ভালোবাসা সীমাহীন

ভালোবাসা সীমাহীন

—হ্যালো । ( মিম )
—হুম বলো । ( নাসির )
—এখন তুমি কোথায় ।
—নানুর বাড়ি । কেনো ।
—সত্যি কি তুমি তোমার নানুর বাসায় ।
—হুম ।
—কথা বলো ।
—কি ।
—সত্যি কি তুমি তোমার নানুর বাসায় ।
—হ্যা আর যা বলার তাড়াতাড়ি বলো ।
—কেনো তোমার কি কোন সমস্যা ।
—আরে বাবা আমি কি তোমাকে বলেছি সমস্যা আছে ।
—না ।
—আরে রাগ করছো ।
—না ।
—তাহলে কথা বলছো না ক্যা ।
—এমনি ।
—আরে বাবা নানুর সাথে গল্প করছি সেই জন্য ।
—( নিশ্চুপ )
—আরে বাবা কি বলবে বলো ।
—আজকে আমার বার্ডে তোমাকে বলেছিলাম যে আসতে ।
—ওহ্ হ্যা ইস্ আমার তো মনে নেই সরি সরি সরি ।
—হুম জানি তো তোমার কোন কিছু মনে থাকে না , আমি কোন কিছু বললে । থাকবে কি করে যখন কোন অনুষ্ঠান হয় তখন যদি বলি আজকে সময় হবে , বল না আজকে আমার টিউশনি শেষ করতে অনেক দেরি হবে , আমার ছাত্রের কাল পরীক্ষা তাই এক্সট্রা ৩০ মিনিট পড়াতে হবে ইত্যাদি বলো ।
—আরে পাগলী রাগ করছো কেনো আমি তো আর ইচ্ছে করে করিনা সেই সময় সেই কাজ করতে হয় ।
—হুম জানি কিন্তু …
—কিন্তু কি ।
—আমার না কেনো জানি মনে হয় তুমি মিথ্যে বলছো ।
—আরে বাবা তুমি আমাকে বেশি ভাবো সেই জন্য মনে হয় আমি তোমার পাশা পাশি আছি তোমার থেকে দূরে সরে যাই নি ।
—হুম তা জানি না কিন্তু আমার মন বলে তুমি মিথ্যে বলছো ।

—হুম সত্যি আমি মিথ্যে বলছি আমি তোমার কাছে । ( মনে মনে )
—কি হলো হঠাৎ নিশ্চুপ হলে যে ।
—আরে কিছু না । ( কান্না জড়িত কন্ঠ )
—তোমার কন্ঠ এমন হলো কেনো তুমি কি কাঁদছো ।
—কই না তো হঠাৎ গলা কেমন যেন হয়ে গেলো ।
—আচ্ছা আব্বু ডাকছে রাতে ফোন দিবো ।
—ওকে ।
—আল্লাহ হাফেজ ।
—আল্লাহ হাফেজ ।

এটা বলে ফোনটা কেটে দিলাম ।
এতখন যার সাথে ফোনে কথা বললাম সে হলো মিম আমার ভালোবাসার মানুষ মেয়েটি আমাকে অনেক ভালোবাসে থাক ওসব কথা ।
কেন জানি চোখের পানি বাধা মানছে না অবিরাম ঝড়ে পড়ছে ।
টিউশনি পড়িয়ে পকেট খরচ করিয়ে কিছু টাকা বাঁচিয়ে আমি মিমের জন্য এক জোরা পায়েল কিনে গিফ্ট পাঠিয়ে দিয়ে দিছি তার ফেন্ডের কাছে , কারণ আমি যাবো না মিমের বার্ডে তে ।

হ্যা আমি মিথ্যে বলেছি ।
আমি নানুর বাসায় যাই নি ঠিক কিন্তু আমি কি করবো দুইটি টিউশনি করে কি আর চলে আর এক তো নিজের পকেট খরচ ।
তাই মিমের বার্ডে যাই নি কারণ মিমরা অনেক বড় লোক ।
তাই আমার তাদের মতো এমন পোশাক নাই আর বড় কথা হলো গরিব ঘরের ছেলে হয়ে এমন একটা বড় ঘরের মেয়ের সাথে তার পরিবার যদি দেখে তাহলে কার বাবা মা ঠিক থাকতে পারে তাই সব চিন্তা করে মিথ্যে বলতে হয়েছে ।

আমি এখন বাসায় পাশে রাস্তায় ল্যামপোষ্টের নিচে বসে আছি ।
চোখের পানি বাধা মানছে না অবিরাম ঝড়ে পড়ছে পানি ।
আমি বুঝতে পারি না কেন যে মিম আমার মতো ছেলেকে এতো ভালোবাসে ।
এতো ধনী ছেলে থাকতে আমার মতো গরিব ছেলেকে কেনো পছন্দ করেছে আমার গবর মার্কা মাথায় ঢোকে না ।
এখন বাসায় যেতে হবে অনেক রাত হয়েছে তাই বাসার দিকে রওনা দিলাম ।

—হ্যালো ।
—কি করো । ( কেঁদে কেঁদে )
—আরে মিম কাঁদতেছো কেনো ।
—রাতের খাবার খেয়েছো ।
—হুম , তুমি ।
—হুম খেয়েছি , তা কি করো এখন ।
—এই তো একটু পড়ে তার পর শুয়ে পরলাম আর তখন তুমি ফোন দিলে ।
—গুড আর আব্বু আম্মু আর আরবি কেমন আছে ।
—আল্লাহুর রহমতে ভালো আছে , তোমার ।
—আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো ।
—এখন কি করো ।
—এই তো তোমার সাথে কথা বলছি ।
—তা কেমন কাটলো আজকের দিনটা তোমার ।
—হুম অনেক ভালো কিন্তু মনটা তোমার জন্য খারাপ ছিলো তুমি আসলে অনেক ভালো হতো ।
—আরে আমার কথা বাদ দাও তো ।
—হুম কালকে একটু দেখা করতে পারবে ।
—হুম পারবো কোথায় দেখা করতে হবে ।
—সিরাজগঞ্জ চায়না বাঁধে ।
—ওকে , কখন আসতে হবে ।
—বিকেল ৪ টায় দেখা করবে ।
—ওকে ।
এভাবে কিছুখন কথাবার্তা চলে নাসির আর মিমের মাঝে ।



আমি বাসা থেকে বের হয়ে মিমকে ফোন দিলাম ,
—তুমি কোথায় । ( নাসির )
—এই তো বাসায় থেকে বের হলাম । তুমি । ( মিম )
—আমিও ।
—তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু ।
—জ্বী ম্যাডাম ।
—জ্বী স্যার হিহিহি ।
—হাহাহা ।


আমি চায়না বাঁধে মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাঁধের মাথার দিকে গেলাম ।
আমি দূর থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মিম বসে আছে পানির দিকে চেয়ে ।
যত দূর দেখতে পাচ্ছি মিমের মুখ শুকনো লাগছে আর অপেক্ষার প্রহর ।
যমুনার নদীর ঢাল বেয়ে একটা নদী আসছে অনেক পানি ।
আমি গিয়ে পাশে দারালাম ।
আমার পাশে দারানো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনের দিকে তাকালো মিম ।
—সরি । ( কান ধরে নাসির )
—হুম হয়ছে হয়ছে এখন আমার পাশে বস । ( মিম )
—জ্বী ।
—এতো লেট কেনো ।
—জ্যাম ছিলো তো ।
—হয়ছে হয়ছে আর মিথ্যে বলতে হবে না ।
—মিথ্যে বলছি না সত্যি বলছি ।
—হুম জানি তুমি সত্যি বলছো ।
—আর তুমি কি গিফ্ট দিয়েছো হ্যা ।
—কেনো পছন্দ হয়নি , আমি জানি পছন্দ হয়নি তাইনা ।
—কে বলেছে পছন্দ হয়নি ।
—হুম সেটা কোমদামে কেনা আর এটা তো কমন পায়েল । সত্যি বলতে কি আমার কাছে টাকা ছিলো না টিউশনি করে কিছু টাকা বাঁচিয়ে কিনে দিছি । ( অন্য দিকে তাকিয়ে )

এটা বলে আমি উঠে দারালাম আবার বললাম ,
—মিম তুমি তোমার মতো কাউকে খুঁজে নিও আমি তোমার যোগ্য না আর আমাকে ভুলে যাও ।

এটা শুনে মিম ধারালো আর আমার গালে ,
ঠাসসস করে একটা লাগিয়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে ,
—আমিতো তোমাকে চেয়েছি আর আমি তোমাকে ভুলতে পারবো না ।
আমি আমার জন্যে তোমাকে যোগ্য বলে মনে করি ।
আমি অন্য কাউকে চাই না শুধু তোমার ভালোবাসা আর তোমার কাছে আমাকে থাকতে দাও ।
.
আর তোমাকে কে বলেছে পছন্দ হয়নি হ্যা আমি কি কখনো বলেছি যে তোমার দেওয়া পায়েল আমার পছন্দ হয়নি , আর আমি কখনো বলেছি আমাকে কমন পায়েল দিয়েছো কেনো যেটা সবাই ব্যবহার করছে আমি আনকমন পায়েল চাই হ্যা ।

আমি মিমের কথা শুনে কিছুই বলতে পারছি না । কি বলবো বুঝতে পারছি না ।
মেয়েটা আমাকে এতো ভালোবাসে যার জন্য আর আমার ভালোবাসা তার কাছে কিছুই না ।
মিম আমাকে বললো ,
—এখানে চুপ চাপ বসো ।
—না মানে ।
মিমের চোখের দিকে তাকাতে বসে পরলাম ।
মিম তার ব্যাগের ভেতর থেকে কি যেন বের করলো ।
একটা বক্সের ভেতর থেকে কিছু খাবার বের করে বললো ,
—এই খেয়ে নাও হা করো । ( খাবার আমার মুখের সামনে নিয়ে বললো মিম )
—হাআআআআ ।

আমি কি করবো বুঝে উঠে পারছিলাম না তাই আমিও খেয়ে নিলাম ।
চোখের কোণে মেঘ জমে বৃষ্টি শুরু হলো ।
—আরে কাঁদতেছো কেনো । ( চোখের পানি মুছে দিয়ে )
—কই কাঁদতেছি এটা কান্না বলে না , এটা সুখের কান্না আর আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য এতো সুখ দিয়েছে ভাবতেই পারি নি ।
—ও তাই তাহলে কাল থেকে নামাজ পড়বে কেমন ।
—ইনশা আল্লাহ । তুমি খাবে না ।
—না আমি খাবোনা আর আমি কাল যথেষ্ট খেয়েছি তুমি খেয়ে নাও ।
মনে করেছিলাম তুমি আসবে কিন্তু তুমি আসবে না ফোনে বললে তখন আমি কিছু খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম ।
—তাহলে আমিও খাবো না । ( অন্য দিকে ঘুরে )
—আরে আমি তো কাল খেয়েছি ।
—না আজকে আমার সাথে খেতে হবে ।
—আচ্ছা এই লোকমা নাও তার পর আমি খাচ্ছি ।
এভাবে মিম আর নাসির ফ্রিজে রাখা কালকের বার্ডের খাবার খেয়ে নিচ্ছে ।

অতঃপর

মিম তার ব্যাগের ভেতর থেকে সেই পায়েলের গিফ্টি বের করে বললো ,
—এই নাও আমাকে পড়িয়ে দাও । ( মিম পায়েলের গিফ্ট এগিয়ে দিয়ে )
—হুম পা টা এগিয়ে দাও ।

মিম পা টা এগিয়ে দিল ।
আমি পায়েলটা মিমের পায়ে পড়িয়ে দিলাম ।

আমি বসা থেকে উঠে দারালাম ।
মিম বসা অবস্থায় ডান হাতটি বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে ।
আমি আর দেরি না করে মিমের হাতটি ধরে ফেললাম তখন মিম উঠে ধারালো ।
তখন পশ্চিম আকাশে সূর্যটা লুকিয়ে পড়েছে ।
আবছা আবছা আলো তার মাঝে মিমকে অনেক সুন্দর লাগছে ।

মিম বলে উঠলো ,
—এমন করে কি দেখছো ।
—তোমাকে ।

মিম লজ্জায় লাল হয়ে গেছে এখন গালে টোকা দিলে রক্ত বের হবে ।
—আমি কি তোমার কাঁধে মাথা রেখে হাঁটতে পারি ।
—হুম ।
মিম একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে নাসিরের কাঁধে মাথা রেখে দুজন হাঁটতে থাকে তাদের গন্তব্যের দিকে ।


মিম আর নাসিরের ভালোবাসা তাদের ফ্যামেলি কি মানতে পারবে ???
হয়তো মেনে নিতেও পারে আবার নাও নিতে পারে ।।।

…………………………………….সমাপ্ত …………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত