বউরে বললাম মেয়ে হলে নাম কি রাখবা? বউ একটু অভিমানী স্বরে বলল সবসময় মেয়ে মেয়ে করো কেন! ছেলেও তো হতে পারে। আমি বললাম অবশ্যই হতে পারে না। কারন আমার অনেকদিনের স্বপ্ন আমার প্রথম সন্তান হবে মেয়ে। সে স্কুলে যাওয়ার সময় তার মাথায় একটা ঝুটি বেধে দিবো; দূর থেকে দেখলে তালগাছ এক পায়ে দাড়িয়ে কবিতা মনে পরবে।
বউ মুখ গোল করে শিষ দিয়ে বলল আমি কিন্তু স্বপ্নে কুমির দেখতেছি রেগুলার। এইটা কিন্তু ছেলে হওয়ার সংকেত। ফোস করে শ্বাস ছেড়ে বললাম তুমি স্বপ্নে কুমিরই দেখো আর গড়িয়ালই দেখো আল্লাহ আমাদের মেয়েই দেবেন। আল্ট্রাসোনোগ্রাফী করিয়ে আমার মাথায় হাত। রিপোর্টে এসেছে ছেলে হবে। ভয়ে আমার মুখ শুকনা চালতার মত হয়ে গেছে দাদীর কথা মনে পরে।
দাদী আমার ছোটবেলায় একবার জীদ করে বলেছিল তোর ছেলে হলেই আমি বেশি খুশি হবো। সে যদি তোর বান্দরামির চার আনাও পায় তাহলেই বুঝবি কত ধানে কত চাল। আমার নিজের ভেতরটা তো আমি জানি। চার আনা লাগবে না। দু’আনা পেলেই যথেষ্ট। আমার শুকনো চিন্তিত মুখ দেখে বউ বলল কি জামিল ভাই ছেলের খবর শুনে চুপশে গেলে কেনো? তুমি খুশি হও নি? তারে কেমনে বুঝাই স্ক্রীণে যখন হাল্কা একটু অভয়ব দেখতে পেয়েছি তখন থেকেই আমার সম্পূর্ণ স্বত্ত্বা জানান দিচ্ছে আমি একজন বাবা। আমি তো মহা খুশি কিন্তু দাদীর ভবিষ্যত বাণীর কারনে দুঃশ্চিন্তায় আছি।
বৌয়ের কথা মত সব রেডি করে ফেললাম। সময় আর বেশি বাকি নেই। দেখতে দেখতেই সময় কাছে চলে আসলো। হসপিটালে যেদিন যাব তার আগেরদিন বউ বলল দেখি সব কেনা কাটা করেছো কিনা লিস্ট অনুযায়ী। ব্যাগ থেকে একটা একটা করে জিনিসপত্র বের করছে আর আমার দিকে আগুন চোখে তাকাচ্ছে। আগুনের উত্তাপ প্রতিটা আইটেম বের করার সাথে সাথে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। আমি খুব পোলাইটলি জিজ্ঞেস করলাম বউ কি হয়েছে বলো তো! এত রাগ করছো কেন? প্রোডাক্টের কোয়ালিটি কি খারাপ মনে হচ্ছে?
সে চরম আক্রোশ নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল তুমি জামাকাপড়, টাওয়েল থেকে শুরু করে সব কিছু পিংক আর মেজেন্টা কালারের কেনো কিনেছো? আমার ছেলে বাচ্চা এই অদ্ভুৎ মেয়েলি কালারের জামা জুতা পরবে! কথা বলতে বলতেই উথাল পাথাল ব্যথা উঠে গেলো। ব্যথা নাকি ঢেউয়ের মত উঠছে আর নামছে। তার ব্যথার প্রচন্ডতায় মাথা ভর্তি ভয় আর দুঃশ্চিন্তা নিয়ে আমার ব্যাগ নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালাম। বউ পেছন থেকে চেচিয়ে বললো কই যাও তাড়াহুড়ো করে। আমি বললাম তোমার ব্যথা উঠেছে, তাই তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে যাই।
অতঃপর আমি এক হাতে ব্যাগ শক্ত করে ধরে আরেক হাতে বউকে ধরে রওনা দিলাম। যথাসময়ে নার্স এসে বলল আপনার বাচ্চা ও বাচ্চার মা দুজনেই সুস্থ আছে। এখন যান আজান দিয়ে আসেন। আমি নার্সকে বললাম আগে বাচ্চাকে আমার কোলে দেন, তার সাথে আমার কথা আছে। তারপর আজান দিতে যাব। নার্স অবাক বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বাচ্চাকে আমার কোলে দিয়ে কঠিন নজরে তাকিয়ে আছে দেখার জন্য আমি কি করি।
আমি বাচ্চার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম বাবারে যেদিন প্রথম তোমার অভয়ব দেখেছি সেদিন থেকেই তোমারে আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসি। কিন্তু আমি আজান দিব এক শর্তে তোমার চুলে আমাকে ঝুটি করতে দিতে হবে। সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া পুত্র কি বুঝলো কে জানে, যেইভাবে হাল্কা ঠোট বেকিয়ে হাসলো মনেহল দাদীর ভবিষ্যত বাণী সত্যি করে সে আমার পুরো ষোলাআনা বান্দারামিই পাইছে।