শুধু তোমার জন্য

শুধু তোমার জন্য

প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরে দেখি তিথি ব্যাস্ত। সকালে অফিস যাওয়ার সময়ও দেখি সে ব্যাস্ত। কখনো কখনো বড় বাচ্চাটার পেছনে হাতে খাবার নিয়ে ছুটছে। কখনো কখনো ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে তার কান্না থামাচ্ছে। কখনো বা বাসার কাজের খালা আসেনি তাই একাই সব কাজ সামলাচ্ছে। আমার জন্য তার সময় কোথায়? শুধু আমার জন্য না নিজের জন্যও তার সময় কোথায়? ছোট বাচ্চাটার জন্য রাত জেগে জেগে ঘুমের বারটা বাজিয়ে এখন চোখে কালচে দাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কতো সুন্দর চুল ছিল তিথির আহা! কালো কুচকুচে চুল। কি সুন্দর করে খোপা করতো চুলে। বিয়ের পর প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় ওর জন্য বেলি ফুল নিয়ে আসতাম। তার পর সুন্দর করে চুলের খোপায় পরিয়ে দিতাম। তিথি শুধু মুগ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর সুন্দর করে মুচকি হাসতো। তারপর বারান্দায় দুজনে একসাথে বসে থাকতাম। তিথি আমাকে সুন্দর করে কবিতা পড়ে শুনাতো। কি যে সুন্দর কবিতা লিখতো মেয়েটা। আহা! কি সুন্দর ছিল আমাদের দিনগুলো। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল সেই সুন্দর দিন গুলো। দেখতে দেখতে সংসারের বয়স বাড়লো।

তিথি নতুন বৌ থেকে পুরাতন হয়ে গেল। বড় ছেলেটা পৃথিবীতে আসলো। আর আমার সময় গুলো আমাদের সন্তানের হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল তিথির হারিয়ে যাওয়া। তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছোট ছেলেটার জন্ম। আর ব্যাস তিথি পুরোপুরি হারিয়ে গেল। যে তিথি সুন্দর করে আমার জন্য চোখে কাজল পরতো আজ প্রায় এক বছর হতে চললো তিথি কাজল পরে না। আমার জন্য অপেক্ষা করে না। কত বার বাসায় ফিরে দেখেছি সে সোফায় ঘুমিয়ে পরেছে। এসব দেখতে দেখতে আমার তিথির উপর থেকে মায়া উঠে যাচ্ছে দিন দিন। কিন্তু আমি তিথিকে কখনোই কিছু বলি না। অফিস থেকে ফিরলেই সে আমার খাবার দাবার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। রাতে কি খাবো না খাবো, বাচ্চাদের কি লাগবে, মায়ের কি লাগবে, আমার বাড়তি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে কি না এসব টিপিক্যাল সংসারের কথা।

তাই আমিও টিপিক্যাল স্বামীর মতোই ব্যবহার করি। বাসায় আসি এসে ঘুমিয়ে পরি সকালে উঠে অফিসে যাই। এটাই আমার জীবন হয়ে গেছে এখন। ইদানিং আমার বাসায় ফিরতে মন চায় না আসলে কার জন্য বাসায় ফিরবো? সে কি আর আমার জন্য অপেক্ষা করে? এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আমার মা এসে আমার পাশে বসলো। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম, ‘মা তোমার শরীর কেমন? মা আমার দিকে হেসে বললো,  ‘খুব ভাল আছি বাবা। মিজান তকে একটা কথা বলবো? আমি অফিসের ফাইলের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘বলো। কিছু লাগবে মা? কোন সম্যসা? মা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, ‘আমি খুব খুশি জানিস যে তুই তর বাবার মতো না।

মায়ের কথা শুনে আমি ফাইলের দিক থেকে চোখ উঠিয়ে মায়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। মা বলতে শুরু করলেন, ‘তুই তখন অনেক ছোট আর তর বোন তখন আমার কোলে। সারাদিন তদের পেছনে ছুটতে ছুটতে নিজের জন্য সময় বের করতে পারতাম না। আমার সুন্দর চোখে বয়সের ছাপ পরে গিয়েছিল। তর বাবা রোজ বাড়ি ফিরে আমার সাথে চেচামেচি করতো। সময় মতো বাড়ি ফিরতো না। কিন্তু তুই এমন না। তুই বৌমার সাথে কখনোই চেচামেচি করিস না। ওকে বকা ঝকা করিস না। তুই বুঝিস যে তর সন্তান দের দেখা শোনা করতেই বৌমা নিজের চেহারা সময় সব ত্যাগ করেছে। আফসোস সবাই তা বোঝে না। মায়ের কথা গুলো শুনে ভীষণ লজ্জা লাগলো। আমিও তো বাবার মতো একই জিনিস ভাবছিলাম। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার বংশ রক্ষা করতে গিয়ে তিথি কতো ত্যাগ করছে। নিজের সৌন্দর্য, সময়, শখ সব কিছু ত্যাগ করছে। আর আমি কি ভাবছিলাম?

হাতের ফাইল টা বন্ধ করে তিথিকে খুজতে সোফা থেকে উঠে পড়লাম। তিথি কে খুঁজে পেলাম আমার ছোট বাচ্চাটার পাশে। আমি ঘরে ডুকতেই তিথি আমাকে ইশারায় চুপ করতে বললো। আমি আস্তে করে তিথির পাশে গিয়ে বসলাম। তিথি এক দৃষ্টিতে বাচ্চা টাকে দেখছে। আমি আস্তে করে তিথির চুলে হাত দিলাম। চুল গুলো শুষ্ক হয়ে আছে। আমি তিথির পাশ থেকে উঠে গিয়ে তেলের বাটি খুঁজতে লাগলাম। তিথি আস্তে করে আমাকে বললো, ‘কি করছো তুমি? বাচ্চা টা মাত্র ঘুমিয়েছে। আমি তিথির কথায় কান না দিয়ে তেলের বাটি নিয়ে তিথির পাশে গিয়ে বসলাম। ‘তিথি ঘুরে বসো। চুলে তেল দিয়ে দি।

তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, ‘কি হয়েছে? ইদানীং তো আমার সাথে ভাল করে কথাও বলো না আজ হঠাৎ এসব। আমি তিথির কথায় কোন উত্তর না দিয়ে হাতে তেল নিয়ে তিথির চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর তিথির কানে কানে আস্তে করে বললাম,’তোমাকে ভালবাসি। খুব ভালবাসি। কাল থেকে আবার সুন্দর করে চুলে খোপা করবে। রোজ বেলি ফুল এনে দিবো শুধু তোমার জন্য। কারণ তোমায় ভালবাসি।

বিদ্রঃ নিজের স্ত্রী কে ভালবাসুন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত