রিলেশনশিপ

রিলেশনশিপ

রিলেশনশিপ মানে সেটাই যেখানে একজন প্রেমিকা নয় একজন বন্ধু এসে জুটবে, এবং সেই বন্ধু যে বন্ধু আমার সবধরনের অনুভূতিতে আমার পাশে নয় আমার সাথে থাকবে।

রিলেশনশিপ মানে হল সেটাই যেখানে কোনোরকম গোপনীয়তা থাকবে না, যে কথাগুলিকে মজার ছলে আমি একদিন আমার ছেলে বন্ধুদের সাথে একসময় শেয়ার করেছি সেই মজার সাথীও নির্দ্বিধায় আমার স্ত্রীই হবেন। অর্থাৎ রাস্তায় যেতে যেতে কোনো মেয়ে দেখলে স্ত্রীকে বললেন- “দেখ ভাই সেরা,উফ!” আবার স্ত্রীও একইভাবে কোনো ছেলে দেখলে বলে উঠবে- “উফ ছেলেটা সেই, কি বলিস?” এখানে অপরজন পজেসিভের ঝাণ্ডা তুললে কিন্তু হবে না। পজেসিভের ঝাণ্ডা তুললেই আপনি স্ত্রী/স্বামীর অস্তিত্ব প্রমান করলেন কিন্তু বন্ধু-তে স্থানান্তরিত হতে পারলেন না। এটা যদিও বলাটা সহজ, তবে করাটা কঠিন। আগে বুঝতে হবে ও যেটা বলছে সেটা শুধুই মজা, সত্যি নয়। তবেই আপনি সহজেই তার প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে পারবেন।

একসাথে নেশাও করা যেতে পারে কাউন্টারে সেটা যদিও সবাই করে না, অনেকক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় কোনো একজন হয়তো নেশা করে অপরজন নয়, তাই জোর করে নেশা ধরাতে বা ধরতে আমি কখনোই বলব না। তবে কাউন্টারে যদি একসাথে সিগারেট খাওয়া হয় বিশ্বাস করুন এর চেয়ে ভালো স্বামী স্ত্রীর বন্ধুত্বের উদাহরন আর নেই।

বয়সে যতই কম বেশি হোক একে অপরকে ‘তুই’ বলাটা এবং খিস্তি দেওয়াটা এখানে বাধ্যতামূলক। কারণ বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত হল এখানে ‘তুমি’ চলে না, এবং ভদ্রতা তো নয়ই। তাই এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এধরনের রিলেশনশিপ গুলো দেখতেও ভীষণ কিউট হয়।

স্ত্রীকে পারলে বাইক চালানো শেখান, আগের থেকে জানা থাকলে অতি উত্তম। স্কুটি নয়, বাইকই হতে হবে, আর স্বামী বসবে ব্যাকসিটে। বিশ্বাস করুন এর থেকে সেরা বন্ধুত্ব হয়তো নেই বলতে গেলে। জাস্ট ভাবুন স্ত্রী জিন্স আর কালো রঙের লেদার জ্যাকেটটা পরে যখন রয়াল এনফিল্ডের প্রথম কিকটা মারবে, তখন আপনার সহ গোটা রাস্তার হৃদয়টা কেঁপে উঠবে। পাড়া প্রতিবেশীরা বাড়ির ব্যালকনি থেকে উঁকি ঝুঁকি মারবে, ঐ ব্যালকনি থেকে এই ব্যালকনিতে কথা চালাচালি হচ্ছে- “দ্যাখো নতুন বিয়ে করা বৌ কেউ বলবে? আজকালকার দিনের মেয়েরা সব এই ব্যালকনি থেকে- “অ্যাঁ কি? কিছু শুনতে পাচ্ছি না দিদি।” শুনতে পাবে কি করে, আপনার স্ত্রী তখন বুলেটকে নিউট্রালে রেখে এক্সলেটরটা মাতিয়ে দাবাচ্ছে। মাঝরাস্তায় স্ত্রীর হাতে এনফিল্ড যখন উর্দ্ধগতিতে, আপনি পিছনে বসে- “আসতে চালারে ওয়ারা!”

অনেকেই ভাবি যে প্রেমের থেকে বন্ধুত্ব বড়, কিন্তু আসলে কি জানেন জীবনসঙ্গীর থেকে বড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক এজগতে আর হতেই পারে না।আমরা স্ত্রী-কে বা স্বামী-কে বন্ধুত্বের নজরে দেখলেও এই সমস্ত কিছু করে উঠতে পারি না যেগুলো একটা ছেলে তার ছেলে বন্ধুদের সাথে নির্দ্বিধায় করে থাকে। তাই স্ত্রী-কে কিংবা স্বামীকে সোকলড্ বন্ধু হিসেবেই দেখি, প্রকৃত বন্ধু করে তুলতে পারি না।

অনেকেই ভাবি যে প্রেমের থেকে বন্ধুত্বের আয়ু বেশি, কিন্তু ভেবে দেখুন আপনার স্কুল লাইফের সব বন্ধুরা আজও কি আছে? নাকি কলেজের বন্ধুরা আছে? স্কুল কলেজ বা অফিসের বন্ধুরা ঐ স্কুল কলেজ বা অফিস শেষ হওয়ার আগে পর্যন্তই টেকে, পরবর্তীকালে তাদের সবার জীবনেই অন্য ব্যস্ততা চলে আসে এবং বন্ধুত্ব সেখানেই শেষ হয়ে যায়, আবার তারপর নতুন অপরিচিত মুখগুলি আমাদের বন্ধু হয়ে আসে। কিন্তু স্ত্রী কোথায় আর যাবে সংসার ছেড়ে? সেতো মৃত্যু পর্যন্ত আপনার পাশেই থাকবে। তাই স্ত্রীর থেকে বড় বন্ধু এই জগতে হতে পারে না। প্রেমের থেকে বন্ধুত্বের আয়ু অবশ্যই বেশি যখন আপনি প্রেমকে বন্ধুত্বের আসনেও রাখবেন।

দিনের শেষে একছাদের নীচে শারীরিক সম্পর্ক মানেই সংসার নয়, শরীর বাদেও ছাদের বাইরের স্বাধীন পৃথিবীটাও অনেক বড়। তাহলে সংসারের চারদেওয়ালে দৈনন্দিন সাংসারিক নিয়মের দায়বদ্ধতায় কেন তার স্বাধীনতা কেড়ে নেবেন? মেয়েটার প্রিয় বন্ধু হয়ে সংসারের চার দেওয়াল ছিঁড়ে তাকে নিয়ে সারা পৃথিবী চষে ফেলতে কি খুব সমস্যা?

‘স্ত্রী’ কে ‘স্ত্রী’ ভাবি বলেই মেয়েরা সংসারে কেবলমাত্র পরাধীনতারই স্বাদ পায়, মুক্তির বা স্বাধীনতার নয়, যেটা সে বাপের বাড়িতে পেত। অফিস থেকে ফিরে ‘ওগো’ ‘কৈগো’ ডাকের থেকেও প্রিয় “কৈ রে বালটা?” ডাকটা। কারণ এই ডাকটার মধ্যে প্রান লুকিয়ে থাকে। আপনার শুনতে অদ্ভুত লাগলো তাই এটা হল আপনার কাছে সংসার, যেদিন এটা স্বাভাবিক মনে হবে সেদিন ‘সংসারটা’ ‘স্বাধীনতা’ মনে হবে। সেদিন আর কোনো মেয়ে চোখের জলে বাপের বাড়ি ছাড়বে না, লাফাতে লাফাতে নিজের বাড়িই আসবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত