অনিলকে প্রথম দেখেছিলাম আমার ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে।সে ছিল পাত্রীর ভাই।খুব ছোট করে কাটা খাড়া খাড়া চুল তার।গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা।ফেস কাটিং গোল। একটা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট আর ফোল্ডিং করে শার্ট পড়ে ছিল।আমরা সোফায় বসেছিলাম।ও আমাদের খাবার সার্ভ করছিল।ও প্যান্টের নীচে গোড়ালির কাছে কয়েকটা ভাঁজ করে রেখেছিল।খালি পায়ে যে ও ফ্লোরে হাটছিল,ওকে যে কি দারুন লাগছিল এক কথায় বলতে গেলে ও প্রথম দেখাতেই আমার অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছিল।যখন ও আমার হাতে শরবতের গ্লাস তুলে দিচ্ছিল,ওর হাতের সাথে আমার হাতের আলতো স্পর্শ লেগেছিল।আমার যেন তখন হৃদয় সাগরে ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছিল।লক্ষ করেছিলাম ওর হাতের নখগুলো ধবধবে সাদা।ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ছুঁয়ে দেই ওর হাতটা আর হাতের নখগুলো।ওর শরীর থেকে একটা সুন্দর পারফিউমের ঘ্রান আসছিল।
ও শরবত দেয়ার সময় আমি চুপিসারেই আস্তে করে একবার লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে ওর শরীরের ঘ্রানটা বুকভরে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।ওর চুলগুলোর দিকে যতবার তাকাচ্ছিলাম মন চাচ্ছিল হাতে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দেই। চোখ বন্ধ করে কল্পনাও করে ফেলেছিলাম যে আমি ওর চুল এলোমেলো করে দিয়েছি আর ও রেগে গিয়ে আমাকে দৌড়োচ্ছে,আমি হাসতে হাসতে বাতাসে উড়না উড়িয়ে দৌড়াতে লাগলাম।উর্নার সাথে উড়ছিল আমার কালো ঘন চুলগুলোও ।হঠাৎই ভাবলাম,আমি দৌড়াচ্ছি কেন?কেন দৌড়াচ্ছি আমি?আমিতো ওর থেকে পালাতে চাইনা।আমিতো তার কাছে ধরাই দিতে চাই।সেটা ভেবেই যেন হাঠাৎ দাড়িয়ে গেলাম।ও দৌড়ের গতি সামলাতে না পেরে আমার গায়ের উপর এসে পড়ে যাচ্ছিল।আমি ওকে থামানোর জন্য ওর দুই বাজুতে শক্ত করে ধরলাম।
ও নিজেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রন করতে পারল।কিন্তু পুরুটা নয়।ওর শরীরের খুব কাছাকাছি তখন আমার শরীর।ওর মুখের খুব কাছে আমার মুখ।ওর নিঃশ্বাসের বাতাস আমার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছিল।আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম।আমার কিছু চুল তখন হাওয়ায় উড়ে উড়ে ওর নাকে মুখ স্পর্শ করছিল।কিছু চুল ওর খোঁচা খোঁচা দাড়ির সাথে আটকে গিয়েছিল।আমিও বুঝতে পারছিলাম যে ও বুক ভরে আমার চুলের ঘ্রান নেওয়ার চেষ্টা করছে।ঐটুকু চুল থেকে আর কিইবা ঘ্রান নেয়া যায়?সে পরিতৃপ্ততা পাওয়ার জন্য আস্তে আস্তে আমার হাত থেকে নিজেকে সড়িয়ে নিয়ে আমার পেছনে গিয়ে আমার দুই বাজু স্পর্শ করে আমার মাথাভর্তি চুলে নাক ডুবিয়ে চুলের ঘ্রান নিচ্ছিল।আমার দেহ মনে তখন অন্যরকম এক প্রশান্তির হাওয়া বইছিল।
কল্পনায় ব্যাঘাত ঘটলো কারো এহেম এহেম কাশির শব্দে।আমি চোখ খুললাম।কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরলাম।যা হোক ভালই হয়েছে কল্পনা এখানে শেষ হয়ে।নতুবা আরো সাংঘাতিক কিছু ঘটে যেতে পারতো। কল্পনায় সাংঘাতিক কিছু না ঘটলেও কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।যেন সত্যি সত্যিই সাংঘাতিক কিছু ঘটিয়ে ফেলেছি।প্রথমে মারাত্নক ভয় পেয়ে গেলাম!এদের কাছে আবার মাইন্ড রিডার যন্ত্র নেইতো!কল্পনায় যে আমি সত্যি সত্যিই সাংঘাতিক কিছু করতে যাচ্ছিলাম,সেটা এরা বুঝে ফেলে আমার দিকে এভাবে হা করে আছে নাতো? আমার চিন্তার সমাপ্তি ঘটল শরবত সার্ভ করা আমার ভালো লাগার মানুষটার কথায়।খুব মিষ্টি করে বলছিল
– শরবতটা খেয়ে নিন। ওর কথা শেষ না হতেই মা বলে উঠল
-কিরে!তুই এখনো শরবত মুখেই দিলি না সবাই তোকে শরবত পান করতে বলছে।কিন্তু তুই কোন রেসপন্স করছিস না।কি কল্পনা করছিলি এত গভীরভাবে? আমি একটু কেশে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম
-কই কিছু নাতো।এইতো খাচ্ছি
বলেই ঢক ঢক করে শরবতটা পাঁচ সেকেন্ডে গিলে গ্লাসটা আমার ভাল লাগার মানুষটার হাতে ধরিয়ে দিলাম। ঠিক তখনই কে যেন “অনিল”বলে ডাক দিলো আর অমনি আমার ভালো লাগার মানুষটা রেসপন্স করলো।বুঝলাম যে উনার নাম অনিল। পাত্রী দেখা শেষে যখন ফিরে আসছিলাম তখনও আড়চোখে আমি অনিলকে দেখছিলাম।এত কিউট কেন ও? প্রথম দেখাতেই ও মনে হয় আমাকে বশীকরন করে নিয়েছে। সেদিন বাসায় চলে গেলাম।সবার মুখেই এক কথা,এই মেয়েকে যে করেই হোক বিয়ে করাবে। তবে বিয়ে হবে তিনমাস পর।অামার বড় চাচা অামেরিকা থেকে অাসার পর।এখন শুধু বাগদান হবে। এখন আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে অনিলের ফোন নাম্বার যোগাড় করা। একটু খাটা খাটনী করলে অবশ্য এটা কোন ব্যাপার না।
যেহেতু আমি এইচ এস সি পরীক্ষার্থী,প্রস্ততি কোচিং এ ভর্তি হলাম। আজ থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে।প্রথম দিনেই ক্লাস করতে গিয়ে টাস্কিত হলাম।পরিচালক সব টিচার ভাইয়াদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল।আর তাদের মাঝে অনিলও ছিল।আমি এটা দেখে যতটা না অবাক হয়েছি,তার থেকে বেশী আনন্দিত হয়েছি।যা হোক ঘটনা ঘটানোর
শুরু এখান থেকেই করতে হবে। দ্বিতীয় দিন যখন কোচিং এ ক্লাস করতে গেলাম(যেহেতু প্রস্ততি কোচিং,তাই সলভড ক্লাস আর কি)তখন প্রথম ক্লাসেই অনিল সাহেব এলেন প্রশ্নপত্র হাতে।সবাইকে একটা করে প্রশ্ন দিলেন।আমি প্রশ্নটা হাতে নিয়েই বললাম
-ভাইয়া,এই প্রশ্নটা একটু চেঞ্জ করে দিন ।এটা কিছুটা ঝাপ্সা দেখাচ্ছে।(আসলে প্রশ্ন এতটা ঝাপ্সা ছিলনা।আমার উদ্দেশ্য উনাকে কিছুক্ষন আমার খুব কাছে দাড় করিয়ে রাখা) তারপর একটু ভনিতা করে কয়েকটা প্রশ্ন আউড়িয়ে একটা প্রশ্ন হাতে নিলাম।আর উনি আমার বেঞ্চ অতিক্রম করে যেই পেছনের বেঞ্চ অব্দি গেলেন অমনি হাতে মুখ চেপে একটা চাপা হাসি দিলাম।
একদিন পর যখন আবার ক্লাসে গেলাম তখন প্রথম ক্লাস টেষ্টের রেজাল্ট দিল।আমারতো খাতা দেখে মাথায় হাত।এত কম মার্কস পেয়েছি আমি?খাতা নিয়ে অনিলের কাছে গেলাম।রাগে তখন আমার প্রেসার লো থেকে হাই হয়ে গিয়েছে।ভালবাসার গোষ্ঠী কিলাই।মার্কস কেন কম দিবে? অনেক্ষন উনার সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তর্ক করলাম।এটাকে অবশ্য তর্ক বলা যায়না।কারন উনি আস্তে আস্তে আমাকে বুঝাচ্ছিলেন যে কেন কম মার্কস পেয়েছি।কিন্তু আমি খুব চেঁচাচ্ছিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম যে উনি আমার টীচার।আমার চিল্লাপাল্লা শুনে আরেকজন টীচার ভাইয়া রেগে গিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-এই বেয়াদব মেয়ে,টীচারদের সাথে কিরকম বিহেভ করতে হয় শেখনি? এই কথা বলার সাথে সাথে আমি লক্ষ করলাম যে, অনিলের চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।ও ঐ ভাইয়াকে ধমকের স্বরে বলল
-স্টপ নীলয়।ও একটা পিচ্চি মেয়ে।ভুল করতেই পারে।তাই বলে বেয়াদব বলবি? উনার ধমক খেয়ে নীলয়ের সাথে সাথে আমিও চুপ মেরে গেলাম। তারপর উনি আমাকে বললেন
-তুমি এখন যাও।তোমার সাথে পরে কথা বলছি
অনিলকে নিয়ে আমার ভাবনার জগৎ দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে।ওর প্রতি দুর্বলতাটা দিন দিন বেড়েই চলছে।আমি বুঝতে পারছি যে,ওর পাশে থেকেই আমাকে বাঁচতে হবে।নইলে অক্সিজেনের অভাবে আমি দম বন্ধ হয়ে শুধু মাত্র শুক্রবার দিন আমাদের ক্লাস হয়।আর বাকী দিনগুলোতে শুধু সলভড ক্লাস।আজ শুক্রবার।অনিল আমাদের কেমিষ্ট্রি ক্লাস নিচ্ছে। হঠাৎই ও আমাকে দাড় করিয়ে বলল
-বলতো রাসায়নিক বন্ধন কাকে বলে?
আমিতো অনিলকে কখনো স্যারই মনে করিনা।একেতো সে আমার হবু বিয়াই।দ্বিতীয়ত তাকে আমি ভালবাসি।ওর সাথে সবসময় দুষ্টুমি করতে ইচ্ছা করে আমার।তাই ফাজলামো করে বললাম
-একটা ইয়াংছেলে আর একটা ইয়াং মেয়ের মধ্যে যদি ইয়ে থাকে তাহলে সেটাকে রসায়ন বলে।আর তারা যখন ইয়ে করে বিয়ে করে ফেলে তখন সেটাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
আমার কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল।কিন্তূ অনিল বেশ রেগে গেল আর আমাকে ধমক দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দিল। আমার বাসায় এসে সেকি কান্না।আর কোচিং এ যাবনা বলে মনস্থির করলাম। যেহেতু অনিলের বোনের সাথে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক ছিল তাই ওদের পরিবারের সাথে আমাদের কন্টাক্ট ছিল। আমি কোচিং এ যাইনা বলে অনিল আব্বুর কাছে ফোন দিল।আমিও সুযোগ পেয়ে বললাম
– যদি অনিল ভাইয়া আমাকে নিতে আসে তাহলে যাব।কজ উনি আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে।
বাবা বললেন অনিল নাকি আসতে রাজী হয়েছে।আমিতো আনন্দে আত্নহারা।খুব সাজুগুজু করে অপেক্ষা করছি অনিলের জন্য। অনিল আসলো।আমি ওর সাথে রিক্সায় করে যাচ্ছি।কিন্তূ ও আমার সাথে কোন কথা বলছে না।ভাবলাম একটু শয়তানি না করলেতো আর কথা বলানো যাবেনা।হঠাৎই চোখে কিছু পড়েছে বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। সাথে সাথে উনি আমার চোখের পাঁতির উপরে নীচে দু আঙ্গুল দিয়ে টানা দিয়ে খুব করে খুঁজতে লাগল যে চোখে কি পড়েছে।আমার তখন খুব আনন্দ হচ্ছিল ওকে বোকা বানিয়ে। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হল।অনিলের সাথে কোন কথা হয়না।আমার অস্বস্থি বেড়েই চলছিল।তাই কায়দা করে একদিন ক্লাস শেষে ওর কাছে ইচ্ছা করে খুড়াতে খুড়াতে গিয়ে বললাম
-আমার পায়ে ব্যাথা।একটু বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন? অনিল তেমন কিছু না বলে শুধু বলল
-চল। উনি একটা রিক্সা ডেকে আনলেন।আমি বললাম
-আমারতো পায়ে ব্যাথা।রিক্সায় উঠব কিভাবে?
-বাসা থেকে এসেছিলে কিভাবে?
-আরে ব্যাথাতো কোচিং এ এসে পেয়েছি।
তারপর উনি আর কথা না বাড়িয়ে আমাকে কোলে করে রিক্সায় উঠিয়ে দিলো।আমি তখন মুখ টিপে হাসছিলাম। রিক্সায় বসে আমি ওকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করছিলাম।সে শুধু হ্যাঁ না তে জবাব দিয়ে যাচ্ছিল আর অন্যদিকে তাকিয়েছিল।আমার ভীষন রাগ হচ্ছিলো।অবশেষে আমি বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম
-আপনি তাকাচ্ছেন না কেন আমার দিকে?একবার ভাল করে তাকিয়ে দেখুন আমি কত সুন্দর। এ কথা শুনে এবার ও শব্দ করে হেসে উঠলো।তারপর বলল
-তুমি সুন্দর এই ভুল ধারনাটা তোমাকে কে দিয়েছে?
-হোয়াট!তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি সুন্দর না?
-অবভিয়াসলি নট।
এবার আমি প্রচুর রেগে গেলাম।রেগে গিয়ে রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা থামাতে বললাম।রিক্সা থামাতেই আমি লাফ দিয়ে নেমে গেলাম রিক্সা থেকে। ওমনি অনিল পেছন থেকে বলল
-তোমার না পায়ে ব্যাথা? আমি ঝট করেই থেমে গেলাম আর জিভে কামড় দিলাম।লজ্জায় আমার চেহারা লাল হয়ে গেল।কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।আমি ঠায় দাড়িয়ে রইলাম।কিন্তু অনিলের দিকে তাকাতে পারছিলাম না।অনিল আবারো বলল
-আমি চলে যাচ্ছি।তুমি উঠে বসো রিক্সায়। কিছুক্ষন পর রিক্সাওয়ালার ডাকে ঘুরে দাড়ালাম।রিক্সাওয়ালা বলল
-আফা উডেন। আমি রিক্সায় চড়ে বসলাম।রিক্সাওয়ালা আবারো বলল
-আফা একটা কতা কই?
-জ্বি বলুন।
-ভাইজান কিন্তু আপনারে অনেক বালবাসে।
-আপনি বুঝলেন কিভাবে?
-চখ্যের দিক চাইলেই কওন যায়। আপনে অনেক কপাইল্যা মানুষ
-এ কথা বললেন কেন?
-কপাইল্য না হইলে কি আর ভাইজানের মত এমন সুন্দর পোলা অপনের প্রেমে পড়ে।
-তার মানে আপনিও ওর মত বলতে চাইছেন যে আমি সুন্দর না।(রেগে গিয়ে)
-না না আপা।আমি হেইডা কই নাই।তয় ভাইজান কিন্তু আপনার থাইকাউ সুন্দর।যতন কইরা দেইখা রাইখেন।
আঞ্চলের লগে বাইন্ধা রাইখেন পুরা জীবন। লোকে বলে মেয়েরা নাকি জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় আয়নার সামনে দাড়িয়ে কাটায়।আজকের পূর্ব পর্যন্ত আমি অবশ্য এ নিয়মের বাহিরে ছিলাম।কিন্তু আজ থেকে মনে হয় আমিও সেই মেয়েদের কাতারে নাম লিখাতে যাচ্ছি যারা জীবনের অধিকাংশ সময় আয়নার সামনে কাটায়।
এক ঘন্টা যাবৎ আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখছি।আর মিটি মিটি হাসছি।একটু পর পর কপালের টিপ চেঞ্জ করছি।ঠোঁটে লিপষ্টিক দিয়ে দুই ঠোঁট একসাথে ঘষা দিয়ে দু ঠোঁটেই লিপষ্টিকের সমতা আনার চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি।উপুড় হয়ে শুয়ে দু গালে দু হাত চেপে ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি।তারপর আনমনেই একা একা হেসে উঠছি।কখনো বা দুহাত শূন্যে উড়িয়ে এক নাগাড়ে ঘুরছি। আমার এসব আনন্দঘন পাগলামীর কারন হচ্ছে রিক্সাওয়ালার কথাগুলো।সত্যিই কি অনিলও আমাকে ভালবাসে? তাহলে কি সত্যিই আমার ভালবাসা পরিপূর্নতা পেতে যাচ্ছে।আমি কি সত্যিই অনিলের বৌ হতে পারবো? এরকম নানানও চিন্তা দোল দিয়ে যাচ্ছে আমার মনে।
দেখতে দেখতে অনেক দিন চলে গেল।আমার এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ।এদিকে ভাইয়ার বিয়েটাও শেষ হয়ে গেল।বিয়ের দিনগুলোতে অনেক দুষ্টুমি করেছি ওর সাথে।আমার নতুন ভাবীজানও ইতিমধ্যে কিছুটা আন্দাজ করে ফেলেছে যে আমি উনার ভাইয়ের প্রতি দুর্বল। আজ অনিল আমাদের বাসায় বেড়াতে আসবে।আমি সকাল থেকেই পুরু রান্নাঘর দখল করে রেখেছি।কাউকে রান্নাঘরের আশেপাশে আসতে দিচ্ছিনা।যদিও আমি রান্না ঘরে সচরাচর যাইনা তবুও প্রিয় মানুষটা আসবে বলে কথা।নিজ হাতে অনেক কিছু রান্না করলাম।
অনিল আসলো।ওকে খাওয়ানোর দায়িত্বটাও নিজের হাতে নিলাম। আমি এতকিছু রান্না করলাম আর উনি কিনা সামান্য আলু ভাজি আর সর্ষে ইলিশ দিয়ে খেয়েই উঠে গেলেন।মাংসটা ছুঁয়েও দেখলো না।মুড়িঘন্ট, ডাল ভুনা,সব্জিতো এভাবেই পরে রইলো।এত শখ করে পোলাও রান্না করলাম।আর উনি সাদা ভাত খেয়েই খাওয়া শেষ করে দিলেন। কেন যে এই বুদ্ধুরামটার জন্য এত কষ্ট করে এত কিছু রান্না করতে গেলাম?
অনিল যখন চলে যাচ্ছিলো আমি বেলকনির গ্রীল ধরে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়েছিলাম ।দেখতে দেখতে ও বাইকে চড়ে চলে গেল।ও চোখের আড়াল হওয়া মাত্র বুকের কষ্টটা অনেকগুন বেড়ে গেল।ও কি একবারও উপরে তাকিয়ে দেখতে পারল না যে একটা মেয়ে ওর ভালবাসায় পাগল হয়ে জবাই করা পাখির মত ছটফট করছে।কিভাবে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে।ও কেন বুঝেও না বোঝার ভান করে?জেনেশুনে কেন কষ্ট দিচ্ছে ও আমাকে। অঝর নয়নে কাঁদছিলাম।আমার চোখের পানির সাথে তাল মিলাতেই বোধ হয় আকাশে একবার বিদ্যুৎ চমকিয়েই অঝরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। ওমনি আমার চোখ কে অবাক করে দিয়ে অনিলের বাইকটা আবারো আমাদের গেটের সামনে এসে দাড়ালো। অনিল আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো
-নীচে নেমে এসো। আমি চাপা হাসি হেসে সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নীচে নামলাম। ও আমার কাছে এসে বলল
-ইচ্ছে ছিল কোন এক বৃষ্টি ভেজা দিনে তোমাকে ভালবাসার কথাটা বলবো।বৃষ্টিও হচ্ছিল না,তাই বলাও হয়ে উঠছিলো না। আমি অনেকটা আবেগ নিয়ে ওকে বললাম
-তাহলে এখন বলো। ও দুহাতে আমার চিবুক দুটো ধরে ওর নাক দিয়ে আমার নাকটা আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বলল
-ভালোবাসি।
আমিও ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ফিডব্যাকটা দিয়ে দিলাম।ওর চুলগুলো বৃষ্টিতে ভেজায় আগের
থেকেও কিউট লাগছিল।আমি হাত দিয়ে ওর চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দিয়েই দৌড় দিলাম।ও আমার পিছু পিছু আমাকে দৌড়াচ্ছে। আজ বুঝি আমার সেই কল্পনাটা সত্যি হতে চলেছে যে কল্পনাটা আমি ওকে প্রথম দিন দেখে করেছিলাম।