বৃষ্টি ভেজা প্রেম

বৃষ্টি ভেজা প্রেম

নিসঙ্গ ভেজা হাইওয়ে । হাইওয়ের পাশের গাছগুলো মৃদু বাতাসে দুলছে । ছাতা মাথায় নিসঙ্গ পথ ধরে আপনমনে হাটছে মাঈশা । ঈশান আজকেও দেরি করতেছে । বিরক্ত লাগছে মাঈশার । হাটতে হাটতে রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে গিয়ে দাড়ালো সে । দুচোখ ভরে দেখতে লাগলো ভেজা প্রকৃতির অদ্ভুত সোন্দর্যকে ।

হটাত্‍ পিছন থেকে সুন্দর গলায় কেউ গান গেয়ে উঠলো । “বৃষ্টি নেমেছে আজ , আকাশ ভেঙ্গে , হাটছি আমি এই মেঠো পথে । মনের ক্যানভাসে ভাসছে তোমার ছবি । বহুদিন তোমায় দেখি না যে ।” গানটা এবং গান গাওয়া কন্ঠটা মাঈশার অতি পরিচিতো । ঝট করে পিছনে ফিরলো সে ।ঈশান দাড়িয়ে আছে । মুখে মিষ্টি হাসি । হাত দুটো ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে একসাথে ধরে আছে সে ।“আর আসছো কেনো ? না আসলেই পারতা !” রাগত গলায় বলল মাঈশা । “না । মানে ইয়ে । ঐ যে রিকশা পাই নাই তো । তাই হেটে আসতে দেরি হয়ে গেছে ।” কাচুমাচু মুখে বলল ঈশান ।

–ঢং কইরো না । তোমাকে আমার চিনা আছে । তুমি ইচ্ছে করে হেটে আসছো । বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আসার জন্য । চুপ করে রইলো ঈশান ।

“চুপ করে আছো কেনো !” ধমকে উঠলো মাঈশা ।
“না মানে । মজা লাগতেছে ।” মুচকি হেসে বললো ঈশান।
“কি ! আমার কথাগুলা তোমার কাছে মজা লাগতেছে !” আরো রেগে গিয়ে বলল মাঈশা ।

“না মানে ক্লাসে যখন কোন ছাত্রের সবচেয়ে প্রিয় টিচারটা ছাত্রটাকে ইচ্ছেমত বকে । তখন যেমন অনূভূতি হয় । আমারও ঠিক একই অনূভূতি হচ্ছে ! আপনার কল্যানে আমি আবার আমার পিচ্চিকালে পদার্পন করতে পারলাম । আপনাকে ধন্যবাদ ম্যাডাম !” হাসতে হাসতে বলল ঈশান । ঈশানের এধরনের কথা শুনে আর রেগে থাকতে পারলো না মাঈশা । হেসে ফেললো সে । মাঈশার হাসি দেখে ঈশান গেয়ে উঠলো “আমার সপ্নে দেখা রাজকন্যা হাসে , সাত সাগর আর তের নদীর পাড়ে ।”

-সাগর-নদী কোথায় পাইলা ? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো মাঈশা ।

ঈশান হাইওয়ের পাশে একটা ডোবাকে দেখিয়ে বলল “ধরে নাও ওটাই সাগর । তুমি রাজকন্যা । আর আমি রাজপুত্র । রাজকন্যা সাগরপাড়ে অধীর আগ্রহে বসে ছিলো কখন রাজপুত্র আসবে ! রাজপুত্র আসতে দেরি করায় রাজকন্যা তো মহাক্ষেপা ! রাজপুত্র আসলো । রাজকন্যার মন ভালো করলো ।আর রাজকন্যা আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো” বলে মুচকি একটা হাসি দিলো ঈশান । মাঈশা এবার আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না । খিল খিল করে হাসতে লাগলো । হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি চলে এলো তার । হাসি থামতেই বলল “তুমি এতো সুন্দর করে কিভাবে ভাবো ঈশান ?” ঈশান মাঈশা র হাত ধরে বললো “সুন্দর মানুষকে নিয়ে সুন্দর ভাবনাই আসে ।” বলেই একটা চোখ টিপ দিলো সে । মাঈশা আস্তে আস্তে বলল”ঈশান তুমি আসলেই কি আমাকে ভালবাসো ? এভাবেই কি সবসময় আমার হাত ধরে রাখবে ?”

ঈশান বলল “যতটুক মনে পরে প্রথম প্রশ্নটার উত্তরটা ৪ মাস আগেই পেয়ে গিয়েছো । আর দ্বিতিয়টার উত্তর হলো আমি শুধু তোমার হাত না তোমাকেই ধরে রাখবো ।” মাঈশার চোখ তখন অশ্রুসিক্ত আর ঈশানের মুখে মিষ্টি হাসি ।ছাতা মাথায় হাইওয়ের একটা গাছের শিকড়ের উপর বসে আছে মাঈশা । তার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে । ঈশান আজকেও দেরি করছে । মাঈশার কিছুই ভাল লাগছে না । বৃষ্টিরও বিরাম নেই । টিপটিপ করে পরেই চলছে ।  ভেজা হাইওয়ে ধরে দৌড়ে এলো ঈশান । মাঈশা এভাবে বসে থাকতে দেখে বুঝতে পারলো কোন একটা সমস্যা হয়েছে । আস্তে করে ডাক দিলো সে”মাঈশা । রাজকন্যা ।” মাঈশা আস্তে করে মুখ ফিরিয়ে তাকালো ঈশানের দিকে । তার চোখ থেকে পানি পড়ছে । চোখ দুটো অসম্ভব লাল । বুঝা যাচ্ছে অনেক্ষন কেদেঁছে সে ।

ঈশানের র বুকটা একটা মোচড় দিলো যেনো । আস্তে করে বললো “কি হয়েছে রাজকন্যা?” কান্না জড়ানো গলায় বন্যা বললো “তুমি কথা রাখো নি ঈশান । আমি এখানে একা বসে ছিলাম । কতো মানুষ হেটে যাচ্ছিলো । তাকিয়ে দেখছিলো আমাকে । আর আমি একা ছিলাম । একদম একা । তুমি আমার পাশে থাকো নি ।” ঈশানের বুকে যেনো শেল বিধলো । আস্তে করে বলল “বিশ্বাস করো মাঈশা । আমি ইচ্ছা করে দেরি করিনি । ইদানিং খরচটা অনেক বেড়ে গেছে । তাই এই সময়ে একটা টিউশুনি থাকে আমার । তোমাকে বলিনি কেননা তাহলে তুমি আসতে না । তোমার ঐ সুন্দর মুখটাও আমার দেখা হতো না । বিশ্বাস করো অনেক চেষ্টা করি একটু তাড়াতাড়ি বের হওয়ার । কিন্তু হয়ে উঠে না । কিন্তু আমি সবসময়ই তোমার পাশে ছিলাম , আছি , থাকবো । অনেক ভালবাসি তোমাকে । অনেক” হড়বড় করে কথাগুলো বলে ফেললো ঈশান ।

মাঈশা এসব কথা শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না ।ঈশান কে এভাবে কথাগুলো বলায় এখন খারাপ লাগছে মাঈশার । আস্তে করে বললো “ঈশান । I’m so sorry মাফ করে দাও আমাকে , please  ঈশানে র মুখে হাসি ফুটলো । তার চোখে চিক চিক করছে পানি । হটাত্‍ বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেলো । ঈশান দু হাত উজার করে বৃষ্টির স্পর্শ নিতে লাগলো । হটাত্‍ গান গেয়ে উঠলো সে “বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে হাটছি আমি এতটুক বলেই থেমে গেলো সে । কি যেনো ভাবলো । তারপর দৌড় দিয়ে হাইওয়ের পাশে ধানের ক্ষেতে নেমে পরলো ।নেমেই উচ্চস্বরে গান গাইতে লাগলো “বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে , হাটছি আমি এ মেঠো পথে ।”

মাঈশা অশ্রুসিক্ত চোখে , ঠোটে একটুকরো মধুর হাসি ফুটিয়ে ঈশানের ছেলেমানুষী দেখতে লাগলো । একটু দূরে গিয়ে ঈশান ইশারা করলো মাঈশাকে ।মাঈশা হাতের ছাতাটা ছেড়ে দিলো । সেটা উড়ে গিয়ে পরলো ডোবাটাতে । মাঈশা আস্তে আস্তে ক্ষেতের আইল দিয়ে হেটে আসলো ঈশানের র দিকে । ঈশান তার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিলো । লাজুকভাবে হাতটা ধরলো মাঈশা । ঈশান গাইতে লাগলো “এ পথ যদি শেষ না হয় , তবে কেমন হতো তুমি বলো তো অঝোরে বৃষ্টি পরছে তখনো । আকাশের একপ্রান্তে একটুকরো রংধনু ফুটে উঠেছে । যেনো তাদেরকে দেখেই প্রকৃতি সাতরং এর মাধুরী মিশিয়ে হেসে উঠেছে ভুল হলে মাফ করবেন কেমন হলো জানাবেন,ধন্যবাদ সবাইকে

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত