাম এদিকে আসছি। দুই জন হাটতে লাগলাম সংসদভবনের পাশ ঘেষে। নিরিবিলি পরিবেশে সে এক রোমাঞ্চকর মুহুর্ত। তার চেহারার উজ্জ্বল হাসি দেখে মনে হলো সে অনেক অনেক বেশি খুশি।
পাশাপাশি হাটছি, তার সাথে আমার দূরত্ব খুবই কাছাকাছি। তার শরীরের ঘ্রাণ, চুলের ঘ্রাণ আমি নির্দ্বিধায় পাচ্ছি। এ যেন মন মাতানো ঘ্রাণ।
কিছুক্ষন হাটার পরই আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরলো। দুজনে দুটো আইসক্রিম নিয়ে হাটতে লাগলাম। আইসক্রিম আমার কখনোই খারাপ লাগে না, কিন্তু আজ মনে হয় একটু বেশিই ভাল লাগছে।
সুর্য প্রায় পশ্চীম আকাশে যাচ্ছে, রৌদ প্রায় পড়ে গেছে। হঠাৎ মনটা উতলা হয়ে উঠলো।
– – ইশা একটা কথা বলবো?
– জ্বী বলেন।
– – তোমার হাতটা একটু ধরতে দিবে?
আমার কথা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো। এমন ভাবে ঘাড়টি বাকা করে তাকিয়ে আছে, আমার ত ভয়ে পা দুটো কাপছিলো।
– মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, কেন?
– – এমনি, আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাত ধরে পুরো রাস্তায় হাটি।
– ইশ, অন্য মেয়ের হাত ধরে হাটার ইচ্ছে করছে। লজ্জা লাগবে না?
এবার মনে হয় সত্যিই লজ্জা লাগতেছে। মনে মনে ভাবলাম কি দরকার ছিল এমন অন্যায় আবদারের? শুধু শুধু ছোট হলাম।
– – সরি, আমি আসলে অত কিছু ভেবে বলিনি। ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই এমন অন্যায় আবদার করে ফেললাম।
– ইশা মুচকি হাসি দিয়ে বললো বাহ সরি ত ভালই বলতে পারেন।
আশে পাশে তাকিয়ে ওর ডান হাতটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।
আমি ত পুড়াই টাস্কিতো, হাতটি ধরবো কি না ভাবতেছি।
– কি হলো হাতটি কি ধরবেন না?
– – কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হলো না। নীরবে হাতটি ধরে নিলাম।
এ বাবা, মনে হয় কয়েক হাজার ভোল্টের শক খেলাম। শক খাওয়ার তিনটা কারণ, প্রথম কারন হাতটি অনেক গরম আর দ্বিতীয়ত হাতটি অনেক নরম, তৃতীয়ত হাতটি আমার হাতের তুলনায় অনেক ছোট। ( মেয়ের হাত ধরার অভিজ্ঞতা ছিল না )
– আপনার হাত কাপতেছে কেন?
– – শুধু হাতই নয়, পা ও কাপতেছে।
– একরাশি হাসি দিয়ে পাশ ফিরে একটু তাকিয়ে আবার দিকে তাকিয়ে এক অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।
– – এই মায়াভরা হাসি দেখে আমি কি আর না হেসে পারি। দুইজন পাশাপাশি হাত ধরে হাটার মাঝে এত ভাল লাগা থাকতে পারে তা আগে কখনো অনুভব করতে পারি নি। মনে হচ্ছে এই হাত ধরে সারাটি জনম হাটতেও রাজি আছি।
– একটা কথা বলবো?
– – হা বলেন।
– আপনাকে প্রথম অনেক চালাক ভাবছিলাম, কিন্তু এখন বুজলাম আপনি একটা গাধা। আমার হাত ধরেই এই অবস্থা। ঘামতেছেন, হাত-পা কাপতেছে। মনে হয় আমি পেত্নী আর আপনার এখন ঘাড় মটকাবো।
– – আপনি আমার ঘাড়ে উঠলে আর নামতেই দিবো না।
– ইশ
– – উদ্যানের পাশেই ঘাটের সিড়িতে বসে পরলাম দুইজন।দুইজন পাশাপাশি বসে রইলাম, দুইজনের পা জোড়া গুলো হালকা ভাবে পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে হারিয়ে গেলাম কথার রাজ্যে।
মেয়েটা এতো কথা বলতে পারে। মনে হচ্ছে কয়েকবছরের কথা এই একদিনেই বলে ফেলবে।
হঠাৎ মোবাইলে ভাইব্রেশন অনুভব করলাম। পকেট থেকে মোবাইল বাহির করে দেখলাম শায়লা আন্টির ফোন। ফোনটা রিসিভ করতেইঃ
– কিরে কই তোরা, এখনো আসলি না।
– – আন্টি ইশাকে নিয়ে চন্দিমা উদ্যানে আসছি, এখন বসে আছি।
– তাড়া তাড়ি বাসায় আয়, আমার একা একা ভাল লাগছে না, আর সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে ত।
– – এতক্ষন খেয়ালই করিনি, পশ্চিম আকাশে সুর্যটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে, যেকোন সময় আকাসের বুকে হারিয়ে যাবে।
চলো উঠি বাসায় যেতে হবে আন্টি চিন্তা করছেন।
কথাটি শুনেই ও কেমন যেন ভাবুক হয়ে গেল।
– হা, যাওয়া দরকার । অনেক্ষন ত হয়ে গেছে। চলেন বাসায় যাই।
– – আমি উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম। কোন দ্বিধা না করেই আমার হাত ধরে উঠে দাড়ালো।
এখানে রিকসা পাওয়া যায় না, খানিকটা হেটে সামনের মোড় থেকে রিকসা নিতে হয়।
দুইজন আবারো পাশাপাশি পড়ন্ত বিকেলে দুবন্ত সূর্যের আভায় হাটতে লাগলাম।
হা দুইজনের হাত দুইখানা একে অপরকে ধরেই রাখছে। কিন্তু কে আগে কার হাত ধরলো সেটা খেয়াল করা হয়নি।
হয়তো আমিই ধরেছিলাম, হয়তো বা সে ই ধরেছিল।
দুজন দুজনকেই অনেক কাছের লোক মনে হচ্ছে, যেন জনম জনমের পরিচিত আত্তার বন্ধনে। গন্তব্য বাসায় যাওয়া কিন্তু গতিতে অনেক ধীর, একদম কচ্ছপের গতি। ৫ মিনিটের হাটার রাস্তা ২৫ মিনিটেও শেষ হলো না।
হয়তো পাশের মানুষের ধরে রাখা হাতটি ছাড়াতে চাইছে না বলে এই ধীর গতি।
হাত ধরা থেকেই শুরু হবে নতুন ভালবাসার অধ্যায়। দুজন দুজনের হাত ধরায় যে অনুভুতির সৃষ্টি হয়েছিল তা আর কিছুই নয় ভালবাসার অনুভুতি।
আজীবন থাকুক ইভান-ইশার এই সুখময় ভালবাসার অনুভুতিগুলো। ভাল থাকুক ভালবাসার মানুষগুলো। ।।