পরিবার

পরিবার

আমি সবসময় খেয়াল করে দেখেছি আমার স্বামী আমার চেয়েও ওর মাকেই বেশী ভালোবাসে!! অফিস থেকে ফিরে আগে মা এর সাথে দেখা করবে তারপর আমার সাথে। আমার জন্য শখ করে কিছু কিনে আনলে ও মায়ের জন্যও কিছু না কিছু আনবেই। ডাইনিং এ খেতে বসলে আগে মায়ের পাতে বড় পেটি তুলবে, তারপর বাবাকে, এরপর আমাকে দেবে, তারপর ওর ছোট বোনকে। সবথেকে ছোট পিছটা নিজেই নিবে যদি ও মা নিজের মাছটা ভেঙ্গে অর্ধেক ওর পাতেই তুলে দেয়। আর খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকেই ও সবার সারাদিনের ফর্দ শুনবে, হালকা গল্প হবে । সত্যি বলতে, খাবার টেবিলে এই পরিবারকে দেখলে খুব স্নিগ্ধ লাগে!!

তবে বিয়ের পর থেকেই মনে হচ্ছে এই সংসারের সব দায়িত্ব আমাদের। অথচ আমার জাটা দিব্যি কত সুখে আছে। ওরা আলাদা হয়ে নিজের সংসার টা নিজেরাই গুছিয়ে নিয়েছে।কখন ও ছুটি-ছাটায় আমাদের ফ্লাটে বেড়াতে আসে। ভীষণ হিংসা হয় আমার…ওরা কতই না সুখে আছে। আমাকে তো হাসান এভাবে একটু সুখে রাখতে পারতো। একটু বিশেষ নজর, আলাদা যত্ন!! মা কি একলা ওর?? না, একটা বেরসিকের বাবার সাথে বিয়ে হয়েছে…অসহ্য!!

সেদিন বারান্দায় বসে চাঁদ দেখছিলাম। হাসান পাশে এসে দাঁড়াল। হাতে কফি, সারা বারান্দা কফির মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে। জানি, এই বিশেষ কফি আমাকে প্যামপারিং করার জন্য না। বরং ও সবার রুমে গিয়ে এই কফি দিয়ে এসেছে। একটু অভিমানের সুরেই বললাম, এই, হাসান?? বল? আমায় কতটুকুন ভালোবাসো? তুমি জানোনা? তবুও মুখে বলোনা,শুনতে ভালো লাগে। ( কচু ভালেবাসো, পরকীয়া নাই সত্য তবে আমায় ও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো না, এইটাও সত্য) আচ্ছা বলবো তার আগে বল তোমার কি মনে হয় তুমি ছাড়া অন্য কোন নারীর প্রতি আমার আগ্রহ আছে??

ওর বলার ভঙ্গি দেখে হাসি পেয়ে গেলো। মুচকি হেসে বললাম, নিজেকে খুব খুব সৌভাগ্যবতী মনে হয়, যখন ফিল করি অন্য ছেলেদের মতন চোখ দিয়ে তুমি নারী দেহকে এক্সরে করনো। আমার বান্ধবীরা বলে তুমি নাকি বিশ্বের একমাত্র বাধ্য জামাই!! সেতু, আমি তো তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি!! তবে এই প্রশ্ন কেনো? না, হবে না, আগে বলো,তুমি দুনিয়ায় কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাস? হাসান বলতে শুরু করলো, সেতু কে ,মা কে,বাবা কে, ভাইয়াকে আর বোনকে!! উহ্! হলো না,বল কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো? বলনা কাকে ?? এই তিন নারীর মধ্যে কোন নারীকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো??

সেতু! মন দিয়ে শোন, তুমি আমাকে ভালোবাস,তাই বলে তুমি কি তোমার মা কে কম ভালোবাসো কিংবা বাবা বা তোমার ভাইকে ? আমাদের হৃদয়টা কে কয়েকটা খন্ডে ভাগ করি।দেখবে যে এক এক খন্ডের কোন এক খন্ডে মা আবার কোনটায় বাবা বা বৌ বা ভাই অথবা বোনের ছবি আছে। আর এই ছোট ছোটখন্ডের কোন একটা খন্ড আঘাত পেলে পুরো হৃদয়েই আঘাত লাগে। এটা কোন কমপারিজম না কাকে বেশি আর কাকে কম।বরং একটা পূর্ণ সিস্টেম যার একটা অংশ যদি কষ্টে থাকে তাহলে পুরো সিস্টেমটাই কষ্টে থাকে।

ওই যে সেদিন তোমার জ্বর হল,তুমি তীব্র জ্বরে ছটফট করছিলে আমি জায়নামাজে গিয়ে কেঁদে তোমার জন্য দোয়া করছি ঠিক যেমন আমার ছোট বোনটা বাচ্চা হওয়ার সময় অসুস্থ হয়েছিল তখন ও কেঁদে কেঁদে দোয়া করেছিলাম।তোমরা সবাই আমার প্রাণ সেতু।ভীষণ ভালোবাসি তোমাদের।ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি বলে ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। যে এত্ত ভালোবাসা বুকে ধারণ করে আর যাই হোক সে আমায় কষ্ট দিতে পারবে না। ভালোবাসার নিয়ে নোংরা তুলনাটা না হয় সিন্ধুকে তালা দিয়ে পদ্মা নদীতে ফেলে দিলাম!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত