বর, ও বর, বর গো। তুমি কোথায় হুম? খুব মিস করছি তো তোমাকে। ধ্যাত তুমি দুষ্টু। দুষ্টু নাহলে কি কেউ নতুন বউকে বিয়ের প্রথম দিনেই এভাবে বসিয়ে রেখে অপেক্ষা করায়।
বাসর ঘরে বসে বসে এসব ভাবছি। আমি তো বসে আছিই। আর আমার বরের আসার কোনো পাত্তাই নেই।কি যে করছে। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো আমাকে রেখে সবাই চলে গেছে। কিছুটা দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। এতক্ষনে আমার সব দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়ে বর সাহেব ঘরে ঢুকলেন।
– আসসালামু আলাইকুম ( আমি
– ওয়ালাইকুম সালাম। আমি আর এসব ভারী পোশাক পরে থাকতে পারছিনা। প্লিজ পাচ মিনিটে চেঞ্জ করে আসি!!
– আচ্ছা যাও।
ওকে যেতে বলে আমি আবার হারিয়ে গেলাম ভাবনার রাজ্যে। ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় আপুর বিয়েতে। আমার খুব শখ ছিল আপুর দেবরের সাথে প্রেম করবো। কিন্তু আপুর কোনো নিজের দেবর ছিলনা। কিন্তু আপুর বিয়ের দিন ও আসে। ও আপুর মামাতো দেবর। আপুর সাথে আপুর শশুর বাড়িতে আমি গিয়েছিলাম। আপুর শশুর বাড়ি আমাদের বাসা থেকে অনেকটা দূরে। ভালোই লাগছিল। কিন্তু একটু লজ্জাও লাগছিল কারন ও আমার পাশের সিটে বসেছিল।
সেই দিনটা ভালো ভাবেই কেটেছিল। পরের দিন ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতেই ওর সাথে দেখা।
– হাই ( ও)
– হেলো ( আমি)
– আপনার নামটা যেন কি
– নিসা। ফারজাহান ইয়াসমিন নিসা। আপনার নাম কি
– সিজান আমান। নিক নেম সিজান
– অনেক সুন্দর নাম।
– থ্যাংক্স। কি করেন আপনি
– পড়ালেখা করি। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। আপনি কি করেন
– পড়ালেখা শেষ করে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছি।
– তাই! আপনি তো জিজুর মামাতো ভাই তাইনা
– হুম। বেষ্ট ফ্রন্ডও বলতে পারেন
– আচ্ছা। আমি এখন আপুর কাছে যায়। পরে কথা হবে।
– ওকে।
আপুর বাসায় সিজানের সাথে হাল্কা পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরে যখন আপু আর জিজু আমাদের বাসায় এসেছিল তখন ওদের সাথে সিজানও এসেছিল আমাদের এলাকা ঘুরে দেখার জন্য। যে কয়টা দিন আমাদের বাসায় থেকেছিল ভালোই কেটেছিল দিন গুলি। ঘুরাঘুরি, মজা করা সব কিছু দিয়েই খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু যাবার দিন সিজান আমাকে প্রপোজ করে ফেলে। আর সেটা জিজু দেখে ফেলে । জিজু খুব বকছিল ওকে।আমারও কেন জানি খুব খারাপ লাগছিল ওকে বকা খেতে দেখে।
– সিজান তুই কি পাগল হয়েছিস? এমনটা জানলে তোকে কখনোই আনতাম না এখানে ( জিজু)
– ভাইয়া আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি খুব। ( সিজান)
তারপর ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিল ওর গালে।
– চুপ। আর একটা কথাও নয়।
– জিজু প্লিজ ওকে মারবেন না। আমিও ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর আমরা তো এমন কিছু করিনি যা খারাপ। ( আমি)
– নিসা তুমি এসব কি বলছো?
– আমি সত্যি বলছি।
তারপর আব্বু এসে আমার গালে আরেক চড় বসিয়ে দিল।
– আর একটা কথাও বলবিনা। আদর দিয়ে দিয়ে বাদর করে তুলেছি না
তোকে ( আব্বু)
নিচের দিকে মাথা করে শুনছিলাম কথা গুলো। টপটপ করে পানি পড়ছিল চোখ দিয়ে। আমাকে কাদতে দেখে আপুই কথা বলে উঠে।
– আব্বু তুমি ওকে প্লিজ আর মেরোনা। ( আপু)
– তুই চুপ থাক ( আব্বু)
– আব্বু আমি ওদের বিয়ে দিতে চায়। প্লিজ তুমি না করোনা ( আপু)
– কিন্তু ও তো বেকার। বিয়ের পর বউকে খাওয়াবে কি ( আব্বু)
– বেকার তো আর সারা জীবন থাকবেনা। (আম্মু)
– আচ্ছা আমি রাজী। কিন্তু যতদিন বিয়ে না হচ্ছে ততদিন ওরা কথা বলতেও পারবেনা আর দেখা করতেও পারবেনা ( আব্বু)
– আচ্ছা ঠিক আছে ( আপু)
তারপর আপু আর জিজু ওদের পরিবার কেও রাজী করিয়ে ফেলে। এক বছর কথা না বলে থাকতে হয়েছে। এক বছর পর ও ভালো একটা জব পেয়ে যায়। তারপর আজকের এই বিয়ে।
এসব ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করলাম সিজান আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে।
– এই এই কি করছো ( আমি)
– তোমাকে কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি। খেয়ালই করছিলেনা
– তাই বলে কোলে নিতে হবে।
– আমার বউকে আমি কোলে নিয়েছি। তাতে তোমার কি?
– হিহি। আমার দুষ্টু বরটা।