আমাকে একা রেখে জান্নাত আর টুম্পা শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। জান্নাত আয়নার সামনে বসে সাঁজছে। আমাকে একটিবারও বলছেনা, চলো তুমিও আমাদের সাথে যাবে ৷ আমিও মুখটা বাংলা পাঁচের মতন করে বসে আছি। অবশ্য আমাকেই বা কেন বলবে!? গতকাল রাতে জান্নাত বলল….
-এই চলো কালকে বাবার বাসায় যাই।
–কালকে পারবনা।
-কেন?
–অফিসের জরুরী কাজ আছে।
-সারাজীবনই কি তোমার কাজ থাকে?
–আরে জরুরী কাজ বোঝার চেষ্টা করো?
-থাক তোমার যেতে হবেনা।
–উফফ রাগো কেন?
-কই রাগালাম? কতদিন বাবার বাসায় যাইনা সে খেয়াল আছে তোমার?
–আচ্ছা এককাজ করো। তুমি আর টুম্পা দুজনেই চলে যাও, কয়েকদিন কাটিয়ে আসো।
-আর তুমি?
–আমি সময় করে আরেকদিন তোমাদের সহ নিয়ে যাব।
জান্নাত আর কিছু বললনা। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিলো। এই শীতের মধ্যে একটা কাঁথা আর বালিশ দিয়ে বলল….
–সোফায় ঘুমোও, বিছানায় জায়গা নেই।
-আমার অপরাধ কি?
–ওকে আমিই সোফায় যাচ্ছি।
বলেই জান্নাত সোফায় চলে যাওয়া শুরু করলো। উপায় না পেয়ে শেষে আমিই সোফায় গেলাম। কি মেয়েরা বাবা। এতরাগ যে কই থেকে আসে আল্লাই জানে। কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি বুকের উপর মাথা রেখে জান্নাত জুবুথুবু হয়ে ঘুমোচ্ছে। আমি হাসলাম, নৈঃশব্দে। আর যাইহোক এই মেয়ে আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। এটা আমি ভালো করেই জানি। জান্নাত আর সকালে কথা বললনা। আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমালাম। ঘুম থেকে উঠেই দেখি জান্নাত রেডি হচ্ছে। সাথে টুম্পাও রেডি হচ্ছে। বললাম….
–আম্মু কই যাবা?
-নানু বাসায় যাব।
–আমাকে কেন বললেনা?
-আম্মু নিষেধ করেছে।
–কেন?
-জানিনা, আর নানুরে ফোন করে বলছে তুমি নানু বাসায় গেলে তোমায় গুলি করতে?
বলেই টুম্পা নাচতে নাচতে চলে গেলো। কি কুটনি মেয়েরে বাবা! আমিও সোফা থেকে উঠে বিছানায় বসলাম। খুব করে চাইছি জান্নাত কিছু বলুক। কি অদ্ভুত! মেয়েটা কিছুই বলছেনা। এমনিতেই সারাদিন কথা বলে কান ঝালফালা করে দিত আর আজকে এত চুপ। পেটের গুরো ক্রিমি গুলো মরে গেলো নাকি? আমি সব জানা স্বত্বেও গলা খাকড়ি দিয়ে বউকে বললাম….
–কি করছো?
-উকুন মারছি, মারবে?
–হাতুরি নিয়ে আসি, দুজনে মিলে উকুন মারব।
জান্নাত মুখ ঘুরিয়ে নিলো। বেচারী বেশ রেগে আছে। কথাবার্তা সাবধানে বলতে হবে। নইলে কপালে শনির বাপ আছে। আমি আবারো বললাম….
–হাতুড়ি আনব?
-হ্যাঁ আনো, তোমার মাথায় ঠুস করে বারি দিয়ে ঘিলু বের করে দিব যত্তসব।
–রাগো৷ কেন?
-দেখো ফাজলামো করবেনা। টেবিলে নাস্তা রেডি আছে খেয়ে অফিসে যেও।
–আর তোমরা?
-কেন তুমিইতো রাতে বললা আমাকে আর টুম্পাকে বাবার বাসায় যেতে।
–তাই বলে সত্যি সত্যিই যাবে? আমাকে জোর করবানা যেতে?
-তোমার যেতে হবেনা, বাবাকে না করে দিয়েছি তোমার অফিসে কাজ আছে৷ তাই আমি আর টুম্পা যাচ্ছি।
বউয়ের কথা শুনে বিবাহিত হয়েও ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। বউ বেডি ছাড়া নিজেকে কল্পনা করে দেখলাম। একদম পিউর এতিম লাগে। রাতে যাওয়ার কথা না করে কি মুসিবতেই না পরলাম। জান্নাতকে বললাম….
-মানে বলছিলাম কি, তোমরা তো একা আমি এগিয়ে দিয়ে আসি?
–লাগবেনা, আমি চিনি একাই যেতে পারব৷
-এত রিস্ক নেওয়া ভালোনা, সাথে আমি যাই।
–বললামনা লাগবেনা যাওয়া।
আমি আর কথা বলার সাহস পেলামনা। বেলুনের মতন চুপসে গেলাম। নিজেকে অসহায় ভাব রাখার চেষ্টা করছি যাতে জান্নাত আমায় দেখে একটু দয়া করে। কিন্তু অদ্ভুত! আমার দিকে ফিড়েও তাকাচ্ছে না। ঘরের বউ এতটা নির্দয়, খোদাহ মুজে মারো৷ মেরা সিনা পার গুলি লাগাও। জান্নাতের রেডি হওয়া শেষ। সাথে টুম্পাও। লাগেজ হাতে নিয়ে জান্নাত বলল….
–খাবার টেবিলে রেখেছি কিন্তু, মনে করে খেয়ে নিও।
-এগিয়ে দিয়ে আসি?
–না থাক, তোমার অফিসের আবার বেলা হবে।
-টাটা বাবাই (টুম্পা)
বলেই মা মেয়ে চলে গেলো। বুঝতে পারলাম বউ হেব্বি রেগে আছে৷ আমি বিছানায় ধপাস করে বসে পরলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও শ্বশুর বাড়ি যাব৷ বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে হবে৷ বিশেষ করে শ্বশুর বাড়ি গেলে বিরিয়ানি খাওয়া যাবে ইচ্ছেমত। যেই ভাবা সেই কাজ। গোসল করে খাওয়াদাওয়া করে রওনা দিলাম শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। স্টেশনে পৌঁছে দেখি জান্নাত বেঞ্চে বসে আছে। আমি আস্তে আস্তে জান্নাতের কাছে গেলাম। জান্নাত মুখ ঘুরিয়ে নিলো৷ আমি পাশে বসে বললাম….
–এখনো যাওনি যে?
-বাসায় একটা কোলবালিশ রেখে এসেছিলাম, সেটার অপেক্ষাতেই ছিলাম।
–কেনো?
-ঐ কোলবালিশটা ছাড়া রাতে ঘুম হয়না তাই।
–তাহলে কোলবালিশ রেখে এসেছিলে কেন?
-এতদিন যাবত ঐ কোলবালিশে ঘুমাই, কোলবালিশটা কি জানেনা যে তাকে ছাড়া আমার ঘুম হয়না।
–তাইতো কোলবালিশ পায়ে হেঁটে চলে এলো।
জান্নাত কিছু বললনা মুচকি হাসলো। আমিও হাসলাম। বাসের টিকিট জান্নাত কেটেই রেখেছিল। কালবিলম্ব না করে বাসে উঠলাম। টুম্পা আমার কোলে বসে ঘুমোচ্ছে। জান্নাত পুটুর পুটুর করে কথা বলছে আর হাসছে৷ আমি সেই হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। জান্নাত বলল….
–কি দেখছো?
-উহু, ভাবছি।
–কি ভাবছো?
-শ্বশুর বাড়ি গিয়ে প্রসুর বিরিয়ানি খাব।
জান্নাত রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। আমি হাসলাম। জান্নাত মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি জানালার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আহা বিরিয়ানি।’ এবার বউয়ের রাগ মাইরে পরিনিত হলো আরকি। অদ্ভুত! বউয়ের কিলগুলোও কিউট আর মিষ্টিও লাগে।