‘এতো রাতে অনলাইনে কেন ? যাও ঘুমাও!’ রাত দুইটার সময় বড় ভাইয়ার বন্ধু দিয়াজের এরকম মেসেজ পেয়ে খুশিতে চোখে পানি চলে আসলো। মেসেজটায় সে ধমকের স্বরে বলেছে ঠিকই কিন্তু তার এরকম আদেশে মনে হয়েছে আমি তার আপন কেউ! আমি তো চাই তার আপন কেউ হতে। কারণ দিয়াজকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ভাইয়ার বন্ধু হওয়ায় প্রায় আসতো আমাদের বাসায়! কেমন আছো?
পড়াশোনা কেমন চলছে এর চেয়ে বেশি কোনদিন কিছু বলেনি । কিন্তু আজ কি হলো তার? এই মেসেজটা কিসের ইঙ্গিত? সে কি আমাকে? আমি রিপ্লাই করলাম, ‘আসলে আমি তো গল্প লিখি। পাঠকদের কমেন্ট গুলো পড়ছিলাম।’ মেসেজ সেন্ড হওয়ার সাথে সাথে সিন করে লিখলো, ‘যাইহোক আর কোনদিন যেন তোমাকে এতো রাতে অনলাইনে না দেখি।’ কথাটার মধ্যে তীব্র রাগ আছে বুঝতে পারলাম। এতো রাতে সে আমাকে অনলাইনে সহ্য করতে পারছে না এটাও বুঝতে পারলাম। অন্য কেউ এরকমটা বললে আমি অনেক কথা শুনিয়ে দিতাম। আমার ভালোবাসা আমাকে কথাটা বলায় পুলকিত হয়ে গেল আমার মন! আমি শুধু বললাম,’আচ্ছা এরকমটা আর হবে না।’
এতোদিন নিজেকে সংযত রাখলেও তার আস্কারা পেয়ে আমি কেমন জানি চঞ্চল হয়ে উঠলাম। সেদিনের পর থেকে আমি নিজে থেকেই তাকে মেসেজ দেওয়া শুরু করলাম। কিন্তু তার উত্তরগুলো ছিল বড়ই সাদামাটা। মন ভরছিলো না আমার। সেদিনের কথাগুলোর মতো প্রাণ ছিল না। আমি যেই প্রশ্ন করতাম তার উত্তরটাই দিতো খুব ছোট করে। সেদিনের কথাগুলোর সাথে কোন মিল পাচ্ছি না। মনের ভিতরে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হতে লাগলো। মনে মনে তাকে বললাম, কি হয়েছিল সেদিন তোমার আর আজ কি হলো? কেনই বা আমাকে চঞ্চল করে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলে? ভালোই তো ছিলাম এতোদিন!এখন যে আর শান্তি পাচ্ছি না!” তারপর থেকে তাকে মেসেজ আর দিলাম না । কিন্তু সারাদিন ফেসবুকে থাকা শুরু করলাম তার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। দুইদিন গেল তিনদিন গেল তার মেসেজ পেলাম না। সেও অনলাইনে আসতো আর যেতো। চারদিনের দিন পর তার মেসেজ পাওয়া গেল। আমি যে কতটা শান্তি পেয়েছিলাম বলে বুঝানো যাবে না। কথাটা প্রায় প্রথম দিনের মতো।
দিয়াজ লিখেছে ,’সারাদিন এতো অনলাইনে কি করো তুমি?’ ‘একজনের মেসেজের অপেক্ষা করি।’ সিন করে আর রিপ্লাই দিলো না। সে কি মাইন্ড করলো? নিজের কপালে করাঘাত করলাম! আর না পেরে আমি মেসেজ দিয়ে বললাম, আচ্ছা আপনি কি ফেসবুকে থাকা পছন্দ করেন না? ‘করি তবে সীমার বাইরে যাওয়া পছন্দ করি না।’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা আমি যদি কোনদিন সীমার বাইরে যাই আমাকে কি করবেন? থাপ্পড় দিবেন?’ এরপর দিয়াজ যা মেসেজ দিল আমার কলিজা ছিড়ে গেল, ‘তোমাকে থাপ্পড় দিতে যাব কেন আমি? তুমি কি আমার কাছের কেউ?’ আমি আর মেসেজ দেওয়ার শক্তি পেলাম না।
অনেকক্ষণ পার হয়ে গেলে দিয়াজ আবার মেসেজ দিল। বলল, ‘রাহি আমি বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসো। তুমি এখনো ছোট আছো। তাই আমার শাসনগুলোকে ভালোবাসা হিসেবে ধরে নিয়েছো। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তাই তোমার আবেগগুলো কে প্রশ্রয় দিও না। তোমার ভাইয়া জানলে খুব কষ্ট পাবে। আর আমার একজন আছে। তাকে খুব ভালোবাস!’ চোখে পানি আর ঠোঁটে এক টুকরো হাসি নিয়ে তাকে মেসেজে বললাম, “আচ্ছা। আপনার একজনের ছবিটা আমাকে দেন তো। দেখি আমি।’ সাথে সাথে যার ছবি সে আমাকে দিল সেটা দেখে মোবাইলটা চেপে ধরে খুশিতে কাঁদলাম। কারণ দিয়াজের একজন আর কেউ না আমি। এরপর দিয়াজের আরেকটা মেসেজ আসল
—শোন আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি শুধু আমার!