-তোমাকে না বলেছি আমাকে মাঝরাতে কখনো নক দিবা না?
-আপনি অনলাইনে থাকলেই আমার নক দিতে ইচ্ছে করে যে!
-ব্লক নামের একটা জিনিষ আছে। চিনো?
-না।চিনতেও চাই না।
-কালকে স্কুল আছে তোমার। ঘুমাও মুনিয়া।
-আপনি কখনো আমাকে ব্লক করতে পারবেন না।জানি আমি।
-জানলে ভালো।
-আপনার প্রেমিকা তো বহু আগেই অফলাইন হয়ে গেছে।আপনি এখনো সজাগ যে! মান অভিমান হয়েছে আবার?
-এইসব ব্যাপার নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই।নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলো না।
-আমার লিমিট আপনি বেধে দেয়ার কে?
-কেউ না। কিন্তু ব্যাপার টা যখন আমার পারসোনাল, আমি সেখানে নিষেদ্ধাজ্ঞা জারি করতেই পারি।
-পারসোনাল!! ভেরি ফানি।
-ফানির কি হলো?
-কিছু না। আপনাদের বিয়ের শপিং তো কমপ্লিট, তাইনা?
-হুম।
-আপনি নাকি আপনার ভাবী স্ত্রী কে নীল বেনারসি কিনে দিয়েছেন? বলেছেন তাকে নাকি মানাবে ভালো!
-হুম।যে আমার প্রিয় মানুষ তাকে নিজের প্রিয় রংয়েই সাজাতে পছন্দ করি।
-আচ্ছা আমাকে কি নীল রং মানাবে না? বলো না! আমাকে নিজের পছন্দে একটা শাড়ি কিনে দিবে প্লিজ! তোমার বিয়ে তে পড়বো।
-মুনিয়া তুমি আবার আপনি থেকে তুমি তে চলে গেছো। এক কথা কয়বার বললে মনে থাকবে তোমার।
-সরি ভাইয়া।আমার খেয়াল থাকে না একদম।আর বলবো না তুমি।
-মনে থাকলে ভালো।
-আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব শান্তি লাগে আপনার।তাইনা?
-মুনিয়া তোমায় একটা কথা বলি?
-হ্যা হ্যা। বলুন!
-আমি জিনিকে খুব খুব খুব ভালোবাসি।
-জানি। আপনার জন্য ও হয়তো অন্য কারো মনে কোনো বিশেষ অনুভূতি আছে!
-তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউরড একটা মেয়ে।সব জানো,বুঝো। তারপর ও কেন এমন ছেলেমানুষি করো বলো তো!জিনি জানতে পারলে কষ্ট পাবে খুব।
-জানি না।কিচ্ছু জানি না আমি।
-জানতে হবে না।তোমার কাজ এখন শুধু মন দিয়ে পড়াশুনা করা।অকে! সময় আসুক।আমরাই তোমার যোগ্য রাজপুত্রকে খুঁজে বার করবো।কথা দিলাম।
-লাগবে না।আমি নিজেই পারবো।
-তাহলে তো আরো ভালো।গুড নাইট।শুয়ে পড়ো।
-হুম।গুড নাইট।
টেবিলল্যাম্প টা বারবার জ্বালাচ্ছে, বারবার নিভাচ্ছে মুনিয়া। চারপাশ টা অসহ্য রকমের বিরক্তিকর লাগছে।আজকে বাসায় ফিরার পর,আপুর কব্জিতে দুইটা গাঢ় লাল দাগ হয়ে ছিল।মা কিসের দাগ জিজ্ঞেস করায় আপু চমকে উঠে ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায় ।সাদিক ভাইয়া হাত ধরে রাস্তা পার করে দেয়ায় আংগুলের চাপে নাকি অমন দাগ হয়ে গিয়েছিল। এটা শুনার পর, সময়ের সাথে সাথে মুনিয়ার মনের অস্থিরতাটাও ক্রমশ বেড়েই চলেছে।সাদিক ভাইয়া,আপুর হাত ধরেছে?! কেন ধরলো? অবশ্য দুদিন পর যাদের চার হাত এক হয়েই যাবে,তাদের হাত ধরাধরিতে তো কোনো নিষিদ্ধতা থাকে না। মুনিয়া মাথাটা ঘুরিয়ে ডানপাশ ফিরে শুলো।জিনিয়ার মুখের দিকে তাকালো খুব মনোযোগ দিয়ে। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে কি গভীর ঘুমটাই না ঘুমাচ্ছে জিনিয়া! চেহারার কোনোখানেই অস্থিরতার ছিটেফোঁটা নেই।
-আপু..এই আপু! তুই সাদিক ভাইয়াকে আমায় দিয়ে দিবি? প্লিজ দিয়ে দে না।আর কখনো কিচ্ছু চাইবো না তোর কাছে।
-হুউউম্মম….
একটু নড়ে উঠলো শুধু জিনিয়া।মুনিয়ার কথা তার কানে ভালোমত পৌঁছায় নি।পৌঁছালে এতক্ষণে সর্বনাশ বেঁধে যেত। মুনিয়া চায় না কোনো সর্বনাশ বাঁধুক। একদম ই চায় না। কিন্তু তার কথাগুলো আপু শুনতে পেলে তার মনের অস্থিরতা টা হয়তো কিছুটা হলেও কমতো।
আবারো দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল মুনিয়া।তার সাথে ঘুমের শত্রুতা খুব বেড়েছে ইদানীং। সারারাত কেটে যায়, চোখের পাতা কিছুতেই এক হয় না।সামনে পরীক্ষা,সিলেবাস বাকি আছে কিছু এখনো। এই সময়ই আপুর বিয়েটা লাগতে হলো!সবকিছু একসাথে এসে জুটেছে কপালে। হয়তো ভাগ্যও এখন আর চায় না,সে একটু হলেও শান্তি পাক,ভালো থাকুক। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসলো ভিতর থেকে। চোখ বন্ধ করে প্রাণপণে ঘুমকে ডাকতে লাগল মুনিয়া।