দিয়াজের সাথে আমার বিয়ের ষষ্ঠ বছর পূর্ণ হলো।দিনটার কথা তার মনে নেই।প্রথম তিন বছর দিয়াজ দিনটা যেভাবে পালন করতো এখন সেভাবে আর পালন করেনা।বিবাহ বার্ষিকীতে কোন একটা কিছু সারপ্রাইজ হলেও দিতেন।সেটা শাড়ি হোক নাহয় ছোটখাটো ফুল হোক।আগে অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে সরি বলতেন।এখন দেরি হলে দেরি হয়েছে কেন জানতে চাইলে রাগারাগি করেন।বলে যা করছি তোমাদের জন্যইতো করছি।আগের কথাগুলো ভাবতে গিয়ে নিজের ডান হাতটায় তেলে পুড়ে ফেললাম।
শাশুড়ী আম্মাও নেই।উনার মেয়ের সাথে স্বামীর নাকি জামেলা হয়েছে সেখানে গেছে।ফিরতেও রাত হবে।কোনোরকমে রান্না সেরে রুমে এলাম।আমার মেয়ে দীপ্তি তার মেকআপ বক্সটা নিয়ে খেলছে।দিয়াজ লেপটপে কাজ করেছে। দীপ্তির বয়স তিন বছর সাত মাস হলো।মেয়ে আমার হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে আমার পাশে এসে শুয়ে আছে।দিয়াজ নিজের মতো লেপটপে কাজ করে যাচ্ছে। কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে জানিনা আমার হাতের দিখে একটু তাকানোর সুযোগ পাচ্ছেনা।অথচ এই মূহুর্তে তার স্পর্শ খুব মিস করছি।
আগে আমি সামান্য ব্যাথা পেলে দিয়াজ ব্যাথা সারাতে খুব উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়তো।বলতো আমার ব্যাথা লাগলে মনে হয় তার কলিজায় ব্যাথাটা লেগেছে।কথাটা মনে পড়তে ভিতরে কিরকম করে যেন মুচড় দিয়ে উঠলেন।কি রকম পাগল ছিলো দিয়াজ,এখন তার সামান্যও নাই।দিয়াজের হাতের স্পর্শ খুব মিস করছি।তাই দিয়াজকে ইনডাইরেক্টলি বললাম,আমার ডান হাতটা খুব ব্যাথা করছে।মনে হয় অনেক বেশি পুড়েছে।দিয়াজ না তাকিয়ে বললো, মেয়ে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে মাত্র।কিছুক্ষণতো লাগবে সেরে ওঠতে। রাগ হলো খুব।বলে ফেললাম, তোমার কাজ কি আমার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। দিয়াজ কথার উত্তর না দিয়ে লেপটপ বন্ধ করে রুমের বাইরে চলে গেলেন। রাতে ড্রয়িং রুমে শুয়ে কাটালেন।
সকালে শাশুড়ী আম্মা আমার উপর খুব রেগে গেলো।ড্রয়িং রুমে ঠান্ডায় শুয়েছিল বলে উনার ছেলের জ্বর চলে এসেছে।আমি নাকি আমার স্বামীকে কোন সম্মান দিয়না। দিনদিন স্বামীকে অবহেলা করছি।সবসময় ঝগড়াঝাটি করি।আমার বাবা-মাকে তাই বিচার দিলেন।বাবা-মাও আমার কথা না শুনে এক তরফা বকে গেলেন। রাতে দিয়াজ বাসায় ফিরলো রাত করে।আজকাল দিয়াজ বাসায় ফিরলে মুখ থেকে কিরকম একটা গন্ধ বের হয়।তা আমার মোটেও সহ্য হয়না।তা নিয়ে একদফা কথা-কাটাকাটি হয়।এক পর্যায়ে দিয়াজ রেগে গিয়ে কাচের গ্লাস আমার দিখে ছুড়ে মেরেছিলেন।কাচ ভাঙার শব্দে দীপ্তির ঘুম ভাঙ্গে।সে আমার কপালের লাল রক্ত আর ভাঙা কাচের টুকরো গুলো দেখে ভয়ে চিৎকার দেয়।এর পর স্বামীর সুখ বেশিদিন কপালে টিকেনি।
মানসিক নির্যাতন শুরু হয়।অপেক্ষায় ছিলাম একটা নতুন ভোর দেখার।তাও হলো একদিন।দিয়াজ শহরের নাইটক্লাব থেকে তার সঙ্গী খুঁজে নিয়েছে।আর আমাদের ডিভোর্স হয়ে গলো।মেয়ের হাত ধরে নিজের গুছানো সংসার থেকে বের হয়ে গেলাম। এখন আমি একজন সিঙ্গেল মাদার।আমার মেয়ে দীপ্তি আর আমি খুব ভালো আছি।কখনো কোন কিছুর অভাব মনে হয়না।বেশ ভালো কাটছে দিনগুলো। কারো কাছে কোনো চাহিদা নাই,কারো কথাও শোনতে হয়না।প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করে যা পাচ্ছি তা দিয়ে দীপ্তি আর আমার সংসারটা চালাচ্ছি। মাঝেমধ্যে আমার মেয়ে দীপ্তি আমাকে আদর করে বলে, আম্মু,কাছে আয় লক্ষী আমার হাতের ওপর মাথা রেখে শুও। আমি হাসতে হাসতে তাই করি।
দীপ্তি বলে,তোকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের সাথে আমি আড়ি দিলাম। আমি বলি,তাই? দীপ্তি বলে,তোকে কেউ আদর করেনা,ঘুম পড়িয়ে দেয়না,আমি তোকে আদর করে ঘুম পড়িয়ে দিই? আমি বলি, দাও। দীপ্তি তার ছোট্ট ঠোঁটে আমার কপালে চুমু একে দিয়ে বলে,এবার ঘুমা। আমি অনেক খুশি হয়ে চোখের জল মুচে ঘুমের ভান ধরি।মেয়ে আমার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। আমার দীপ্তি বয়সের আগে একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলো।আমাকে বাচ্চাদের মতো শাসন করে।আদর করে।একটু আঘাত পেলে বেশ উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়ে।