সত্যিকারের ভালোবাসা

সত্যিকারের ভালোবাসা

ঘটনাটা ভালেন্টাইন্স ডে এর আগের দিন। ছুটির সময় হয়ে গেছে, তাই স্টুডেন্টকে কিছু পড়া দেখিয়ে দিয়ে বললাম এগুলো যেন শেষ করে রাখে। ও তখন বলল, “মিস, কালকে ছুটি দিবেন না?”

-“কালকে তো কোন বন্ধ নেই! ছুটি চাচ্ছো কেন?” -“মিস, কালকে তো ভালেন্টাইন ডে।” আমি অবাক হলাম, এখনকার বাচ্চারা ভালেন্টাইন ডে কে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভাবে যে, সরকারী ছুটির তালিকায় নিয়ে গেছে। ওকে বললাম, “ভালেন্টাইন্স ডে মানে কি?”

-“ভালোবাসা দিবস।”
-“ভালোবাসা দিবস মানে কি?”

এবার হাজার ভেবেও ও কোন জবাব দিতে পারলো না। ওর পাশেই ওর নানা- নানু বসে আমাদের কথা শুনছিলেন। ওর নানু বললেন, “আজকালকার সময় ভালোবাসতেও দিন লাগে। অথচ আমাদের সময়ে প্রত্যেকটা দিনই ছিল ভালোবাসার।” কথাটা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকালাম। কত গভীর একটা কথা! আমার আগ্রহ দেখে উনি বলতে শুরু করলেন, “৪০ বছরের সংসার আমাদের। সাইফের নানা (স্টুডেন্টের নানা) প্রায়ই আমাদের বাসায় এসে বসে থাকতো।

বাবার স্টুডেন্ট ছিলেন উনি। বাবা উনাকে খুবই পছন্দ করতেন। পড়াশোনার জন্য প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন। বাবাও স্নেহ করে তাকে প্রায়ই বাসায় আসতে বলতেন। তখন বুঝিনি কিন্তু এখন বুঝি উনি কি কারণে প্রায়ই বাসায় আসতেন! উনি যখন বাসায় আসতেন তখন আমি তার আশেপাশে থাকতাম না, উনি ভাবতো আমি অহংকার করি কিন্তু আসলে লজ্জায় উনার সামনে যেতাম না। উনিও মুখ ফুটে কিছুই বলতেন না। হঠাৎ একদিন বাবার মুখে শুনলাম উনার চাকরি ঠিক হয়েছে, বিয়েশাদী করবেন পাত্রীও ঠিক হয়ে গেছে। একথা শুনে তো আমি রেগে আগুন। পরদিন উনি বাসায় আসলে আমি রেগে ধমক দিয়ে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিছিলাম। পরে বাবা বিষয়টা খেয়াল করলেন। আমার শ্বশুরের সাথে কথা বললেন। যেহেতু উনি বাবার পছন্দের পাত্র ছিলেন তাই বিয়ে হতে আর কোন সমস্যা হয়নি।”

এই বলে নানু থামলেন।
নানা বললেন, “দেখছো, আমাদেরও লাভ ম্যারেজ ছিল!” নানু লজ্জা পেয়ে বললেন, “কিসের! অ্যারেঞ্জ ম্যারেজই তো!” নানা আবার বললেন, “আমাদের ৪০ বছরের সংসারে কখনও ঝগড়া হয়নি, তবে মান অভিমান হয়েছে। একারণে যে কতবার না খেয়ে থেকেছি দুজনে হিসাব নেই।” বলেই হাসলেন নানা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?” তখন আবার বললেন নানা, “তোমার নানু আমার আগে কখনওই খেতে বসতো না। আমাকে আগে ভাত বেড়ে যত্ন করে খাওয়াতো, তারপর আমার খাওয়া শেষ করে উঠে গেলে সেই প্লেটে ও খেতে বসতো। মাঝে মাঝে অভিমান করে আমি খেতাম না, তাই ওর ও খাওয়া হতো না!”

নানু লাজুক মুখে বললেন, “উনি এতো কষ্ট করতেন তাই উনি না খেলে আমার গলা দিয়ে ভাত নামতো না। উনি খাওয়ার আগে আমি কিছু মুখেও দিতাম না। এমনকি লবণ চেখে দেখার জন্যও মুখে নিতাম না। খাবারে লবণ কম হোক বা তরকারি ঝাল হোক তোমার নানা এসব নিয়েও কখনও আমার উপর চোখ গরম করেন নাই। আল্লাহর রহমতে সত্যিই সুখে কাটছে এই ৪০ বছর।” উনাদের কথা শুনে আমার মুখে কোন রা এলো না। এতোদিন টিভি নাটকে ভালোবাসার গল্প অনেক দেখেছি। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসার গল্প এই প্রথম শুনলাম। সবাই ভালো থাকুক তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত