মুন্নির প্রচণ্ড মন খারাপ। ক্যাম্পাসে গাল ফুঁলিয়ে বসে আছে মুন্নি। তার এই মন খারাপের জন্য দায়ী রিমন। রিমন মুন্নির বেস্ট ফ্রেন্ড। কিছুক্ষণ আগে যখন মুন্নি ক্যাম্পাসে এসে দেখে রিমন একটা জুনিয়র মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তখন হিংসায় মুন্নির গা জ্বলে যাচ্ছিলো। মনে চাচ্ছিলো ঐ মেয়ের হাসি মুখে ঘুষি দিয়ে থ্যাবড়া করে দিতে। যখন মেয়েটা চলে যায় মুন্নি তখন রিমনের কাছে যায় , বলে।
“মেয়েটা কে?
“কোন মেয়েটা?
“ঢং করবিনা এদকম। একটু আগে যে মেয়েটার সাথে কথা বলি।
“ওহ তুই তৃপ্তির কথা বলছিস?
“মেয়েটার নাম তৃপ্তি?
“হুম!ভারি মিষ্টি একটা মেয়ে। নামটাও দেখেছিস ,তোর মতন উন্নি ফুন্নি নাহ। তৃপ্তি আহ্! নামটা শুনেই মনটা জুড়িয়ে যায়।
“আমি হলাম ক্ষ্যাত একটা মেয়ে আমার নামতো আর ওদের মতন স্মার্ট হবেনা। (মন খারাপ করে)
“হুমম সেটাই।বাদ দে। কি জন্য এসেছিস?
মুন্নি রিমনের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তার মানে কোন কারণ ছাড়া রিমনের কাছে আসা যাবেনা? তাহলে কিসের বেস্টু? মুন্নি কিছু বলে মাথা নিচু করে চলে আসে। রিমন একটু মুচকি হেসে আর ভাবে , ইস মেয়েটার সাথে একটু বেশিই করে ফেললাম। না জানি কত রাগ করে আছে। কপালে কি আছে কে জানে। সেটা পরে দেখাই যাবে।”মুন্নির কান্না পাচ্ছে। কত আশা করে এসেছিলে আজ একটু ঘরবে। সিনেমা দেখতে যাবে। একসাথে সারাদিন আড্ডা দিবে। সেটা আর হলোনা। ‘আর যাব না আমি ওর কাছে। কথা বলবনা ওর সাথে। ওহ্ কোনো মেয়ের সাথে কথা বললেও আর হিংসে করবেনা। ও বলুক তাতে আমার কি।’ মনে মনে কথা গুলো ভাবে মুন্নি। রিমন গলা খাকারি দিয়ে মুন্নির পাশে বসে। মুন্নি মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। এমন সময় মুন্নি বলল।
“মন খারাপ?কিরে ফণী মন খারাপ? (মুন্নিকে ফণী বলে)
“নাহ্!আমার ভালো লাগছেনা।
“জানিস আমি মাঝেমাঝে তোকে ইচ্ছে করেই রাগিয়ে দেই। তখন তুই গাল ফুলিয়ে বসে থাকিস। আর আমার মন তখন বলে তোকে গালটুস বলে ডাকতে। তোর গালগুলো টেনে দিতে। টানতে দিবি?
“মুন্নির চট করে রেগে গিয়ে বলে” “হারামজাদা তুই আর আমাকে ফণী বলে ডাকবিনা। আমার গাল টান দিবিনা। নইলে নারী নির্যাতন মামলায় তোকে জেলের ভাত খাওয়াবো। মুন্নির কথায় রিমনের ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু না…রিমন উল্টো হাসে। একটু জোরে জোরে হাসে। মুন্নির মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। রিমনকে ধাক্কা দেয়। রিমন হুরমুরিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তারপরেও হাসে। মুন্নি রাগ করে বসা থেকে ওঠে। বলে….
“এই যে বাসায় গেলাম ,যদি পিছন পিছন আসছোস বা কোন ফোন ,মেসেজ দিছোস। মাইরা তক্তা বানামু।
“তক্তা কেন বানাবি? এর চেয়ে ভালো মাইরা ফুটবল বানাবি। তখন নিজেকে বলতে পারব আই এম ফুটবল রিমন।
“উফফস বিলাই থাক তুই। মুন্নি হনহন করে চলে যাওয়া শুরু করে। রিমন পেছন থেকে ডাক দেয় কিন্তু মুন্নি শোনেনা। রিমনও মুন্নির পিছন পিছন যায়। মুন্নি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে। “এই যে ভাইয়া আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেনো? মুন্নির এমন কথায় রিমন থতমত খেয়ে যায়। মুন্নি ওকে ভাইয়া বলবে রিমন কল্পনাও করতে পারেনি। রিমন বলল।
“তুই আমাকে ভাইয়া বললি?
“বেশি কথা বললে এর পর থেকে আংকেল বলে ডাকবো।
“তোর মাথা ঠিক আছে?
“জি ভাইয়া।
“হারামি একদম ভাইয়া বলবিনা।
“তাহলে আংকেল বলব আপনাকে?
“উফফস এগুলা কিচ্ছু বলবিনা। মেজাজ খারাপ হয়।
“তো আমি কি করব?
“এগুলো আর বলবিনা আজ থেকে।
“ওকে ভাইয়া।
বলেই মুন্নি চলে যাওয়া শুরু করে। রিমন বুঝতে পারে মুন্নি হেব্বি ক্ষেপেছে। এল দৌঁড়ে গিয়ে মুন্নির সামনে দাঁড়ায়। কান ধরে বলে।
“স্যরিরে প্লিজ আর এমন করবনা।
“কিসের স্যরি?
“তোকে কষ্ট দিছি।
“হা হা হা…আমি আবার কখন কষ্ট পেলাম?
“লুকাবি না , আমি জানি তুই কষ্ট পাইছোস।
“আচ্ছা সরতো , বাসায় যাব।
বলেই চলে যাওয়া শুরু করলো মুন্নি। পিছন থেকে রিমন বলল।
“একটা কথা শুনে যা।লাস্ট কথা।
“আচ্ছা বল..(পিছন থেকে ঘুরে)
“আমি স্যরি ,সত্যি স্যরি তবুও রাগ করে যাসনা প্লিজ।
“আমায় বোঝস তুই?
“ইচ্ছে করেই কষ্ট দিছি।
“কেন দিবি? জানিসনা আমার সহ্য হয়না। কান্না পায় , তবুও কেন কষ্ট দিস?
“বাদ দেয়না , স্যরি বললামতো।
“এখন যদি আমি চলে যাই কেমন লাগবে তোর।
“তুই চলে গেলে আমিও তোর সাথে যাব। তখন ভালো লাগবে।
“হারামি তুই ,পঁচা তুই , বিলাই বিলাই।
“ওক্কে ম্যাডাম আর বলতে হবেনা।
“হুমম বলবনা তোকে।তুই কে?
“আমি তোর ঐ টা…
“ঐটা কি?
“বলবনা।
“বল বলছি?
“আজকে না।
“তুই এখনি বল ,না হলে গেলাম আমি।
“বাসায় কি বাচ্চা রেখে এসেছিস? খালি যাওয়ার কথা বলি?
“ওই হারামি মাইর খাবি একটা।
“আচ্ছা শোননা , একটা কথা।
“হুম বল।
“কালকে আমাদের বাসায় তোকে যেতে হবে।
“কেনো?
“ফাহিমার বিয়ে। (ফাহিমার রিমনের ছোট বোন।)
“মানে?
“মানে ফাহিমার বিয়ে ,কালকে ওর গায়ে হলুন। পরশু বিয়ে তোকে যেতে হবে।
“আজকে কেন বললি?
“তোকে সারপ্রাইজ দিলাম।
“আমিতো সারপ্রাইজড হলাম না।
“তুই” তো ফণী।তাই সারপ্রাইজড হবি কেমনে গাধী।
“ফণীও বললি আবার গাধী?
“আচ্ছা তুই আমার বেস্টু এত্তগুলা ভালো এবার চলতো।
“কোথায়।
“দু’চোখ যেদিকে যায়।
মুন্নি হাসলো , রিমনও হাসলো। দুজনে চলে যাওয়া শুরু করলো ওদের গন্তব্যে। আজকে ফাহিমার গায়ে হলুদ। পুরো বাসায় অনেক লোকজন। বিয়ে উপলক্ষে সবাইকে আগেই আসতে বলা হয়েছে। পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে। বাড়ি সাজানোর জন্য আলাদা লোক আছে। রিমন তাদের সাহায্য করছে। কোথায় কোনটা লাগাতে হবে সব বলছে। পিছন থেকে মুন্নি রিমনের মাথায় টোকা দিলো।রিমন পিছনে তাকিয়ে মুন্নিকে দেখে অবাক হলো। মুন্নির পরনে শাড়ি ,কপালে টিপ,কানের দুল ,হালকা লিপিস্টিক সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগছে। এমন সময় রিমন বলল।
“মনে হচ্ছে এই বাড়িতে তোর বিয়ে।
“মানে?
“এই যে এতো সুন্দর করে পেত্নীর মতন সেঁজে এসেছিস।
“আমি পেত্নী।
“না , ভুতের বউ। মুন্নি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন-ই ফাহিমা এসে মুন্নিকে জড়িয়ে ধরলো। বলল।
-কেমন আছো আপু? আমার খুব ভালো লাগছে তুমি এসেছো , চলো এখন।
“আলহামদুলিল্লাহ , চলো।তুই থাক ফাহিম শেষের কথাটা মুন্নি রিমনকে উদ্দেশ্য করেই বলল। রিমন মুচকি হেসে ওর কাজে মন দিলো। আজকে ফাহিমার বিয়ে। সারাবাড়িতে লোকজনে ভরা। বিভিন্ন ভাবে সবকিছু সাজানো হয়েছে। বিয়ে বাড়ির লোকজনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল থেকে তেমন একটা কথা হয়নি রিমনের মুন্নির সাথে। সারাদিন কাজ করতেই চলে গেছে। রিমন নীল রং এর একটা পাঞ্জাবী পরেছে। অপরদিকে মুন্নি টিয়া কালারে একটা শাড়ি পরেছে। কপালে ছোট একটা টিপ, নাকে নাকফুল, কানের দুল,খোঁপায় বেলি ফুলের মালা। অপরূপ লাগছে মুন্নিকে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজের-ই লজ্জা লাগছে তার।
বিয়ে বাড়ির লোকজন এসেছে। সবাই মোটামুটি ব্যস্ত হয়ে পরেছে। মুন্নির চোখ রিমনকে খুঁজছে। রিমনকে কেনো জানি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। দূর থেকে তাকিয়ে দেখে রিমন বিয়ে বাড়ির লোকজনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। সবাইকে আপ্যায়ন করছে। রিমনের গায়ে নীল পাঞ্জাবিতে রিমনকে রাজকুমারের মতন লাগছে। মুন্নির খুব ইচ্ছে করছে রিমনের কাছে যেতে। ওর সাথে থাকতে। রিমনেরর সাথে হঠাৎ মুন্নির চোখা চোখি হয়। মুন্নি লজ্জা পায় খানিকটা। দুজনেই হাসে। রিমন ইশারায় মুন্নিকে ডাকে। মুন্নি রিমনের কাছে যাওয়া শুরু করলো। হার্টবিট বারছে। কেমন জানি একটা অনুভুতি হচ্ছে। কাছে আসতেই রিমন বলল।
“বাসায় যে একটা পরী আছে জানতাম না।
“বুঝলাম না।
“তোকে পরীর মতন লাগছে। সত্যি আমি অবাক ,তুই অনেক। আর কিছু বলতে পারলনা। মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেললো রিমন। মুন্নি বলল।
“বল আমি কি?
“অনেক সুন্দর। আমার ভাবনার জগতের চেয়েও সুন্দর।
“তোর ভাবনার জগতে বুঝি আমার অবস্থান আছে? সেখানে কত্তকত্ত মানুষ।
“শুধু তুই।
“ঢপ মারাস না।
“কপালের টিপটা একটু সোজা করে দে? বাকা হইছে।
“তুই দিয়ে দে , আমি পারিনা।
রিমন কি করবে বুঝতে পারেনা। চারপাশে তাকায়। অনেক মানুষ। মুন্নি রিমনের দিকে তাকায়। রিমন মুন্নির কাছাকাছি চলে আসে। কপালের টিপটা আলতো করে ছুয়ে দেয়। মুন্নি কেঁপে ওঠে। ক্যামেরায় বন্দী হয়ে যায় ওদের এই ছোট মুহূর্তটুকু। টিপটা পরানো শেষ হলে বরপক্ষের একটা ছেলে বলে।
-ভাইয়া আপনাদের বিয়েটা কবে?
-মানে?
-টিপটাতো দিয়ে দিলেন ,কবুল কবে বলবেন?
বলেই ছেলেটা হাসতে হাসতে চলে যায়। রিমন খানিকটা লজ্জা পায়। মুন্নির দিকে তাকিয়ে দেখে মুন্নি মাথা নিচু করে আছে। ওর মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে আছে। মুন্নি টিপটিপ পায়ে সেখান থেকে চলে যায়। একটু আগের অনুভূতি গুলো মনের ভিতর নাড়া দিয়ে ওঠে। প্রচণ্ড ভালো লাগা কাজ করে মনে। ফাহিমার বিয়ে কার্য শেষ হয়েছে। ও চলে গেছে স্বামির বাড়ি। রাত ১২ টা। ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিমন। ফাহিমার কথা মনে পরছে। রিমনের চোখে পানি। পিছন থেকে মুন্নি রিমনের কাঁধে হাত রাখে বলে। “জানিস আমরা মেয়েরা চাইলেও সবকিছু পারিনা। এই দেখ ফাহিমা চলে গেলো ,অথচ মেয়েটার ইচ্ছে ছিলো তোদের সাথে থাকতে।
“আমার বোনকি ভালো থাকবে মুন্নি। “অনেক ভালো থাকবেপাগল। চিন্তা করবি না একদম।
“কত ঝগড়া করতাম বোনটার সাথে ,অথচ দেখ আজকে কত কান্না করলো। চলে গেলো আমাদের ছেড়ে।
“ওই রিমন একেবারে কি চলে গেছে। আবারতো আসবে।
“হুম ,খুব মিস করছি বোনকে। “আচ্ছা আমিওতো একদিন চলে যাবো, আমাকে মিস করবিনা।
“তুই যাবি মানে , তুই কোথায় যাবি।
“ফাহিমার মতন আমাকে তো একদিন যেতে হবে। রিমন চুপ করে আছে। ইচ্ছে করছে মুন্নির হাত ধরে বলতে”কোথাও যাসনা আমায় ছেড়ে। তুই ছাড়া কেউ নেই আমার।” মুন্নি বলল। “রিমন আমার কষ্ট হয়।
“কেনো?
“আমায় আগলে রাখতে পারবি। তোর পায়ের নিচে একটু ঠাই দিবি? কিচ্ছু চাইনা আমি, জাস্ট একটু ভালোবাসার অধিকার দিবি শুধু। পারবিনা দিতে। রিমন কিছু বললনা। মুন্নির হাত ধরলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল.।
“ঐ দূর আকাশে তারাদুটো দেখেছিস। ওরা সারাজীবন পাশাপাশি থাকে ,একসাথে থাকে। কেউ কাউকে ছেড়ে যায়না। আমি এই তারা ,আর পাশেরটা তুই। মুন্নি কিছু বলেনা। ও ওর উত্তর পেয়ে গেছে। রিমনের হাতটা শক্ত করে ধরে। কাঁধে মাথা রাখে। চোখ থেকে একটা ফোটা অশ্রুত গরিয়ে পরে রিমনের কাঁধে। আর এই এক ফোটা অশ্রুর মাঝে লুকিয়ে আছে একটি চরম সুখের ভালোবাসার গল্প!
“মুন্নি এবার মুখ দিয়ে বল।আমাকে ভালবাসিস।
” পারবো না বলতে ,আমার শরম করে।
“আজ বাদে কাল বিয়ে।দু’দিন পর ওয়া ওয়া ওয়া হইবো।এখনো শরম লাগে।
“তখনও শরম লাগবে। একটু পর রিমন হাত’টা টেনে বুকের মধ্যে জড়িয়ে বলল। ” কল্পনার আঁকো ,কার প্রতিচ্ছবি। আমি কি সেই কাব্য যে তোমার উদাস কবি।