একটি নতুন সম্পর্ক

একটি নতুন সম্পর্ক

প্রতিদিনের মতন সিয়াম আজকেও পুকুর পাড়ে যায়। এইটা সিয়ামের কাছে এখন নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাড়িয়ে।
আগে এমনটা ছিলো না সিয়াম, এখন এমনটা হয়ে গেছে সিয়াম। কারন হলো রুবি।
.
রুবি মেয়েটা সিয়ামের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে,সিয়ামকে একটুও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।
রুবিকে এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন এই পুকুর পাড়ে আসে সিয়াম। রুবিকে এক পলক না দেখতে পেলে সিয়ামের
রাতে ঘুম আসে না। সিয়ামের মনের ভেতরে শুধু রুবি আর রুবি।
..
মেয়েটাকে সিয়াম অনেক ভালোবেসে ফেলেছে । শুধু বলতে পারলেও হলো। এখনো রুবিকে সে ভালোবাসার কথা বলে নি।
রুবিকে ভালোবাসি বলার পরে রুবি কি উত্তর দিবে সেটাও ভাবার বিষয়। যদি না বলে দেয়। না বললেও আমি ওর পিছন ছাড়বো না,অাঠার মতন
লেগে থাকবো। সিয়াম এইসব ভাবে আর মনে মনে কথা গুলো বলে।
.
সেই জন্য সিয়াম রুবিকে ভালোবাসার কথা না বলে এভাবে প্রতিদিন দেখে। এভাবে তো আর সিয়ামের কোন সমস্যা হচ্ছে না।
দিনের গতিতে দিন চলছে আর সিয়ামের গতিতে সিয়াম।
.
সিয়ামের নিজের প্রতি অনেক বিশ্বাস। সিয়াম ভাবে তার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে রুবি একদিন ঠিকি তার ভালোবাসা বুঝবে।
তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলবে , পাগলটা এতো ভালোবাসো তাহলে মুখে বলতে পারো না কেনো।
বুদ্ধ কাউকে ভালোবাসলে বলে দিতে হয়।
.
মনে মনে এমন কিছু ভাবতে থাকে সিয়াম,আর তার চোখ দুটো থাকে পুকুরের ওই পাড়ে। ওখান দিয়ে রুবি তার ফুফির বাসাই প্রতিদিন যায় আসে।
আর এই সময়ে সিয়াম তাকে এভাবেই দেখে। মাঝে মাঝে রুবি পুকুরের ওপার থেকে সিয়ামের দিকে তাকিয়েও থাকে।
যখনি রুবি সিয়ামের দিকে তাকায় তখন সিয়াম মাথা নিচু করে মোবাইল টিপে। একদম ভদ্র ছেলের মতন। মনে হয় যে সিয়াম পুকুর পাড়ে মাছ ধরতে এসেছে।
রুবিরর জন্য আসে নি। কিন্তু রুবি ঠিকি বুঝে,কি জন্য সিয়াম ওখানে আসে প্রতিদিন।
.
প্রতিদিনের মতন অাজকেও অনেক বসে থেকে রুবির দেখা পাই না সিয়াম। রুবি আজকে আর বাড়ি থেকে বের হয়না।
সিয়াম বসে থাকে ওখানে, সন্ধা হয়ে রাত হয়ে যায়
, তখনও রুবি বাড়ি থেকে বের হয়না ,আর তখন সিয়ামের মনটা খারাপ হয়ে যায়। একদিনও সে রুবিকে না দেখে বাড়ি ফিরে না।
কিন্তু আজকে রুবিকে না দেখে সে বাড়ি চলে আসে।
.
বাড়িতে এসে না খেয়ে বিছানাই গা এলিয়ে দেয় সিয়াম। সিয়ামের মা সিয়ামকে অনেকবার খেতে ডাকে,কিন্তু সিয়াম বলে দেয় সে আজকে খাবে না।
.
সিয়ামের তো আজকে খেতে ইচ্ছে করছে না, সে খাবে কেমন করে। সিয়ামের মাথায় শুধু রুবি ঘুরপাক খাচ্ছে। মেয়েটাকে এতো ভালোবাসে শুধু বলতে
পারে না। সিয়াম মনে মনে ডিশিসন নেয়, বলে কাঁন্না করা ভালো,কিন্তু না বলে কান্না করা ভালো না। তখনকার মতন কোনরকমে চোখ বুঝে জোর করে
ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে সিয়াম।
.
পরের দিন সিয়াম খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে সিয়াম একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসে,
যেখানে চায়ের দোকান, তার পাশে একটা রাস্তা আছে, সেই চিকন সরু রাস্তা দিয়ে রুবি প্রতিদিন
প্রাইভেট পড়তে যায়। বিকেলে দেখা হয়নিতো কি হয়েছে, এখন অব্যশই দেখা হবে।দোকানদারকে একটি চায়ের অর্ডার করে সিয়াম।
.
দোকানদার সিয়ামকে চা দিয়ে যায়।সিয়াম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই দেখে রুবি আসছে। অন্যদিন রুবির সাথে ওর বন্ধুরা থাকতো,কিন্তু
আজকে সে একা একা আসতেছে।
.
অন্যদিনের চেয়ে রুবি আজকে একটু কম সেঁজেছে । তবে অাজকেই রুবিকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে।
কপালের মাঝখানে কালো টিপ,দুই হাতে দুই রংয়ের কাচের চুড়ি, ঠোটে হালকা করে লিপিষ্টিক, আর চুল গুলো
আজকে ছেড়ে রেখেছে। মাঝে মাঝে সামনের চুলগুলো মুখের উপরে
এসে পড়ছে,আর ডান হাতদিয়ে রুবি বিরক্তি নিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে।  মনে হয় সে আজকে বেশি বিরক্ত চুল গুলো নিয়ে।
একটা কথা সত্য মেয়েরা সাঁজলে মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে,আর মেয়েরা সাঁজতেও জানে।
আবার অল্প সাঁজলেও কিছু মেয়েদের সুন্দর লাগে। আসলেই আল্লাহ মেয়েদের যথেষ্ট রুপ আর সৌন্দর্য দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
.
সিয়াম মানিব্যাগে রাখা চিঠিটি বের করে হাতে নেয়। আজকে এই চিঠিটা দেবার উত্তম সময় বলে মনে করে সিয়াম।
বোকা ছেলেরা সবসময় সুযোগ খুঁজে, আর সুযোগ বুঝেই কাজ করে। সিয়ামের এটাই বড় একটা সুযোগ প্রেম নিবেদন করার।
,
বোকা ছেলেগুলো কখনোই মেয়েদের সামনে যেতে চাই না,কারন তারা খুব লজ্জা পাই। লজ্জার কারনে অনেক সময় নেয় প্রিয়মানুষকে
ভালোবাসার কথা বলতে। আবার এই বোকাছেলে গুলোই বেশি কষ্ট পাই।
.
সিয়ামও বোকা ছেলেদের দলে। নাহলে এতোদিনে অনেক অাগেই বলে ফেলতে পারতো তার ভালোবাসার কথা। কিন্তু সে পারেনি।
.
.
রুবি চায়ের দোকানকে যখনি অতিক্রম করে চলেযায়, সিয়ামও তখন রুবির পিছু নেয়। রুবি দুই কদম এগিয়ে গেলে সিয়াম এক কদম এগিয়ে যায়।
.
হটাৎ করে রুবি পেছনে ফিরে তাকাই। রুবির পেছনে ফিরে তাকাতেই সিয়াম হতভম্বের মতন হয়ে দাড়িয়ে থাকে।
সিয়াম একটু ভয় পেয়ে যায়।
.
-কিছু বলবেন (রুবি)
> না (সিয়াম)
-রুবি আর কোন কথা না বলে আবার চলে যেতে থাকে।
> এইযে শুনুন (সিয়াম)
-জ্বী (রুবি)
> কিছু বলবো (সিয়াম)
-বলেন কি বলবেন (রুবি)
> মুখে বলতে পারবো না,তবে যা বলবো
কাগজে লিখে রেখেছি(সিয়াম)
-মুখে বলতে পারবেন না কেনো(রুবি)
> মুখে বলার মতন সাহস এখনো হয়নি(সিয়াম)
-ওরে আমার সাহস দেখানো ছেলেরে।
এতো বড়ো হয়েছেন কি কলাগাছ খেয়ে।
(রুবি)
> হ্যাঁ।
-কিইইইই?
> না মানে এইযে কাগজ, আমি এখন আসি।
-কই যান আপনি।
> একগ্লাস পানি খাবো,খুব পানি পিপাসা লেগেছে।
-আমার কাছে আছে পানি।
> না মানে আমার একটু কাজ আছে যেতে হবে।
-চিঠিটা পড়ে নিই,তারপর যান। দেখি সাহস করে কি লিখেছেন।
> পড়ে পড়বেন এখন না .
-কেনো।
> পরে পড়লে বুঝতে পারবেন। এখন পড়া যাবে না।
-ওমা সাহস তো দেখছি বেড়ে গেছে।
> না মানে আমি আসি।
-এই দাড়ান দাড়ান শুনে যান।
.
সিয়াম আর কোন কথা না বলে সোজাসুজি চায়ের দোকানে চলে আসে । চায়ের দোকানে এসে সিয়াম কয়েকগ্লাস পানি খেয়ে নেয়।
একদম ভয় পেয়ে গলাটা তার শুকিয়ে গেছে। এখন পানি খাওয়ার পরে একটু ভালো লাগছে সিয়ামের।
.
সিয়াম ওখানে আর না থেমে বাড়িতে চলে আসে। কয়েকদিন আর রুবিদের বাড়ির আসেপাশে যায় না। আর সকালে চায়ের দোকানেও না।
রুবির সামনে আর সহজে পড়তে চাই না সিয়াম।
.
ওদিকে রুবি সিয়ামকে অনেক খোঁজে। কিন্তু সিয়ামের আর খোঁজ পায় না। চিঠিটা দেবার পরে থেকে আর কোন পাত্তাই নাই
সিয়ামের। গাধা ছেলে প্রেমপত্র দিয়েছে অথচ উত্তর না শুনে হাওয়া হয়ে গেছে। রুবি অনেক খোঁজ নেবার পরে জানতে পারে
সিয়াম বাড়ি থেকে আর বের হয়না। সারাটাদিন মেয়েদের মতন বাড়িতে থাকে,আর বিকেলের দিকে একটু সময়ের জন্য মাঠে যায়।
রুবিও সুযোগ খুঁজতে থাকে সিয়ামকে হাতেনাতে ধরার। একদম চোর পুলিশের মতন অবস্থা দুজনের।
.
অনান্য দিনের মতন সিয়াম আজকেও বাড়ি থেকে বের হয় মাঠের উদ্দেশ্য করে। কিছুদুর যেতেই হুট করে রুবি তার সামনে এসে
পড়ে। রুবিকে সামনে দেখে সিয়াম আবারো ভয় পেয়ে যায়।
.
-কি ব্যাপার সিয়াম সাহেব।
> কোন ব্যাপার ট্যাপার না ।
-আমাকে দেখে এতো ভয় পান কেনো?
> না মানে,
-কি মানে মানে করছেন পাগলের মতন।
> ভয় পাবো কেনো,কই আপনাকে দেখে ভয়
পাই না আমি।
-ইশরে চেহারাটা যেমন করে
রাখছেন,দেখলেই বুঝা যাচ্ছে ভয় পান আমাকে দেখে।
> কি বলবেন সেটা বলেন। আমার কাজ আছে।
-চিঠিতে কি লিখছেন।
> পড়েন নি।
-পড়েছি তো।
> তাহলে তো বুঝতে পারছেন।
-বুঝিনী বুঝাই দেন।
> পারবো না বুঝাতে।
-কেন পারবেন না।
বউ হলে তো ঠিকি বুঝাই দিতেন।
> আপনি তো আর আমার বউ না।
-তাহলে চিঠিতে বলছেন কেনো,
আমার বমি বমি ভাব হওয়ার কারন হতে চান।
> হতে চাই বলেই তো বলেছি।
-হু, বিয়ে না করতেই বাবা হতে চান। আর চিঠি দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেছেন।
> হুম।
-কিইইইইই।
> দিবা কি সেই বমি বমি ভাব হওয়ার কারন হতে।
-ইশরে সখ কত।
>অনেক সখ।
– অনুমতি দিলাম।
> সত্যি।
-হ্যাঁ।
> তবে কিছু শর্ত আছে।
– কি কি শর্ত।
> এখন যেমন বোকা আছেন,সারাজীবন এমন বোকা থাকতে হবে।
এক কথায় আমার বোকা জামাই হয়ে থাকতে হবে। আর যা বলবো শুনতে হবে।
– আমি রাজী।
>ওরে আমার বোকা জামাই রে,তাহলে এখন
প্রপোজ করেন আমাকে।
-কেনো ।
> বারে ভালোবাসেন আমাকে,আর প্রপোজ করে সেটা বলতে হবে না বুঝি।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি রুবি।
> এভাবে না ।
-কিভাবে।
> চেষ্টা করতে থাকেন।
-রুবি আমি তোমার স্বামী হতে চাই।
> হয়নি।
-আমি তোমাকে ভালোবাশি রুবি,অনেক ভালোবাসি।
> হয়নি।
-রুবি,আমি তোমার বাচ্চার বাবা হতে চায়।
> হয়নি।
-তাহলে কিভাবে করবো।
> সেটা কি আমি বলে দিবো।
-শোনো বালিকা আমি তোমার বাবা ডাক হওয়ার কারন হতে চাই।
> ওরে বুদ্ধ বাবা না,মা ডাক হওয়ার কারন হবে।
-তাহলে কি তুমি দিবা সেই মা ডাকার কারন হতে ।
> হুম দিবো।
তবে ভালোভাবে প্রপোজ করতে পারনি এখনো।
– তাহলে কালকে শিখে এসে করবো।
> কার থেকে শিখবে।
– বন্ধুদের থেকে শিখে নিবো।
> হি হি হি হি।
– হাঁসছো কেনো।
> শিখতে হবে না,সারাজীবন পাশে থেকে ভালোবাসলেই হবে।
-এইযে তোমার হাতটি ধরলাম আর ছাড়বো না
কোনদিন।
> পাগল একটা।
– তোমার পাগল।
> জানি তো,এখন চলো।
– কোথায় যাবো।
> তুমি মাঠে খেলবে,আমি বসে থেকে দেখবো, আমার বোকা জামাইটা কেমন খেলতে পারে।
-আচ্ছা চলো।
.
দুইজন দুজনার হাত ধরে এক কদম দু কদম করে এগিয়ে চলেছে সেই চেনা শহরের চিকন রাস্তা দিয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত