পবিত্র ভালোবাসা

পবিত্র ভালোবাসা

আজ হঠাৎ মনে পড়ে গেল আমার প্রেগন্যান্সি সময়ের কথা। ভালোবাসতো সবসময়ই; কিন্তু ঐ সময়টাতে একটু বেশী কেয়ার নিতো। সবার আড়ালে এনে আমাকে রেখেছিল যেন কেউ আমাকে কষ্ট না দিতে পারে, কটু কথা না শোনাতে পারে, কারো দুর্ব্যবহারে যেন গোপনে আমার অশ্রু ঝরে না পড়ে। আমার বাবা-মা ও শশুর শ্বাশুড়ি থেকে ও দূরে। একদিন তরকারী রান্না করে তিনদিন খেতাম ফ্রিজের ডিপে রেখে রেখে। সে ভাত, ডিম, আলুভর্তা এগুলো করতে পারতো। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিচেনের টুংটাং শব্দ শুনতাম। আম্মু মাঝেমাঝে তরকারী রান্না করে দিয়ে যেতো। প্রথম তিনমাস তো খুবই কষ্ট হতো। আমার মুখ থেকে একটা শব্দ শুনলেই সে ভয় পেয়ে ছুটে আসতো। মাথার কাছে ফলমূল ও খাবারের বহর সাজিয়ে রাখতো।

প্রচুর পানি খেতাম তাই হাফ লিটারের ৪/৫ টা বোতলে পানি রাখতো; বড় বোতল তুলতে কষ্ট না হয় তাই ছোট বোতল।। একটু পরপর এসে দেখে যেতো আমি কেমন আছি। পানি শেষ হল কিনা! আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা! যখন বমি করতাম সামনে বালতি ধরে রাখতো। মুখ মুছিয়ে দিয়ে বুকে চেপে ধরতো। বলতো,,যদি জানতাম তোমার এতো কষ্ট হবে তাহলে বেবি চাইতাম না। আমি হেসে বলতাম, বেবি তো আমরা দুজনেই চাই। আর কষ্ট কি আমি একা পাচ্ছি? তুমি ও তো পাচ্ছো। (বলা বাহুল্য, সে হাফেজ এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বাসার সাথেই তাঁর অফিস)।

একদিন দেখি খুব খুশী মনে বাসায় এসে বলছে বউ, তুমি আজ থেকে বিছানায় বসে ফ্যান লাইট অফ/অন করবে। নো ওঠা উঠি। তারপর ছোট একটা রিমোট দেখালো যদিও ওটা সেট করতে অনেক ঝামেলা হয়েছিল। আরেকদিন দেখি ফ্লোর ম্যাট ও রুম হিটার নিয়ে হাজির,, বললাম রুম হিটার তো বুঝলাম ফ্লোর ম্যাট কেন??জিদ ধরলাম, এত সুন্দর টাইলসের উপর এটা বিছানো যাবেনা। বলল, ভুলে যদি তোমার পা ফ্লোরে পড়ে, ঠান্ডা লেগে যাবে তো! মনে পড়ে আমার নামাজের আগে জায়নামাজ টা বিছিয়ে চেয়ার রেডি করে রাখতো। শীত শেষে বসন্ত এলো সাথে সাথে এসি ও এলো আমার রুমে যেন গরম আমাকে কষ্ট না দিতে পারে। মনে করে প্রতিবেলা ওষুধ খুলে খাওয়াতো।

আমি আস্তে আস্তে কিচেনে ঢুকতাম রান্নার জন্য যেন এসে বকাবকি শুরু না করে। কিন্তু সে কোন শব্দ পেলেই ছুটে আসতো। বলতো উহুহ!! চুলা থেকে দূরে থাকো,, তুমি শুধু দূরে দাড়িয়ে বল কতটুকু কি দিতে হবে, আমি রান্না করবো।।। বাই দ্য ওয়ে, লেখার মাঝখানে তিনি ফোন করেছিলেন তাই আপাতত আর মনে পড়ছেনা পরে মনে করে বাকিটা লিখবো। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম সে আমার প্রাণপ্রিয় স্বামী  প্রিয় ভাইজানরা,,, বউকে নিয়ে তো অভিযোগের শেষ নেই!!ভালোবেসেছেন এভাবে কখনো!! নিজের সবকিছু ছেড়ে আপনার কাছে থাকে বউ।

আপনার ও আপনার সন্তানদের দেখভাল করে অথচ আপনার কি উচিত নয়, হাতদুটো ধরে স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে ‘ কেমন আছো বউ’ জানতে চাওয়া, খেয়েছে কিনা খবর নেয়া, কোন কষ্ট পেলে তা দূর করা,সুখে দুঃখে তাঁর পাশে থাকা!!!মনে রাখবেন, প্রেগন্যান্সির সময় খুব ডিপ্রেশন, একাকিত্ব, অসহায়ত্ব কাজ করে প্রতিটা মেয়ের। এসময় প্রিয়জনের পাশে থেকে তাঁকে আগলে রাখাটা খুবই জরুরী। হয়ত অনেক ভাই এখন বলবেন, “আমাদের এতো এ্যবিলিটি নেই, সারাদিন বউয়ের পিছনে সময় দিবো কেন? আর কি কোন কাজ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি… বিশ্বাস করেন ভাই,, যত খারাপ মেয়েই হোক, সে স্বামীর কাছে রানী হয়ে থাকতে চায়, আর প্রেগন্যান্সির সময় স্বামীর কেয়ারিং ও ভালোবাসা ছাড়া মেয়েরা এক মুহূর্তও কাটাতে পারেনা। কতো যে কষ্ট হয়… লিখে বা বলে প্রকাশ করা যাবেনা।

যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী খুশী রাখার চেষ্টা করুন প্লিজ!এসময় হাসিখুশী না থাকলে আপনার বেবির উপরেই প্রভাব পড়বে। এসময় মেয়েদের রাগ বেড়ে যায়। সুন্দরভাবে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করুন। দায় সারতে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে না দিয়ে সামর্থ্য ও সুযোগ থাকলে নিজের কাছে রাখুন। এই সময়ের ভালো লাগা যেমন সারাজীবন মনে থাকে খারাপ লাগা, অভিমানগুলোও মনে থাকে।এসময় যে পুরুষ স্ত্রী বিমুখ হয় সে ই আসল কাপুরুষ জেনে রাখুন! একটু হৃদয়বান হোন আপনারা। জানেন তো, স্ত্রীকে ভালোবাসাও ইবাদাত,সুন্নাত। আহা! পৃথিবীর সমস্ত দম্পতিরা যেন এই পবিত্র ভালোবাসায় সারাটা জীবন কাটাতে পারে সেই কামনা ও প্রার্থনা…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত