গোলাপী জামাই

গোলাপী জামাই

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সারা শরীর গোলাপের পাপড়িতে ভরা। পুরো বিছানায় গোলাপের পাপড়ি। গতকাল তো কোন বাসর রাত ছিলনা। তাহলে এসব কি ? সামনে দেখি রুপন্তীর আম্মু গোলাপী কালার শাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। চুলে একটা টকটকে লাল গোলাপ। চোখে গোলাপী আই সেইড আর ঠোঁটে গোলাপী হাসি। গুড মর্নিং রুপন্তীর পাপ্পা!!! হ্যাপি রোজ ডে!!! হুম! গুড মর্নিং! এসব কি? আজকে রোজ ডে তাই সব গোলাপী! যান তাড়াতাড়ি গোসল করে নেন। আমি চা করে দিচ্ছি। এই নেন টাওয়েল।

একি! গোলাপী টাওয়েল? আর গোলাপী সাবান? এগুলো তো লেডিসদের! রুপন্তীর আম্মু নাকটা টেনে দিয়ে বললো, রুপন্তীর পাপ্পা আজ রোজ ডে। সো সব গোলাপী ই, ওই যে টুথপেস্টও গোলাপী। গোসল সেরে এসে দেখি বিছানায় আমার জন্য গোলাপী শার্ট, গোলাপী প্যান্ট, নিচে গোলাপী জুতা! রুপন্তীর আম্মু, এসব কি! শার্ট পর্যন্ত ঠিকাছে! কিন্তু প্যান্ট কিভাবে গোলাপী হলো। কেমন লাগবে এগুলো পড়লে। ভেবে দেখে তো! আরে ভালো লাগবে।আজকে রোজ ডে না! তাই, নাস্তা রেডি তাড়াতাড়ি আসেন! বাহ আজকে স্ট্রবেরী জুস! না এটা স্ট্রবেরী জুস না। এটা গোলাপের জুস। আর এই যে গোলাপী টি, আর এই নেন গোলাপী পাউরুটি আর গোলাপের জ্যাম! খেয়ে নিন! গোলাপের জুস মানুষ খায়?

খায় মানে। এটা খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দূর হয়। আরো বেনিফিট আছে জানেন! চুপচাপ খেয়ে নিন। নাইলে খবর আছে। চুপচাপ কোনরকম খেয়ে অফিসের জন্য বের হলাম। বের হতেই দেখি দারোয়ান বদরুদ্দীন হাতে একটা গোলাপ নিয়ে জানালার দিকে উকিঁ মারতেছে! আমি পেছন থেকে গিয়ে ধরলাম সে হতভম্ব হয়ে উঠলো। কি দেখছো ওখানে? বদুরদ্দীন চোরের মতো হাসি দিয়ে কইলো, ভাইজান জরিনারে দেখছি না আইজকে? অমন সময় জরিনা খালা হাতে ঝাড়ু নিয়ে হাজির! বদরুদ্দীন হাঁটু ভেঙ্গে বসে হাতের গোলাপটি জরিনা খালারে দিয়ে কইলো, ও জরিনা এডা তোমার লাইগা! হ্যাফি লোজ ডে!!! জরিনা খালাও মুচকি হেসে গোলাপটি নিয়ে ফিল্মের নায়িকার মতো দৌড়ে চলে গেল। কিছুই বুঝলাম না ব্যাপারটা!

অফিস ঢুকতেই সবাই আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে দিল। বুঝতে পারছি আমাকে গোলাপী শার্ট প্যান্টে ভিনগ্রহের এলিয়েনের মতো লাগছে। কাজ শুরু করতে না করতেই রুপন্তীর আম্মুর ফোন! কি অবস্থা? গোলাপীম্যান! হুম বলো! কি জন্য ফোন দিছো? রাতে আপনার জন্য স্পেশাল খাবার আছে। আপনি যা খাবেন তাই বানামু। খাবারের নাম শুনে জিবে জল চলে আসছে। যাক এটাই সুযোগ মিষ্টি খাওয়ার! অনেকদিন তো রুপন্তীর আম্মুর ডায়েট ফুড খেয়ে বেঁচে আছি। আমি বললাম, আজকে মিস্টি জাতীয় কিছু বানাও! আমার তো আবার মিষ্টি খুব পছন্দ। ও আচ্ছা দুপুরের টিফিনটাতেও সারপ্রাইজ আছে।

দুপুরের খাবারের জন্য যখন টিফিন খুললাম। তখন খাবার দেখে আমার মাথা ঘুরিয়ে উঠলো, সবগুলো ভর্তা! আর কেমনজানি গন্ধ! রুপন্তীর আম্মুরে ফোন দিলাম, এগুলো কি দিছো আজকে? টিফিনে, চার রকমের ভর্তা আছে। প্রথমটা লাল গোলাপের ভর্তা আমাদের প্রথম প্রেমের জন্য , দ্বিতীয়টা সাদা গোলাপের ভর্তা আমাদের বন্ধুত্বের জন্য, তারপরেরটা নীল গোলাপের ভর্তা আমাদের জুটির জন্য, তারপরের টা কালো গোলাপের ভর্তা! যেন কালো নজর না লাগে! এবার খেয়ে নিন! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ছে! এগুলো খাওয়া যায় নাকি! আরে গোলাপ শরীরের জন্য ভালো। বাড়তি ভুড়ি কমায়। দেখেন আপনার ভুঁড়ি কতো বাড়ছে। আর রাতে তো আপনার পছন্দের খাবার আছেই। পিয়ন কাদের মিয়ারে ডেকে গোলাপ ভর্তা খাইয়ে দিলাম।

অফিসে বেশ কয়েকজন রোজ ডে জানিয়েছে। অবশ্য আমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজকে রোজ ডে। দিনটাও গোলাপী গোলাপী লাগছে। পিয়ন কাদেরের মোবাইলে রিংটোন বাজছে, ও বন্ধু লাল গোলাপী কই রইলা রে,,,,, আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। হঠাৎ রাস্তায় দেখলাম জরিনা খালা গোলাপ বিক্রি করতেছে, প্রতি পিছ দশটাকা! জরিনা খালার সিজনিং ব্যবসা কখন শেষ হবে কি জানি! রাতে খাবার খাওয়ার জন্য পুরো সকাল থেকে কিছু না খেয়ে আছি। আজকে জম্পেশ খাওয়া হবে। জরিনা খালাও চলে এসেছে। রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালা বেশ আয়োজন করে খাবার তৈরী করছে। খাবারের সময় আসলো। আমাকে রুপন্তীর আম্মু চোখ বেঁধে টেবিলের কাছে নিয়ে গেল। চোখ খুলতেই দেখি নানারকম মিষ্টান্ন। রসগোল্লা, সন্দেশ, পোড়াবাড়ির চমচম, মতিচুরের লাড্ডু, বালুসাই, পায়েস, জিলাপি, কাঁচাগোল্লা! উপপস! এতোগুলো খাবার দেখে তো আমি মরেই যাবো।

খাবার শুরু করার আগে রুপন্তীর আম্মুকে বললাম, যাও আজকে খুব খুশী হয়েছি তোমার কি লাগবে বলো? আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেন। একটা নেকলেস কিনবো। আমিও ঝটপট চেক বের করে সিগনেচার করে দিলাম। জরিনা খালারেও বললাম। তোমার কি লাগবে? সে বললো, ভাইজান তিনমাসের অগ্রীম বেতন লাইগবো। আরে চারমাসের নাও সমস্যা নাই। আজকে আমি খুব খুশি। হাত ধুয়ে খেতে বসলাম। কোনটা আগে খাবো বুঝতেছি না। প্রথমে পায়েস নিলাম। মুখে দিতেই জগন্য তেতোর জন্য ফেলে দিলাম। তারপর চমচম মুখে দিলাম। সেটাও তেতা। একে একে সব মুখে দিলাম। একটাও খাওয়া যাচ্ছেনা।

রুপন্তীর পাপ্পা ফেলে দিচ্ছেন কেন? এখানে সব গোলাপের। গোলাপের রসগোল্লা, গোলাপের পায়েস, গোলাপের চমচম, গোলাপের সন্দেশ। সবি গোলাপ দিয়ে ডায়েট মিষ্টি। স্পেশাল আপনার জন্য। আজকে রোজ ডে তো! আমি মাথায় হাত দিলাম। এই হারামির রোজ ডে আমারে তো পুরা লুটে নিল। আমি বাইরে গিয়ে বদরুদ্দীনের কাজ থেকে গোলাপী কালার পেইন্টে নিয়ে পুরো শরীরে লাগিয়ে নিলাম। তারপর রুপন্তীর আম্মুর সামনে গিয়ে বললাম, এই নাও তোমার গোলাপী জামাই!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত