এক প্রহর ভালোবাসা

এক প্রহর ভালোবাসা

আচ্ছা ভালোবাসা মানে কী?মনের সঙ্গে মন মিলে গেলেই কি ভালোবাসা হয়!নাকি ঐ মানুষটার কোনো একটা দিক ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা জন্ম হয়! আসলে ভালো না বাসলে কখনও বুঝা যায় না ভালোবাসা কী।ভালোবাসার গুরুত্ব কতটা।সত্যিকার ভালোবাসা মানে না কোনো বারণ,মানে না কোনো জাত-বংশ,ধর্ম -গোত্র,উচু -নিচু কিংবা সুন্দর কালোর ভেদাভেদ রাফির গায়ের রং শ্যাম বর্ণ।সে তেমন ধনীও নয়।সাধারণ মধ্যবৃত্ত পরিবারের একটা ছেলে।

রাফির সাথে সামিরার পরিচয় হয় ফেইসবুকে।সামিরাও নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবার থেকে আসা বর্তমানে মধ্যবৃত্ত পরিবারের মেয়ে।রাফির লেখায় মুগ্ধ হয়ে সামিরা রাফির সাথে বন্ধুত্ব করে।রাফির এভাউটের লেখাগুলোর জন্য সামিরা তার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলো। ওর এভাউটে কি লেখা ছিলো তা সেয়ার করতে চাই না। তবে যা লেখা ছিলো তা বাস্তব জীবনের অনেক কষ্টের কথা। ধীরে ধীরে তাদের পরিচয়। এরপর বেশ ভালোভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়।বন্ধুত্বের সম্পর্ক খুব গাঢ় হয়।এক সময় সামিরা রাফিকে ভালোবেসে ফেলল।

রাফি তখন খুব দুষ্ট ছিলো।তবে ওর মনটা ভীষণ ভালো।ও সামিরাকে প্রায়ই খুব কটু কথা শুনাত।কথাগুলো সে মুখ বুজে সহ্য করে নিত।ওর ধৈর্যের কারণে এবং স্বভাব চরিত্র সব কিছু মিলিয়ে রাফিও এক সময় বাধ্য হয় ওকে ভালোবাসতে।দু’জনেরই মোটামুটি কষ্টের মাঝে দিন চলছিল।এরই মাঝে এক সময় রাফির বাবা মারা যায়।সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে রাফি খুব ব্যস্ত হয়ে যায়।এদিকে সামিরারও চলছিলো পারিবারিক ভাবে নানা রকম সমস্যা। তবুও সে রাফিকে সময় দিত।তবে রাফি তখন এত সময় দিতে পারত না।কেননা মধ্যবৃত্ত পরিবারের সাাবচেয়ে বড় সমস্যা হলো টাকা।টাকার পেছনপেছনে ছুটতে গিয়ে তাদের ক্যারিয়ারের কথা ভাবার তেমন সময় হয় না।সামিরা প্রায়ই বলত, রাফি আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।জীবন সঙ্গী হিসেবে…।তাদের মাঝে বিশাল একটা সমস্যা ছিলো।

সামিরা তার কথাটা পরিবারকে জানাতে পারলেও রাফি জানাতে পারেনি তার মাকে।রাফি প্রায়ই বলত তোকে বিয়ে করতে ইচ্ছে হয় খুব। কিন্তু মাকে কখনও কষ্ট দিতে পারব না।সামিরা মেনে নিতো কথাগুলো।এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলো।একদিন রাফি দু’চোখের জল ফেলতে ফেলতে সামিরার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল আমায় ক্ষমা কর।কিচ্ছু করার নেই।এরপর রাফির বিয়ে হয়ে গেল।সামিরা ধীরে ধীরে রাফির জীবন থেকে সরে যেতে লাগল। এই ভয়ে যদি তার জন্য ওদের সংসারটা নষ্ট হয়ে যায়।এমন কি সে নাম্বারটাও বদলে ফেলল।রাফি মেসেজ করলে কোনো রিপ্লাই দিত না।এভাবে একদিন তাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

প্রায় ১৭ বছর পর রাফির কষ্টের দিনগুলো শেষ হয়ে সুখের দিন শুরু হল।কোনো একটা কাজের জন্য রাফি চট্টগ্রাম যায়। সেখানে তার অ্যাকসিডেন্ট হয়।তাকে যে হাসপাতালে নিয়ে যায় সে আর কেউ নয়। তার ১৭ বছর আগের সামিরা।সে সামিরাকে দেখে বেশ অবাক হয়। সামিরা রাফির ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীর খবর জানতে চাইল।সামিরা জানত রাফির কতজন সন্তান। কিন্তু রাফি সামিরার ব্যাপারে কিছুই জানত না।কেননা কেউ ইচ্ছে করে হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সামিরা তো ইচ্ছে করে হারিয়ে গিয়েছিল।

রাফি যখন ওর ব্যাপারে জানতে চাইল তখন জানতে পারল যে সে এখনও বিয়ে করেনি।আশ্রমে সেবা করে আর বেশ কিছু শিশুদের দায়িত্ব নিয়েই তার জীবন চালিয়ে যাচ্ছে।
সামিরার কথাগুলো শুনার পর রাফির দু’চোখ বেয়ে জল পড়তে লাগল।তার বুঝতে বাকি রইলো না যে সামিরা তাকেই ভালোবেসেছিলো তাই আজও সে বিয়ে করেনি। একটা মেয়ে হয়ে এভাবেই ভালোবাসাটা আগলে রেখেছে আজীবন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত